আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডাস্টবিনের পাশে প্রস্রাব করা নিয়ে নারী-পুরুষের মধ্যকার একটি সংঘর্ষ, অতঃপর......কুরুক্ষেত্র




জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে ভিক্টোরিয়া পার্কের অবস্থান। পার্কটির উত্তর দিকে দুটি প্রকান্ড ডাস্টবিন আছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে তিন চাকার ভ্যানে করে ময়লাওয়ালারা ডাস্টবিনগুলোতে ময়লা ফেলে যায়। ময়লাওলাদের কমিটি আছে। কমিটির সদস্য হয়ে তারপর তারা বাড়ি বাড়ি থেকে ময়লা নিয়ে আসে।

ময়লাওয়ালাদের মধ্যে কাশেম, আবুল, জয়নাল, সিদ্দিক, মান্নান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশেই থাকে। রাস্তার পাশে, পলিথিন দিয়ে বানানো ঘরে। প্রথম ডাস্টবিনটির পাশেই ফুটপাথে হাফিজা নাম্নী এক ছিন্নমূল মহিলার অনুরূপ বাশ, পলিথিন দিয়ে বানানো ঘর। এক বিকেলে এই হাফিজার সাথেই ময়লাওয়ালা কাশেমের ধুন্ধুমার সংঘর্ষ লেগে গেল।

এক বিকেলে ময়লাওয়ালা কাশেম সারাদিন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে তিন চাকার ময়লার ভ্যানে করে ময়লা নিয়ে আসলো।

ডাস্টবিনটিতে বেলচা দিয়ে ময়লা উঠানোর এক ফাঁকে তার প্রবল মুত্রের বেগ চাপলো। এক্ষেত্রে সে সবসময় যা করে তাই করলো। লুঙ্গি তুলে বসে পড়লো ডাস্টবিনটির পাশে এবং মুততে শুরু করলো। এটা অবশ্য কোন অস্বাভাবিক দৃশ্য নয়। ময়লাওয়ালা, রিকশাচালক, বাসের ড্রাইভার, হেলপার ইত্যাদি শ্রেনীর মানুষেরা প্রস্রাবের বেগ চাপলে ওই ডাস্টবিন দুটির পাশেই বসে পড়ে।

তাই ডাস্টবিনদুটির পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় সবসময়ই প্রস্রাবের ঝাঁঝালো ও কটু গন্ধ পাওয়া যায়।

কাশেম প্রস্রাব করছে। এমন সময় হাফিজা সেখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল এবং দুর্ঘটনাক্রমে কাশেমের প্রস্রাবের উপর তার পা পড়লো। সাথে সাথেই হাফিজার মুখ দিয়ে অশ্রাব্য খিস্তি বেরিয়ে এলো। ওই খানকির পোলা, এই হানে মুততে বইলি ক্যান, আর জাগা পাইলি না? আবাগির ঘরের ভাতার, ইচ্ছা হইলো আর ঢাইলা দিলি।

এভাবে বিভিন্ন অশ্লীল ও অশ্রাব্য বাক্যে হাফিজা কাশেমের চোদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করতে লাগলো।

হাফিজার বয়স আন্দাজ করা কঠিন। হয়তো 35/40 হবে। জ্ঞান হবার পর থেকেই পুরুষ শাসিত সমাজে সে নিগৃহীত, নিপীড়িত হয়ে বড় হয়েছে। পদে পদে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করে, মানুষের গালি খেয়ে, গালি দিয়ে সে বড় হয়েছে।

এখন সামান্য কারণেই তার মুখ দিয়ে গালি বেরিয়ে আসে। হাফিজা, কাশেম, মান্নান, আবুল তারা সবাই যেন এক প্রাগৈতিহাসিক সমাজের বাসিন্দা যেখানে শিষ্টাচার, সভ্যতা, ভব্যতা, সম্মানবোধ, সৌজন্যবোধ, আদব-কায়দা দূর আকাশের তারা যার অস্তিত্ত এই শ্রেনীর মানুষদের মধ্যে খুজে পাওয়া যায় না।

কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করে হাফিজার মতো এক নারীর নিকট থেকে এরকম গালি গালাজ খেয়ে কাশেমের মাথায়ও রক্ত চড়ে গেল। প্রস্রাব সম্পূর্ণরূপে শেষ হওয়ার পূর্বেই সে ক্ষিপ্তভাবে উঠে দাড়ালো এবং হাফিজার সাথে তুমুল বাক বিতন্ডা এবং গালি গালাজে লিপ্ত হলো। পরস্পরের দিকে আক্রমনাত্মক ভঙ্গিতে তারা তেড়ে গেল।

দাত-মুখ খিঁচিয়ে তারা একে অপরকে গালি দিতে লাগলো। হাফিজার গালিগুলো ছিল প্রবল আক্রমনাত্মক। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি তুলে দিচ্ছি, ওই চুত মারানির পোলা, তোর মায়রে চুদি, তোর বইনরে চুদি, খানকির পোলা, যা তোর বউরে গিয়া ক আমি আইতাছি, হারামখোর, মুততে বইছোস, মুত তোর গলা দিয়া হান্দায়া দিমু। কাশেমের মতো পুরুষ যার বাস বস্তিতে, নোংরা, ময়লা ঘেটে যার জীবন চলে, জীবন থেকে যার আর কিছু পাওয়ার নেই তার পক্ষে হাফিজার মতো এক ভাসমান নারীর নিকট থেকে এরূপ রূঢ় কথা বেশিক্ষণ সহ্য করা সম্ভব হলো না। হাত উচিয়ে সে মারতে গেলো হাফিজাকে।

তবে তাদের ঝগড়া বিবাদের মুহূর্তে সেখানে আরো ময়লাওয়ালা ছিল এবং আশে পাশে তাদের শ্রেণীর কিছু মানুষ দাড়িয়ে দাড়িয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় দেখছিল, তাদের মধ্যে দুজন হাফিজা এবং কাশেমকে ধরে ফেললো এবং দূরে টেনে নিয়ে যেতে চেষ্টা করলো।

কাশেমের এরূপ তেড়ে যাওয়ার ভঙ্গিটি হাফিজার মোটেও পছন্দ হলো না। সেও ক্ষেপে গেল এবং দ্বিগুন উদ্যমে কাশেমকে গালি গালাজ করতে লাগলো। কাশেমের আর সহ্য হলো না। তার গায়ে আসুরিক শক্তি ভর করলো।

কাশেমকে যে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, তাকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে কাশেম হাফিজার দিকে দৌড়ে গেল এবং হাফিজাকে ধরে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যেভাবে পারে নিজের পৌরষত্ত্বের পরিচয় জাহির করে সর্বশক্তি দিয়ে কিল, চড়, ঘুষি, লাথি মারতে লাগলো। হাফিজাও খামচি দিয়ে, থুতু ছিটিয়ে, দুর্বল হাতে দু’একটি ঘুষি দিয়ে এই আক্রমনের বেগ প্রতিহত করতে লাগলো। এর মধ্যে একটি ঘুষি কাশেমের মুখে লাগলো। এতে কাশেম আরো উন্মত্তের মতো হাফিজাকে পেটাতে লাগলো এবং হাফিজা নেতিয়ে পড়লে অবশেষে সে ক্ষ্যান্ত দিল। আশে পাশে দাড়ানো লোকজন তাদের এই মারামারি উপভোগ করতে লাগলো।

পথ চলতি ভদ্রবেশী মানুষজন সেই স্থানে এসে এই দৃশ্য দেখেই হাটার গতি বাড়িয়ে দিল এবং দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করলো।

নিজের পৌরষত্ব জাহির করে কাশেম শান্ত হলো। কিন্তু হাফিজার মনে ঘৃনার আগুন জ্বলে উঠলো। কাশেমের কবল থেকে মুক্ত হয়েই সে পুনরায় তার মুখের বাঁধন খুলে দিল। এক পর্যায়ে সে হাটতে হাটতে অদূরে দাড়ানো একটি পুলিশের গাড়ির নিকট আসলো এবং সাদা পোশাক পরা পুলিশের সোর্স রহমানের নিকট তার প্রতি করা এই নিপীড়নের কথা বর্ণনা করলো।

