আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিয়ত করে কবর বা মাজার শরীফ জিয়ারত সুন্নত!



আজকাল একদল লোক বিশেষ করে ইবনে তাইমিয়া ও তার সমর্থকরা নিয়ত করে মাজার জিয়ারতের জন্য সফর করার ব্যাপারে হাদীস শরীফের ভুল বা মনগড়া ব্যাখ্যা করে থাকে। এমনকি ইবনে তাইমিয়া তার ফতওয়ায়ে কোররাতে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা শরীফও নিয়ত করে জিয়ারতের জন্য সফর করা নিষেধ করেছে। (অথচ তাদের ব্যক্তিগত আমল ছিল এর বিরোধী) তারা এ ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদীস শরীফ বর্ণনা করে থাকে॥
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তিন মসজিদ ছাড়া সফর করো না, মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আক্বছা ও আমার এই মসজিদ।
অথচ উপরোক্ত হাদীস শরীফ কবর বা মাজার শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা সংক্রান্ত নয়, ইহা মসজিদে সফর করা সম্পর্কিত। আমাদের ফতওয়ার বিষয়ে অপ্রাসঙ্গিক।

উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় নিম্নোক্ত হাদীস শরীফে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন॥
: হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন কোন ব্যক্তি যদি ঘরে নামাজ পড়ে তবে তার এক নামাজে॥ এক নামাজের সওয়াব পাবে। আর যদি পাঞ্জেগানা মসজিদে নামাজ পড়ে তবে এক নামাজে॥ পঁচিশ নামাজের সমান সওয়াব পাবে। আর যদি জুমুআর মসজিদে এক নামাজ পড়ে তবে পাঁচশ নামাজের সওয়াব পাবে আর যদি মসজিদুল আক্বছায় এক নামাজ পড়ে তবে পঞ্চাশ হাজার নামাজের সওয়াব পাবে। আর মসজিদুল নববীতে যদি এক নামাজ পড়ে তবেও পঞ্চাশ হাজার নামাজের সওয়াব পাবে। এবং যদি ক্বাবা শরীফে এক নামাজ পড়ে তবে এক লাখ নামাজের সওয়াব পাবে।

(ইবনে মাজা, মেশকাত)
তাই আমরা এখানে বিস্তারিত দলিল॥আদিল্লাসহ নিয়ত করে কবর বা মাজার শরীফ জিয়ারত করার জন্য সফর করার উপর ফতওয়া প্রকাশ করলাম।
(১) কবর জিয়ারত সম্বন্ধে হাদীস শরীফে আছে
(২): হযরত বুরহিদাহ্ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা করতে পারো (মুসলিম শরীফ)।
(২) অন্য হাদিস শরীফ উনার মধ্যে আছে: হযরত ইবনে মসউদ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা করতে পার। কেননা উহা দুনিয়ার আসক্তিকে কমায় এবং আখিরাতকে স্মরণ করায়। (ইবনে মাযাহ)
(৩) কবর জিয়ারতের বৈধতা প্রসঙ্গে বিভিন্ন হাদীস পরিলক্ষিত হয়, আর এ সমস্ত হাদীসের ব্যাখ্যা হাফেজে হাদীস আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি দিয়েছেন এভাবে:
জেনে রাখুন পুরুষ ও মহিলাদের জন্য কবর জিয়ারত করা এ সমস্ত হাদীসের রায় অনুযায়ী মোস্তাহাব প্রমাণিত, তবে মহিলাদের ব্যাপারে মতানৈক্য আছে।

(ফতহুল বারী ফি শরহে বোখারী ৩য় খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা)
(৪) আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
কবর জিয়ারত এতে কোন অসুবিধা নেই, বরং এটা মোস্তাহাব। (ফতওয়ায়ে শামী)
(৫): পুরুষের জন্য কবর জিয়ারত করা মোস্তাহাব। (ফিক্বহুস সুন্নাহ্, ১ম খন্ড পৃঃ৪৯৯)
(৬) আল্লামা ইবনে আবেদীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
ওহোদ পাহাড়ের শহীদগণের (কবর) জিয়ারত করা মোস্তাহাব। ইবনে শায়বা হতে বর্ণিত আছে যে, “রসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বৎসরান্তে ওহোদের শহীদগণের (কবর) জিয়ারত করতে আসতেন। অতঃপর বলতেন, তোমাদের প্রতি সালাম, যেমন তোমরা ধৈর্য্য ধারণ করেছিলে তেমনি পরকালে উত্তম বাসস্থান লাভ করেছ।


