আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বিদ্রোহীরা

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে ৬২টি আসনে। এর মধ্যে ৪২টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই হচ্ছে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের। কর্মীদের অবমূল্যায়ন, দলীয় পদবি উপেক্ষা, নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থতার কারণে এখন বেকায়দায় পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। কোনো কোনো প্রার্থী এখন পর্যন্ত মাঠেই নামতে পারেননি। সরকার গ্রহণযোগ্য ও প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন তারা।

এই একতরফা নির্বাচনেও হারতে হবে অনেক ডাকসাইটে প্রার্থীকে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দাপুটে নেত্রী মতিয়া চৌধুরীর অবস্থা এখন কাহিল। শেরপুরের বধূ মতিয়া গত পাঁচ বছর নেতা-কর্মী বিছিন্ন ছিলেন। এ কারণেই এলাকাবাসী প্রার্থী করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি বদিউজ্জামান বাদশাকে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বাদশার দিকে অবস্থান নেওয়ার কারণে ভাঙা নৌকাতেই চড়েই ঘুরছেন মতিয়া।

গতকাল বদিউজ্জামান বাদশা নির্বাচনী এলাকায় বেলা সাড়ে ১১টায় ৪৬টি নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন। তিনি দলমত নির্বিশেষে আনারস প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

একই অবস্থা সুনামগঞ্জ-১ আসনে। আওয়ামী লীগের বিতর্কিত এমপি প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক এমপি সৈয়দ রফিকুল হক বড় শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সেখানে ভোটযুদ্ধ হবে হাড্ডাহাড্ডি।

তুলনামূলকভাবে সৈয়দ রফিকুল হকের পাল্লাই ভারী। রতনের নৌকার মানুষও এখন রফিকুলের ফুটবল নিয়ে খেলছেন।

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর) আসনে বার বার বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা মরহুম আবদুস সামাদ আযাদ। তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা ছিল অফুরান। পিতার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পুঁজি করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তার পুত্র আজিজুস সামাদ ডন নৌকা প্রতীকের এম এ মান্নানের ঘাম ঝড়াচ্ছেন।

জগন্নাথপুরে ডনের ফুটবলের পক্ষে জোয়ার উঠেছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জেও মান্নানের দুর্গে ভাগ বসাচ্ছেন তিনি। এদিকে আবদুস সামাদের পুত্রবধূ মুমতাহিনা রিতু ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। ভোট প্রার্থনা করে বলছেন, আমার মরহুম শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে একটি ভোট দিন। তার এ আবেদনেও নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন।

জানা গেছে, বিপাকে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। ফরিদপুর-৪ আসনে তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ লিটন চৌধুরীর ছোট ভাই মজিবুর রহমান নিঙ্ন চৌধুরী। এ আসনে কাজী জাফর উল্লাহর পক্ষে ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ আসনে নিঙ্ন চৌধুরী শক্ত অবস্থান তৈরি করাতে ঘাম ঝরছে কাজী জাফর উল্লাহর।

ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীনের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি হাজী মো. সেলিম।

এ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে এই দুই প্রার্থীর মধ্যে। একইভাবে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে এলাকাবাসীর চাপের মুখে ঢাকা-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মহাজোটের আওয়ামী লীগ নেতা ড. আওলাদ হোসেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে সমর্থন দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু মাঠে আওয়ামী লীগের কর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন আওলাদের পক্ষে। তবে এ আসনের বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম জাতীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে কাজ করছেন।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ড. আওলাদ হোসেন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করলে সরকারেরই গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

ঢাকা-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদারের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা-১৬ আসনের এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার বড় ভাই এখলাস উদ্দিন মোল্লা। এখলাস উদ্দিন মোল্লা তার ঘর গুছিয়ে নিয়েছেন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এ আসনে।

ঢাকা-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও বিজিএমইএ নেতা এস এম মান্নান কচি। নির্বাচনী এলাকার মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন স্বতন্ত্র এ প্রার্থী।

ঝিনাইদহ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন শফিকুল ইসলাম অপু। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি।

এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নৌকার ডুবুডুবু অবস্থা। আওয়ামী লীগ প্রার্থী শফিকুল ইসলাম অপু এলাকায় নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে এখন মাঠেই নামতে পারছেন না। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরাও তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সাধারণ মানুষ অবস্থান নিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির পক্ষে।

পাবনা-১ আসনে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লড়ছেন বর্তমান ও সাবেক দুই প্রতিমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। আর বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। এ আসনে অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে টেক্কা দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে ঘাম ঝরছে শামসুল হক টুকুর। রাজশাহী-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহরিয়ার আলম। ২০০৮ সালের আগে শাহরিয়ার আলম কোন দল করতেন এখনো জানেন না রাজশাহীর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

জয়ের পর তিনি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এলাকার লোক না হওয়ার পরও এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতা বনে যান। তিনি এলাকায় জামায়াত-শিবিরের সহাবস্থান গড়ে তুলে আওয়ামী লীগকে ফেলেছেন চরম বেকায়দায়। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে এবার নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি রায়নুল হক রায়হান। মাঠের আওয়ামী লীগ কর্মীরা তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রায়হান। তিনি বলেন, মানুষের ভালোবাসা নিয়েই বিত্তশালী প্রার্থীকে জবাব দেব। আমি মাঠের কর্মী। সাধারণ মানুষের ভালোবাসাই আমার বড় সম্পদ।

নেত্রকোনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন ছবি বিশ্বাস।

এ আসনের বর্তমান এমপি তরুণ নেতা মোস্তাক আহমেদ রুহি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনে আরেকজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ছবি বিশ্বাস ও মোশতাক আহমেদ রুহির মধ্যেই।

বরিশাল-২ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন।

ইউনুস এলাকার লোক না হওয়ায় সাবিনা ইয়াসমিনের পক্ষে শক্ত অবস্থান। নোয়াখালী-৬ আসনের মনোনয়ন পেয়েছেন আয়শা সিদ্দিকী। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র্র প্রার্থী হয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আমিরুল ইসলাম। জেলা আওয়ামী লীগ আমিরুলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

 

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।