আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাগ্যাহত এক ভূতুড়ে জাহাজ - ওরলোভা

জীবনের আলো - অনেকটা বদলে গেছে - হারিয়ে নিজেকে ...

অবাক করা এক জাহাযের গল্প বলবো আজকে। মনে হবে কোন রুপকথা বা অন্যকোন গল্পের মত। কিন্তু ২০১৪ এসেও যদি মনে হয় এ এক সত্য বাস্তবে ঘটে চলেছে তাহলে তো একটু কর্নপাত করতেই হয়। শেষে ভিডিও এ্যাড করা আছে দেখতে ভুলবেন না।



ভাগ্যাহত এক ভূতুড়ে জাহাজ ল্যুবভ ওরলোভা, এ মুহূর্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের অজানা কোথাও।

বছরের এ সময়টাতে আটলান্টিক খুব রেগে থাকে আর অজস্র রহস্য তৈরি করে, গল্প তৈরি করে, তাকে ঘিরে। এবার সে গল্পের কুশীলব হয়েছে লক্ষ ইঁদুরে ভরা মনুষ্যবিহীন এ জাহাজ।

১৯৭৬ সালে রাশিয়ায় মহাআড়ম্বরে নির্মাণ করা হয়েছিল এমভি ল্যুবভ ওরলোভা- বিশাল আকৃতির মোটর ভেহিক্যালটিকে। এটিকে দিয়ে সম্ভবত রাসায়নিক দ্রব্য পরিবহনের কাজ করা হত, যা অচিরেই তাকে অনাদরের বস্তুতে পরিণত করে। একরকম মধ্যবয়স থেকেই অযত্নের শিকার হতে শুরু করে ল্যুবভ ওরলোভা।

ভাগ্যপরিক্রমায় ২০১২ সালে কানাডার ট্যুরিজম ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্রুজ নর্থ এক্সপেডিশানের নজরে পড়ে ওরলোভা। কোম্পানিটি রাশিয়ার কাছ থেকে জাহাজটিকে কিনে নিতে চায়, নেয়ও, তবে বিকিকিনির কোথাও কোনো আইনি জটিলতা থেকে যায়।

কানাডায় পৌঁছুবার পথে নিউফাউন্ডল্যান্ডের বন্দরে জব্দ করা হয় জাহাজটিকে। ২০১০ সালে সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০১৩ সালের জানুয়ারি অব্দি জব্দ অবস্থাতেই থাকে জাহাজটি, পরিচর্যাবিহীন। জ্বালানি তেলসহ অশোধিত কিছু রাসায়নিকবাহী ওরলোভা ততদিনে লক্ষ ইঁদুরের স্থায়ী আবাসে পরিণত হয়েছে।

ক্রুজ নর্থ এক্সপেডিশান ভেবেছিল, জাহাজটিকে টুরিস্টসহ উত্তরের সমুদ্র অভিযানে ব্যবহার করবে। কিন্তু সৃষ্ট জটিলতার কারণে তাদের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। পরে কানাডার কর্তৃপক্ষ তাকে লাতিন আমেরিকার দ্বীপরাষ্ট্র ডোমিনিকান রিপাবলিকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

জাহাজভাঙার কারখানায় মৃত্যু ও পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায় থাকে একসময়ের রূপবতী ওরলোভা। মনুষ্যবিহীন অবস্থাতেই বিশেষ প্রক্রিয়ায় তাকে ডোমিনিকান রিপাবলিকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।

ততদিনে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে, আর জাহাজকেন্দ্রিক অন্যান্য ব্যস্ততা ও খরচের বোঝায় কর্তৃপক্ষের কাছে অসহ্য এক জঞ্জাল হয়ে উঠেছে ওরলোভা, যাকে যত তাড়াতাড়ি বিদায় করা যায় ততই মঙ্গল।

২০১৩ সালের জানুয়ারিতে যাত্রা করে জাহাজটি এবং আগেই অনুমান করা হয়েছিল এমন এক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তার সঙ্গে বন্দরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জাহাজটির জিপিএস ছিল নিষ্ক্রিয়, তাই তার অবস্থান জানার সবরকম চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড উপকূলের কাছাকাছি কোনো স্থানে ক্ষণকালের জন্যে হঠাৎ কেউ কেউ দেখতে পায় তাকে। মার্চে নিউফাউন্ডল্যান্ড থেকে ৮০০ নটিক্যাল মাইল দূরে আবারও চিহ্নিত করা যায় ল্যুবভ ওরলোভাকে, কিন্তু নিষ্ফল, তখন তাকে নিয়ন্ত্রণের আর কোনো উপায় নেই।

তারপর শেষবারের মত এমনভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে পড়ে ভূতুড়ে এ জাহাজ, যেন তার প্রাণ আছে!



এখনও পর্যন্ত সে নিখোঁজ রয়েছে তার বিশাল ভৌতিক অবয়ব, শেষ বার্ধক্য, ইঁদুরের বংশানুক্রমিক রাজভূখণ্ড আর ভুল রাসায়নিকের আড়ৎ সঙ্গে নিয়ে। সমুদ্রের স্রোত আর ঝড়ের ব্যাপারে যারা জ্ঞান রাখে, তারা একটা খসড়া হিসেব করে বলেছে, জাহাজটি হয়তো ব্রিটেন বা স্কটল্যান্ড উপকূলের দিকে চলেছে। কোনো এক অশুভক্ষণে আরও অজস্র দুর্ভাগ্য নিয়ে ভিড়তে চলেছে মানুষের ভূমিতে, যে মানুষ তাকে অবজ্ঞাভরে পরিত্যাগ করেছিল

: সংগ্রহ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।