আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপরাজনীতি

পৃথিবী জটিল তাই আমিও জটিল

সিলেট শহরে গত শনিবার চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ
নেতার ওপর হামলা হয়। এর জের
ধরে গতকাল ক্যাম্পাসে সংঘর্ষে ২০
জন আহত হন। পরিস্থিতি মোকাবিলায়
ক্যাম্পাসে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন,
শাহ আমানত হল বন্ধ ঘোষণা, তিন
সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল
রোববার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও
ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-
কর্মীদের
মধ্যে সংঘর্ষে ছাত্রশিবিরের
নেতা মামুন হোসেন নিহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত
হন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত
হল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত
বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষ।

ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের
একটি কমিটিও করা হয়েছে।
রাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের
জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত শনিবার রাতে সিলেট
নগরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক
জালাল উদ্দিন আহমেদের ওপর হামলার
জের ধরে ওই রাতেই চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ
ও ছাত্রশিবির মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই
পক্ষের সংঘর্ষ হয়। রাতেও
ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ
করছিল।

জালালের হাত ও দুই পায়ের রগ
কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
নিহত মামুন হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের
মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ
বর্ষের ছাত্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের
শাহ আমানত হল শাখা ছাত্রশিবিরের
সাধারণ সম্পাদক। গুরুতর আহত অবস্থায়
তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত
চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
তাঁর মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্ন
অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের
চিহ্ন ছিল।


চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম
হাফিজ আক্তার রাতে প্রথম
আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ-
ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে একজন নিহত ও
বেশ কয়েকজন আহত
হয়েছে বলে শুনেছি।
বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।
অপ্রীতিকর
পরিস্থিতি এড়াতে ক্যাম্পাসে ২০০
পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ’
সংঘর্ষে গুরুতর আহত চারজনকে চট্টগ্রাম
মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের
উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তর
শ্রেণীর ছাত্র সাইদুল ইসলাম,
পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের
ছাত্র রাহাত, ইতিহাস বিভাগের
তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এনামুল হক ও গণিত
বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আমজাদ।


আহত অন্যদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক
চিকিৎসা দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের
নিউরো সার্জারি বিভাগের
সহকারী রেজিস্ট্রার রাখাল চন্দ্র
বড়ুয়া বলেন, আহত ব্যক্তিদের
মধ্যে সাইদুল ও রাহাতের অবস্থা খুব
গুরুতর। তাঁদের মাথাসহ শরীরের
বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের
আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অতিরিক্ত
রক্তক্ষরণও হয়েছে।
আহত আমজাদ হোসেন বলেন, ‘শাহ
আমানত হলের
ডাইনিংয়ে বিকেলে খাবার
খাচ্ছিলাম।

এ সময় ছাত্রলীগের
কর্মীরা ধারালো অস্ত্র
নিয়ে হলে হামলার চেষ্টা চালায়।
তবে হলের মূল ফটক বন্ধ ছিল।
পরে তারা ফটক
ভেঙে হলে ঢুকে এলোপাতাড়ি
কোপায়। ’
প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্যাম্পাস
সূত্রে জানা গেছে, শনিবার
রাতে সিলেটে জালালের ওপর
হামলার প্রতিবাদে গতকাল
বেলা একটার
দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন
চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের
করে ছাত্রলীগ। মিছিলটি আলাওল হল,
২ নম্বর গেট, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ,
সোহরাওয়ার্দী হল হয়ে ছাত্রশিবির
নিয়ন্ত্রিত শাহ আমানত হলের
সামনে যায়।

ছাত্রলীগের নেতা-
কর্মীরা শাহ আমানত হলের মূল ফটকের
তালা ভেঙে হলের সামনে অবস্থান
নেন। এ সময় ছাত্রলীগ ও শিবিরের
মধ্যে ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়।
গুলির শব্দও শোনা যায়। ছাত্রলীগের
নেতা-কর্মীরা কয়েক দফা ওই
হলে ঢোকার চেষ্টা করলেও পুলিশের
বাধায় ব্যর্থ হয়। পরে ছাত্রলীগের
দাবির মুখে পুলিশ ওই
হলে তল্লাশি চালিয়ে শিবিরের ১৮
জন নেতা-কর্মীকে আটক করে।


বিকেল সাড়ে চারটার
দিকে ছাত্রলীগের নেতা-
কর্মীরা শাহ আমানত
হলে ঢুকলে শিবিরের নেতা-
কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। উভয়
পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় হয় এবং বেশ
কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণও
ঘটানো হয়। বিভিন্ন হল
থেকে ছাত্রশিবিরের নেতা-
কর্মীরা শাহ আমানত হলের
দিকে আসার চেষ্টা করলে পুলিশ
ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ
করে দেয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ
সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম
আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের
হামলায় আমাদের এক নেতা খুন
হয়েছেন। আরও দুই-একজন নেতা-
কর্মীকে খুঁজে পাচ্ছি না।


বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের
সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আরিফুল
ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মিছিল শাহ
আমানত হলের
সামনে গেলে ছাত্রশিবিরের
ক্যাডাররা উসকানিমূলক মন্তব্য করে।
আমরা এর প্রতিবাদ
করতে গেলে তারা আমাদের ওপর
গুলি ছোড়ে। আমরা তাদের প্রতিরোধ
করি। এই ঘটনার জন্য শিবিরই দায়ী। ’
শাহ আমানত হল বন্ধ ঘোষণা, তদন্ত
কমিটি গঠন: উদ্ভূত
পরিস্থিতি নিয়ে রাতে উপাচার্য
আনোয়ারুল আজিমের
সভাপতিত্বে জরুরি বৈঠকে বসে
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।


বৈঠকে পরবর্তী নির্দেশ
না দেওয়া পর্যন্ত শাহ আমানত হল বন্ধ
ঘোষণা এবং ঘটনা তদন্তে তিন
সদস্যের কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক শেষে রাতে উপাচার্য
সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি ঘটনার
প্রতিক্রিয়া হিসেবে
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র নিহত
হয়েছে। তার লাশ গ্রামের
বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার
ব্যবস্থা করছি। পরবর্তী নির্দেশ
না দেওয়া পর্যন্ত শাহ আমানত হল বন্ধ
থাকবে। ’ উপাচার্য জানান, সংঘর্ষের
ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
করা হয়েছে।

বন ও
পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের
অধ্যাপক মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে এ
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন
সহকারী প্রক্টর অহিদুল আলম এবং বন ও
পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক
জসীম উদ্দিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.