আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ হিংসুটে প্রাক্তন প্রেমিকা !

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!

-কেমন আছো ?
-হঠাৎ তুমি ?
আমার প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন শুনে নিশি খানিকটা থেমে গেল ! ফোনের ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না ! একটা সময় ছিল নিশির কোন প্রশ্নের জবাবে প্রশ্ন করলে খুব রেগে যেত । কিন্তু আজকে সে রাগবে না ! রাগ করার অধিকার সে হারিয়ে ফেলেছে । এখন কেবল সহ্য করতে হবে!
নিশি একদম শান্ত গলায় বলল
-কেন ? ফোন করতে পারি না ?
বাহ ! এতো নমনীয় ভাব কেন আজকে ?
কি হল কে জানে ?
আমি বললাম
-তোমার শরীর ঠিক আছে তো ?
-কেন ? এই কথা কেন বলছো ?
-না মানে এতো নমনীয় ভাবে কথা বলছো যে ? আগে তো কোন দিন বল নাই !
-আচ্ছা ! তোমার অসুবিধা হলে ফোন রেখে দেই !
-আরে না না ! । ফোন রেখো না ! প্রাক্তন প্রেমিকার কাছ থেকে ভাল ব্যবহার পেয়ে খুব ভাল লাগছে !
আবারও খানিক্ষন নিরবতা ! আমার অবশ্য মজাই লাগছে ! কিন্তু আজকে এতো সকালে নিশির ফোন করলো কেন হঠাৎ !
নিশি বলল
-আচ্ছা আজকে বিকেলে কি তোমার সময় হবে একটু !
-সময় ? হুম হবে ! আমি এখন সারাটা সময় একদম ফ্রী ! একটা বিষয় কি জানো ?
-কি ?
-তোমার সাথে যখন রিলেশন ছিল তখন আমি প্রায় সময়ই ব্যস্ত থাকতাম ! কিন্তু ব্রেকআপের পর থেকে কেমন যেন আমি একেবারে ফ্রী হয়ে গেছি !
-আচ্ছা ! বিকেল বেলা আমার সাথে দেখা করবা ?
আহা ! গলায় আবারও সেই নমনীয় স্বর ! আগে নিশি আমাকে যখন ফোন করে দেখা করতে বলতো তখন গলায় একটা কর্তৃত্বের সুর থাকতো ! দেখা করতে হবে মানে দেখা করতে হবে ! অন্য কিছু করা যাবে না ! আমার শত কাজ থাকলেও কোন কিছু শোনা শুনি নাই ! সে দেখা করতে চেয়েছে তার মানে দেখা করতেই হবে ! এই রকম করে কতবার যে টিউশনী কামাই গেছে তার কোন ঠিক ঠিকানা নাই ! শেষ পর্যন্ত টিউশনীটাই বাদ হয়ে গেল ! আর বাদ হবি তো হ কোন দিন ?
একেবারে যেদিন নিশির সাথে ব্রেকআপ হল তার পর দিন ! হায়রে কপাল ! আর আজকে নিশি এতো নরম সুরে আমার সাথে দেখা করতে চাইছে !
বাহ!
এই কাজটা যদি আরো আগে করতো তাহলে তো আর আমাদের ব্রেকআপ করার দরকার পড়তো না !
মেয়েটা বুঝলো কিন্তু সময় পার হওয়ার পরে !
আমি বললাম
-আমার সাথে দেখা করবে ?
-হ্যা !
-হঠাৎ দেখা করতে চাইছো ? তুমি তো বলেছিলে এজীবনে আমার মুখ আর দেখবে না । আজকে আবার মুখ দেখতে চাইছো !
-কেন দেখা করতে পারি না ?
-না পারো ! পারবে না কেন ? না মানে ঠিক তোমার চরিত্রের সাথে যাচ্ছে না আর কি ! এই জন্য একটু অবাক লাগছে !
-আচ্ছা ! তারমানে তুমি এখনও সব দোষ আমার মনে কর ?
-এতে মনে করার কি আছে ! আমি তো জানিই সব দোষ তোমার ! তোমার ভিতরকার এই ডোমিনেটিং আর এক রোখা ভাব টা না থাকলে আজকে আমাদের ব্রেকআপ হত না !
-কি বললে তুমি ?
নিশির গলায় একটু উত্তাপের আভাস পেলাম !
হাহাহা ! নিশি শেষ পর্যন্ত নিজের রাগ ধরে রাখতে পারে নি ! আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম নিশি কখন আমার উপর চিৎকার করে উঠবে ! অনেক দিন ওর বকা শুনি না ! যতই চিৎকার চেঁচামিচি করুক মেয়েটা, ব্রেকআপের পর নিশিকে বেশ মিস করে করেছি ! বেশ ভাল ভাবেই মেয়েটাকে মনে ধরেছিল ! জানি না নিশিও আমাকে মনে করেছে কি না ?
করেছে তো মনে হয় ! না কি করে নি !
আমি অপেক্ষা করতে থাকি ! কিন্তু ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ আসে না ! নিশি মনে হয় আবার নিজের রাগটা কে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে এসেছে ! আরো কিছু টা সময় পরে নিশি বলল
-আসবা আজকে ? বিকেলে ?
আমি চুপ করে থাকি ! নিশির ঝাড়িটা মিস হয়ে গেল !
নিশি বলল
-খুব বেশি কাজ থাকলে থাক ! অন্য কোন দিন !
-না ! কোন কাজ নেই ! বিকেলে !
-হুম ! বিকেলে !
-আগের জায়গায় ?
-আগের জায়গায় !

