আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপরাজনীতি বিরোধী দুঃসাহসী উপন্যাস ঋষি এস্তেবানের 'বাস্টার্ড'

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

সুদীর্ঘ ১৯০ বছর ব্রিটিশ শাসনের পর বাংলাদেশকে আবার ২৪ বছর পাকিস্তানী দুঃশাসনে নিস্পেশিত হতে হয়। তারপর দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয় বাংলাদেশের চূড়ান্ত স্বাধীনতা। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী মাত্র চার বছরের মাথায় খুনি ঘাতকচক্র পাকিস্তান ও মার্কিনীদের যোগসাজসে সপরিবারে খুন করে বঙ্গবন্ধুকে। পরবর্তী তিন মাসের মাথায় জেলখানায় হত্যা করে বঙ্গবন্ধু'র চার প্রধান সহযোগীকে। তারপর রাষ্ট্রক্ষমতা চলে যায় সেই পাকিস্তানী দালাল ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের মদদপুষ্ট পতিত পাকদোসরদের দখলে।

ঔপন্যাসিক ঋষি এস্তেবান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাঙালি জাতির সেই কলংকময় অধ্যায় নিয়ে লিখেছেন এক ভিন্ন আঙ্গিকের উপন্যাস 'বাস্টার্ড'। সম্পূর্ণ নড়াইলের আঞ্চলিক ভাষায় নাতীদীর্ঘ এই উপন্যাসে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কিভাবে সামরিক শাসনের জাতাকলে স্বাধীন বাংলাদেশ আবার পাকিস্তানী ভাবধারায় নতুন করে যাত্রা শুরু করল, তার এক দুঃসাহসী, নির্ভিক ও নির্ভেজাল উচ্চারণ ঋষি এস্তেবানের 'বাস্টার্ড'। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। পচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সামরিক শাসনের আড়ালে সেই মার্কিন মদদপুষ্ট ও পাকিস্তানী ভাবধারার দোসররাই বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসে। প্রথমে তারা কারাবন্দি পাকিস্তানপন্থী রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও জামায়াত নেতাদের বিনা শর্তে মুক্তি দেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা জামায়াতের অনেক পলাতক নেতাদের আবার বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী'র আসনে বসান এক কুখ্যাত জামায়াত নেতাকে। তারপর সংবিধান পরিবর্তন করে জারী করেন কুখ্যাত কালো আইন 'ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ'। এই আইনের বলে বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচারের পথ রহিত করা হয়। পাশাপাশি সংবিধান থেকে বাংলাদেশের প্রধান চারটি নীতি পরিবর্তন করে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পরিবর্তে সেখানে সংযোজন করা হয় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি।

পতিত জামায়াত ও পাকিস্তানপন্থীদের সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়। পাশাপাশি মার্কিন মদদে দেশের সকল জাতীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে সেখানে বিকেন্দ্রীকরণের নামে শুরু হয় এক অভিনব রাষ্ট্রধ্বংসের খেলা। ঔপন্যাসিক ঋষি এস্তেবান দুঃসাহসী বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে 'বাস্টার্ড' উপন্যাসে সেসব তুলে ধরেছেন অত্যন্ত নির্ভেজাল বয়ানে।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সেই প্রথম সামরিক শাসন পরবর্তী সময়ে কিভাবে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার উৎস বন্দুকের নল আর অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনকারী অপশক্তির হাতে কাদের ইসারায় কিভাবে চলে যায়, সেসব সত্য ঘটনার এক নির্ভিক উচ্চারণ 'বাস্টার্ড' উপন্যাসের পৃস্ঠায় পৃষ্ঠায়। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস যখন ধর্মভিত্তিক দুর্বল কাঠামোর মোড়কে সর্বত্র বিস্তার লাভ করে, তখন কিভাবে একে একে দেশের সকল শৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক, প্রতিবেশী-বন্ধু সম্পর্ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, অপরাজনীতির বিষবাষ্প ছড়িয়ে গোটা বাংলাদেশ ভূ-খণ্ড টুকরো টুকরো হয়ে যায়, কিভাবে সকল বন্ধন তীলে তীলে খসে ভেঙে চুড়ে একাকার হয়ে যায়, তার সচিত্র আখ্যান উঠে আসে ঋষি এস্তেবানের 'বাস্টার্ড' উপন্যাসে।


