আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পতাকা শুধু একখন্ড কাপড় নয়

.

পতাকা অর্থ নিশান। এটি একখন্ড সাদা বা রঙীন কাপড় যা কোন রাষ্টের,দলের,সংগঠনের, গোষ্ঠীর এমনকি কোন অনুষ্ঠানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত । পতাকা মূলত চতুর্ভূজ আকৃতির (ব্যতিক্রম ত্রিভুজাকৃতির-নেপাল, বর্গাকার- সুইজারল্যান্ড ও ভ্যটিকান সিটি) । এটি শুধু একখন্ড কাপড়ই নয় বরং তার চেয়ে আনেক বেশী কিছু। এতে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি রং ,নকশা, প্রতিকৃতি এবং চিহ্নের রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য এবং ইতিহাস।

পতাকার ইতিহাস, প্রতীক ও ব্যবহারের বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে বলা হয় ভেক্সিলোলোজি। পতাকা ব্যবহারের আছে নানা নিয়মাবলী। খ্রিষ্টপূর্ব সময় থেকেই পতাকার ব্যবহার শুরু। ব্যবহারকালে পতাকার এক প্রান্ত একটি দণ্ডে বাঁধা হয়। প্রতিটি রাষ্ট্রের একটি করে স্বতন্ত্র পতাকা আছে যাকে বলা হয় জাতীয় পতাকা ।

রাষ্ট্রীয় পতাকার প্রচলন ঘটে ১৩ শতকে ডেনমার্কে। ডেনমার্কের পতাকাই সবচেয়ে পুরনো রাষ্ট্রীয় পতাকা। এ ই পোষ্টে মূলত রাষ্ট্রীয় পতাকাগুলোর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও তাৎপর্য তুলে ধরার চেষ্টা করব।

প্রথমেই থাকল দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর পতাকা

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা



বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্ত। সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, বৃত্তের লাল রং উদিয়মান সূর্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক।

ডিজাইন করেছেন কামরুল হাসান । বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এই রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারীভাবে গৃহীত হয়। তার আগে ১৯৭১ সালের ২রা মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ছাত্র নেতা আ.স.ম. আব্দুর রব।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্রায় একই রকম দেখতে একটি পতাকা ব্যবহার করা হতো, যেখানে মাঝের লাল বৃত্তের ভেতর হলুদ রং-এর একটি মানচিত্র ছিলো। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের পতাকা থেকে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলা হয়।

পতাকার উভয় পাশে সঠিকভাবে মানচিত্রটি ফুটিয়ে তোলার অসুবিধা পতাকা থেকে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলার অন্যতম কারণ।

ভারতের জাতীয় পতাকা



ভারতের জাতীয় পতাকা হল কেন্দ্রে চব্বিশটি দণ্ডযুক্ত নীল "অশোকচক্র" সহ গেরুয়া, সাদা ও সবুজ আনুভূমিক আয়তাকার ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই গণপরিষদের একটি অধিবেশনে এই পতাকার বর্তমান রূপটি গৃহীত হয়। ভারতে এই পতাকাটিকে সাধারণত "তেরঙা" বা "ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা" বলা হয়। ভাগোয়া বা গেরুয়া রঙ ত্যাগ ও বৈরাগ্যের প্রতীক।

মধ্যস্থলে সাদা আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বভাবের পথপ্রদর্শক সত্যপথ আলোর প্রতীক। সবুজ - উদ্ভিজ্জ জগতের সাথে মানুষের সম্বন্ধটি ব্যক্ত করে। সাদা অংশের কেন্দ্রস্থলে অশোকচক্র ধর্ম অনুশাসনের প্রতীক। এই চক্রটি শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের গতিশীলতার প্রতীক ও ধরা হয়।

পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা



পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার নকশা প্রণয়ন করেন সৈয়দ আমিরুদ্দিন কেদোয়াই।