নিশির সাথে দেখা করার একটা চমৎকার জায়গা আছে ।

বিশেষ করে আমার জায়গাটা । আগে মন খুব ভাল কিংবা খারাপ হলেই আমি সেখানে চলে যেতাম । চুপচাপ বসে থাকতাম ! শহরের কোলাহল থেকে নির্জন একটা জায়গা ! ক্যাম্পাসের পিছনে একটু দুরে হাটলেই গ্রামটা পরে ! গ্রামের শুরুর দিকেই পুকুর পাড়টা ! বড় একটা কড়ুই গাছ আছে । সারা দিন বাতাস হচ্ছে শুকনো পাতা পড়ছে সারাক্ষন । আমার বেশ ভাল লাগে !

আসলে নিশির সাথে প্রথম দেখা হয় এই জায়টাতেই ! আমার সেদিন অসম্ভব মন খারাপ ছিল ! তাই কড়ুই গাছটার নিচে বসে ছিলাম ! হঠাৎ করেই মেয়েটি এল ! চুল খোল ! হাতে একটা নীল রংয়ের ব্যাগ ! পরনে আকাশী রংয়ের একটা চুড়িদাড় সেলোয়ার কামিজ ! কপালে ছোট্ট একটা টিপ !
আমার থেকে একটু দুরে বসে নিজের ব্যাগ থেকে একটা ল্যাপটপ বের করে নিজের কাজে মশগুল হয়ে গেল ! এমন একটা ভাব যেন আমাকে সে দেখতেই পায় নাই ! কিন্তু আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়েই রইলাম !
কেন তাকিয়ে রইলাম ঠিক জানি না কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার মন ভাল হতে শুরু করেছে !
তারপর নিশির খোজ বের করতে খুব একটা কষ্ট হয় নি !


