আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"লালন সাঁই'র তিন গুরু"

I am the master of my fate, I am the captain of my soul.

//তিন পাগলে হৈল মেলা নদে এসে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে

একটা পাগলামী করে
জাত দেয় সে অজাতেরে দৌড়ে গিয়ে
আবার হরি বলে পড়ছে ঢলে ধূলার মাঝে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে



একটা নারকেলের মালা
তাতে জল তোলাফেলা করঙ্গ সে
পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি বুঝবি শেষে

পাগলের নামটি এমন
বলিতে ফকির লালন ভয় তরাসে
চৈতে নিতে অদ্বৈয় পাগল নাম ধরেছে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে//



লালন সাঁই র গান হিসেবে এই গানের জনপ্রিয়তা বেশ। অনেক কম মানুষই আছেন যারা গানটি শোনেন নাই। তবে এর অর্থ জানেন বোধকরি অনেক কম মানুষই। পিচ্চি কালে যখন এই গান শুনতাম তখন অর্থও বুঝতাম না :/ এই গানের মর্ম উদ্ধার করলাম খুব বেশি দিন হয় নাই। কয়েক বছর হবে।

এখনো অনেকেই এই গানের অর্থ বুঝেন না। এই গানে লালন সাঁই নিজেই তার গুরুদের কথা তুলেধরেছেন।





শুধু সিরাজ সাঁইই নন, লালনের আরো বেশ কয়েকজন গুরু সানিধ্য হয়েছিল। তাদের কথা বলতেই এই গানের প্রতিটা চরণ সৃষ্টি।



//তিন পাগলে হৈল মেলা নদে এসে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে//



তৎকালীন নদীয়া জেলার কথা শোনেন নাই এমন মানুষ কম।

সেখানে একসময়ে জ্ঞানপীঠ বলে বেশ সুখ্যাতি ছিল। সেখানেই সকল "পাগল" বলতে পন্ডিত ব্যাক্তিকে বোঝানো হয়।





//একটা পাগলামী করে
জাত দেয় সে অজাতেরে দৌড়ে গিয়ে
আবার হরি বলে পড়ছে ঢলে ধূলার মাঝে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে//



জাত নিয়ে এখন যেমন রেষারেষি চলছে তখনো চলতো। অজাতকে জাত দেওয়া পাগলামী ছাড়া আর কিছুই না, লালন সাঁইযে তেমনই এক পাগল ছিলেন তাই বলেছেন।





//একটা নারকেলের মালা
তাতে জল তোলাফেলা করঙ্গ সে
পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি বুঝবি শেষে//



নারকেলের মালা বা খোসার আরেক নাম "করঙ্গ" মগ টাইপের ব্যাবহারে নারকেলের মালা ব্যাবহার হত।

সাধারণ ভাষায় তাই মনে হয়। কিন্তু এর আরকটি বৈশিষ্ট্য আছে। তা হল করঙ্গ স্থির। তাতে জল তোলাফেলা ছাড়া আর কিছুই হয় না।

এটা আমাদের মতন সাধারণ মানুষ যারা স্থির কর্পোরেট টাইপের তাদের প্রতীক।

তারা সারা জীবন এক জায়গায় জমেই থাকে।







//পাগলের নামটি এমন
বলিতে ফকির লালন ভয় তরাইসে
চৈতে নিতে অদ্বৈয় পাগল নাম ধরেছে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে//



এই শেষ অংশে এসে লালন তার গুরুদের নাম বলেছেন। গুরুর প্রতি ভক্তি করে গুরুর নাম মুখে নিতে শ্রদ্ধায় কুঁকড়ে বলেছেন

"পাগলের নামটি এমন বলিতে ফকির লালন ভয় তরাইসে"



আর চৈত্যে, নিতেয়, অদ্বৈয় এই তিনজন হলেন শ্রীচৈতন্যদেব, শ্রী নিত্যানন্দ এবং অদ্বৈত আচার্য।



ইতিহাস ঘাটলে এদের সবাইকে খুব সহজেই চেনা যায়। শ্রীচৈতন্যদেব গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রবর্তক এবং শ্রী নিত্যানন্দ এবং অদ্বৈত আচার্য সে আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন-বাংলার ইতিহাসে এ কথা স্বর্ণক্ষরে লেখা রয়েছে।

স্বর্ণক্ষরে-এই কারণে যে, গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের মূলকথা হল গানের মাধ্যমে প্রেমের কথা বলা। এককথায় গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মটি হল প্রেমবাদ। যা একাধারে কৃষ্ণপ্রেম এবং জীবপ্রেম।





প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক যেনো অভ সিটিয়াম এর মতেঃ All people are manifestations of the one universal spirit and should, according to the Stoics,live in brotherly love and readily help one another. They held that external differences such as rank and wealth are of no importance in social relationships.


উৎসর্গঃ ইমন জুবায়ের ভাই, যার কারণে আমার এই সকল কিছু জানার সৌভাগ্য হয়েছিল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.