আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিংবদন্তি কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ৭৪তম মৃত্যুদিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আমি সত্য জানতে চাই

লেখক হিসাবে যিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন প্রথম মহাযুদ্ধের সময়, আর মৃত্যবরণ করেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি কিংবদন্তি কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বহু বছর পার হয়ে গেলেও তিনি আজও পাঠকের কাছে জনপ্রিয় লেখক এবং অপরাজেয় কথাশিল্পী। শরৎচন্দ্র তাঁর লেখা উপন্যাসের জনপ্রিয়তার জন্য বাংলা সাহিত্যের অমর কথাসাহিত্যিক নামে পরিচিত। জনপ্রিয়তম বাঙালি এই কথাসাহিত্যকের গ্রন্থ বাঙলা ছাড়াও বহু ভারতীয় ও বিদেশী ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের জন্ম ও মৃত্যু ঘটেছিল রবীন্দ্রনাথের আলোয় আলোয়।

তিনি ১৯৩৮ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরন করেন। অপরাজেয় কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ৭৪তম মৃত্যুদিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলী জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তি কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্ট্যোপাধ্যায়। তাঁর পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মাতা ভুবনমোহিনী দেবী। শরৎচন্দ্রের কৈশোর ও যৌবন কাটে ভাগলপুরে মামা বাড়িতে।

প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি দেবানন্দপুরের হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুল ও ভাগলপুরের দুর্গাচরণ এ.ম.ই. স্কুলে অধ্যয়ণ করেন। ১৮৯৪ সালে টি.এন. জুবিলি কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করার পর একই কলেজে এফ.এ. শ্রেণিতে ভর্তি হলেও অর্থাভাবে পড়াশোনা চালাতে পারেননি তিনি। অধ্যয়ণে বিরতি ঘটার পর শরৎচন্দ্র বনেলি স্টেটে সেটেলমেন্ট অফিসারের সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি কলকাতা হাইকোর্টের অনুবাদকের কাজ করেনঅ ১৯০৩ সালে ভাগ্যান্বেষণে তিনি রেঙ্গুন চলে যান। সেখানে ছিলেন ১২ বছর।

রেঙ্গুনের এক বিপন্না ব্রাক্ষমন যুবতিকে (হিরন্নয় দেবী)আশ্রয় দিয়ে পরে তাঁকেই বিবাহ করেন। কিন্তু দূরারোগ্য প্লেগরোগে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। শরৎচন্দ্র বার্মা রেলওয়ের হিসাব দপ্তরের কেরানি পদে চাকরি করেন। এক সময় তিনি সন্ন্যাসিদলে যোগ দেন এবং গান ও নাটকে অভিনয় করেন। শরৎচন্দ্র কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

১৯২১ সালে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সাথে তাঁর পরিচয় হয় এবং সেই বছরই-জেলা কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে তিনি যোগদান করেন এবং হাওড়া জেলা জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।

শরৎচন্দ্রের সাহিত্য সাধনার হাতেখড়ি হয় ভাগলপুরে। তার অনেক গল্প, যা পরবর্তীকালে প্রকাশিত হয়ে তার যশ বৃদ্ধি করেছে, তার খসড়া সেখানে লেখা। ‘মন্দির গল্প’ শরৎচন্দ্রের প্রথম মুদ্রিত গল্প। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে-পল্লী সমাজ, শ্রীকান্ত, দেবদাস, দত্তা, গৃহদাহ, দেনা পাওনা, পথের দাবী, শেষ প্রশ্ন, পরিণীতা, মেজদিদি, স্বামী, ছবি, বিরাজ বৌ, নারীর মূল্য ইত্যাদি।

নারীর প্রতি সামাজিক নির্যাতন ও তার সংস্কারবন্দি জীবনের রূপায়ণে তিনি বিপ্লবী লেখক বিশেষত গ্রামের অবহেলিত ও বঞ্চিত নারীর প্রতি তাঁর গভীর মমত্ববোধ ও শ্রদ্ধা তুলনাহীন। সামাজিক বৈষম্য, কুসংস্কার ও শাস্ত্রীয় অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। কাহিনী নির্মাণে অসামান্য কুশলতা এবং অতি প্রাঞ্জল ও সাবলীল ভাষা তাঁর কাব্যসাহিত্যের জনপ্রিয়তা ও খ্যাতির প্রধান কারণ। বাংলাসহ ভারতীয় বিভিন্ন ভাষায় তাঁর অনেক উপন্যাসের চিত্রনাট্য নির্মিত হয়েছে এবং সেগুলি অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে যা 'দেবদাস', 'শ্রীকান্ত', 'রামের সুমতি', 'দেনা-পাওনা', 'বিরাজবৌ' ইত্যাদি। শরৎচন্দ্র চিত্রনাট্যেও দক্ষ ছিলেন।

বহু বছর পার হয়ে গেলেও যিনি আজও জনপ্রিয় লেখক। তাঁর অতি 'মহাশ্বেতা' অয়েল পেন্টিং একটি বিখ্যাত চিত্রকর্ম।

সাহিত্যকর্মে অসাধারণ অবদানের জন্য শরৎচন্দ্র ১৯০৯ সালে কুন্তলীন পুরস্কার, জগত্তারিণী স্বর্ণপদক, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্যপদ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট উপাধি লাভ করেন। লেখক হিসাবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন প্রথম মহাযুদ্ধের সময়, আর মৃত্যবরণ করেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি সকাল ১০টায় কলকাতার পার্ক নার্সিং হোমে মৃত্যুবরন করেন।



আজ এই মহান সাহিত্যিকের ৭৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। অপরাজেয় কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।