বিকেল বেলা আমি একটু আগে আগে পৌছে গেলাম ! এই জায়গাতে আসলাম বহুদিন পরে ।

প্রায় মাস খানেক তো হবেই । বলতে গেলে নিশির সাথে ব্রেক আপের পরে আর আসাই হয় নি ! যদিও আমার তখন মন খারাপ ছিল তবুও আসি নি পাছে এখানে এলে ওর কথা আরও বেশি মনে পড়ে । পরিচিত জয়গায় এসে ভাল লাগছে তার চেয়েও ভাল লাগছে নিশি আসছে দেখে !
নিশি এল আর মিনিট দশেক পরে !
আমি প্রথম কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়েই রইলাম ! মনে মনে একবার একটু আফসোস হল যে এই মেয়ে কদিন আগে আমার গার্লফ্রেন্ড ছিল কিন্তু এখন নেই ! আর তার উপর আজকে নিশি আমার পছন্দের পোষাক পরে এসেছে । আচ্ছা ও কি ইচ্ছা করেই এমন করে এসেছে !
তাই তো মনে হয় !
ল্যাগিংস আমার পছন্দ এটা নিশি খুব ভাল করেই জানে ।
আমাদের ঝগড়া হয়েছিলও এইটার জন্য ! ছেলে মানুষ হলে একটু আধটু চোখ তো এদিক ওদিক চলে যায় ! কিন্তু নিশি এসব একদম সহ্য করবে না ! ওর সাথে রিক্সায় চড়ার সময় যদি আমার চোখ অন্য কোন মেয়ের দিকে যায় তাহলে তো আর কথাই নাই ! তার উপর মেয়েটা যদি ল্যাগিংস পরে থাকে তাহলে তো আমার উপর টর্নেডো বইয়ে দিবে সে ! মহিলা টর্নেডোর আবার জোর কম না ! আরে বাবা তুই যখন কোন ছেলের দিকে তাকাস আমি কি তখন কিছু বলি ? কেবল আমি তাকালেই দোষ !
ব্রেকআপ হওয়ার দিন যেন একটু বেশি বেশি হয়ে গিয়েছিল ! মানুষের তো সহ্যের সীমা থাকে ! আমিও বিদ্রোহ ঘোষনা করলাম ! আমার চোখ আমি তাকাবো ! যাকে ইচ্ছা তাকে দেখবো ! এই মেনে নিয়ে থাকলে থাকো না হয় বিদায় হও ! প্রেম করেছি মানেই ব্যক্তি স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলি নি !

কিন্তু আজকে নিশি নিজেই এই আমার পছন্দের পোষাক পরে এসেছে ! ধববধে সাদা পোষাকে ওকে সাদা পরীর মত লাগছে তার উপর চোখে কালো সানগ্লাস ! চুল গুলো খোলা আর কপালে ছোট্ট একটা টিপ ! আমি কিছুক্ষন তাকিয়েই রইলাম মেয়েটার দিকে !
মনের ভিতর একটু আফসোস হচ্ছিল যে মেয়েটার সাথে ব্রেক আপ না করলেই হত ! এই মেয়ের প্রেমিক হওয়ার জন্য একটু যন্ত্রনা কেন হাজারটা যন্ত্রনা সহ্য করা যায় !

নিশি সান গ্লাস খুলে আমার পাশে বসললো চুপ করে ! আমিও চুপ করে রইলাম কিছুক্ষন ! কি দিয়ে শুরুর করবো ঠিক বুঝতে পারছি না ! আগে একটা সময় আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতাম ! কোন ক্লান্তি আসতো না ।

