আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুভ্র পরী



অপুর হাতে কয়েক বছরের পুরোনো একটা ডায়েরী । ডায়েরীটা জিসান ভাইয়ের । জিসান ভাইয়ের একমাত্র স্মৃতি এটা তার কাছে । অনেক দিন ধরে পড়বে পড়বে করে পরা হচ্ছে না । আজ এটা পড়বেই সে ।

ডায়েরী খুলে পড়া শুরু করল অপু !
*******************
এখনো কোন বিড়ালের মিউ মিউ শুনলে হার্টবিট বেড়ে যায় । দেহের মাঝে রক্তের তুমুল প্রবাহ শুরু হয়ে যায় । চারদিক থেকে কালো কুয়াশা ঘিরে ধরে থাকে । দম বন্ধ হয়ে আসে । জীবন স্থির হয়ে যায় ।


******************
নাবিলা আমার ছোট বোনের বেস্টেস্ট ফ্রেন্ড । প্রথম প্রথম যখন বাসায় আসত , কোলে করে সাদা ফুটফুটে একটা বিড়াল নিয়ে আসত । কিছুদিন পর থেকে এসেই আগে আমার খাটের উপর বিড়ালটাকে রেখে চলে যেত আমার ছোট বোনের কাছে । আমি পশু প্রেমিক ছিলাম না । আধো ঘুমে মাঝে যখন হঠাৎ করে বিড়ালটাকে দেখতাম তখন ঘৃণা এবং রাগে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠতাম ।

চিৎকার করে আমার বোনকে ডেকে ওইটাকে সরাতে বলতাম । আর পাশের রুম থেকে নাবিলার খিল খিল হাসির শব্দ শুনে মেজাজ আরো বিগড়ে যেত । সেই রাগ ঝারতাম আমার বোনের উপর ।
******************
৯ টার মধ্যে আমি বাসা থেকে বেড় হতাম । বাসা থেকে ক্যাম্পাস বেশি দূর না ।

হেটে গেলে ১৫-২০ মিনিট লাগে আর রিক্সায় গেলে ৮-১০ মিনিট । মেজাজ খারাপ থাকলে আমি হাটা শুরু করতাম , যত হাটতাম তত রাগ বেশি হইত । আমি রাগ বাড়াইতে ভালবাসতাম । ২ মিনিট হাটতেই ঠাশ করে সামনে নাবিলা এসে পড়ল । আমি আরো রেগে গেলাম ।

বললাম..…
******************
- এই ফাযিল মেয়ে ! দেখে হাটতে পারো নাহ !
- দেখেই তো হাটছি ।
- তাহলে আমার সামনে কেন ?
- ইচ্ছা করে
- এইটা কোন টাইপের ফাইযলামি !
- আচ্ছা , আপনি সবসময় এত রেগে থাকেন কেন ?
- সবসময় রেগে থাকি না । তোমাকে দেখলেই আমার রাগ লাগে , তাই ।
- কেন ? আমি দেখতে কি খুব খারাপ !
- না না । তুমি অনেক সুন্দরি ।

আর সুন্দরি মেয়ে দেখলেই আমার রাগ লাগে ।
- কেন ?
- কারণ আমি দেখতে অনেক খারাপ । জেলাস লাগে ।

তখন আবার নাবিলা খিল খিল করে হেসে উঠল । তার সেই হাসিতে আমি বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম ।

পরিচিত কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্গারী হয়ে যাবে । তাই আমি বললাম..……

- এই মেয়ে সরে দাড়াও । আমি যাব ।
- ভাইয়া , আমার নাম নাবিলা ।
- তো ?
- আমিও যাবো আপনার সাথে ?
- হুট ফাযিল মেয়ে ।

খুব পাখা গজিয়েছে তাই না !
- হুম অবশ্যই । আমার বন্ধুরাতো আমায় শুভ্র পরী বলে ডাকে । আর পরীর পাখা থাকবে এটাই স্বাভাবিক ।
- হুম ! খুব কথা বলতে পারো দেখছি ! তোমায় আসলে সাদা বিড়াল ডাকা উচিৎ । আমি আজই আন্টিকে তোমার কথা বলে দিব ।

