সত্য যেখানে অসহায় আমি সেখানে হতে চাই সহায় ও সঙ্গী। বাচাল, ভন্ড, ধর্মব্যাবসায়ীরা, মিথ্যাবাদী, সত্য গোপনকারী, অন্ধ দলীয় সমর্থকরা আমার ঘৃনার পাত্র।
গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগেই প্রায় গত দেড় বছর যাবত বিশেষ করে কাদের মোল্লার রায় ঘোষণার পর হতেই জামায়াত সারাদেশে এক ভয়ংকর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। যা হতে নারী, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, ঘর-বাড়ী, পশু, কৃষি খামার, দোকান-পাট, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কাল-ভাট, গাছ-পালা, যান-বাহন, পথচারী সহ সকল সাধারণ মানুষ, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি মোট কথা এমন কোন কিছুই বাদ ছিলনা যে রেহাই দেয়া হয়েছিল। এসকল দেখে সাধারণ মানুষের অনেকেই বলতে শুরু করেছিলেন যে, " আবার কি ৭১ সালের সেই ভয়ংকর দিন গুলো ফিরে এলো ?"
উপড়ে বর্ণিত সকল তাণ্ডব গুলোই রাজনৈতিক অধিকারের আড়ালে মুলত: ব্যক্তি স্বার্থেই করা হয়েছিল।
জামায়াত তাদের যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নেতাদের মুক্তির জন্যে করেছিল। আর বিএনপি নির্বাচনকে সামনে রেখে মুলত আগামী নির্বাচনে ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্যে করেছিল। বিএনপির ক্ষমতা নিশ্চিত করার কারণ ছিল মুলত: তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করা এবং খালেদার আড়ালে চলা যাওয়া। এতে করে খালেদা ও তারেকের বিরুদ্ধে যত মামলা আছে তা হতেও নির্বিঘ্নে মুক্ত হওয়া। তাই এটা স্পষ্ট যে জনগণ ও গণতন্ত্র নামক মুলা গুলো জনগণ ও বিদেশী সহযোগীদের সামনে তুলে ধরে তাদের নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়া ও ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষাই ছিল মূল পরিকল্পনা।
হাসিনা সরকার গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার বিএনপিকে জামায়াত ছেড়ে এসে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়া নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর সাথে এক সাক্ষাতকারে বলেছেন সময় হলেই তিনি জামায়াতের সাথে জোট ছেড়ে দিবেন। এ সময়টা কবে হবে আর কিভাবে ছাড়বেন তার কোন নির্দেশনা বা ইঙ্গিত তার সাক্ষাতকার বা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ছিল না।
এদিকে, বিভিন্ন সূত্রের আলোকে পত্রিকায় দেখলাম আমেরিকা, ব্রিটেন, ভারত, চীন সহ বিভিন্ন দেশ (মধ্যপ্রাচ্য বাদে) ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপিকে জামায়াত ও হেফাজত থেকে সরে আসার পরামর্শ ও রীতিমত চাপ প্রয়োগ করে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়াও নাকি প্রথমে জামায়াতকে একটু কড়া ভাবে দেশ ব্যাপী ধ্বংসাত্মক কাজের জন্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
সত্য-মিথ্যা আমার জানা নাই, কারণ সবই পত্রিকা হতে অবগত হয়েছি।
গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণ-সমাবেশটি ১৮ দলের হবার কথা ছিল। সে মতে সকল প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু বাদ-সাধল ডিএমপি। তারা ১৩টি শর্তের একটা শর্ত দিল শুধু বিএনপির জনসভা হবে, অন্য কোন দলের ব্যানার থাকতে পারবে না।