(৭) বর্ণিত আছে যে, পরবর্তীতে খলিফাতুল মোসলেমীন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিআল্লাহু আনহু ও আমিরুল মো’মেনীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহু হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই ধারাকে বজায় রেখেছিলেন। (উমদাতুল ফিক্বাহ)
(৮) বিখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন: সাইয়্যিদাহ্ ফাতিমা রাদিআল্লাহু আনহু প্রতি শুক্রবার হযরত হামযাহ্ রাদিআল্লাহু আনহু এর কবর জিয়ারত করতে যেতেন, অনুরূপভাবে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিআল্লাহু আনহু স্বীয় ভ্রাতা আবদুর রহমান রাদিআল্লাহু আনহু এর কবর জিয়ারত করার জন্য মক্কা শরীফ যেতেন। (উমদাতুল ক্বারী ফি শরহে বোখারী)
উপরোক্ত বর্ণনা থেকে এ ফতওয়াই স্পষ্ট প্রমাণিত যে, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা সম্পূর্ণ জায়েজ।
(৯) অন্য হাদীসে আছে:
তাবেয়ী মুহম্মদ বিন নোমান রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন॥ যে ব্যক্তি প্রত্যেক শুক্রবার আপন মা॥বাপের অথবা তাঁদের মধ্যে একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং মা॥বাপের সহিত সদ্ব্যব্যবহারকারী বলে লেখা হবে। (বায়হাকী)
এ হাদীসেও এককভাবে কবর জিয়ারত করার কথা বলা হয়েছে।

যে ব্যক্তি তাঁর মাতা॥পিতার কবর জিয়ারত করতে যাবে সে বাড়ী থেকে নিয়ত করেই রওয়ানা হবে অর্থাৎ জিয়ারতকারী একমাত্র কবর জিয়ারত করার জন্যই কবরস্থানে গমন করবে। আর এ ক্ষেত্রে দূর বা নিকট এর কোন পার্থক্য নাই। নিকটের যে হুকুম, দূরেরও একই হুকুম।
(১০) আল্লামা আবদুর রহমান যাফিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
কবর জিয়ারত এর ক্ষেত্রে নিকট ও দূরের কোন পার্থক্য নাই। (কিতাবুল ফিক্বাহ আলা মাযাহিবিল আরবা ১ম খন্ড ৫৪০ পৃঃ)
(১১) আল্লামা ইবনে আবেদীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন॥
দূরবর্তী স্থানেও (কবর) জিয়ারতের জন্য গমন করা মোস্তাহাব।

(শামী ২য় খন্ড ২৪২ পৃঃ)
(১২) হাকিমূল উম্মত মাওলানা আশ্রাফ আলী থানভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন॥ “পুরুষদের জন্য কবর জিয়ারত করা মোস্তাহাব। জিয়ারত করার অর্থ দেখাশুনা। সপ্তাহে অন্ততঃ একদিন কবর জিয়ারত করা উচিৎ। সেই দিন শুক্রবার হওয়াই সবচেয়ে ভাল। বুজুর্গানে দ্বীনের কবর জিয়ারত করার জন্য সফরে যাওয়াও দুরস্ত আছে”।

(এমদাদুল ফতওয়া)
(১৩) হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি শাফেয়ী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা তিনি যখন কোন মাসআলা সমস্যার সমাধানে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তেন তখন আলমে ইসলামীর সর্বশ্রেষ্ঠ ইমামে আযম ইমাম আবু হানিফা নোমান বিন সাবেত কুফী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর মাজার শরীফে এসে জিয়ারত করে তখায় দু’রাকাত নামাজ পড়তেন। এরপর হযরত ইমামে আযম ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এর উসিলা দিয়ে আল্লাহ্ পাকের দরবারে ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সমস্যা জানাতেন। আল্লাহ্ পাক তাঁর দোয়া কবুল করতেন অর্থাৎ মাসআলার যে সমস্যার জালে আবদ্ধ হয়ে তিনি সেখানে যেতেন ইমামে আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি এর উসিলার বরকতে তা খুলে যেত। অতঃপর স্বীয় স্থানে প্রত্যাবর্তন করতেন। উল্লেখ্য ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর এ আগমন শুরু হত ফিলিস্তিন হতে, আর এই সূদুর ফিলিস্তিন থেকে আগমনের একমাত্র নিয়ত ছিল মাজার জিয়ারত করা।

অন্য কোন উদ্দেশ্যে বাগদাদ এসে মাজার জিয়ারত করা নয় (আন্ নাসিয়াতুলিল ওহাবী)
(১৪) এ প্রসঙ্গে ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
অর্থঃ নিশ্চয়ই আমি ইমাম আযম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বরকত হাসিল করি। যখন আমার কোন সমস্যা দেখা দেয় আমি তাঁর মাজার শরীফে এসে প্রথমে দু’রাকাত নামাজ আদায় করি। অতঃপর তাঁর উসিলা দিয়ে আল্লাহ্ পাকের নিকট সমস্যা সমাধানের জন্য প্রার্থনা করি। তা অতি তাড়া তাড়ি সমাধান হয়ে যায়। (মুকাদ্দিমা,শামী ১ম খন্ড ৫৫ পৃঃ)
(১৫,১৬) শায়েখ ওলি উদ্দীন ইরাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন আমার পিতা জয়নুদ্দীন ইরাকী এবং শায়েখ আব্দুর রহমান ইবনে রজব হাসলী, হযরত ইব্রাহীম খলীল আলাইহিস সালাম এর জিয়ারতে বলেছিলেন; যখন শহরের নিকটবর্তী হলেন তখন ইবনে রজব বলতে লাগলেন, আমি খলীলুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম এর মসজিদে নামাজ পড়ার নিয়ত করে নিলাম যেন জিয়ারতের নিয়ত না থাকে।

