আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ হাসপাতালের গল্প



ড হাছান একজন বিশিষ্ট চিকিতসক। গত ২০ বছরে নিজেকে উনি প্রতিষ্ঠার পর্বতশীর্ষে তুলে এনেছেন। উনার বউ বাচ্চা থাকে ক্যানাডায়। ঢাকায় ভালো স্কুল নেই, হাসপাতাল নেই। ম্যাডাম হাছান মনে করেন, ঢাকা হচ্ছে বস্তি।

এখানে থাকা যায়না। ড হাছান নিজেই যেখানে একটি হাসপাতালের সিইও ; সেখানে ঢাকায় হাসপাতাল নেই কথাটা কেমন পরাবাস্তব শোনালো মনে হচ্ছে। মিসেসে হাসানকে মুঠোফোনে এই প্রশ্নটি করতেই উনি বললেন, নো কমেন্ট।
সুতরাং বাধ্য হয়ে ড হাছানের বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালটি পরিদর্শনে গেলাম আমরা। বাইরে থেকে হাসপাতালটি ছিমছাম।

একেবারে ডিজিটাল হাসপাতাল। উপর থেকে খুবই সুন্দর। একেবারে ফিটফাট। বাইরে একটি ডিজিটাল ব্যানারে লেখা, দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান হাসপাতাল।

হাসপাতালের মিডিয়া উপদেষ্টা ড ছওহর হাতে ফুলের গোছা, মুখে প্রস্ফুটিত হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

ছওহর সাহেব অত্যন্ত মার্জিত রুচির লোক। অফিসে ঢুকেই ফট করে ল্যাপটপ অন করে একটি স্লাইড শো দেখালেন। হাসপাতালের রোগীদের মনে হচ্ছে জান্নাতুল ফেরদাউসে রাখা হয়েছে; স্লাইড শো দেখে।
এরি মাঝে দু'টুকরো সন্দেশ, স্যান্ডউইচ, কফি এসে হাজির। আশ্চর্য কান্ড তরুণী ইনটার্ণ ডা ছালমা নিজ হাতে নিয়ে এসেছেন এই মন্দিরের প্রসাদ।

এতো সুন্দর পরিবেশ। তাও বাংলাদেশে। আর মিসেস হাছান বলেন কীনা ঢাকায় হাসপাতাল নেই!

কফি শেষ করতেই ছওহর সাহেব বললেন, চলুন সেমিনার রুমে; সবাই অপেক্ষা করছেন। ছোট্ট একটা গোল টেবিল বৈঠকে আপনাকে হাসপাতাল সম্পর্কে অবহিত করা হবে। ওখানে চিকিতসা শাস্ত্রের মানসপুত্র হাসপাতাল রত্ন ড হাছান থাকছেন।

উনি এই সেবাসদনটির 'শান্তির' মডেলের জনক। হাসপাতালটি মনে হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান তারকা। এখানে সেমিনার কক্ষও আছে। মুগ্ধতায় চোখের পানি লুকাতেই; হঠাত একটা ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজে প্রকম্পিত হলো হাসপাতাল। ছওহর সাহেব মুচকি হেসে বললেন, ভালো কাজ করতে গেলে বাধা অনেক।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী মৌলবাদী তালেবানরা হাসপাতাল দখল করতে চেষ্টা করছে। তবে আমাদের সিকিউরিটি খুব কড়া। ড হাছানের ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর বড় ভাই জেনারেল ছারেক আমাদের প্রতিরক্ষা করে চলেছেন গত পাঁচ-বছর ধরে। সুতরাং আপনি ভয় পাবেন না। চলুন সেমিনারের দেরী হয়ে যাচ্ছে।



ড ছওহর সমভিব্যহারে সেমিনার কক্ষের দিকে এগুতেই পথে দেখা এক ইস্পাত-কঠিন লোকের সঙ্গে। জেনারেল ছারেক ওয়াকিটকিতে ওভার, ওভার বলছিলেন। ছওহর পরিচয় করিয়ে দিতেই জেনারেল সাহেবের ওভার ওভার থেমে গেল। জুরিখে উনার ছোটবোন জামাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল বলতেই উনি আবার ওভার ওভার করতে শুরু করলেন। উনাকে জুরিখের কথা বলাটাই ভুল হয়েছে।

