আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

***যে পবিত্র আমলটি কুফরী করার পরও নষ্ট হয় না***



মহান আল্লাহ পাক উনার যমীনে এমন একটি মহান ও সম্মানিত আমল রয়েছে সেই মহাসম্মানিত পবিত্র আমলটি হলো আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা। অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ (১২ই রবীউল আউওয়াল) পালন করা। সুবহানাল্লাহ!
“ছহীহ বুখারী শরীফ” উনার দ্বিতীয় খণ্ডের ৭৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে- “হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত ছূয়াইবাহ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন আবু লাহাবের বাঁদী। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এ খুশি হয়ে উনার খিদমত করার জন্য আবু লাহাব হযরত ছূয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করে দিয়েছিল। এরপর আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে (হযরত ছূয়াইবা আলাইহাস সালাম) তিনি দুধ মুবারক পান করান।

অতঃপর আবু লাহাব যখন মারা গেলো (তার কিছুদিন পর) তার পরিবারের একজন অর্থাৎ তার ভাই হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, আবু লাহাব সে ভীষণ কষ্টের মধ্যে নিপতিত আছে। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার সাথে কিরূপ ব্যবহার করা হয়েছে। ” আবু লাহাব উত্তরে বললো, “যখন থেকে আপনাদের কাছ থেকে দূরে রয়েছি তখন থেকেই ভীষণ কষ্টে আছি। তবে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তথা খুশিতে আত্মহারা হয়ে বাঁদী হযরত ছূয়াইবা আলাইহাস সালাম উনাকে দু’আঙ্গুলের ইশারায় আযাদ করার কারণে সেই দু’আঙ্গুল হতে সুমিষ্ট ঠা-া ও সুশীতল পানি পান করতে পারছি। ”
“মাওলাহিবুল লাদুননিয়া” কিতাবের বিখ্যাত শরাহ “শরহুয যারকানী” কিতাবের ১ম খ-ের ২৬১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে- “হযরত ইবনুল জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আবু লাহাবের মতো কাট্টা কাফির- যার নিন্দায় পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র সূরা শরীফ পর্যন্ত নাযিল হয়েছে, তাকে যদি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার রাত্রিতে আনন্দিত হয়ে খুশি প্রকাশ করার কারণে জাহান্নামেও তার পুরস্কার দেয়া হয়ে থাকে; তবে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের কোনো মুসলমান যদি সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তার সাধ্যানুযায়ী টাকা-পয়সা ইত্যাদি খরচ করে, তাহলে তাদের অবস্থা কিরূপ হবে? নিশ্চয়ই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার ফযল ও করমে অবশ্যই অবশ্যই তাকে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

” সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে আল্লামা হযরত শিহাবুদ্দীন ইবনে হাজার হাইছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ কিতাব “আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম” উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন -“যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ অর্থাৎ পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবে; সে ব্যক্তি জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে। ” সুবহানাল্লাহ!
আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন -“যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (বিলাদত দিবসকে) বিশেষ মর্যাদা দিল সে মূলতঃ ইসলামকেই পূনরুজ্জীবিত করল। “ (সুবহানাল্লাহ্‌)
আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন -“যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে এক দিরহাম খরচ করল সে যেন বদর ও হুনায়েন যুদ্ধে শরীক থাকল। ” (সুবহানাল্লাহ্‌)
আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন -“যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করল সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ”
হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন -“যে স্থানে বা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় বা মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্‌্‌যাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাকের ফেরেস্তাগণ বেষ্টন করে নেন।

আর তাঁরা সে স্থানের অধিবাসী গণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেস্তা, অর্থাৎ হযরত জিব্রাইল, মীকাইল, ইসরাফিল ও আযরাইল আলাইহিমুস্‌্‌ সালামগণ মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর বা মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীর উপর সালাত-সালাম পাঠ করেন“। (সুবহানাল্লাহ্‌)
কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হযেছে-قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحواهوا خير مما يجمعون-অর্থাৎ হে হাবীব ছল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন,আল্লাহপাক তিনি স্বীয় নিয়ামত ও রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করেছেন,সে কারণে তারা যেন খুশি প্রকাশ করে,এই খুশি প্রকাশ করাটা সে সব কিছু থেকে উত্তম,যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য জমা করে থাকে৤সুবহানাল্লাহ!(সুরা ইউসুস শরীফ:আয়াত শরীফ ৫৮)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি এবং সমস্ত মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি মুহব্বত না করবে। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তার মাল ও জান অপেক্ষা বেশি মুহব্বত না করবে।


মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য না থাকলে আমি আমার রুবুবিয়্যতই প্রকাশ করতাম না। ” “নিশ্চয় মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও উনার প্রতি ছলাত পাঠ করো এবং সালাম দেয়ার মতো সালাম দাও অর্থাৎ যথাযথ আদবসহকারে তথা ক্বিয়াম বা দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করো। ” “আমি আপনার সুমহান মর্যাদাকে বুলন্দ করেছি। ” “তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্মরণ করো।

” “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সমস্ত আলমের জন্য রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছি। ”
আর আফসোস ঐসব হতভাগাদের জন্য,যারা আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে না এবং কম আকল, কম সমঝ,কম জ্ঞান, জাহিল, ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ এবং গুরুত্ত না বুঝার কারনে সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ পালন করাকে বিদায়াত বলে |
মুলত:সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ পালন করলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে রয়েছে বিশেষ নিয়ামত. কাজেই বান্দা বান্দি জ্বিন ইনসান সহ সকলর জন্য ফরজ ওয়াজিব হলো সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদুল ঈদুল আযম, ঈদে আকবর, ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্কে যথাযথভাবে খুশি প্রকাশ করা,অতএব মহান আল্লাহ পাক যেন আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক সেই যোগ্যতা দান করেন্৤ আমীন!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.