আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুরে এলাম মায়ানমার। ( দুই )

সাধারন ব্যাংগ নই আমি । আমি ব্যাংগ রাজ , তাই শুধু বর্ষায় নয় সারা বছরই আমি করি হাকাডাক ।
ঘুরে এলাম মায়ানমার । ( এক )

তারপর দিন সকালে যখন ঘুম ভাংগল মেজ কুটুম বললঃ তাড়াতাড়ি উঠুন । আজকে শনিবার তাই তাড়াতাড়ি এই রুম খালি করতে হবে।

আমি অবাক হয়ে বললামঃ কেন ?

ঃ এই রুমের ভাড়া আমরা দুইজনে দেই । একজন আমি, আরেকজন ইন্সুরেন্স কোম্পানির লোক। আড়াই হাজার টাকা ভাড়ার মধ্যে ওই লোক দেয় দেড় হাজার আমি দেই এক হাজার । আমরা ব্যাবহার করি সারা সপ্তাহ আর ওই লোক করে শুধু শনিবার সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা ।

এই কথা শুনে কি দেরি করা যায় !! তাড়াতাড়ি উঠে মুখ হাত ধুয়ে বের হয়ে গেলাম ।

হাটতে হাটতে বেশ কিছুটা এগিয়ে ভাল একটা হোটেল দেখে ঢুকে পড়লাম ।

সেখানে পরাটা আর মুগ ডাল দিয়ে নাস্তা করলাম। নাস্তা শেষে এক কাপ চা পান করে হোটেল থেকে বের হলাম। মেজ কুটুমকে বললামঃ এবার কাজ কি ?

ঃ এবার আপনার দুই কপি ফটো তুলতা হবে এক কপি পাসপোর্ট সাইজ আরেক কপি স্টাম্প সাইজ , আর আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি করতে হবে ।

ঃ তাহলে এক কাজ কর।

আমাকে কোন সাইবার ক্যাফেতে নিয়ে যাও ।

তারপর আমরা দুইজনে টেকনাফে সাইবার ক্যাফে খুজতে বের হলাম । অনেকক্ষন খুজেও কোন সাইবার ক্যাফে পেলাম না। হাটতে হাটতে কাচা বাজারের কাছে চলে এলাম । কাচা বাজারে টাটকা মাছ আর সবজী দেখে সাইবার ক্যাফের কথা ভুলে গেলাম ।





মেজ কুটুমকে বললামঃ এখানে মাছের দাম বোধহয় কম তাই না ?

ও দুইচোখ কপালে তুলে বললঃ কম দা-ম !!!! কি যে বলেন না, বরং শহরের চেয়ে দাম বেশি ।

আমি অবাক হয়ে বললামঃ বল কি !! কেন এখানে নদী সমুদ্র দুইটাইত কাছে তারপরও এত দাম ?



ঃ এখানকার মানুষের ক্রয় ক্ষমতা এত বেশি যে কোন জিনিসের দাম যতই বেশি হোক ওরা কিনতে ভয় পায় না ।

ঃ এত টাকা পায় কই ?

ঃ কেন ডব্লিউ আর লবন।

ঃ ডব্লিউ এটা আবার কি ?



ইয়াবা ।

ঃ ইয়াবা ।

এখানে উচ্চ হতে সাধারন জনগন প্রায় সবাই কম বেশি ডব্লিউ ব্যাবসার সাথে জড়িত । এছাড়া আরও অন্যান্য ব্যাবসাত আছেই। কানাঘুষায় শুনি টেকনাফের বর্তমান এম পি বদি এই ডব্লিউ ব্যাবসার প্রধান পৃষ্ঠপোষক। সে এই ব্যাবসা করার জন্য প্রশাসন, আওয়ামীলীগ , বি এন পি , জামাতের প্রায় সব নেতাকে সাথে নিয়েছে । এই ব্যাপারটা এখানে ওপেন সিক্রেট ।



