আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রসের খোঁজে যশোর

যশোরের পথে প্রান্তরে এখনও দেখা মেলে সারিসারি খেজুরের গাছ। সন্ধ্যায় গাছিদের গাছ কাটার ব্যস্ততা আর কুয়াশা ঢাকা সকালে রস নামানো। সবশেষে রস দিয়ে গুড় তৈরি। শীত থাকতে থাকতে তাই ঘুরে আসুন যশোর থেকে।

অভয়নগর

যশোর শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে অভয়নগর উপজেলা।

ছবির মতো সাজানো এখানকার প্রতিটি প্রান্তর। যশোর খুলনা মহাসড়ক ছেড়ে একটু গ্রামের ভেতরে যে দিকেই যাবেন চারদিকে শুধু খেজুরগাছ। তবে এখানকার সম্ভবত সবচেয়ে সুন্দর জায়গাটি শ্রীধরপুর ইউনিয়ন।

অভয়নগরের নোয়াপাড়া খেয়াঘাট পার হয়ে চলে আসতে পারেন শ্রীধরপুর। এখানকার সুন্দর সাজানো ছবির মতো একটি গ্রাম সিঙ্গারি।

সরষে ক্ষেতের মাঝে, মেঠোপথের দু’পাশে খেজুরগাছের প্রাধান্য বেশি। এসব জায়গায় দুপুরের পর থেকে গাছিরা গাছ কাটা শুরু করেন। চলে সন্ধ্যা অবধি। পরের দিন সূর্য ওঠার আগেই গাছ থেকে রস নামিয়ে ফেলেন। এরপরে দুপুর পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি চলে গুড় তৈরি।

  এখানে রিকশা বা ভ্যান নিয়ে ঘুরতে পারেন। ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়বে গ্রামের চিরচেনা সব দৃশ্য। সরষে ফুলের তাজা ঘ্রাণ নিতে পারবেন প্রাণভরে।

খাজুরা

যশোরের মনিরামপুরে খেজুরগাছ কাটছেন গাছি।

যশোরের অভয়নগরে গাছকাটতে যাচ্ছেন গাছি।

যশোর শহরের পাশেই খেজুররসের জন্য বিখ্যাত জায়গা খাজুরা। মাইলের পর মাইল সবজি খেতের মাঝে দেখা যায় শুধুই খেজুরগাছ। যশোর শহর থেকে ব্যাটারি চালিত রিকশা নিয়ে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে খাজুরা আসতে। এখানে এসে মহাসড়ক ছেড়ে যেকোনো ছোট সড়কে ঢুকে পড়ুন। ভেতরে যেতে যেতে চোখে পড়বে শুধুই খেজুরগাছ।

খুব সকালে গেলে দেখতে পাবেন গাছিরা রস নিয়ে দলে দলে ফিরছেন বাড়িতে। বাড়িতে বাড়িতে দেখা মিলবে গুড় তৈরির ব্যস্ততা।

মনিরামপুর

যশোরের জেলার আরেক উপজেলা মনিরামপুরেও প্রচুর খেজুরের গাছ দেখতে পাবেন। উপজেলার হরিদাসপুর, সিন্ধুলি, মহেশপুর, কুলটিয়া প্রভৃতি জায়গায় খেজুরগাছের প্রাধান্য বেশি। যশোর শহরে থেকে মনিরামপুর আসতে পারেন লোকাল বাস কিংবা টেম্পুতে।

এছাড়া যশোরের অন্যান্য জায়গাতেও অনেক খেজুরের গাছ দেখতে পাবেন।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে যশোর যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর, কলাবাগান থেকে গ্রিন লাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, ঈগল পরিবহন, শ্যামলী পরিবহনের এসি বাস যশোর যায়। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। এ ছাড়া হানিফ, শ্যামলী, সোহাগ, ঈগল ইত্যাদি পরিবহনের নন-এসি বাসও যায় যশোর, ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা।

ঢাকার কমলাপুর থেকে শনিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৬টা ২০ মিনিটে আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় আন্তঃনগর ট্রেন চিত্রা এক্সপ্রেস— যশোরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

ভাড়া শোভন ৩৫০ টাকা, শোভন চেয়ার ৪২০ টাকা, প্রথম শ্রেণি চেয়ার ৫৬০ টাকা, প্রথম শ্রেণি বার্থ ৮৪০ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণি (এসি চেয়ার) ৭শ’ টাকা, এসি বার্থ ১ হাজার ২৬০ টাকা।

ঢাকা থেকে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, রিজেন্ট এয়ারলাইন্স ও নভো এয়ারের বিমান নিয়মিত যশোরের পথে চলাচল করে।

যেখানে থাকবেন

বিস্তীর্ণ সরষে ক্ষেতের মাছে সাড়ি সাড়ি খেজুর গাছ, অভয়নগর, যশোর।

বিস্তীর্ণ সরষে ক্ষেতের মাঝে সারিসারি খেজুর গাছ, অভয়নগর, যশোর।

যশোর শহরে থাকার জন্য সাধারণ মানের হোটেল হল— শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে হোটেল মনিহার, কেশবলাল সড়কে হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল, এমকে রোডে হোটেল আর এস, গাড়িখানা সড়কে হোটেল ম্যাগপাই, মিউনিসিপ্যাল রোডে হোটেল মিডটাউন, কাপুড়িয়া পট্টিতে হোটেল নয়ন ইত্যাদি। এসব হোটেলে ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।

মনে রাখবেন

গাছ থেকে রাস নামানো দেখতে হলে সূর্য ওঠার আগেই পৌঁছতে হবে। গাছ থেকে নামানো হাঁড়িতে মুখ দিয়ে রস পান করবেন না। পরিষ্কার গ্লাস কিংবা পাত্রে পান করুন।

তবে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেবেন না। তাই সাবধান।

বাদুড়ের লালা থেকে নিপা ভাইরাস ছড়ায়। রাতের বেলায় বাদুড় হাঁড়ি থেকে রস খেলে, তখন রস থেকে নিপা ভাইরাস সংক্রমনের আশঙ্কা থাকে। তাই নেট দিয়ে ঘিরে রস সংগ্রহ করা হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত হয়ে নিন।

যশোর শহর থেকে ভাড়ায় কোনো প্রাইভেট কার কিংবা মাইক্রোবাস নিয়ে বেড়ালে অল্প সময়ে অনেক বেশি জায়গায় ঘুরতে পারবেন।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।