ককটেল ফেস্ট প্রায়ই হয় কীনা; জানতে চাইলে আবার উনার ওভার ওভার থেমে যায়। উনি অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল, কিন্তু প্রতিরক্ষা রত্ন হবার কারণে আমৃত্যু এই সেবা ভূমি রক্ষার করে যাবেন বলে প্রমিজ করেছেন। ছারেক সাহেব বললেন, উনার সিকিঊওরিটি ইউনিটের লোকেরা হাসপাতালের নিরাপত্তা দিতে পারে; কিন্তু ককটেলের শব্দের গ্যারান্টি দিতে পারেনা। সে তো অবশ্যই বলে জেনারেল সাহেবের রিটায়ার্ড আর্মি টক এবং বাঘ মারার গল্প আর একদিন শোনার আগ্রহ মনে চেপে সেমিনার কক্ষের দিকে এগুলাম। শুধু বললাম এই গ্রীষ্মে জুরিখে উনার বোন আর দুলামিয়ার সঙ্গে দেখা হলে আপনার কথা বলবো।

জুরিখ শব্দটা শুনলেই ছারেক সাহেব কেমন ম্রিয়মান হয়ে যাচ্ছেন।

আমি ছওহর সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, এর আগে হাসপাতালের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতেন? ছওহর সাহেব বললেন, উনার নামও ছারেক। সবাই উনাকে হাওয়া-ছারেক বললে বেশী চেনে। চিনতে পেরে হাসি চেপে গোলটেবিল ঘরে ঢুকে পড়লাম। খুব সুন্দর পরিবেশ।

সবার মুখে মিষ্টি হাসি। পুরুষ ডাক্তারেরা অধিকাংশই মুজিব কোট পরা। বিশেষ করে মেধাবী সৎ তরুণ ডাক্তারেরা। নারী ডাক্তাররা সবাই শাড়ী পরা, অসম্ভব সুন্দর সব শাড়ী। সবার মাথায় ঘোমটা টানা।

সাক্ষাত বেগম রোকেয়া এক-একজন।
হাসপাতাল রত্ন ড হাছান ঢুকতেই সবাই ধড়মড় করে উঠে দাঁড়ালো। হাছান সাহেব উষ্ণ করমর্দন করে একটি উত্তরীয় পরিয়ে দিলেন। তাতে লেখা শান্তি, শান্তি, শান্তি। হঠাত বিকট আওয়াজ করে ককটেল বিস্ফোরিত হলো।

মেয়েরা আয়াতুল কুরসী পড়তে শুরু করলো। ছেলেরা শ্লোগান দিতে শুরু করলো, ভয় করিনা বুলেট বোমা, নেতা মোদের হাছান বোমা।

আমি হাছান সাহেবকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলাম না। এই হাসপাতাল থেকে ফিরবো কীভাবে এই দুঃশ্চিন্তায় বুকটার মধ্যে ছ-আনা, পাঁচ আনা শুরু করলো। সেমিনার শুরু হলো।

প্রথমেই কোরান তেলওয়াত। শেষ হলে ছওহর সাহেব বললেন, আপনাকে গীতা-বাইবেল-ত্রিপিটক পাঠ শোনানোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু অন্য ধর্ম্মের ডাক্তাররা তালেবান হামলায় মারা যাওয়ায় শোনানো গেলোনা। এমনিতে আমরা খুব সেক্যুলার।

শুরু হলো আলোচনা পর্ব।

একজন তরুণ ডাক্তার ড হাছানের তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা মারাত্মক সুন্দর বক্তৃতা দিলেন। কী মিষ্টি হাসি। বুঝিয়ে দিলেন, ডাক্তারদের ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়ানোর দরকার নেই। সিসিটিভিতে রোগীর সার্বক্ষণিক কঁকানী দেখে নিজের কিউবিক্যালে বসেই চিকিতসা দিতে সক্ষম এই হসপিটালের ডাক্তারেরা। উপস্থিত ডাক্তারেরা বিস্ফারিত নেত্রে তরুণের বক্তৃতা শুনছিল।

কারো কারো চোখে মুগ্ধতার অশ্রু। সবাই আর্তনাদের মতো করে বলে উঠলো, হার্ভার্ড-হার্ভার্ড-হার্ভার্ড। আবার বিস্ফোরিত হলো তালেবান ককটেল।
বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালটি ককটেলের আওয়াজে প্রকম্পিত হলে সেমিনার কক্ষে ওয়াকিটকি হাতে প্রবেশ করেন জেনারেল ছারেক। উনি সবাইকে ‘অভয়’ দিয়ে বলেন, প্লিজ কান্টিনিউ, প্লিজ কান্টিনিও; সিচুয়েশন আন্ডার কন্ট্রোল।

