আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্ল্যাক হোল নেই: স্টিফেন হকিং

কিন্তু যখন মহাজাগতিক সংকোচনশীল বস্তুকে নতুন করে সংজ্ঞায়নের কথা বলেন খোদ স্টিফেন হকিং, তখন তা আর তামাশা করার বিষয় থাকে না।

অনলাইনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে আধুনিক ব্ল্যাক হোল তত্ত্বের অন্যতম জনক কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক এই পদার্থবিদ বলছেন, কৃষ্ণ বিবরকে ঘিরে থাকা ইভেন্ট হরাইজন নামের কথিত অদৃশ্য প্রাচীর বা সীমানার অস্তিত্ব নেই।

ইভেন্ট হরাইজন একটি শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র। ব্ল্যাক হোলের মূল সীমানা সেরকমই একটি ক্ষেত্র বলে মনে করা হচ্ছিল।

এর বদলে হকিংয়ের বিপ্লবধর্মী প্রস্তাবে সহজ ধরনের আরেক রকম সীমানার কথা আছে যাকে তিনি বলছেন, ‘অ্যাপারেন্ট হরাইজন’।

অ্যাপারেন্ট হরাইজনের ক্ষেত্রে বলা হয় যে, এটি অস্থায়ীভাবে পদার্থ ও শক্তি আটকে রাখলেও তা ছেড়ে দেয়। যদিও পদার্থ ও শক্তির বিকৃতি ঘটে তাতে।

নেচার পত্রিকাকে হকিং বলেন, “ধ্রুপদী কৃষ্ণ গহবর তত্ত্বে এর থেকে কোনো কিছু বের হওয়ার কোনো পথ নেই।

“যদিও কোয়ান্টাম তত্ত্বে শক্তি ও কৃষ্ণ বিবর সম্পর্কিত তথ্যের ব্ল্যাক হোল থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা পাওয়ার কথা। ”

তবে পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করতে আরেকটি তত্ত্বের দরকার বলে স্বীকার করে নেন হকিং।

তিনি বলছেন, সেই তত্ত্ব সফলভাবে মাধ্যাকর্ষণকে প্রকৃতির অন্যান্য মৌলিক শক্তিসমূহের সঙ্গে সমন্বিত করতে পারবে। প্রায় শতাব্দীব্যাপী বিজ্ঞানীরা এই জাদুতত্ত্বের সন্ধান করে আসছেন।

২২ জানুয়ারি হকিং নিবন্ধটি অনলাইনে পোস্ট করেন। অনেকটা ঝোঁকের মাথায় এর শিরোনাম দেন তিনি ‘তথ্য সংরক্ষণ এবং কৃষ্ণ গহবরের আবহাওয়া পূর্বাভাস’। নিবন্ধটি অবশ্য এখনও পদার্থবিজ্ঞানীরা পর্যালোচনা করেননি।

ক্যালিফোর্নিয়ার কাভলি ইন্সটিটিউট ফর থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স ইন সান্টা বারবারায় স্কাইপের মাধ্যমে করা এক আলোচনাকে ভিত্তি ধরে নিবন্ধটি রচনা করেন তিনি। পাঁচ মাস আগে আলোচনাটি হয়েছিল।

ব্ল্যাকহোল ফায়ারওয়াল প্যারাডক্স বা কৃষ্ণ বিবর ফায়ারওয়াল কূটাভাস নামের একটি গোলকধাঁধার সমাধানই হকিংয়ের লক্ষ্য। কাভলি ইনস্টিটিউটের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী যোসেফ পলচিনস্কি ও তার সহকর্মীদের আবিষ্কারের পর প্রায় দুবছর ধরে এই কূটাভাস সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

এক মানসপরীক্ষায় গবেষকদের জিজ্ঞেস করা হয়, ভাগ্যহত কোনো নভোচারী কৃষ্ণ বিবরে পড়ে গেলে কী ঘটবে?

ইভেন্ট হরাইজন আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের সরল গাণিতিক ফলাফল।

জার্মান জোতির্বিজ্ঞানী কার্ল স্কোয়ার্লজচাইল্ড ১৯১৫ সালের শেষদিকে আপেক্ষিতা তত্ত্ব প্রকাশের মাসখানেক পরে এক চিঠিতে বিষয়টি আইনস্টাইনের নজরে আনেন। তাতে যে চিত্রটি মেলে তা হল নভোচারী নির্ঝঞ্ঝাট ইভেন্ট হরাইজন পেরিয়ে যাবেন এবং পরে কৃষ্ণ বিবরের অসীম ঘনত্বে ডুবে যাবে। যাকে সিঙ্গুলারিটি বলে ডাকা হয়।

