আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলোচিত খবর-২০১২, আন্তর্জাতিক সালতামামি, ২০১২ সালের আলোচিত ঘটনা:

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এবছরে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা নিয়ে আলোচিত খবর-২০১২ : ২০১১ সালের মতো এবছর ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গ। আরব বসন্তের প্রভাবে গেল বছর দীর্ঘ চার দশকের সাম্রাজ্য হারান লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি। সে বছর সেটিই ছিল সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। মধ্যপ্রাচ্যের গণতন্ত্রের পথে সে অগ্রযাত্রা এখনও চলছে। লিবিয়ার পর সিরিয়া এখন এ তালিকায় রয়েছে বেশ উপরে।

তবে, পশ্চিমাদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এখনও ক্ষমতায় টিকে আছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। ক্ষমতায় টিকে থাকলে ও গেলো ২১ মাসে হামলা আর পাল্টা হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত অর্ধ লক্ষ্য সিরিয়ান। অবশ্য প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পশ্চিমাদের চেষ্টার অন্ত ছিল না। অবশ্য হতাহতের সংখ্যার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে আসাদকে সরানোর দিকে বেশি মনোযোগ পশ্চিমা নেতাদের। আর এজন্য বিশ্বের সর্বোচ্চ সংস্থা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দারস্থ হয়েছে তারা।

তবে, চীন ও রাশিয়ার বাধায় সে যাত্রা রক্ষা পায়, আসাদ। শুধু নিরাপত্তা পরিষদেই নয় প্রেসিডেন্ট আসাদকে নিবৃত্ত করতে বছরজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদেশগুলোর নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সরাসরি বিরোধীতা করে, রাশিয়া। আর এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন দেয় চীন ও ইরান। রাশিয়ার সঙ্গে চীন, ইরানের এই সমর্থন ভালোভাবে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিরক্ষানীতিতে আমূল পরিবর্তন এনে এশিয় অঞ্চলে সেনা তৎপরতা বাড়ানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়, দেশটি।

আর, পরমাণু ইস্যূতে সরাসরি হামলার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে শুর মিলিয়ে ইরানের উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। অবরোধ, নিষেধাজ্ঞা, তেল নেয়া বন্ধ ঘোষণা’র মাঝে দেশটিতে সামরিক হামলার ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। তবে, বিশ্বের পরাশক্তিদের হুমকি ধামকি উপেক্ষা করে জাতীয় সমঝোতার ভিত্তিতে, হরমুজ প্রণালির দখল রাখার পাশাপাশি পরমাণু ইস্যুতে পেছপা হয়নি ইরান। পশ্চিমাদের কাছে হার না মানলেও ভূমিকম্পের কাছে হার মানে দেশটি। ৬.৪ ও ৬.৩ মাত্রার দুটি ভূমিকম্পের আঘাতে প্রাণ হারায় ৩শতাধিক মানুষ।

ইরানের মতো ইরাকে আঘাত হানেনি ভূমিকম্প তবে প্রয়াত সাদ্দাম হোসেনকে সরিয়ে ন্যাটোবাহিনীর দেখানো শান্তির পথে চলতে গিয়ে এ বছর ও প্রাণ হারিয়েছে ---- হাজার ইরাকি। বছরজুড়ে বেশ উত্তপ্ত ছিল, মিশর। ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দেশের সবচেয়ে বড় দু-দলের সমর্থকদের সংঘর্ষে মারা যায় ৭৭ জন। আর দীর্ঘ ৩১ বছর পর জরুরি অবস্থা তুলে নিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মুর্সি ক্ষমতায় আসলেও ডিক্রি জারী ও খসড়া সংবিধান নিয়ে আবারো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দেশটি। অবশ্য গণরায়ে শেষ পর্যন্ত সংবিধানটি টিকে যায়।