আমার পিতা বললেন, আপনিতো হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এরশাদের বিপরীত আমল করলেন। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের জন্য সফর করা যায় না অথচ আপনি চতুর্থ এক মসজিদের নিয়ত করলেন আর আমি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এরশাদের উপর আমল করেছি। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কবর জিয়ারত করতে থাকবে। এমন কোন হাদীস নেই যাতে নবী আলাইহিস সালাম গণের কবরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আমি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এরশাদ মোতাবেক আমল করেছি।

(ফাযায়েলে হজ্ব, জুরক্বানী)
(১৭) এ ছাড়াও সাহাবী রাদিআল্লাহু আনহু, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি গণের কবর জিয়ারতের সুস্পষ্ট ও যথেষ্ট প্রমান রয়েছে। ইমামে রাব্বানী আফজালুল আউলিয়া শায়েখ আহমদ সিরহিন্দী ফারুকী মোজাদ্দেদে আলফেসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলতানুল হিন্দ হাবীবুল্লাহ ইমামুত্ব ত্বারীকত হযরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতী আজমিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর মাজার শরীফ জিযারত করতে গিয়েছিলেন। আর এতে জিয়ারত ভিন্ন অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। (সীরাতে মোজাদ্দেদে আলফেসানীরহমতুল্লাহি আলাইহি
হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি শামদেশ হতে উট সওয়ার শুধু রওজায়ে পাকে তাঁর সালাম জানানোর জন্য পাঠিয়ে দিতেন।
ইহুদীদের বিখ্যাত পন্ডিত হযরত কা’ব ইবনে আহবার যখন ইসলাম গ্রহন করেন তখন হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহু আনন্দিত হয়ে তাঁকে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা মোবারক জিয়ারতের জন্য মদীনা শরীফ আসতে বলেন, তিনি এটা কবুল করে মদীনা শরীফ এসেছিলেন।


একটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কবর বা মাজার জিয়ারত করতে গিয়ে যাতে শরীয়ত বিরোধী কোন কার্যকলাপ সংঘঠিত না হয়। এটা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য। শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ বলতে: কবরস্থানে বা মাজারে গিয়ে সিজদা করা, গান বাজনা করা, মহিলা পুরুষের বেপর্দা চলাফেরা ইত্যাদি এসমস্ত কার্যকলাপ মূলতঃই হারাম। কোথাও যদি শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ হয়ই এজন্য কবর বা মাজার শরীফ জিয়ারত হতে লোকদেরকে বিরত করা বা মাজারের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ফতওয়া দেয়া যাবে না বরং যাতে ঐ সমস্ত মাজার শরীফে শরীয়ত বিরোধী কাজ সংঘঠিত না হয় সেদিকে সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে।
(১৮) এ প্রসঙ্গে হাফিজে হাদীস আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
এবং সেখানে যদি শরীয়ত বিরোধী কাজ পরিলক্ষিত হয়, যেমন মহিলা॥পুরুষের একত্র মিশ্রন, তথাপি কবর জিয়ারত ত্যাগ করা যাবে না বরং মানুষের এরূপ নব উদ্ভাবিত (বিদআত) কাজকে দূর করতে হবে।

(দোররোল মোখতার ২য় খন্ড, ২৪২ পৃঃ)
বর্তমানে মাজার শরীফ জিয়ারতের ব্যাপারে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে যে, কিছু সংখ্যক লোক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মাজার শরীফের নামে অপকর্ম চালিয়ে আসছে। এ সমস্ত হীন চক্রান্তকারীদের দৌরাত্ম্য এতটা বৃদ্ধি পেয়েছে যে, যেখানে কবরের চিহ্ন মাত্র নাই সেখানে কৃত্রিম কবর বানিয়ে মানুষের ঈমানকে হরণ করার কাজে মেতে উঠেছে। খোঁজ খবর নিলে জানা যাবে যে, এ সমস্ত মাজার শরীফের কোন ভিত্তিই নাই। (বিশেষ করে বটতলায়ই এই শয়তান ভন্ডদের গায়েবী? মাজার শরীফ পাওয়া যায়) তাই এ সমস্ত ক্ষেত্রে কাজ হল প্রকৃত মাজার শরীফ সনাক্ত করে তার তদারক করা, আর যেগুলোর মৌলিকত্ব নাই অর্থাৎ কৃত্রিম, তার উচ্ছেদ করে শয়তানী শিকড় উৎপাটন করা।
হাদীসের তারকিবী জওয়াবঃ
কেউ কেউ বলেছেন এটা আম এ ‘মত পোষণকারীদের অভি মত যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে এর অর্থ হয় হাদীসে বর্ণিত তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও ভ্রমন করা জায়েজ নয়।