এখানকার প্রত্যেক যুবক আলীশান ভাবে জীবন যাপন করে । তাই এখানে দামি দামি মোটর সাইকেলের এত ছড়াছড়ি । এখানে সবাই এক । তাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নাই বললেই চলে । এই জন্য টেকনাফে ইয়াবার কোন চালান ধরা খায়না বললেই চলে ।

ইয়াবার চালান যা ধরা খায় সব টেকনাফের বাইরে । সত্য মিথ্যা আল্লাহই ভাল জানেন। এই টেকনাফে এমপি বদির কথাই শেষ কথা । একবার এক বি ডি আর তাকে না চিনে তার গাড়ি থামিয়ে ছিল বলে । এম পি বদি গাড়ি থেকে নেমে সেই বি, ডি, আরকে সজোরে এক থাপ্পর মেরেছিল ।

এই কথা বদির সমর্থকরা গর্ব করে সবাইকে বলে।

ঃ আমি শুনে " থ " !!!

ভাবতে লাগলাম যেই দেশের জননেতা সেই দেশের যুব সম্প্রদায় অর্থাৎ এই রাষ্ট্রের ভবিষ্যত নেতৃত্ব দান কারী প্রজন্মকে ধ্বংস করার নেশার দ্রব্য আমদানী করে , সেই দেশের ভবিষ্যত যে কতটুকু অন্ধকার তা ভেবে শিউরে উঠলাম। আর এদেরকেই আমরা ভোট দেই । অবশ্য এরা আমাদের ভোটের থোরাই কেয়ার করে । নিজের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে নিজেরাই ভোট আদায় করে নেয়।



মনে হল এই দেশে জন্মই আমার আজন্মের পাপ।

আমাকে স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আমার মেজ কুটুম বললঃ কি হল দাড়িয়ে গেলেন যে ?

আমি ওর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে হাটতে লাগলাম। কিছুক্ষন পর মেজ কুটুম আবার বললঃ বেশ কিছুদিন আগে টেকনাফে প্রধান মন্ত্রি এসেছিল। তখন জনসভায় এমপি বদি জনতাদের উদ্দেশে বলেছিলঃ আপনারা কে কে আগামীতে আমাকে এমপি হিসেবে দেখতে চান তারা হাত তুলুন ।

অবাক কান্ড হাজার হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র শখানেক হাত উঠেছিল ।



এই ব্যাপারে পরে এমপি বদিকে জিগ্গাসা করা হলে সে বলেছিলঃ আমার কথা সব জনতা বুঝতে পারেনি ।

যাই হোক আবার সাইবার ক্যাফে খুজতে লাগলাম। পেলাম না । তখন আমি বললামঃ চল আগে ছবিটা তুলে ফেলি, তারপর ঐ ফটোর দোকানে জিগ্গাসা করলে হয়ত জানতে পারব কোথায় সাইবার ক্যাফে আছে ?

হাটতে হাটতে একটা ফটোর দোকানে ঢুকলাম। বললাম ফটো তুলব ।

আপনারা কি ডিজিটাল ক্যামেরায় ফটো তুলেন ?

ওরা বললঃ হ্যাঁ ।

আমি বসে গেলাম । একটা ছেলে ডিজিটাল ক্যামেরায় ফটো তুলল ।

ফটো তুলার পর একটা ল্যাপটপে ঢুকাল । দোকানের মালিক কম বয়সি একটা ছেলে।

দেখলাম সে ছবিটা এডিট করে একটা পাসপোর্ট সাইজ একটা স্টাম্প সাইজ করে দুইকপি করে চার কপি প্রিন্ট আউট করল। এই সময় আমি দেখলাম ওর ল্যাপটপে ইন্টারনেট মডেম লাগানো।

ঃ আপনার কি ইন্টারনেট কানেকশান আছে ?