টুইন টাওয়ার হামলার জের ধরে যে কয়েকটি দেশে আগ্রাসন চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তার মধ্যে একটি আফগানিস্তান। এবছরে যেখানে বোমা হামলাসহ বিভিন্ন সহিংসতায় মারা গেছে দেড় হজারের বেশি মানুষ। একই ইস্যূতে জঙ্গি দমনের নামে ড্রোণ হামলায় পাকিস্তানে মারা গেছে ৩৬৪ জন। রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে মার্কিন ড্রোণ হামলায় এখন বিপর্যস্ত পুরো পাকিস্তান। ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষূকে ভয় পায়নি এশিয়ার দেশ উত্তর কোরিয়া।

অভাব আর অর্থনৈতি বিপর্যয় সত্ত্বেও, পরমাণু কর্মসূচি সচল রাখার পাশাপাশি একের পর এক ক্ষেপনাস্ত্র উৎক্ষেপন করেছে, দেশটি। ইউরোপীয় অঞ্চল থেকে সামরিক শক্তি কামিয়ে, এশিয় অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারে সমুদ্রসীমায় শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি, এ অঞ্চলে সেনা তৎপরতা বাড়ানোর ও ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে আগামী ১০বছরের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাত থেকে ৪৫ হাজার কোটি ডলার কর্তনের পরিকল্পনায় আরো এক ধাপ এগুলেন, ওবামা প্রশাসন। তবে, বিশ্লেষকরা বোলছেন বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশটির অর্থনীতিকে সচল করতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর, ওবামার এ সামরিক কৌশল এশিয় অঞ্চলে নতুন কোরে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

এদিকে, বছরের মাঝামাঝিতে সমুদ্রসীমার কয়েকটি দ্বীপের দখল নিয়ে ত্রীমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয় চীন, জাপান ও তাইওয়ানের মধ্যে। ত্রীমুখি সে সংঘর্ষ না জড়ালে ও জাতিগত সহিংসতায় এবছর একাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে মিয়ানমারের রাখাইন বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলমানেরা। যে সংঘর্ষে নিহত হয় দু’শতাধিক, পুড়িয়ে দেয়া হয় কয়েক হাজার বাড়িঘর। আর এ সময় শান্তিতে পাওয়া নোবেল পুরস্কার আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহন করলেন, দেশটির বিরোধীদলিয় নেত্রী আং সান সূ চি। সূ চী নিরব থাকলে ও এ বিষয়ে নিরব থাকেন নি মার্কিণ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

এদিকে, ইসলাম বিরোধী চলচ্চিত্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে সহিংসতা শুরু হয় বিশ্বজুড়ে। ধর্মীয় অবমাননায় যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী মুসলিম বিশ্বের সে বিক্ষোভে অর্ধশত মুসলমানের সঙ্গে প্রাণ হারায় লিবিয়ায় নিযুক্ত এক মার্কিন রাষ্ট্রদূত। বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে শুরু হয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন। অধিবেশনে সিরিয়া ছাড়াও ইরানের পরমাণু ইস্যূতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রাখেন বিশ্ব নেতারা। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে নিউইয়র্কসহ বেশ কয়েকটি শহরে আঘাত হানে যুক্তরাষ্ট্রের স্মরণ কালের ভয়াবহ ঝড় স্যান্ডি।

পূর্বসতর্কতায় হতাহতের সংখ্যা কম হলেও ক্ষয়ক্ষতি ছাড়িয়ে যায় অতিতের সব রেকর্ড। ঘূর্নিঝড়ের ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেই শুরু হয় বছরের সবচেয়ে আলোচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তুমুল বিতর্ক আর উত্তপ্ততার মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া সে নির্বাচনে, সব সমীকরন পাল্টে, প্রতিপক্ষকে বড় ব্যাবধানে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবারো হোয়াইট হাউসের টিকিট পান, বারাক ওবামা। মার্কিন নির্বাচনের কয়েকদিন পর ১৪ নভেম্বর গাজায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে, হামাসের সামরিক শাখার প্রধান আহমেদ জাবেরিকে হত্যা করে ইসরায়েল। মিশরের মধ্যস্ততায় সমঝোতায় পৌছানোর আগ পর্যন্ত, কয়েকদিন ধরে চলে দু-পক্ষের পাল্টাপাল্টি যুদ্ধ।