এমনকি ইলম অর্জনের, ব্যবসা বানিজ্য, ইসলাম প্রচার ও অন্যান্য সমস্ত প্রকার ভ্রমনই বাদ হয়ে যায়। যা অসম্ভব এবং কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের বিরোধী।
কোন মসজিদের জন্য ভ্রমন করা জায়েজ নয় কিন্তু তিন মসজিদ ব্যতীত। মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আকসা ও আমার মসজিদ। অতএব এখানে ণ্ডষ্ক্র॥ঞ্জব্জ॥ৈল্ফব্জৈ বলতে যে একান্তভাবে মসজিদের জন্যই খাস তা প্রমানিত।


(১৯) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবর মোবারক জিয়ারতে অশেষ বরকত ও সওয়াবের কাজ। ইহা মোস্তাহাব কাজগুলির মধ্যে সর্বোত্তম মোস্তাহাব বরং ওয়াজিবের নিকটবর্তী। এজন্য সফর করাও মোস্তাহাব। হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী, হাম্বলী মাযহাবের সকলেই এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। আল্লামা সুবুকী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ ব্যাপারে কওলী ও ফেলী মতামত একত্রে নকল করেছেন।

(মাআরেফে মাদানিয়া)
২০,২১) হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
যে ব্যক্তি মসজিদে কোবায় এসে দু’রাকাত নামাজ পড়বে সে এক ওমরার সওয়াব পাবে।
(২২,২৩) অন্য হাদীসে আছে॥
:হযরত ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক শনিবার কুবার মসজিদে গমন করতেন হেটে অথবা সওয়ার হয়ে এবং ওখানে দু’রাকাত নামাজ পড়তেন। (মুত্তাফাক আলাইহে)
উপরোক্ত হাদীস শরীফদ্বয় হতে এটা সুস্পষ্ট যে, প্রথমোক্ত তিন মসজিদ ছাড়াও চতুর্থ মসজিদ॥মসজিদে কোবায় ফজিলত হাসিলের জন্য নিয়ত করে সফর করা জায়েজ বরং সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত।
(২৪-২৬) আমাদের আঁকা সাইয়্যিদুল মুরছালিন, ইমামুল মুরছালিন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
হযরত ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করল তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল। (জামে ছগীর পৃঃ১৭১, শিফাউস সিকাম পৃঃ২, ওফাউল ওফা পৃঃ৩৯৪)
:হযরত ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার মউতের পরে হজ্ব কয়ে আমার জিয়ারত করল সে হবে ঐ ব্যক্তির মত যে আমার জীবদ্দশায় আমার জিয়ারত করেছে।

(বায়হাকী শোয়বুল ঈমান, মেশকাত, শিফাউস সিকাম, ওফাউল ওফা)
অর্থঃ হযরত আনাস রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কেবল মদীনা শরীফে আমার জিয়ারত এর উদ্দেশ্যে আসবে ও জিয়ারত করবে (কিয়ামতের দিন) সে আমার পার্শ্বে থাকবে। আর সে দিন আমি তার জন্য শাফায়াত করব। (জামে সগীর পৃঃ১৭১, মুয়ালিম দারুল হিজরাত পৃঃ১০২)
: হযরত ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে আমার জিয়ারতের জন্য আসবে, এ ব্যতীত আর কোন উদ্দেশ্যই থাকবে না কিয়ামতের দিন তারজন্য সুপারিশ করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। (শিফাউস সিকাম, ওফাউল ওফা)
:হযরত আনাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, যখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে হিজরতের জন্য বাহির হন, সেখানকার সমস্ত কিছু অত্যন্ত অন্ধকার হয়ে যায়। এবং যখন মদীনা শরীফে প্রবেশ করেন তথাকার সমস্ত কিছু উজ্জ্বল হয়ে যায়।

হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মদিনা শরীফ আমার ঘর, আর আমার কবরও মদীনা শরীফই হবে। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিৎ এর জিয়ারত করা। (মেশকাত শরীফ)
: হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ্ব আদায়ের জন্য মক্কা শরীফে যায়, অতঃপর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আমার মসজিদে আসে তাহলে সে দুটি কবুলকৃত হজ্বের সওয়াব পাবে। (ওফাউল ওফা পৃঃ ৪০১, জজবুল কুলুব পৃঃ ১৯৪)
উপরে বর্ণিত হাদীস সমূহে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা মোবারক জিয়ারত করার জন্য তাকীদ ও উৎসাহিত করা হয়েছে।
(৩৮,৩৯) হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
:হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ্ব করল কিন্তু আমার রওজা শরীফ জিয়ারত করল না সে আমার উপর জুলুম করল।

