আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্যালাক্সি এস থ্রি



গ্যালাক্সি এস থ্রি
মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ
বাণিজ্য মেলা শুরু হওয়ায় পাশের রুমের ছোট ভাইয়েরা ত্যাক্ত বিরক্ত সুরু করলো।
-যে করেই হোক মেলায় যেতে হবে। ভাই আপনার সময় কবে, কবে যাবেন প্লিজ জানান।
-কেন তোদের নিজস্ব স্টল আছে নাকি’? অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম।
-আরে না ভাই, নিজের স্টল নেই ঠিক আছে কিন্তু মেলায় পত্যেক স্টল ই দেখবেন আমাদের স্টল হয়ে গেছে।


তা কি ভাবে হয় দেখার জন্য হলেও মেলায় যেতে রাজি হলাম। ‘মেলা জমে নাকি ক্ষীর হয়ে গেছে’, চোখ টিপে বলল ফাহিম।
‘এই ক্ষীর আমরা ছাড়া বাসি হয়ে যাবে’, ফাহিমের সাথে যোগ দেয় তানভীর। ওরা দুজনেই এবার ফাস্ট ইয়ারে উঠেছে। জেলা শহর থেকে ঢাকায় আসায় সব কিছুই ওদের দেখতে হবে এবং সবার আগে গিয়েই দেখতে হবে এমন একটা টেন্ডেন্সি বিরাজ করে ওদের মদ্ধে।

কোন এক অদৃশ্য কারনে আমাকে ছাড়া কোথাও যেতে চায় না। একা যেতে বললে বলে, ‘আরে ভাই শুধু গেলেই হল এন্টারটেইন্ট এর ব্যাপার আছে না’? আমি বুঝি না ওদের ইন্টারটেইন্ট এ আমাকেই কেন লাগে।
যাই হোক না বলে লাভ হবেনা বিধায় রাজি হয়ে গেলাম। আমি দিন ঠিক করলাম মঙ্গলবার, যাতে ভীর কম থাকে। শুনে ওদের মাথায় হাত।

আরে ভাই ভীরেই তো যেতে হবে। তানভীরের ভাষ্যমতে মেলার শোভা হল ভীর। ফাহিম তার সাথে যোগ করে, শুধু ভীর হলে হবেনা। মেয়ে মানুষের ভীর। আমার তো মাথায় হাত।

বজ্জাৎ গুলো বলে কি? ওদের প্লান কি ?
শুক্রবারে ভীর উপচে উপচে পরে বিধায় সেদিনেই আমরা হাজীর হলাম বাণিজ্য মেলায়। তানভীর জানালো অন্যদিন গুলোতে মজা একটু কম হলেও একেবারে কম হয় না । কারন ক্লাস ফাকি দিয়ে মেয়েদের ঝাঁক চলে আসে যাদের সাথে অভিবাবক থাকেনা। ফলে টাংকি মারতে গেলে দেখা যায় আমাদের চেয়ে মেয়েরাই বেশি মজা লুটছে। আজ সবাই এসেছে অভিবাবক সহ তাতে কি? মজার কমতি হবে না।

টিকেট কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকার সময় মনে হল এতো সময়ে পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে দক্ষিন মেরু দুইবার প্রদক্ষিণ করে আসা যেত। ফাহিম আর তানভীর কোথাও যাওয়ার আগে দের ঘন্টা ধরে সাজুগুজু করে। চুল খারা করতেই লাগে পাক্কা এক ঘণ্টা। লাইনের ধাক্কাধাক্কিতে ওদের চেহারা পুরা পালটে গেলো। ফাহিম বলল, আয়নার সামনের সময়টা প্রায় বৃথা গেলো রে।

আমি ভয়ে আছি ওরা ভেতরে প্রবেশ করে আবার না আয়না খুজে বের করে। তাহলে ওদের চেহারা ঠিক করতে করতেই রাত হয়ে যাবে।
মেলায় প্রবেশ করে দেখলাম প্যাভিলিয়ন এ পণ্য দেখার চেয়ে পন্যের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের প্রতিই আকরশন বেশি। মানে ঐ সেলস গার্লদের প্রতি আর কি। তানভীর পকেট থেকে সদ্য কেনা গ্যালাক্সি এস থ্রি সেট টা বের করে এলোপাথাড়ি ছবি তুলতে সুরু করলো।

অনেক চিৎকার চেচামেচি করেও ওর ক্যামেরা আমাদের দিকে ঘোরাতে পারলাম না। যেন মেলায় আসায় পত্যেক নারী দরশনার্থীর ছবি সংরক্ষণের বিশেষ কোন এ্যাসাইন্মেন্ট এ এসেছে। সারাদিনে আমার আর ফাহিমের দু চারটি ছবি তুলেছে কি না সন্দেহ। ইউনিলিভারে ঢুকে ছেলেদের চেহারা ফর্শা থেকে আরও ফর্শা করা যায় কি করে এমন টিপস নিচ্ছি হটাত কোত্থেকে ফাহিম এসে ঝাপিয়ে পড়লো,
‘ভাই ভাই জলদি কলম টা দেন আরে জলদি দেন’। অন্যদিকে তাকিয়ে আমার দিকে হাত বাড়ীয়ে কলম চাইছে।