এই নকশাটি অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের ১৯০৬ সালের পতাকার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করার ৩ দিন আগে ১৯৪৭ সালের ১১ই আগস্ট তারিখে এই পতাকাটির নকশা গৃহীত হয়। পতাকাটিকে পাকিস্তানে সাব্‌জ হিলালি পারচাম বলা হয়। উর্দু ভাষার এই বাক্যটির অর্থ হলো "নতুন চাঁদ বিশিষ্ট সবুজ পতাকা"। এছাড়াও এটাকে "পারচাম-ই-সিতারা আও হিলাল" অর্থাৎ "চাঁদ ও তারা খচিত পতাকা" বলা হয়ে থাকে।


পতাকাটির খুঁটির বিপরীত দিকের গাঢ় সবুজ অংশটি ইসলাম ধর্মের প্রতীক। খুঁটির দিকে সাদা অংশ রয়েছে, যা পাকিস্তানে বসবাসরত সংখ্যালঘু অমুসলিমদের প্রতীক। পতাকার মধ্যস্থলে রয়েছে একটি সাদা নতুন চাঁদ, যা প্রগতির প্রতীক; এবং একটি পাঁচ কোনা তারকা, যা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের প্রতীক।

আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকা



আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকা সেখানকার অস্থায়ী সরকার দ্বারা ২০০২- ২০০৪ সালের মধ্যে নির্বাচিত হয়। এই পতাকাটি আফগানিস্তানে ১৯৩০ হতে. ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে।

পার্থক্য হল এই পতাকার কোট অফ আর্মস বা প্রতীকের উপরে কলেমা শাহাদাত যোগ করা হয়েছে।
বর্তমান পতাকাটি তিনটি উলম্ব ডোরা আছে, যাদের বর্ণ কালো, লাল, ও সবুজ। এই পতাকাটি গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে চালু অধিকাংশ পতাকাতেই ব্যবহার করা হয়েছে। কেন্দ্রের প্রতীকটি আফগানিস্তানের জাতীয় প্রতীক, যা মক্কা মুখী একটি মসজিদের ছবি।

শ্রীলঙ্কার জাতীয় পতাকা



শ্রীলঙ্কার পতাকাকে বলাহয় সিংহ খচিত পতাকা

এর মাঝখানে রয়েছে দণ্ডায়মান স্বর্ণ সিংহ, যার ডান থাবাতে একটি তরবারী । সিংহটি রক্তিম পটভূমির কেন্দ্রে রয়েছে, এবং এই চতুষ্কোণের চারটি কোনে চারটি সোনালী বো-পাতা রয়েছে। রক্তিম চতুষ্কোণের চারিদিকে হলুদ বর্ণের কিনারা আছে। খুঁটির দিকে রয়েছে সমান্তরাল দুটি উলম্ব ডোরা অংশ, যার একটি গেরুয়া এবং অন্যটি সবুজ। পতাকাটি শ্রীলঙ্কার প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডি এস সেনানায়েকের গঠিত একটি কমিটি ১৯৫০ সালে যে সুপারিশ প্রদান করে, তার ভিত্তিতে গৃহীত হয়।


চার বো-পাতা মিত্রতা, করুণা, সৌভাগ্য এবং মানসিক সাম্যতার প্রতীক। সিংহটি সিংহলি এবং শ্রীলংকান জাতির সাহসিকতার থাবার তরবারীটি সার্বভৌমত্বের প্রকাশ। কমলা ডোরা শ্রীলংকান তামিলদের , সবুজ ডোরা শ্রীলংকান মুসলমানদেরএবং রক্তিম বা মেরুন পটভূমি সিংহলি সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রতিনিধিত্ব করে। হলুদ বর্ণের কিনারা শ্রীলঙ্কার সকল সংস্কৃতির সহাবস্থান বুঝায়।