(শিফাউল সিকাম পৃঃ২৭, ওফাউল ওফা ২য় খন্ড ৩৯৮ পৃঃ)
উপরোক্ত হাদীস শরীফে যারা হজ্বের পর হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা মোবারক নিয়ত করে জিয়ারতের জন্য সফর করেনা তাদের ভৎর্সনা করা হয়েছে।
(৪০) শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা জাকারিয়া কান্দুলুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন॥
:খাস খাস শহরের বিশেষ বিশেষ মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য নিয়ত করে সফর করা হাদীস শরীফে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন আজকাল একটা প্রথা হয়েছে লোকেরা কলকাতা ও বোম্বে হতে দিল্লী জামে মসজিদে রমজানের আখেরী জুমআ পড়ার নিয়ত করে চলে আসে। (ফাজায়েলে হজ্ব পৃঃ১৪১)
(৪১-৪৩) হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: মুসুল্লির জন্য উচিৎ নয় যে, সে মসজিদে হারাম, মসজিদে আকসা ও আমার এই মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য সফর করে। (মসনদে আহমদ, ফতহুল বারী, মা আরিফুস সুনান)
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুহম্মদ ইউসুফ বিন নূরী বলেন:
জমহুর উম্মত এর মাযহাব হল রওজা মোবারক জিয়ারত করা উত্তম ইবাদত, আর নিয়ত করে সফর করা শুধু জায়েজই নয় বরং মোস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত এতে কোন প্রকার অসুবিধা নাই।

(মা আরিফুস সুনান, শরহে তিরমিযী, খন্ড ৩, পৃঃ৩২৯)
এই হাদীসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উক্ত হাদীস দ্বারা সাধারণভাবে সফর নিষিদ্ধ হওয়া বুঝায় না। কেননা কোন কোন সফর ওয়াজিব যেমন॥ হজ্বের নিয়তে সফর করা, জ্বিহাদের জন্য সফর, ইলম অর্জনের জন্য সফর, হিজরতের জন্য সফর এবং আরোও অন্যান্য সফর সকলের ঐ মতে জায়েজ হয়। তা হল হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা মোবারক জিয়ারত কি করে নাজায়েজ হবে? (ফতহুল বারী ৩য় খন্ড, পৃঃ৫০, উমদাতুল ক্বারী ৮ খন্ড পৃঃ২৫৩)
(৪৬) হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই হাদীস শরীফ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা শরীফ জিয়ারত নিষিদ্ধ হওয়ার দলিল হতে পারে না। কেননা অন্যান্য হাদীস শরীফ এটা পরিস্কার করে দিয়েছে যে, কোন মসজিদে নামাজ পড়ার নিয়তে সফর করা যাবেনা তিন মসজিদ ছাড়া। কেননা (এ তিন মসজিদ ব্যতীত) অন্যান্য মসজিদের ক্ষেত্রে অধিক সওয়াবের কোন অঙ্গীকার নাই।

আবার কেউ কেউ এ জন্য নিষেধ করে থাকেন যে, সেখানে লোক জমায়েত হয়। আর হাদীসে আছে॥
:তোমরা আমার রওজা শরীফকে উৎস বের বা ঈদের স্থান বানাইওনা) এ হাদীসকে দলিল হিসেবে পেশ করে থাকেন। কিন্তু ওখানে না কোন নির্র্দিষ্ট সময় আছে না কোন গুরুত্ব আছে। আর ঈদের মধ্যে এ দুই বিষয়ই পাওয়া যায়। আবার কেউ কেউ বলেন যে, খাইরুল কুরুনের মধ্যে এ সফর ছিল না কিন্তু এ দলিল ও গ্রহনযোগ্য নয়।

কেননা সাইয়্যিদেনা হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি উচ্চ মর্যাদার তাবেয়ী ছিলেন, তিনি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা শরীফে সালাম পৌঁছানোর জন্য শাম দেশ হইতে নিয়ত করে দূত প্রেরণ করতেন, কিন্তু এতে কেউ কোন প্রকার আপত্তি করেন নাই। তাই এটা এক ধরনের এজমা হিসেবে পরিগণিত। যখন অন্য জনের তরফ হতে সালাম পৌঁছানো জায়েজ হয় তা হলে নিজের তরফ হতে সালাম পেশ করার জন্য সফর করা উত্তম জায়েজ। (বাওয়াদে উন্ নাওয়াদের পৃঃ ৪৬০)
এ হতে বুঝা যাচ্ছে যে, নামাজ পড়া ব্যতীত একমাত্র শুধু জিয়ারতের উদ্দেশ্যে নিয়ত করে সফর করা শুধু জায়েজই নয় বরং মোস্তাহাব। আর এ প্রসঙ্গে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উৎসাহব্যঞ্জক উক্তি রয়েছে।


(৪৭) হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে॥
:খাত্তাব পরিবারের এক ব্যক্তি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, যে স্বেচ্ছায় আমার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমন করে আমার জিয়ারত করবে, পরকাল দিবসে সে আমার পাশে থাকবে। আর যে মদীনা শরীফ বাস করবে এবং উহার বালা মসিবত ও কষ্টে ধৈর্য্য অবলম্বন করবে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সাক্ষী ও সুপারিশকারী হব। আর যে দুই হেরেম শরীফের কোন একটিতে মৃত্যুবরণ করবে পরকাল দিবসে তাকে আল্লাহ্ তায়ালার নিরাপত্তা প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত কয়ে উঠাবেন। (মেশকাত শরীফ)
(৪৮) আল্লামা মুহম্মদ হাসান শাহ্ মোহাজেরে মক্কি বলেন,: এর মর্ম হলো জীবিতদের জন্য ফায়দাদায়ক। বরকত হাসিলের জন্য এ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্যত্র সফর করা বিধেয় নয়।