কারন বুঝতে পারলাম না। কলমটা দিয়ে আমার মনযোগী ছাত্র হলাম বিউটি টিপস এর। কিছুক্ষন পর সিডরের মত হাজীর তানভীর, ‘ধুর ভাই আপনার জ্ঞান বুদ্ধি দিনকে দিন মেয়ে মানুষের মত হয়ে যাচ্ছে। শুধু কলমটাই দিবেন? খাতা দিবেন না’? আমি বললাম, “ও কি আমার কাছে খাতা চেয়েছে, তা ছাড়া আমার কাছে খাতা নেই”? ‘আপনার বুদ্ধি তো বিবাহিত মেয়ে মানুষের মত হয়ে যাচ্ছে, কলম রাখবেন আর খাতা রাখবেন না’? আমি পকেট হাতরে কিছু না পেয়ে মানিব্যাগ এ একটা ভিজিটিং কার্ড পেলাম, ‘চলবে’? ‘আপাতত চলবে,’বলেই দৌর দিচ্ছিল। আমি জাপটে ধরলাম, “হ্যারে তোরা খাতা কলম নিয়ে কি করবি” ?
‘ফাহিম একটা মেয়েকে প্রায় পটিয়ে ফেলেছে, মেয়ের মা সাথে থাকায় কথা বলতে পারছে না।

নাম্বার লিখে হাতে গুজে দিবে আর ভাই সাতে মেয়ের ফুপিও আছে হেব্বি লারকি, আমি সেইতার ক্যান্ডিডেট’ চোখ টিপে বলল তানভীর।
-ওরে ছাগল, একটা খাতা কাছে রাখিনা বলে আমার বুদ্ধি মেয়েদের কাতারে নামিয়ে দিলি আর এখন নিজেরাই মেয়েদের পিছে ঘুর ঘুর করছিস, না?
-ভাই এখন সময় নেই পরে আপনাকে সরি বলে নেব, যাই। বলে যেমনে এসেছিলে তেমনি নাই হলে গেলো।
আমি চিন্তায় অস্থির, কি না কি করে বসে, ধরা পড়লে মাইর একটাও তো ধুলোয় পরবে না। চিন্তা বেশিক্ষন স্থায়ী হলনা।

মাড়ির দাঁত বের করে হাসতে হাসতে দুই রোমিও হাজীর। তাদের মিশন নাকি সাক্সেস। মেয়েটা নাম্বার নিয়েছে, নাম্বার নিয়ে এমন ভাবে ঠোট টিপে হেসেছে যে আগামী কাল সূর্য ওঠা মিস হতে পারে কিন্তু এই মেয়ের কল ব্যাল করা মিস হবে না। ওরা দুজনেই ফুরফুরে মেজাজে। এবার সুধুই আমাদের ছবি তুলছে।

মেয়ে পটানোর এই শর্ট কাট সিস্টেম দেখে আমারও ইচ্ছে হল কি করে এই অসাধ্য সাধন করলো তা জেনে নেই। জবাবে বিজ্ঞের মত তানভীর এগিয়ে এলো,
-ভাই আপনার মডেল কত?
-মানে?
-আরে আপনার মোবাইলের মডেল কত?
-একটা স্যাম্ফনি বি-৪ আরেকটা নকিয়া ই-৫। আমতা আমাতা করে বললাম
-উহ, ই-৫ নিয়ে আসছে মেয়ে পটাতে। আরে ভাই মেয়ে পটাতে লাগে গ্যালাক্সি এস থ্রি। এই দেখেন আমার হাতের ফোন দেখেই তো মেয়ে কুপোকাত।

ওরা দুজন ছিল, একজন ফুপি একজন ভাতিজি। ফাহিমের ভাগে পড়েছে ভাতিজি আমার ফুপি। দুজনেরই প্রায় সমান বয়স। আমি আর ফাহিম এখন আংকেল আংকেল।
-ওরে বাপরে এতদুর এগিয়ে গেলি?
আসলে ওদের অবস্থা দেখে আমারও হিংসা হচ্ছিলো।

বললাম আজ আর মেলা ভালো লাগছে না চলে যাই। মেলা ঠেলে বের হয়ে বাসে ওঠাটা হয়ে গেলো বিরাট চ্যালেঞ্জিং। এর চেয়ে এবারেস্ট এ ওঠাও হত সহজ। অনেক ঠেলে ঠুলে বাসে উঠলাম। নরা চরার জায়গা নেই।

যার যার যায়গায় সবাই যেন ফিক্সড হয়ে গেছে। একজন কে ধাক্কা দিয়ে দুগুন শক্তির ধাক্কা খেলাম। সবার ‘দেহ পাবি তবু জায়গা পাবিনা’ অবস্থা। বাস ছারতে শুরু করেছে এমন সময় তানভীর গগন বিদারি চিৎকার সুরু করছে। কছে তো যেতে পারছি না, দূর থেকেই হাক ছাড়লাম।

কি হয়েছে তানভীর? ‘ভাই আমার মোবাইল পাচ্ছিনা, বাসে ওঠার আগেও হাত দিয়ে দেখেছি আছে। কোন টা গ্যালাক্সি এস থ্রি? কোন জাবাব দিতে পারলো না তানভীর। ‘গ্যালাক্সি এস থ্রি’ বলে গলা দিয়ে ভুভুজেলার মত আওয়াজ করে জ্ঞান হারীয়ে পাশের যাত্রীর গায়ের উপর পড়লো। আমি আতঙ্কিত হয়ে গেলাম। তানভীরের ওজন পাশের যাত্রী নিতে পাড়বে তো ?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.