আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পবিত্র আশূরা শরীফ উনার পবিত্র ফাযায়েল ফযিলত ও আমল সম্পর্কে

জীবন কখনোই সংগ্রাম বিহীন হতে পারে না নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মুহররম মাস উনাকে তথা আশূরা উনার দিন উনাকে সম্মান করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাত উনার দ্বারা সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন। ১৪৩৪ হিজরীর ১০ই মুহররম বা পবিত্র আশূরা হচ্ছে ইয়াওমুল আহাদী বা রোজ রোববার, ২৫ নভেম্বর, ২০১২ ঈসায়ী। পবিত্র আশূরা সকলের জন্যই রহমত, বরকত, সাকীনা ও মাগফিরাত-এর দিন। পাশাপাশি রোযাসহ বহুবিধ নেক আমলের দিন। তাই বাংলাদেশ সরকারসহ বিশ্বের সকল মুসলিম অমুসলিম সরকারের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে- এ মহান দিন উপলক্ষে কমপক্ষে ৩ দিন ছুটি ঘোষণা করা এবং এ দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

“হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, তোমরা মুহররম মাস উনাকে এবং এর মধ্যস্থিত আশূরা উনার দিন উনাকে সম্মান করো। যে ব্যক্তি মুহররম মাস উনাকে তথা আশূরা উনার দিন উনাকে সম্মান করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাত উনার দ্বারা সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন। ” এ প্রসঙ্গে কিতাবে একটি ওয়াকিয়া বর্ণিত রয়েছে, এক ব্যক্তি ছিলো গরিব ও আলিম। একবার অসুস্থতার কারণে তিনি তিন দিন যাবৎ কাজ করতে পারলেন না। চতুর্থ দিন ছিল আশূরা উনার দদিন।

তিনি আশূরা উনার দিনে ভাল খাওয়ার ফযীলত সম্পর্কে জানতেন। তখন ছিলো কাজীদের (বিচারক) যুগ। কাজী ছাহেব ধনী ব্যক্তি ছিলো। তার কাছে আশূরা উনার ফযীলতের কথা বলে এবং নিজের অসুস্থতা ও পরিবারের অভুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করে দশ সের আটা, দশ সের গোশত ও দুই দিরহাম চাইলেন যে, ‘এই পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য হাদিয়া অথবা কর্জ হিসেবে দিন। ’ কাজী ছাহেব তাকে যোহরের সময় আসতে বললো।

যোহরের সময় কাজী ছাহেব বললো, আছরে আসতে। কিন্তু এরপরে আছরের সময় মাগরিব, মাগরিবের সময় ইশা এবং ইশার সময় সরাসরি না করে দিলো। তখন গরিব আলিম ব্যক্তি বললেন, হে কাজী ছাহেব! আপনি আমাকে দিতে পারবেন না সেটা আগেই বলতে পারতেন, আমি অন্য কোথাও ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু তা না করে আমাকে সারাদিন ঘুরিয়ে এই শেষ মুহূর্তে না করছেন? কাজী ছাহেব সেই গরিব, আলিম ব্যক্তির কথায় কর্ণপাত না করে ঘরের দরজা বন্ধ করে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। মনের দুঃখে আলিম লোকটি তখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন।

পথে ছিলো এক খ্রিস্টানের বাড়ি। একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে কাঁদতে দেখে উক্ত খ্রিস্টান তাঁকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু বিধর্মী বিধায় খ্রিস্টানকে প্রথমে তিনি কিছু বলতে চাইলেন না। অতঃপর খ্রিস্টানের অধীর আগ্রহের কারণে তিনি আশূরা উনার ফযীলত ও তার বর্তমান দুরবস্থার কথা ব্যক্ত করলেন। খ্রিস্টান ব্যক্তি তখন উৎসাহী হয়ে তাকে আশূরা উনার সম্মানার্থে দশ সের আটা, দশ সের গোশত, দুই দিরহাম এবং অতিরিক্ত আরো ২০ দিরহাম দিল এবং বললো যে, আপনাকে আমি আশূরা উনার সম্মানার্থে প্রতিমাসে এ পরিমাণ হাদিয়া দিবো।