বিশদভাবে বিশ্লেষণ করার সময় পলচিনস্কির দল অবাক হয়ে দেখলেন, কোয়ান্টাম তত্ত্ব, কণার দুনিয়া যে নিয়ম মেনে চলে তা পুরো পরিস্থিতিকে পাল্টে দেয়। তারা দেখেন, কোয়ান্টাম তত্ত্ব ইভেন্ট হরাইজনকে অতিমাত্রার শক্তিসম্পন্ন ক্ষেত্র বা ফায়ারওয়ালে রূপান্তরিত করে।

আর তাতে নভোচারী পুড়ে কয়লা হয়ে যায়।

এতে তারা দেখেন, যদিও ফায়ারওয়াল কোয়ান্টাম তত্ত্ব মানছে তবুও তা আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের লঙ্ঘন ঘটে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, মহাজগতের যেখানেই হোক ব্ল্যাক হোল বা মহাশূন্য পতনশীল মুক্ত ব্যক্তি পদার্থবিদ্যার অনুশাসনই মানবে। আইনস্টাইনের নিয়মে ইভেন্ট হরাইজন আলাদাভাবে চিহ্নিত হবার বৈশিষ্ট্য রাখে না।

এই অবস্থায় হকিং তৃতীয় একটি বিকল্প দেখালেন।

কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ও সাধারণ আপেক্ষিকতা অক্ষত থাকল। কিন্তু আগুন ধরানোর জন্য আর ইভেন্ট হরাইজন থাকল না। তার দাবির মূল যুক্তি হল, কৃষ্ণ বিবরের চারদিকের কোয়ান্টাম প্রভাব স্থান-কালকে অতিমাত্রায় নমনীয় করে তোলে যাতে কোনো অনড় সীমানার অস্তিত্ব অসম্ভব হয়ে ওঠে।

নতুন প্রস্তাবে হকিং সত্যিকার সীমানা বলে মানছেন অ্যাপারেন্ট হরাইজনকে। তিনি লিখছেন, “ইভেন্ট হরাইজনের অনুপস্থিতি মানে ব্ল্যাক হোল বলে কিছু নেই; অন্তত এই অর্থে যে সেখান থেকে অসীমে আলো আসার সুযোগ নেই।

“হকিং যে চিত্রটা দিচ্ছেন তা যৌক্তিক মনে হচ্ছে,” বলছেন কানাডার অ্যালবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ ও কৃষ্ণ বিবর বিশেষজ্ঞ ডন পেইজ। ৭০ এর দশকে হকিং যখন কৃষ্ণ বিবর নিয়ে তত্ত্ব রচনা করেন পেইজ তার সঙ্গী ছিলেন।

তিনি বলছেন, “ইভেন্ট হরাইজন না থাকাকে আপনি বিপ্লবী বক্তব্য বলতে পারেন। কিন্তু এসব অতি মাত্রায় কোয়ান্টাম পরিস্থিতি যেখানে এমনকি স্থান-কাল নিযে অস্পষ্টতা আছে আলাদা করে চিহ্নিত করার উপায় নেই কোথায় ইভেন্ট হরাইজন। ”

যদিও পেইজ মানছেন ইভেন্ট হরাইজন ছাড়াও ব্ল্যাক হোল থাকতে পারে তবে তাতে করে ফায়ারওয়াল প্যারাডক্স নিষ্পন্ন হবে কি না তাতে তার সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

অ্যাপারেন্ট হরাইজনও ইভেন্ট হরাইজনের মত সমস্যার উদ্ভব ঘটাতে পারে।

তবে অ্যাপারেন্ট হরাইজন বিলুপ্ত হতে পারে। পেইজ মনে করছেন, হকিং এমন এক চিত্র উন্মোচন করেছেন যা অত্যন্ত বিপ্লবাত্মক। যা থেকে “নীতিগতভাবে কৃষ্ণ বিবর নেই” এমন ধারণায় আসা যায়।

হকিং যদিও তার নিবন্ধে বলেননি কিভাবে অ্যাপারেন্ট হরাইজন মিলিয়ে যাবে তবে পেইজ ধারণা করছেন, যখন এটি একটি নির্দিষ্ট আকারে আসবে তখন সমন্বিতভাবে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ও মাধ্যাকর্ষণের কারণে এটি হাওয়া হয়ে যেতে পারে।

তখন কৃষ্ণ বিবরে আটকা পড়া কিছু বের হয়ে আসবে। তবে তাদের আকৃতি আগের মত থাকবে না।

হকিং সঠিক হলে কৃষ্ণ গহবরে সিঙ্গুলারিটি বলেও কিছু থাকবে না।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.