উনি তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা বিস্ময় বালককে সঙ্গে করে নিয়ে যান। মারাত্মক কার্টিয়াস এই বাংলার বিল গেটস ছয়-ভাইয়া। উনি মিষ্টি হেসে বেরিয়ে যান। পাশে বসা ‘মুজিব কোট’ পরা সৎ ও দক্ষ তরুণ ডাক্তারটি ফিসফিস করে বলে, উনাকে আম্রিকা যেতে হবে। উনি শাহজালাল বিমানবন্দরে যাচ্ছেন পিলেন ধরতে।

অনেক বিজি মানুষ। কিন্তু পরওয়ারদিগারের কুদরত; উনি আমাদের সময় দেন।

এবার বক্তৃতা দিতে এলেন হাসপাতালের অন্যতম ফাইনান্স পরিচালক ড হাছিফ। খুব আন্তরিক মানুষ। উনি বোঝালেন, এই হাসপাতালে যে তালেবানেরা ককটেল এটাক করে; তাদেরকেও কোলে করে এনে চিকিতসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

যাতে আবার ককটেল ফাটানোর কাজে ফিরে যেতে পারে। হাছিফ সাহেব হাছান সাহেবের প্রশংসা করতে গিয়ে বললেন, দেশের মানুষকে সুচিকিতস্যা দিতে গিয়ে নিজের জীবনকে বারবার ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন রোগীদের নয়নের মণি হাসপাতাল রত্ন।

এরপর বক্তৃতা দিতে এলেন হাসপাতালের আবেগ বিষয়ক পরিচালক ছারানা হালিম। উনি ক্রন্দসী ভঙ্গীতে টিস্যু দিয়ে সাইনাস মুছে বললেন, তালেবানদের শেষ দেখে ছাড়া হবে। হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতিকে মুছে দিয়ে এই হাসপাতালকে কান্দাহার হাসপাতাল বানানোর যে চেষ্টা চলছে তা রুখে দেবে পেঙ্গুইন তারুণ্য।

সৎ যোগ্য তরুন ডাক্তাররা টেবিল থাবড়ায়। এরপর আপা কেঁদে ফেলেন। ছবরী ছারোয়ার ছারানা আপাকে মেক-আপ রিফ্রেশ করতে প্রসাধন কক্ষে নিয়ে যান।
এরপর বক্তৃতা দিতে আসেন হাসপাতালের অন্যতম পশু-চিকিতসা শাখার পরিচালক ছাজাহান খান। উনি ধমক দিয়ে দিয়ে বক্তৃতা দেন।

পাশের ডাক্তারটি বলেন, দস্যু নিজাম আউলিয়া হয়্যা গ্যাছে। একসময় বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংছিলো। অহন বুকের মধ্যে উনার ছবি নিয়্যা গুরে। ছাজাহান বললেন, ছাংবাদিক ছাহেব ককটেল নিয়া ভাববেন না। আমাদের সিকিউরিটি খুব পাকা।

গরু-ছাগল চিনে এরা। এরা গো- ছাগু মারে না। পারলে মানুষ মারে। আর আমি নিজে যুদ্দ করছি। এইসব আমার কাছে ছব-ই-বরাতের পটকার শব্দের মতো লাগে।



হাসপাতালের উপদেষ্টা ছখা আলমগীর নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলেন। তাকে ঘুম থেকে তোলা হলো। উনি নাক ঘষতে ঘষতে ফ্যাসফেসে গলায় বললেন, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের স্তম্ভ ধরে নাড়াচাড়া করছে ছারেক বিন লাদেনের অনুসারীরা। অসুবিধা নাই। আমাদের জেনারেল ছারেক ছিদ্দিকী আছেন সিকিউরিটির ইন-চার্জ।

তাছাড়া রাশিয়া থেকে নতুন অস্ত্র কেনা হয়েছে। ছারেক বিন লাদেন এসব আগ্নেয়াস্ত্র চোখেও দেখেনি।