আর সে কারণ দেখিয়ে বিএনপির জামায়াত বিহীন জনসভা করতে আর কোন সমস্যাই থাকল না। এতে করে বিদেশীদেরকেও খুশি করতে পেরেছে বিএনপি। যদিও ডিএমপির শর্ত মানা হয়নি, কারণ মাইক ও দলের বিষয়টি মুচলেকা দিয়েও বিএনপি মাইক ব্যবহারও যেমন নিয়ম মেনে করেনি, তেমনি শুধু বিএনপি নয় ১৮ দলের সাবই ছিল শুধু মঞ্চে ছিলনা জামায়াত, তবে মাঠে বা জনসভা স্থলে ব্যানার বিহীন অবস্থায় উপস্থিতি ছিল। এখানেও বিএনপি লাভবান হল। তারা দেখাতে পেরেছে যে বিএনপির লোকবল আছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি কি সত্যিই জামায়াত থেকে আলাদা হবে ? সত্যিই কি তারা জামায়াত ত্যাগ করে শুধু বিএনপির রাজনীতি করতে পারবে ? অন্যদিকে, যদি তারা জামায়াতকে ছাড়ার ঘোষণাও দেয় তা কি সমঝোতা ভিত্তিক ঘোষণা না অন্য কোন কৌশলী ঘোষণা হবে, বিষয়টি খুবই গুরুত্বের বিষয়।
বাংলাদেশে জিয়ার সেই কথিত স্বৈরাচারী ও সেনা শাসনের (হাঁ - না ভোটের নেতা) বৈধতার জন্য পুঁতল রাজনৈতিক দলগুলোর একটি হল জামায়াত। জিয়া কৌশলে তার সেনা শাসনকে বৈধতা দেয়ার জন্যে তথা কথিত বহুদলীয় রসগোল্লা আমাদের দেশের তৎকালীন সময়ের সচেতন ও অ-সচেতন জনগণকে খাওয়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর সেই রসগোল্লার রস ও গোল্লা ছিল স্বাধীনতা বিরোধী দল জামায়াত, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দল ফ্রিডম পার্টি সহ পাকিস্তানের কোল ঘেঁষা নেতাদের নিয়ে নাম সর্বস্ব: দল গুলো। আজকের ১৮ দলের দিকে তাকালে তাদের অনেককেই এখনও বিএনপির জোটের সাথেই দেখা যাচ্ছে।
জামায়াতের বাংলাদেশে নব জন্মদাতা সেই জিয়ার দল বিএনপি আজ জামায়াতকে নির্বাসনে পাঠাবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। বরং সরকার যে অবস্থায় জামায়াতকে এনে দাঁড় করিয়েছে তাতে বিএনপির সোনায় সোহাগাই হয়েছে। কারণ এ কাজটি বিএনপির পক্ষে দলগত-ভাবে করা খুবই কষ্টকর ও বিব্রতকর হত। আর এতে করে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হত। কিন্তু এখন আর সেই সমস্যার মুখোমুখি বিএনপিকে পড়তে হল না।
কোর্টের রায়ের ফলে জামায়াত সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তাহলে তাদের ভোট ও সমর্থন কোথা যাবে ? আওয়ামীলীগকে সমর্থন করবে ? অবশ্যই না। তাদের ভোট সরাসরি বিএনপিকেই দিবে। আর তাদের প্রচার-প্রচারণাও বিএনপির পক্ষেই থাকেবে। মাঝখানে বিএনপিও রাজনৈতিক বৈরিতা পার হয়ে জামায়াত মুক্ততার সার্টিফিকেট পেয়ে যাবে।
তাই পুরোটাতেই আওয়ামীলীগের পরাজয়। দেশ-বিদেশে আর জামায়াত ইস্যু নিয়ে সরাসরি কিছু বলতেও পারবে না। আর সেই জামায়াতকে সাথে নিয়েই (গোপনে) বিএনপি দেশে-বিদেশে ক্লিন ইমেজে তাদের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে। আর এ কাজটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামীলীগই করে দিচ্ছে। ফলে এ জন্যে বিএনপিকে আর জামায়াতের সাথে দ্বন্দ্ব বা শত্রুতায় অবতীর্ণ হতে হল না।
বিএনপি জামায়াতকে বা হেফাজতকে ঘোষণা দিয়ে হয়ত ছাড়বে, তবে এটা হবে তাদের রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু গোপনে জামায়াত-হেফাজত তাদের হয়ে সারা দেশে তথা বিদেশেও গণ সংযোগ সহ বিভিন্ন প্রচারণা চালাবে। আর বিএনপির জনসভাতেও বিএনপির ব্যানারে জামায়াত-হেফাজতের সমর্থকরা জড়ো হবে, শুধু নেতারা আড়ালে থাকবে, প্রকাশ্যে আসবে না। এর ফলে বিএনপির প্রতি আর কেউ আঙুল তুলতেও পারবে না। ফলে লাভবান যা হবার বিএনপিই হবে, মাঝখানে আওয়ামীলীগ তার ইস্যু ও ভোটও হারাবে।
আর বিএনপির ক্ষমতায় যাবার পথ আরও প্রসারিত হবে।
তাই জামায়াত ইস্যুতে অবশ্যই আওয়ামীলীগের নয়, লাভ বিএনপিরই। এটা বর্তমান সরকার যত তাড়াতাড়ি বুঝবে, দেশ ও স্বাধীনতার জন্যে ততই মঙ্গল
২৩ জানুয়ারি, ২০১৪
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।