রহমান পূর্ব থেকেই হাফিজাকে চিনতো। অবশ্য সে কাশেমকেও চিনতো। রহমান যেহেতু পুলিশের সোর্স, তাই তাকে সব শ্রেণীর মানুষের সাথেই পরিচয় রাখতে হতো। রহমান হাফিজার সাথে ডাস্টবিনটির দিকে এগিয়ে গেলো। সেখানে কাশেমসহ অন্যান্যরা পুনরায় ভ্যান থেকে ময়লা অপসারণের কাজে নিযুক্ত ছিল।

রহমান সেখানে গিয়ে নেতৃস্থানীয় একজনকে পেয়ে তাকে হাফিজা আর কাশেমের মধ্যে মিল করিয়ে দিতে বলে নিজের কাজে চলে গেলো।

হাফিজা রহমানের নিকট থেকে কোন সুবিচার না পেয়ে আরো ক্ষেপে গেলো। কাশেমকে গালি দিয়ে কোনক্রমেই তার ক্রোধ উপশম হচ্ছিল না। এ অবস্থায় সে দৌড়ে নিজের বস্তিঘরে চলে আসলো এবং হাড়ি পাতিল সরিয়ে একটি বটি বের করলো। সবাই মনে করলো হাফিজা বুঝি কাশেমকে কোপাতে যাবে।

একজন চিৎকার করে কাশেমকে সতর্ক করলো। কিন্তু হাফিজা যা করলো তার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। হাফিজা বটির ধারালো অংশটি দিয়ে নিজের কপালে পরপর কয়েকটি কোপ দিল।

সাথে সাথে কপাল কেটে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসলো। বয়ষ্ক একজন তার হাত থেকে বটিটা ছিনিয়ে নিলো এবং একটি গামছা ছিড়ে তার মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিতে আসলো।

কিন্তু হাফিজা ঝটকা দিয়ে লোকটির হাত সরিয়ে দিলো। কাশেমকে আরো একদফা বকে এরপর সে আবারো রহমানের নিকট গেলো এবং বললো এবার যদি উপযুক্ত বিচার করা না হয় তবে সে সবার সামনেই নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করবে। হাফিজার সারা মুখ তখন রক্তাক্ত, রক্ত পড়ে তার জামার সামনের অংশ ভিজে গেছে। রহমান এ দৃশ্য দেখে আতকে উঠলো এবং একটি দশাসই, লম্বা পুলিশ নিয়ে কাশেমের সন্ধানে আসলো।

কাশেম অবস্থা বেগতিক দেখে দৌড়ে পালাতে চাইল।

কিন্তু রহমানের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন তাকে জাপ্টে ধরে ফেললো। পুলিশটি তাকে নিয়ে আসতে বললো। নিকটবর্তী হওয়ার পর পুলিশটি অত্যন্ত ঘৃনার সাথে যেন পৃথিবীর সবথেকে নোংরা জিনিস ধরছে এরূপ ভঙ্গিতে কাশেমের জামার কলার ধরে তাকে টেনে নিয়ে চললো। কাশেম কাকুতি মিনতি করতে লাগলো যে এখানে তার কোন দোষ নেই, সে শুধু মুততে বসেছিল, ঐ শয়তান হাফিজাই তাকে বিনা দোষে গালাগালি করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কাশেমের ওজর আপত্তি শুনতে শুনতে এক পর্যায়ে পুলিশটির ধৈর্যচ্যুতি ঘটলো এবং পুলিশটি কাশেমের হাটুর পিছনে তার বুট পরা পা দিয়ে এক লাথি কষিয়ে দিলো।

কাশেম হাটু ভাজ করে ফুটপাথে পড়ে গেলো। পুলিশটি কাশেমকে টেনে তুললো এবং তার বুট পরা পা দিয়ে আবারো প্রচন্ড জোরে কাশেমের পিঠে লাথি মারলো। এ দৃশ্য দেখে বিকৃত উল্লাসে খনখন করে হাফিজা হেসে উঠলো এবং কাশেমকে মা-বাপ তুলে অনর্গল গালি দিয়ে চললো।

পুলিশ, কাশেম, রহমান, হাফিজা এবং আরো কয়েকজন এরপর হাটতে হাটতে পুলিশ ফাড়ির দিকে চলে গেলো। এর পরবর্তী ঘটনা দেখার জন্য আমি আর তাদের সাথে যাইনি।

well, আমারও তো কাজ আছে নাকি?

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.