কেননা বাকী মসজিদগুলো বরকতের দিক দিয়ে সমান। এ ছাড়া অপরাপর স্থানে সফর করা নিষেধ নয় যেমন॥ আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনের জন্য, ইলম অর্জনের জন্য, বুজুর্গগণের জিয়ারতের জন্য, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা মোবারক, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর মাজার জিয়ারত ও সমস্ত ইমামগণের মাজারসমূহ জিয়ারত করা নিষিদ্ধ নয়।
(৪৯): হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা শরীফ জিয়ারত করা জায়েজ বরং মোস্তাহাব। কোন কোন রেওয়ায়েতে ওয়াজিবের নিকটবর্তী বলে উল্লেখ আছে। অধিকাংশ বর্ণনায় একে সহিহ্ বলা হয়েছে।

এ রেওয়ায়েত অনুযায়ী মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মানাসেক, সামহুদী তাঁর ওফাউল ওফা কিতাবে আর খোলাসাতুল ওফা কিতাবে মশহুর রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রতি বৎসর দুই জন ব্যক্তিকে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা শরীফে সালাম পৌঁছানোর জন্য প্রেরণ করতেন। (ফতওয়ায়ে দারুল উলুম-কিতাবুল হজ্ব)
(৫০-৫২)) ইমাম ইবনে হাযম রহমতুল্লাহি আলাইহি এর মতে জীবনে একবার কবর জিয়ারত করা ওয়াজিব। আইনী৪/৭৬, ফতহুল মুলহীম ২/৫১, বজলুল মজহুদ ৪/২১৪)
তবে কেউ কেউ এ হাদীসের উল্লেখ করে কবর জিয়ারতকে নিষেধ করে থাকে, মূলতঃ কবর জিয়ারতের সাথে এ হাদীসের কোন সম্পর্কই নাই।
(৫৩) ইমামুল মোহাদ্দেসীন শায়েখ আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি শরহে সূয়ুতী কিতাবে সম্বন্ধে বলেছেন যে, এটা শুধু মসজিদের জন্যই খাছ।
(৫৪) হাফিজে হাদীস শায়েখ আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন॥
:এ হুকুমের উদ্দেশ্য হলো শুধু মসজিদের সাথে সস্পৃক্ত।

এ মসজিদত্রয় ব্যতীত অন্যান্য মসজিদে নামাজের জন্য সফর করা নিষিদ্ধ। তবে যদি মসজিদ ব্যতীত সালেহগণের (কবর) জিয়ারত, জীবিত-গণের সাথে সাক্ষাৎ, ইলম অর্জন, ব্যবসায় ও ভ্রমনের জন্য সফর করে তা এ হাদীসের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না। (ফতহুল বারী ৩য় খন্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)
(৫৫-৫৭) বিখ্যাত ফক্বিহ ও মুহাদ্দিস মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেন॥
:ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর শরহে মুসলিম কিতাবে বর্ণিত আছে, আবু মুহম্মদ বলেছেন তিন মসজিদ ব্যতীত সফর করা হারাম এটা ঠিক নয়। এহ্ইয়াউল উলুম কিতাবে উল্লেখ আছে, কিছু সংখ্যক আলেম বরকতময় স্থানসমূহ আলেম ও বুজুর্গগণের কবর জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সফর করাকে নিষেধ করে থাকেন। কিন্তু আমার বিশ্লেষনাত্বক মত হলো এর নির্দেশ অনুরূপ নয়; বরং জিয়ারতের হুকুম রয়েছে।

হাদীসে আছে॥
ঐ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য সব মসজিদে শুধু নামাজ পড়ার জন্য নিষেধ করার কারণ হলো বাকী মসজিদগুলো সওয়াবের দিক দিয়ে সমান। কিন্তু বরকতময় স্থানসমূহ এক সমান নয়; বরং মর্তবা ও মর্যাদা অনুসারে আল্লাহ্ পাকের নিকট ঐ গুলোর বরকত বিভিন্ন। এসব নিষেধকারীরা কি আম্বিয়া আলাইহিস সালাম গণের মাজার যেমন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম, হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালাম এর কবর মোবারক এবং অনুরূপ যত প্রকার সফর আছে তা হতেও নিষেধ করতে সমর্থ হবে না। (মেরকাত শরীফ-শরহে মেশকাত)
(৫৮) শায়েখ আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন॥
অর্থঃ কতক আলেমের মতে, এখানে মসজিদের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের দিকে ভ্রমন করা জায়েজ নহে, মসজিদ ব্যতীত অন্যত্র ভ্রমন এ হুকুমের অন্তর্ভূক্ত নহে। (আশআতুল লোমআত ১ম খন্ড ৩২৪ পৃঃ)
(৫৯) শায়েখ আবুল হাসান নূরুদ্দীন সিন্ধি
:এর অর্থ হলো তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে (অপ্রয়োজনে নামাজ পড়ার জন্য) সফর করা যাবেনা।