ওই ব্যক্তি তখন তা নিয়ে বাড়িতে গেলেন এবং খাবার তৈরি করে ছেলে-মেয়েসহ আহার করলেন। অতঃপর দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আমাকে সন্তুষ্ট করলো, আমার ছেলে-মেয়েদের মুখে হাসি ফোটালো, আল্লাহ পাক আপনি তার দিল খুশি করে দিন, তাকে সন্তুষ্ট করে দিন। ” ওই রাতে কাজী ছাহেব স্বপ্ন দেখলো। স্বপ্নে কাজী ছাহেবকে বলা হচ্ছে, হে কাজী ছাহেব! তুমি মাথা উত্তোলন করো। মাথা তুলে কাজী ছাহেব দেখতে পেলো যে, তার সামনে দুটি বেহেশতের বালাখানা।

একটি স্বর্ণের আরেকটি রৌপ্যের। কাজী ছাহেব বললো, ‘আয় আল্লাহ পাক! এটা কি?’ গায়িবী আওয়াজ হলো, ‘এ বালাখানা দুটি তোমার ছিলো। কিন্তু এখন আর তোমার নেই। কারণ তোমার কাছে যে গরিব আলিম লোকটি আশূরা উপলক্ষে সাহায্যের জন্য এসেছিলেন তাকে তুমি সাহায্য করোনি। এজন্য এ বালাখানা দুটি এখন ওমুক খ্রিস্টান লোকের হয়েছে।

’ অতঃপর কাজী ছাহেবের ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম থেকে উঠে ওজু ও নামায আদায় করে সেই খ্রিস্টানের বাড়িতে গেলো। খ্রিস্টান কাজী ছাহেবকে দেখে বিস্ময়াভূত হলো। কারণ কাজী ছাহেব খ্রিস্টানের পড়শি হওয়া সত্ত্বেও জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো সময় তার বাড়িতে আসতে দেখেনি। অতঃপর খ্রিস্টান ব্যক্তি কাজী ছাহেবকে বললো, ‘আপনি এতো সকালে কি জন্য এলেন?’ কাজী ছাহেব বললো, ‘হে খ্রিস্টান ব্যক্তি! তুমি গত রাতে কি কোনো নেক কাজ করেছো?’ খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, আমার খেয়ালে আসে না যে, আমি কোনো উল্লেখযোগ্য নেক কাজ করেছি।

তবে আপনি যদি জেনে থাকেন তাহলে আমাকে বলতে পারেন। তখন কাজী ছাহেব বললো, তুমি গত রাতে আশূরা উপলক্ষে এক গরিব আলিমকে দশ সের আটা, দশ সের গোশত, দুই দিরহাম এবং তার সাথে আরো বিশ দিরহাম হাদিয়া করেছো এবং প্রতি মাসে তাঁকে এ পরিমাণ হাদিয়া দেয়ার ওয়াদা করেছো। খ্রিস্টান ব্যক্তি তা স্বীকার করলো। কাজী ছাহেব বললো, তুমি তোমার এই নেক কাজ এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে আমার নিকট বিক্রি করে দাও এবং তুমি উনার সাথে প্রত্যেক মাসে যে ওয়াদা করেছো আমি তাঁকে তা দিয়ে দিবো। ’ খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, হে কাজী ছাহেব! আপনি কি জন্য এই সামান্য হাদিয়া করার বিনিময়ে আমাকে এক লক্ষ দিরহাম দিবেন সেটা স্পষ্ট করে বলুন? তখন কাজী ছাহেব তার স্বপ্নের কথা খুলে বললো যে, এই গরিব আলিম আশূরা উপলক্ষে আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিলো আমি তাকে সাহায্য করিনি।

যার কারণে রাতের বেলা আমাকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের দ্বারা তৈরি বেহেশতের দুটি বালাখানা স্বপ্নে দেখিয়ে বলা হয়েছে, হে কাজী ছাহেব! ‘এ বালাখানা দুটি তোমার ছিলো। কিন্তু এখন আর তোমার নেই। কারণ তোমার কাছে যে গরিব আলিম লোকটি আশূরা উপলক্ষে সাহায্যের জন্য এসেছিলেন তাকে তুমি সাহায্য করোনি। এজন্য এ বালাখানা দুটি এখন ওমুক খ্রিস্টান লোকের হয়েছে। ’ কাজী ছাহেব বললো, তুমি তো খ্রিস্টান।