সে হ্যাঁ বলতেই বললামঃ আমার ই-মেইল থেকে আমার ভোটার আইডি কার্ডটা প্রিন্ট আউট করে দেন।

ছেলেটা জিমেইলে যেয়ে আমাকে দিয়ে মেইলটা খুলে নিয়ে ডাউনলোড করে নিল। ওর ল্যাপটপে ডাউনলোড হওয়ার পর প্রিন্ট আউট করল।

তারপর একটা ফটো কপি করলাম। কাজ শেষ হলে জিগ্গাসা করলামঃ কত দেব ?

ঃ আশি টাকা দেন ।

টাকা দিয়ে দোকান থেকে বের হলাম ।

এইবার মেজ কুটুম বললঃ আপনার কাছে যত টাকা আছে সব, আর মোবাইল দুইটা দিন ।

ঃআমি অবাক হয়ে বললামঃ কি ব্যাপার ছিনতাই কারী হয়ে গেলে নাকি ?

ও হাসতে হাসতে বললঃ না ওগুলো নিয়ে মায়ানমার যাওয়া যাবে না, তাই দোকানের ছেলেকে আসতে বলেছি এগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য ।

আপনার দরকারি নাম্বারগুলো কাগজে লিখে নিন । মায়ানমার থেকে তাহলে ফোনে কথা বলতে পারবেন।

তারপর সে আমাকে নিয়ে একটা দোকানে গেল । দোকানটা বোধহয় পূর্ব পরিচিত । ওখানে একজন থেকে একটা কাগজ আর কলম নিয়ে, আমাকে দিল বললঃ নাম্বারগুলো লিখে নিন ।



আমি দাড়িয়ে কাউন্টারের উপর কাগজ রেখে নাম্বারগুলো লিখতে লাগলাম। এইসময় ময়লা বোরকা পরা একজন মহিলা প্রবেশ করল । বয়স ত্রিশের কম বেশি হবে । সে দোকানের ছেলেটার কাছে দাড়িয়ে এক ধরনের উচ্চারনে চিটাগাং এর ভাষায় কথা বলছিল । পরে জেনেছি ওটা রোহিংগা ভাষা ।

সে ছেলেটি কে বললঃ কেমন আছ ?

ঃ ভালআছি ।

ঃ আমার টাকাটা দাও ।

ঃ কিসের টাকা ?

ঃ কেন মালের বাকি একশ আশি টাকা ।

ঃ না দেব না ।

ঃ কেন দিবা না ।

আমি গরিব মানুষ এই একশ আশি টাকা দিলে বাজার করব । তারপর রান্না করে খাব।

আমি মেজকুটুমকে আস্তে করে জিগ্গাসা করলাম মেয়েটি কে ?

ঃ রোহিংগা । বার্মা থেকে দুই চার হাজার টাকার মাল বৈধ পথে টেকনাফে এনে বিক্রি করে ।

ছেলেটি মহিলাটির কথার প্রতিউত্তরে বললঃ এই টাকার জন্য তুমি মরে যাবা ?

ঃ তুমি জান ? আজকে সকালে আধাপেট ভাত খেয়ে বের হয়েছি ।

বাচ্চাদেরও পেট ভরে খাওয়াতে পারিনি।

আমি আর শুনতে পারলাম না । মেজ কুটুমকে নিয়ে আস্তে করে দোকান থেকে বের হয়ে গেলাম । ঐ মেয়েটি যদি ভিক্ষুক হত তাহলে কিছু টাকা দিয়ে নিজেকে হালকা করতাম ।



কিন্তু মহিলাটিত তা নয় , সেত খেটে খাওয়া আত্মনির্ভরশীল একজন নারী।

যে নারী জীবন যুদ্ধে মরতে জানে, পরাজয় বরন করতে জানেনা । তাকে শ্রদ্ধা করা যায় তার জীবনার্দশ অনুসরন করা যায় । এমন নারীকে ভিক্ষা দেওয়া যায় না।

( চলবে.........। )



 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.