"স্যার,আজকে আর পড়ব না। "-মাথার দুইপাশে বেণী দুটো দুলিয়ে রিনরিনে গলায় বলে ওঠে তিশা।
রোহান তখন গোবেচারার মত তাকিয়ে বলে," কিন্তু আরেকটা সরল যে বাকি ছিল। "
"ওটা আজকে থাক স্যার প্লিইইইজ। "
এবার হার মানল রোহান।
ছাত্রীকে ছুটি দিয়ে দিল। উঠতে গিয়েও আবার বসে পড়ল। বলা ঠিক হবে কিনা বুঝে উঠতে পারছে না। আন্টি আবার কি মনে করে। ওর চেহারা দেখে স্মার্ট ছাত্রী বলে উঠল, "স্যার কি কিছু বলবেন?"
ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল যেন রোহানের।
"মানে.... ইয়ে .... মানে আন্টি কি বাসায় আছেন?"
"হুম, আমি এখনই ডেকে দিচ্ছি। "
"এই যে বাবা কেমন আছ?তোমার মা ভাল আছেন?"
"জ্বী আন্টি। "
"তিশা বলছিল তুমি কি যেন......"
"জ্বী...মানে ...মানে ...বলছিলাম কি মানে... আন্টি এই মাসের ইয়েটা কি মানে ১৫ তারিখের আগে...মানে খুব দরকার..."
"ছি ছি বাবা এত লজ্জা পাবার কি আছে , অবশ্যই তুমি ১৪ তারিখ নিয়ে যেও। "
"ধন্যবাদ , আন্টি"
যুদ্ধজয়ী বীরের মত রাস্তায় বেরিয়ে এল রোহান। আজ তিন বছর এখানে পড়ায়, কিন্তু কখনো মুখ ফুটে টাকার কথা বলতে পারেনি।
আসলে ও ছেলেটাই এমন। সবকিছুতেই কেমন যেন উদাসীন। আর এখানেই ওর উপর তিথির সব রাগ। এই তো গত বছরের কথা । সেদিন ছিল তিথির জন্মদিন।
আগেরদিন তিথির সাথে শহীদ মিনারে বসে কত প্ল্যান-কিভাবে তারা পরের দিন সেলিব্রেট করবে। কিন্তু পরের দিন রোহান বেমালুম ভুলে গেল। সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘলা। ঠিক ৯-৩০ মিনিটে তিথি যখন ওর সামনে এসে বলল,
"তোমার হাত পিছনে কেন?কোন সারপ্রাইজ নাকি?"
ও তখন নির্বিকারভাবে হাত সামনে এনে বলে উঠল,
"মানে ছাতাটা বাসে উঠতে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে তো , তাই পিছনে রেখেছিলাম। কেউ যদি দেখে ফেলে।
কিন্তু সারপ্রাইজের কথা কেন উঠল?"
তিথির গলার স্বরে আরেকটু কপট রাগ এনে বলে,
"হুমম,বুঝেছি আর ঢং করতে হবে না, বের কর আমার গিফট। "
রোহান বেশ অবাক হল।
"কিসের গিফট?আমি তো কিছুই বুঝলাম না!"
"তুমি সত্যি ভুলে গেছ?তোমার সাথে পরিচয়ের পর আজ আমার প্রথম জন্মদিন,সেটা তুমি ভুলে গেলে। গতকালই তো তুমি আমার সাথে কত প্ল্যান করলে তুমি। "-কিছুটা আহত কন্ঠস্বর তিথির।
এবার আসল মেঘের গর্জন শুনতে পেল যেন রোহান।
"মানে সত্যি বলতে কি, রাতেও মনে ছিল। কিন্তু সকালে আকাশে মেঘ দেখে ভুলে গিয়েছি। আর ভুল হবে না। এবার লাস্ট।
"
"সেবার যখন আমাদের পরিচয়ের একমাস হল, তুমি কি মনে রেখেছিলে?"-এবার আর আকাশ থেকে না , তিথির চোখ থেকেই বর্ষণ শুরু হল।
পরে অবশ্য অনেক কষ্টে ব্যাপারটা ম্যানেজ করা গেল। সেদিন থেকেই রোহান ঠিক করেছিল ওদের সম্পর্কের এক বছর যেদিন হবে সেদিন ঠিক ঠিক ও তিথিকে সারপ্রাইজ দিবে। এ মাসের ১৭ তারিখেই আসছে সেই দিনটি। তিথিকে সুন্দর দেখে একটা শাড়ি কিনে দিতে হবে।
যদিও সেজন্যে মাসের প্রায় অর্ধেক ওকে একবেলা খেয়ে থাকতে হবে।
১৬ তারিখ রাত ১০ টায় হঠাৎ তিথির ফোন বেজে ওঠে,
"হ্যালো,তিথি। "
-"বল"
-"কালকে তোমার প্ল্যান কি?"