কিন্তু যদি ইলম অর্জনের জন্য, আলেম ও ছালেহ-গণের (কবর) জিয়ারতের জন্য ও ব্যবসা বানিজ্যের জন্য সফর করা হয় তাহলে এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না। অনুরূপ মদীনাবাসীদের জন্য মসজিদে কুবাতে গেলে এ নিষিদ্ধতা প্রযোজ্য হবে না। (হাশিয়ায়ে সিন্ধি ২য় খন্ড ৩৮ পৃঃ)
(৬০) শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কতক আলেম এ হাদীস দ্বারা প্রমান করেছেন যে, রওজায়ে পাকের নিয়তে সফর করাও নিষিদ্ধ; যেতে হবে মসজিদে নববীর নিয়তে। অবশ্য সেখানে পৌঁছলে রওজা শরীফের জিয়ারত করাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামগণের অভিমত হচ্ছে শুধু নিয়ত করে কোন মসজিদে সফর করতে হলে এ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য মসজিদের নিয়ত করে যাওয়া নাজায়েজ।

হ্যাঁ এর অর্থ এ নয় যে, এ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য যে কোন সফর নাজায়েজ। বরং হাদীসে বর্ণিত আছে আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন আবার অনুমতি দিচ্ছি, জিয়ারত করতে পারো। এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আম্বিয়া আলাইহিস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরামগণের মাজারে জিয়ারতের জন্য সফর, করা সম্পূর্ণরূপে জায়েজ। তাছাড়া বিভিন্ন সূত্রে জিহাদের সফর, ইলম অর্জনের জন্য সফর, হিজরতের জন্য সফর ব্যবসায়ের জন্য সফর, তাবলিগী সফর ইত্যাদির জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে। (ফাজায়েলে হজ্ব)
(৬১) হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গায্যালী রহমতুল্লাহি আলাইহি সফরকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন, তার মধ্যে একটি হলো ইবাদত সম্পাদনের উদ্দেশ্যে সফর।

যেমন হজ্ব এবং জ্বিহাদে যোগদানের জন্য নবী আলাইহিস সালাম, সাহাবী রাদিআল্লাহু আনহু, তাবেঈনগণ এবং অলি আল্লাহ্গণের মাজার জিয়ারতের জন্য, এবং ধার্মিক আলেম ও বুজুর্গগণের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য দেশ বিদেশ সফর করা। কেননা তাঁদের চেহারা মোবারক দর্শণ করা ইবাদতের মধ্যে গন্য হয় এবং তাঁদের নেক দোয়ার মধ্যে যথেষ্ট বরকত নিহিত রয়েছে। তাঁদের দর্শন লাভের উপকারিতা সমূহের মধ্যে একটি উপকারিতা এই॥ তাঁদের দরবারে গমন করলে তাঁদের আচার ব্যবহার ও কার্য কলাপের অনুসরণ করতে স্বভাবতঃ ইচ্ছা হয়। এ কারণে বুজুর্গ লোকদের দর্শন লাভ করাকে ইবাদতের মধ্যে গন্য করা হয়। আবার এটা ইবাদতের বীজ স্বরূপও বটে।

তদুপরি জীবিত অলি আল্লাহ্গণের মহামূল্য বাণী যখন তার ধর্ম পথের সহায়ক হয়, তখন অলী আল্লাহ্গণকে দর্শনের সার্থকতা ও উপকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। সুতরাং ইচ্ছাপূর্বক নিয়ত করে বুজুর্গানে দ্বীনের মজলিসে এবং কবরস্থানে গমন করা জায়েজ আছে। আর হযরত রসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন॥
অর্থঃ মক্কা মুআয্যমা, মদীনা মুনাওয়ারাহ্ এবং বায়তুল মুকাদ্দাস ব্যতীত অন্য কোন স্থানের উদ্দেশ্যে সফর করোনা। এ হাদীসের দ্বারা পরিস্কারভাবে এটাই প্রমানিত হয় যে, এ তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদ এবং মজলিসকে বরকত তথা কল্যানের উপলক্ষ মনে করবে না। এ তিন মসজিদ ভিন্ন আর সমস্ত মসজিদের মর্যাদাই সমান।