:@
- আচ্ছা ভাইয়া । ঠিক আছে । আমার আর কিছু করার থাকল না । - কি করার থাকল না !
- আপনি যে মতি ভাইয়ের দোকানের পিছনে স্মোকিং করেন সেটা কি আন্টি জানে ?
- কিহ !!! তুমি আমায় ফলো কর ?
- আমার আর কাজ নাই নাকি ! রিক্সায় যাচ্ছিলাম , তখন দেখতে পেয়েছি ।
- বিরক্তিকর ! এই তুমি থাকো তো ।

আমি গেলাম , আমার লেট হয়ে যাচ্ছে ।

এরপর আমি হাটা ধরলাম । পিছন থেকে নাবিলার খিল খিল হাসি শুনতে পাচ্ছিলাম । কেন জানি না , সেই হাসি শুনে আমার রাগ লাগার বদলে হাসি পেয়ে গিয়েছিল ।
**********************
নাবিলার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল বুধবারে ।

এরপর থেকে তার আর কোন খোজ পাত্তা পাই নাই । ভেবেছিলাম পাগলামির ভূত ছেড়েছে । কিছুদিন চলে গেল । ওর কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম । এক সকালে হঠাৎ পাশের ঘরে বিড়ালের ডাক শুনতে পেলাম ।

হার্টটা ধ্বক করে উঠল । এই প্রথম নাবিলার উপর অভিমান হল । অভিমানের কারণটাও ছিল অদ্ভুত । কেন জানি ওই বিড়ালের ডাকটা আমি আমার বিছানায় আশা করেছিলাম । হঠাৎ সংবিৎ ফিরে পেলাম ।

আনমনেই হাসি পেয়েছিল এইভেবে , আমি এই সব কি ভাবছি । জানি না নাবিলাকে দেখার আশায় কিনা আমি পাশের রুমে চলে গেলাম । যা দেখলাম তাতে আর একবার মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল । নাবিলা নেই । তার বিড়ালটাও নেই ।

অন্য একটি বিড়াল জানালার সানসাইডে বসেছিল ।
******************
৭ অক্টোবর । রাত ১২ টা পাড় হয়ে গিয়েছিল । আমার ফোনে একটা কল আসল । রিছিভ করতেই ওইপাশ থেকে কেউ মিষ্টি গলায় বলে উঠল ..……

- ছিঃ ভাইয়া আপনার কাছে এইটা আশা করি নাই !
- এক্সকিউজ মি ।

কে বলছেন ?
- নাবিলা বলছি
- ও আচ্ছা ভূতনী ।
- কিহ ! আমি ভূতনী ! :o
- হ্যাঁ , পরী আর ভূতনী , ওই একই হল ।
- কখনই না ! আপনি সবসময় আমার সাথে ঝগড়া করার তালে থাকেন !
- এনিওয়ে , কি যেন বলছিলে ?
- ও তাই তো ! দেখেছেন , আপনার সাথে ঝগড়া করতে গিয়ে আমি আসল কথাটাই ভুলে গেছি ।
- না দেখিনাই । শুনলাম ।


- আজ আমার জন্মদিন ।
- ও , হ্যাপি বার্থডে ।
- শুধু এটুকুই ?
- আরো কি চাও ?
- কাল আমাকে ফুচকা খাওয়াতে হবে ।
- আমার সময় নাই ।
- প্লিজ ভাইয়া ।

জাস্ট একঘন্টা সময় দিবেন ।
- হুম , দেখি ।

এরপর নাবিলার সাথে অনেক কথা বলেছিলাম । আমি বুঝতে পারছিলাম না আমি ভুল করছি না ঠিক করছি । কথা বলার মাঝকানে নাবিলার একটা কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম ।



- ভাইয়া গিফট দেন ।
- কিসের গিফ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।