রাশিয়ার কথা বলতেই জুরিখের কথা মনে পড়ে যায়। ছারেক ছিদ্দিকীর বোন-দুলা জুরিখে ছাহবুবভস্কির সঙ্গে ক্যাপচুনো খাচ্ছিলেন। ছাহবুব রাশিয়ার অস্ত্রগুলো কিনে এনে দিয়েছে মস্কো থেকে।

খুব কামেল ঠিকাদার।

বক্তৃতা শুনলে প্রচন্ড মাথা ব্যথা হয়। লুকিয়ে কপাল টিপে শুনতে থাকি বক্তৃতামালার ক্রস-ফায়ারে। পাশের ডাক্তার দুটো প্যারাসিটামল এগিয়ে দিয়ে বলে, আরো এক’ঘন্টা চলবে; এইটা খাইয়ে নিন। বালো লাগবে।

আল্লাহ সত্যিই এক অবতার পাঠিয়েছেন আমার পাশের চেয়ারে।
সেমিনার শেষ হবার কোন লক্ষণ নেই। এরমাঝে কিছু তালেবান ডাক্তার এসে ড ছানিফকে ফুল দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে’ যোগ দেয়। পাশের চেয়ারের সৎ তরুণ অবতার ডাক্তার সাথীদের সঙ্গে মুসাবা করে ফিরে আসে। আমার উসখুশানি টের পেয়ে ড হাছান আলোচনা সংক্ষিপ্ত করে চলে গেলেন ‘এই হাসপাতালে সুস্থ হওয়া রোগী প্রদর্শনীতে;’ বেশ তাগড়া শরীরের কয়েকজন মাঝ-বয়েসী জব্বারের বলি খেলোয়াড়দের মত পেশী ফুলিয়ে বসে আছে।

তারা একে একে বর্ণনা করে তাদের সুস্থ হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতার কথা। এইসময় হুড়মুড় করে ঢোকে কয়েকজন ‘অনুভূতিশিল্পী’; তারা ক্যামেরা-মাইক্রোফোন নিয়ে এমবেডেড জার্নালিস্ট ছ্যারি কুইন আপার মত ছেলিব্রেটি ভঙ্গীতে ঘাড় দুলায়, কান চুলকায়, চারকোণা মুখ ফুলিয়ে হাসে। তারা এখানে না এলে এই সমস্ত আয়োজন ব্যর্থ হয়ে যেতো; এমন একটি সুতরাং কৃতার্থ হও কৃতার্থ হও মুদ্রায় স্যান্ডুইচ-সন্দেশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইন্টার্ণ ডাক্তার ছালমা বেদের মেয়ে জ্যোতস্নার বীণ বাজানোর লোকজ দেহভঙ্গিতে গিফট হ্যাম্পার বিতরণ করে ছ্যারি কিং ও কুইনদের মাঝে।

একজন সুস্থ হয়ে ওঠা কৃতজ্ঞ রোগী হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে।

হাছান ছার এমন চিকিতসা জানেন, এই হাসপাতাল পর্যন্ত আসতে হয়না, উনার বাসস্থান ছনভবনে গিয়ে উনার পা স্পর্শ করলেই বিনাচিকিতসায় ক্যানসার, এইডস, যক্ষা ভালো হয়ে যায়। শুধু আয়োডিনের অভাবযুক্ত রোগীদের উনি ছনভবন থেকে চিরকুট লিখে এই হাসপাতালে পাঠান। সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের বর্ণনা শুনে যা মনে হলো; এদের কাউকেই মেমোরিয়াল হাসপাতাল পর্যন্ত আসতে হয়নি। ড হাসানের পদস্পর্শেই কাজ হয়ে গেছে।
এরপর এলেন আরেক অনাবাসী বিশাল বালিকা।

ড ছুতুল সত্যিই এক ডেডিকেটেড মানুষ। উনি বললেন অটিজম রোগের কথা। উনি লক্ষণ যা বললেন; সব আমার সঙ্গে মিলে যেতে লাগলো। শুরু হলো চিকন ঘাম। কারো সঙ্গে আই-কন্ট্যাক্ট করতে আড়ষ্ঠ লাগছিলো।

মনে হচ্ছিল সময় দ্রুত পার করতে সামনে রাখা টিস্যুগুলো ছিঁড়ি, বা সবাইকে লুকিয়ে উঠে গিয়ে বাগানে একটু একা একা ঘুরে আসি। ছুতুল আপা বক্তৃতা দেয়ার সময় দু’একবার আমার দিকে তাকালে মনে হচ্ছিল, আমার অটিজম আইডেন্টিফায়েড হয়ে গেলে; আপা যদি দয়াপরবশ হয়ে আমাকে এখানে ভর্তি করে দিয়ে ক্যানাডা চলে যান; জীবনে এখান থেকে ছাড়া পাবো বলে মনে হয় না।