কিন্তু জীবিত আলেম ও বুজুর্গ লোকদের মজলিসে গমনপূর্বক তাঁদের সাহচর্য অবলম্বন যেমন এ হাদীসের অন্তর্ভূক্ত নয়, তদ্রুপ পরলোকগত ওলামায়ে কিরাম এবং বুজুর্গানে দ্বীনের কবরস্থান জিয়ারত করাও এ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ এ নিষেধ হাদীস দ্বারা জীবিত ওলামায়ে কিরামের সভায় গমন করা যেমন নিষিদ্ধ হয় নাই তদ্রুপ মৃত বুজুর্গানে দ্বীনের কবর জিয়ারত করাও নিষিদ্ধ হয় নাই। সুতরাং এ উদ্দেশ্যে সফর করা আম্বিয়ায়ে কিরাম এবং অলি আল্লাহ্গণের কবরস্থানে গমন করা জায়েজ আছে। (কিমিয়ায়ে সাআ’দাত)
(৬২) কোন কোন শাফেয়ী আলেম এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করেন। শায়েখ আল্লামা ইবনে আবেদীন হানাফী তাঁর রচিত শামী কিতাবে এ প্রসংগে লিখেন॥
:কোন কোন শাফেয়ী ইমাম হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জিয়ারত ব্যতীত তিন মসজিদ এর উপর কিয়াস করে অন্যান্য কবর জিয়ারতে নিষেধ করেন, ইমাম গায্যালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাদের এই বক্তব্যকে প্রতিহত করে বলেন॥ এ তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য সব মসজিদ মর্যাদার দিক দিয়া বরাবর বিধায় অন্যান্য মসজিদ সমূহে ভ্রমন করা প্রয়োজন নাই।


(৬৩) বিখ্যাত মুহাদ্দিস জয়নুদ্দীন ইরাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন: তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও ভ্রমন করো না এ হাদীসের ব্যবহারের উত্তম যথোপযুক্ত স্থান হল শুধু মসজিদ। তবে যদি মসজিদ ব্যতীত অন্যত্র ভ্রমনের ইচ্ছা করে যেমন- ইলম অন্বেষণ, বুজুর্গগণের সহিত (মৃতও যদি হয়), আত্বীয়॥স্বজনদের সহিত সাক্ষাৎ, ব্যবসায়ের জন্য বা প্রমোদ ভ্রমনের জন্য বা অনুরূপ যত ভ্রমন আছে তা এ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত নয়।
এখন প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে নিয়ত করে অর্থাৎ অন্য কোন উদ্দেশ্য ব্যতীত শুধু কবর জিয়ারত করার নিয়তে ভ্রমন করা জায়েজ কিনা? আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, আমাদের সর্বাঙ্গীন আমলের ক্ষেত্রেই হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত এর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। এস্থলে যদি কোন প্রকার অসাবধানতা অবলম্বন করা হয় তাহলে পদস্খলন নিশ্চিত।
(৬৪) হাদীস শরীফে আছে:হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, একবার হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আম্মার কবর জিয়ারত করতে গেলেন, তখন তিনি নিজে কাঁদলেন আর তাঁর চতুর্দিকের লোকদেরকে কাঁদালেন, অতঃপর বললেন, আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য অনুমতি চেয়েছিলাম কিন্তু তিনি (আল্লাহ্ পাক) আমাকে উহার অনুমতি দিলেন না।

অতঃপর আমি তাঁর কবর জিয়ারত করার অনুমতি চাইলাম আর আমাকে উহার অনুুমতি দেওয়া হল। সুতরাং তোমরা কবর সমূহ জিয়ারত করবে। কেননা উহা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়। (মুসলিম শরীফ)
(৬৫) একটি বিষয়ে লক্ষণীয় যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এ হাদীস বর্ণনা করেন, তখন তিনি মদীনাতেই ছিলেন আর এটা ইতিহাস উল্লেখিত বর্ণনা যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আম্মা মৃত্যুবরণ করেন আবওয়া নামক স্থানে যখন তিনি ৬ষ্ঠ বৎসরে পদার্পন করেন। আর সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

আবওয়া মক্কা শরীফ হতে মদীনা শরীফগামী পথের পার্শ্বস্থ কিনানা র বানু দা মবা এলাকায়, আল জুহফা হতে প্রায় ২৩ মাইল দূরে অবস্থিত একটি স্থান। কারও কারও মতে এ নামটি ছিল আসলে সেখানে অবস্থিত একটি পাহাড়ের। কথিত আছে যে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা হযরত আমিনা রাদিআল্লাহু আনহু নিজ পিত্রালয় মদীনা শরীফ হতে মক্কা শরীফ ফিরবার পথে এ স্থানে মারা যান এবং এ খানেই তাঁকে কবর দেয়া হয়। কিন্তু কারও কারও মতে তাঁকে মক্কা শরীফে কবর দেয়া হয়েছিল। (তাবারী ১ম খন্ড ৯৮০ পৃঃ)
আবওয়া হোক বা মক্কা শরীফ হোক হযরত আমিনা রাদিআল্লাহু আনহু এর (তাঁদের প্রতি সু ধারণা রাখাই উত্তম) কবর যে মদীনা শরীফ হতে অনেক দূরে ছিল তাতে কোন সন্দেহ নাই।

হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ই দীর্ঘপথ (যদি আবওয়া হয় তবে প্রায় ২৩ মাইল, আর যদি মক্কা শরীফ ধরা হয় তাহলে প্রায় ২০০ মাইল) একমাত্র তাঁর আম্মার কবর জিয়ারত করার নিয়তে গমন করেছিলেন অন্য কোন কারণে নয়।
(৬৬-৭৮) এ ছাড়াও নুরুল ইজাহ, মারাকি উল ফালাহ্, এলাউসসুনান, দোররুল মোখথার, এমদাতুল ফতওয়া, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, শরহ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.