ঘটনা যখন ইতিহাসের পতিত কুশিলব ও কুচক্রীদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এভাবে পেছনে যাত্রা শুরু করে, তখন দেশের আইন শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের সর্বত্র কিভাবে দুর্নীতির বিষবাষ্প রোপিত হল, পাশাপাশি ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠনগুলো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ডালপালা ছড়িয়ে ক্ষমতা শক্তিশালী করার সকল রঙ্গ সাঙ্গ করল, সেসব বস্তুনিষ্ট অথচ সত্যকথন উঠে এসেছে 'বাস্টার্ড' উপন্যাসে এক ব্যতিক্রমি ঢঙে। পচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশে কিভাবে রাতারাতি চোর, বদমাস, লম্পট, ছিনতাইকারী, লুটপাটকারী, দখলবাজ, ভূমিদস্যু, বনদস্যু, ধর্ম-ব্যবসায়ী, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, চরদখলকারী, খাসজমি দখলকারী, আর স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত দোসরদের হাতে রাষ্ট্রীয় মদদে চলে গেল, তার এক সুদীর্ঘ রূপায়ন ঋষি এস্তেবানের উপন্যাস 'বাস্টার্ড'।
ঔপন্যাসিক ঋষি এস্তেবান 'বাস্টার্ড' উপন্যাস লিখতে নড়াইলের আঞ্চলিক ভাষাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। উপন্যাসের চরিত্রগুলো নড়াইলের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। কিন্তু ঘটনার পরম্পরা নড়াইলকে ছাড়িয়ে গোটা বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রতিটি পরিবারে, প্রতিটি মানুষের অন্তরের ক্ষোভ, দুঃখ, হাসি-ঠাট্টা, আনন্দ-বেদনা, ক্লেদ-অভিমান, বিষয়-আশয়ের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

তখন গোটা বাংলাদেশের হৃদয়ের ক্ষতটি সুস্পষ্টভাবেই ফুটে ওঠে 'বাস্টার্ড' উপন্যাসের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়। গোটা বাংলাদেশের প্রতিটি রক্তক্ষরণের দাগ ও অভিঘাতের বেদনা জড়িয়ে পড়ে সেই ঘোর লাগা তরতাজা ঘটনায়।
প্রচলিত উপন্যাসের বাইরে 'বাস্টার্ড' এক ভিন্নধর্মী সত্য প্রকাশের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ঔপন্যাসিক ঋষি এস্তেবান উপন্যাসের নানা ঘটনার মাধ্যমে পাঠকের অন্তরে সেই দাহটি জাগিয়ে দিতে চান, যা দিয়ে বাংলাদেশ আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সঠিক পথে নতুন করে যাত্রা শুরু করবে। অপরাজনীতি ও দুষ্টু রাজনীতির দুর্বত্তায়নের কবল থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন বাংলাদেশ গঠনে যে দীপ্ত শপথ ও দৃঢ়তার প্রয়োজন, সেই চূড়ান্ত শপথ নেবার জন্য যে ত্যাগ ও দেশপ্রেম মননে থাকা জরুরী, সেই অগ্নিগর্ব দীপ্ত শপথ নেবার জন্য পাঠককে উপন্যাস 'বাস্টার্ড' উৎসাহ যোগাবে বলেই আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

উপন্যাস 'বাস্টার্ড' প্রকাশ করেছে করাতকল। অমর একুশে বইমেলায় লিটলম্যাগ চত্বরের দ্রষ্টব্য, চালচিত্র ও লিটিলম্যাগ কর্ণারে পাওয়া যাবে ঋষি এস্তেবানের অপরাজনীতি বিরোধী উপন্যাস 'বাস্টার্ড'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী চারু পিন্টু।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.