পাশের অবতার ডাক্তার আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন আর ম্যারাথন নিজের নাক খোঁটরানোর কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। ছুতুল আপা বললেন, ছোট বেলায় অটিজম আইডেনটিফায়েড হলে স্পেশাল স্কুলে পাঠিয়ে শিশুকে সুস্থ করা যায়। কিন্তু দেরী হয়ে গেলে থেকে যায় সমাজের বোঝা হয়ে।



নিজেকে কিছুক্ষণের মধ্যেই সমাজের বোঝা মনে হতে লাগলো। মনের মধ্যে কে যেন টিটকারী দিয়ে বলছে, এই নাটকু তুই কী সমাজের বোঝা নাকি! একজন রিপোর্টার এসে হ্যান্ডশেক করে বললো, চলেন বাগানে যাই; কী প্যাচাল শুনতেছেন ভাই। চলেন বাইরে গিয়া বিড়ি ফুঁকে আসি। কতদিন আড্ডা দিইনা।

উঠতে যাবো এসময় পাশের ডাক্তার বললেন, ভাই এইটাই শেষ বক্তৃতা।

আপার আর তিনটা সেনটেন্স বাকী। আমারে নিয়মিত শুনতে হয়তো; আমি জানি। আমি হেসে ক্যাবলার মতো বসে থাকলাম। সাংবাদিক ছেলেটি একটু মন খারাপ করে সিগ্রেট খেতে বেরিয়ে গেলো।
আপা মিষ্টি হেসে বক্তৃতা শেষ করলেন।

এইসময় আবার ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ। বাইরে জেনারেল ছারেকের কন্ঠ, উই আর ফাইন; কান্টিনিউ।
হাছান সাহেব খুব সংক্ষেপে দু’টো কথা বললেন। উনি বললেন; এই হাসপাতাল আমার না চালালেও চলে। লন্ডনে মাছের ব্যবসা আছে।

সৎ ভাবে দুটো খেয়ে পরার নসিব আল্লাহ আমায় দিয়েছেন। যেতে পারিনা আপনাদের জন্য। ভুলে যাবেন না ছারেক বিন লাদেনের ২১শে অগাস্ট, ১৭ অগাস্ট গ্রেণেড হামলার কথা। বাংলাভাইয়ের কথা কী আপনারা ভুলে গেছেন। এবার আসল বাংলাভাইয়ের জমানা নিয়ে আসতে সক্রিয় ছারেক বিন লাদেন।

হাসপাতালের বাইরে কীভাবে ককটেল ফুটিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে দেখেন। আমি যতদিন বেঁচে আছি সুখে-দুঃখে আপনাদের সঙ্গে। হায়াত মউত আল্লাহর হাতে।

কিছুক্ষণ আগে হাসপাতালে যোগ দেয়া তালেবান ডাক্তাররা হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। টিভির এক ঝাঁকড়া চুলের চিত্রগ্রাহক পা গুলোকে ট্রাইপড বানিয়ে জুম ইন করে।


আমি সেমিনার শেষে আর ভুল করে হাছান সাহেব বা ছুতুল আপার কাছে গেলাম না। শেষ বয়সে অটিজম আইডেন্টিফায়েড হয়ে আর কী লাভ।
ছওহর সাহেব এসে বললেন, কেমন লাগলো?

প্রশ্নের ধরণ এমন যেন আমি এতক্ষণ ধুম-থ্রী দেখছিলাম। উনাকে বললাম রোগীদের কোন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যাবে কীনা? সরজমিনে দেখতে চাই আসলেই রোগীরা কেমন আছে? মনে মনে ভাবছিলাম, দেশে এতো সুন্দর ডিজিটাল হাসপাতাল থাকতে কেন হাছান সাহেবের ওয়াইফ দেশে হাসপাতাল নেই এই অজুহাতে ক্যানাডায় থাকে!

ছওহর সাহেব আরো মিষ্টি হেসে বললেন, আপনি দেখছি এনালগ যুগেই পড়ে আছেন। চলুন আমার রুমে যাই।

সিসিটিভিতে দেখিয়ে দেবো রোগীদের।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.