আর আজকে কথা শুরু করতেই পারছি না !
নিশিই বলল প্রথমে
-আসার জন্য থ্যাঙ্কস !
-না ! ঠিক আছে ! তা হঠাৎ !
-এমনি ! কোন কারন নেই !
এই লাইন টুকু বলেই নিশি চুপ করে রইলো ! মনে হল কিছু তো একটা ব্যাপার আছেই ! এমনি এমনি তো নিশ্চই ও আসতে বলবে না !
হঠাৎই নিশি বলল
-মৌরির সাথে তোমার কি চলছে ?
-মৌরি ?
আমি কিছুক্ষন নিশি দিকে তাকিয়ে রইলাম । ওর চেহারা কেমন যেন হয়ে গেছে ! এর ভিতর আবার মৌরি এল কিভাবে ......?
আরে দাড়াও দাড়াও ..... এইবার বুঝছি ! নিশি কেন আমাকে এখানে ডেকেছে !
মৌরি আমার ক্লাস মেইট ! কদিন ধরে আমাদের একটা গ্রুপ ওয়ার্কের জন্য একসাথে বেশ কয়েকটা ঘন্টা বসতে হয়েছে । এক সাথে বেশ কিছুটা সময় আমরা ক্যাম্পাসে কাটিয়েছি সাথে সাথে ওর সাথে রিক্সায়, বাসে করে বেশ কয়েক জায়গায় যেতে হয়েছে । আর নিশির ডিপার্টমেন্ট যেহেতু আমার কাছাকাছিই ওর নিশ্চই এটা চোখ পরেছে !
আর এটাই মনে হয় ওর সহ্য হয় নি ! আসলে নিশি এটা সহ্যই করতে পারে না আমি অন্য কোন মেয়ের সাথে কথা বলি ! এই নিয়ে ওর সাথে বেশ কয়েক বার কথা কাটাকাটি হয়েছে !
এই তাহলে ব্যাপার !
ফিলিং জেলাস ?
স্টিল ?
ভাল ভাল !
আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম
-কেন ? এই প্রশ্ন কেন ?
-করতে পারি না ?
-মনে হয় না ! এই প্রশ্ন করার অধিকার মনে হয় তোমার নেই !
আমার উত্তর শুনে নিশি খানিকটা যেন বিমর্ষ হয়ে গেল ! মাথা নিচু করে ফেলল ! এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম কিছুক্ষন পরে ওর কাঁদতে শুরু করলো !
আমি তাড়াতাড়ি বললাম
-আরে কি হল এমন কি হল ?
নিশি বলল
-আমি জানি না ! আমি তোমার পাশে এখনও কাউকে সহ্য করতে পারি না ! যতবার ঘুরে ফিরে মৌরিকে তোমার পাশে দেখেছি ততবার .....
কথাটা ও শেষ করতে পারলো !
এর মানে কি দাড়ায় ?
নিশির এখনও আমার প্রতি অনুভুতি আছে !
সত্যি আছে !
আমি বললাম
-আচ্ছা ঠিক আছে । আমি বুঝতে পারছি ! তা আমি এখন কি করবো ?
-ঐ বদ মৌরির সাথে একদম মিশবা না ! এক দম না ! তাহলে কিন্তু ....
তাহলে কিন্তু কি ?
আমি নিশির দিকে তাকিয়ে আছি, ও ভেজা চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে !
আহা !
এই চোখের দিকে কত দিন তাকাই নাই !
নিশি কিছু বলল না !
আমি বললাম
-আচ্ছা মৌরির সাথে না হয় মিশলাম না ! তা কার সাথে মিশবো ? তুমি বলে দাও কোন মেয়ের সাথে মিশলে তুমি খুশি হও ! তোমার বান্ধবী আছে না একটা ? কি যেন নাম ! সুমি না কি ?
-খবরদার বলছি !
-না কি আমার বাড়িওয়ালার মেয়ে !
-একদম খুন করে ফেলবো !
-হহাহাহাহা ! তো কার সাথে মিশবো ?
-আমার সাথে ।

শুধু আমার সাথে মিশবা ! আর কারো সাথে না !
-তাই ?
-হুম !

কিছুক্ষন কোন কথা হল না কেবল চোখাচোখি ! আগে এই কাজটা প্রায়ই করতাম ! কে কার দিকে বেশিক্ষন তাকয়ে থাকতে পারে । কে আগে চোখ আগে নামিয়ে নেয় ! এটা নিশির খুব পছন্দ ছিল ! আমি আগে চোখ সরাতে গেলেই আমাকে বলল
-এই খবরদার চোখ সরাবা না বললাম !
আজকেও তাই হল !

বহুদিন পরে আজকে কেন জানি মনে হচ্ছে অনেক দিনের চাপা একটা কষ্ট বের হয়ে গেল ! অনেক দিন পরে আজকে একটু শ্বাস নিতে পারছি ভাল করে ! মেয়েটাকে এভাবে ভালবাসি তা বুঝতে পেরেছি ব্রেকআপের পরে ! নিশিও নিশ্চই এমনটাই অনুভব করেছে ! তা না হলে আজকে আবার আসতো না !
আহা ! জীবনটা নেহৎ মন্দ না ! এই রকম একটা হিংসুটে প্রেমিকা থাকা টা আসলেই খারাপ কিছু না !



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।