নেপালের জাতীয় পতাকা



নেপালের জাতীয় পতাকা বিশ্বের একমাত্র ত্রিভুজাকৃতির পতাকা।

পতাকাটি মূলত দুটি লাল রংয়ের সমকোনী ত্রিভূজ যার একটির উপর আরেকটি আংশিকভাবে আবিষ্ট। ত্রিভূজ দুটি নীল সীমা রেখায় আবদ্ধ। উপরের ত্রিভূজটি চন্দ্র এবং নিচের ত্রিভূজটি সূর্য খচিত। এটি ১৬ ডিসেম্বর ১৯৬২ সালে গৃহীত হয়।
নীল সীমানা শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক।

আরক্ত লাল নেপালের জাতীয় ফুল রোডডেনড্রনের রং যা নেপালী জনগণের সাহসী প্রফুল্লতা নির্দেশ করে । এছ্ড়া ত্রিভুজদ্বয় হিমালয় পর্বতমালা এবং দুটি প্রধান ধর্ম, হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্মের ও প্রতিনিধিত্ব করে । চাঁদ হিমালয়ের শীতল আবহাওয়া এর কোমল ভাব নেপালি জনগনের শান্ত প্রকৃতি নির্দেশ করে। সূর্য নেপালের নীচের অংশ উচ্চ তাপমাত্রা প্রকাশ করে। এছাড়া চন্দ্র -সূর্য যতদিন টিকে থাকবেে নেপালও ততদিন স্থায়ী হবে এমন আশার প্রতিনিধিত্ব করে এই চন্দ্র সূর্য।



ভুটানের জাতীয় পতাকা



ভুটানের জাতীয় পতাকা হলুদ-কমলার উপরে অঙ্কিত একটি সাদা ড্রাগন নিয়ে গঠিত। পতাকার খুঁটির দিকের পার্শ্বের নিচের দিক হতে বিপরীত শীর্ষবিন্দু বরাবর রেখা টেনে পতাকাটিকে দুইটি ত্রিভুজে ভাগ করা হয়েছে। উপরের ত্রিভুজাকার অংশটি হলুদ, নিচেরটি কমলা। ড্রাগনটি কর্ণ বরাবর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, এবং খুঁটির বিপরীত দিকে মুখ করা। এটি ১৯৬০ সালে গৃহীত হয়।



"দ্রুক", তথা বজ্র ড্রাগনটি ভুটানের তিব্বতী ভাষার নাম যা ড্রাগনের দেশকে নির্দেশ করে। ড্রাগনটি তার নখরে কিছু রত্ন আঁকড়ে আছে, যা সমৃদ্ধির প্রতীক। হলুদ বর্ণটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাজতন্ত্র, এবং কমলা রংটি বৌদ্ধ ধর্মের প্রতীক।
কমলা রঙ ব্যবহার করা হয়েছে, এরকম ব্যতিক্রমী পতাকার মধ্যে এটি অন্যতম। আর এটি এবং ওয়েলসের জাতীয় পতাকাই এমন দুটি পতাকা, যাতে ড্রাগন শোভা পায়।



মালদ্বীপর জাতীয় পতাকা



মালদ্বীপের জাতীয় পতাকা আয়তাকার। এর রং লাল। যার মাঝে সাদা অর্ধচন্দ্রবিশিষ্ট আরেকটি সবুজ আয়তক্ষেত্র রয়েছে। অর্ধচন্দ্রটি উল্লম্বভাবে অবস্থান করে। এর বদ্ধ দিকে পতাকাটি উত্তলনে বাঁধা হয়।

পতাকাটি ২৫ জুলাই ১৯৬৫ গৃহীত হয়।
লাল আয়তক্ষেত্র জাতীয় বীরদের সাহসিকতা এবং দেশ রক্ষায় তাদের বিসর্জিত প্রতিটি রক্তবিন্দুকে প্রতিনিধিত্ব করে। কেন্দ্রে সবুজ আয়তক্ষেত্র শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং সাদা অর্ধচন্দ্র সমন্বিত ইসলামী বিশ্বাসের রাষ্ট্র কে প্রতীকায়িত করে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.