-"মানে ? তুমি আমাকে কি পেয়েছ?আজকে তোমার সাথে প্ল্যান করি আর সকালে তুমি হাজির হও ভাঙ্গা ছাতা নিয়ে। "
-"রাগ করে না,প্লিজ। "
-"না ,রাগ করব কেন?আমার কি আর এত সৌভাগ্য কোনদিন হবে?কি কাজে ফোন করেছ তাড়াতাড়ি বলে ফেল"
-"মানে বলছিলাম কি,কাল আমি ফোন করার পরে তুমি বাসা থেকে বের হবে।
"
-"কেন?এত ভণিতা করার দরকার কি?"
-"প্লিজ, আমার এই কথাটা রাখো। কোন প্রশ্ন না। "
-"আচ্ছা, ঠিক আছে। "
আজ আর ভুল হল না রোহানের। সকালে উঠে গত ঈদে তিথির দেয়া পাঞ্জাবিটা পরে সোজা পৌছে গেল তিথির বাসার সামনের মোড়টায়।
এখান থেকেই ও রোজ রিক্সায় ওঠে। আজ তিথি কি খুশিটাই না হবে। যখন বাসা থেকে বের হয়েই দেখবে আমাকে, তারপর যখন দুজনে একসাথে রিক্সায় সারাদিন। অবশ্য সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজটা পাবে ও বিকেলে। যখন শাড়ির দোকানে ...
-"ওই মিয়া এদিকে আহেন।
"
কর্কশ একটা কণ্ঠ রোহানের চিন্তায় ছেদ টানে।
-"জ্বী, আমাকে বলছেন?"
-"আপনারে ডাকে"
বলে লোকটি দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবককে দেখিয়ে দেয়। রোহান কিছুটা ভয় পেয়ে সেদিকে এগিয়ে যায়।
-"তুমি রনির সাথে থাক,তাই না?"
-"জ্বী, মানে আমি রনি নামে কাউকে মানে আমি এই এলাকার কাউকে চিনি না। "
এবার যুবকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
-"ইসস, আমার পোলাপান তো তোমারে রনির লোক মনে কইরা আরেকটু হইলে ..."
বলে সে একটা পিস্তল বের করে বুঝিয়ে দেয়। পিস্তল দেখে পুরোপুরি ঘাবড়ে গেল রোহান।
-"তা, তোমারে তো আমি জানে বাঁচায়া দিলাম। বড় ভাইরে একটু খাতির করবা না?"
বলেই লোকটি রোহানের পকেটে হাত দিল, মানিব্যাগ আর মোবাইলটা নিয়ে, সিমটা রোহানের হাতে ফেরত দিয়ে বলে,
-"তুমি শিক্ষিত মানুষ । সম্মান কইরা তোমারে সিম দিয়া দিলাম।
সোজা উলটা ঘুইরা এইখান দিয়া বাইর হইয়া যাও। "
কিন্তু মরিয়া হয়ে রোহান বলে উঠল,
-" ভাই , আমি ছাত্র মানুষ। "
-"চোপ শালা। যাবি নাকি......। "
আর কথা না বাড়িয়ে ও হাঁটতে লাগল।
বড় রাস্তায় নেমে ফোনের দোকান থেকে তিথিকে ফোন করল,
-"হ্যালো তিথি,আমি রোহান। "
-"আমি এখনই বের হচ্ছি। "
-"বের হওয়া লাগবে না। আমার একটু জরুরী কাজ ছিল তো তাই ...."
-"আমি আগেই জানতাম । তুমি এর চেয়ে ভাল আর কি করতে পারবে।
"
রাগ করে ফোনটা রেখে দিল তিথি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।