তুমি তো এই বালাখানা পাবে না। কারণ, ইসলাম আসার পরে পূর্ববর্তী সমস্ত ধর্ম বাতিল হয়ে গেছে। কাজেই সেই ধর্মের উপর যারা থাকবে তারা জান্নাত উনার লাভ করতে পারবে না। তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, আমি যদি ইসলাম গ্রহণ করি তাহলে কি এই বালাখানার মালিক হতে পারবো? তখন কাজী ছাহেব বললো, হ্যাঁ, তুমি যদি ইসলাম গ্রহণ করো তাহলে বালাখানা লাভ করতে পারবে। তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, হে কাজী ছাহেব! আপনি সাক্ষী থাকুন আমি এক্ষণি কালিমা শরীফ পড়ে মুসলমান হয়ে গেলাম।

সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ খ্রিস্টান ব্যক্তি পবিত্র আশূরাকে সম্মান করার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাঁকে ঈমান দান করলেন এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত দিয়ে জান্নাত উনার দান করলেন। আশূরা উনার দিনে বেশকিছু আমলের কথাও হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে। যেমন- ১. ১০ই মুহররম উপলক্ষে দুটি রোযা রাখা। অর্থাৎ ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ। শুধু ১০ তারিখ রোযা রাখা মাকরূহ।

সম্ভব হলে উক্ত দিনে যারা রোযা রাখবে তাদের এক বা একাধিকজনকে ইফতার করানো। ২. সাধ্যমত পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ানো। ৩. গোসল করা। ৪. চোখে সুরমা দেয়া। ৫. গরিবদেরকে পানাহার করানো।

৬. ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো। এসব প্রত্যেকটি আমলই সুন্নত এবং অশেষ ফযীলত লাভের কারণ। তাই প্রত্যেক মুসলিম অমুসলিম সরকারের জন্য দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে, এ দিন উপলক্ষে কমপক্ষে ৩ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা। বিশেষ করে মুসলমান হিসেবে প্রত্যেক মুসলমান সরকারের উচিত দেশে ইসলামী ঐতিহ্য ও ফযীলতযুক্ত দিনগুলোর মর্যাদা অনুধাবনে ও ফযীলত আহরণের সুবিধার্থে এবং জজবা ও দ্বীনি অনুপ্রেরণা লাভের জন্য সেদিনগুলোতে সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ছুটির দিন ঘোষণা করা। পাশাপাশি অমুসলিম সরকারেরও উচিত মুসলমানদের পবিত্র দিনগুলোতে সরকারি ছুটির ব্যবস্থা করা।

কারণ, পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই মুসলমান রয়েছে এবং পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই মুসলমান। যদি পহেলা মে, বুদ্ধ পূর্ণিমা, দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য দিনে মুসলিম বিশ্বে ছুটি দেয়া যেতে পারে যার সাথে মুসলিম ঐতিহ্যের কোন সম্পর্ক নেই এবং যা মুসলমানদের প্রয়োজনও নেই। তবে আশূরা উপলক্ষে ৩ দিন ছুটি দেয়া যাবে না কেনো? অবশ্যই দিতে হবে। আশূরা, পহেলা রজবের রাত, শবে বরাত, শবে ক্বদর এবং দু’ঈদের দু’রাতের সাথে সাথে ইসলামের বিশেষ বিশেষ দিন ও রাতগুলিতে মুসলিম দেশের সরকাররা ছুটি ঘোষণা করলে সাধারণ মুসলমান সহজেই সেসব দিনের মর্যাদা-মর্তবা অনুধাবন করে তার ফযীলত, রহমত অন্বেষণে উদ্যোগী হতো। তাদের মধ্যে জজবা মুহব্বত তৈরি হতো।

তারা ফযীলত হাছিল করতে পারতো। তাদের বর্তমান দুরবস্থা সহজেই কাটতো। মূল কথা হলো- ১৪৩৪ হিজরীর ১০ই মুহররম বা পবিত্র আশূরা হচ্ছে ইয়াওমুল আহাদী বা রোজ রোববার, ২৫ নভেম্বর, ২০১২ ঈসায়ী। পবিত্র আশূরা সকলের জন্যই রহমত, বরকত, সাকীনা ও মাগফিরাত-এর দিন। পাশাপাশি রোযাসহ বহুবিধ নেক আমলের দিন।

তাই বাংলাদেশ সরকারসহ বিশ্বের সকল মুসলিম অমুসলিম সরকারের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে এ মহান দিন উপলক্ষে কমপক্ষে ৩ দিন অর্থাৎ ৯, ১০ ও ১১ই মুহররম ছুটি ঘোষণা করা এবং এ দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.