যুদ্ধ বন্ধ হলেও ঝরে যায় কিছু অসহায় প্রাণ। ২৯ নভেম্বরের কথা হয়তো কখনই ভুলবে না ফিলিস্তিন। স্বাধীন রাষ্ট্রগঠনের স্বপ্ন পুরন না হলেও, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের বিরোধীতা সত্ত্বেও, এদিন বিশ্বের ১৩৮টি দেশের সমর্থনে, জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক অঞ্চল থেকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পায় ফিলিস্তিন। ইতলিতে থাকা লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির এক বিলিয়ন ইউরো’রও বেশি মুল্যের সম্পত্তি জব্দ করে কর বিভাগ। কয়েকটি ব্যাংক, গ্যাস ক্ষেত্র, গাড়ি তৈরীর প্রতিষ্ঠান ও তুরিন ভিত্তিক ফুটবল ক্লাব জুভেন্টাসে থাকা অংশিদারিত্ব থেকে এ অর্থ সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করে ইতালি পুলিশ।

বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় বোফা’র আঘাতে ল-ভন্ড হয়ে যায় ফিলিপাইন। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি এ দুর্যোগে প্রাণ হারায় এক হাজেরও বেশি মানুষ। বছরের শেষ দিকে, আসছে বছরে আরো দশ লাখ গোপন নথি প্রকাশের মাধ্যমে বিশ্বকে চমক দেয়ার ঘোষণা দেয় লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেয়া ধর্ষনের দায়ে অভিযুক্ত, উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। শতবছর পর আসা ১২-১২-১২ তারিখটি উদযাপিত হয় নানা ঢঙে। তবে, দিনটি মুলত খেতাব পেয়েছে বিয়ের সেরা তারিখ হিসেবে।

এই দিনে বছরের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য তরুন তরুনী আবদ্ধ হয় বিয়ের বন্ধনে। আর পাঁচ হাজার বছরের পুরাতন মায়া সভ্যতার বর্ষপঞ্জি শেষ হওয়ায়, ২২ ডিসেম্বর পৃথিবী ধ্বংসের ঘোষণায় আরো একবার তোলপাড় হয় সারা বিশ্বে। পৃথিবী ধ্বংসের সে গুজব ভূল প্রমানিত করে ২৫ ডিসেম্বর অনাড়ম্বর পরিবেশে পালিত হয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। আর বছরটা শেষ হয় নয়াদিল্লিতে গণধর্ষনের জের ধরে ভারতজুড়ে বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে। চলন্ত বাসে গণধর্ষনের পর ২৩ বছর বয়সী ঐ তরুনী ও তার ছেলেবন্ধুকে ফেলে দেয় নরপশুরা।

এ ঘটনায় শোকাহত ভারতীয়দের সঙ্গে গভীর শোক প্রকাশ করে কংগ্রেসনেত্রী সোনিয়া গান্ধি, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। দেশজুড়ে প্রতিবাদ আর বিক্ষোভের মধ্যে জোরদার হয় নারি নির্যাতন আইন জোরদারের। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট রাজ্যে এক যুবকের এলোপাতাড়ি গুলিতে ২০ স্কুল ছাত্রসহ ২৬ জন নিহত ও আগেয়াস্ত্র নিরাপত্তা আইন প্রণয়নে প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রতিশ্রুতি। চীন ও জাপানের ক্ষমতার পরিবর্তন। ফ্রান্সের সমাজবাদি প্রার্থীর জয় লাভ।

ভেনেজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের পুন:নির্বাচিত হওয়া। ইউরোপিয় ইউনিয়নের শান্তিতে নোবেল গ্রহন। বিশ্ব অর্থনিতিতে জাপানকে টপকে চীনের দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসা ও ১৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাস ভেঙে প্রথম কোন নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় এ বছরেই। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।