আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিতৃত্ব: উপভোগ্য, অনুচিত






#১
রেল ইশটিশানে বসে আছি অনেক্ষন ধরে। লাইন ক্লিয়ার না থাকায় ট্রেন আগের স্টেশনে দাড়িয়ে আছে। আমার সাথে বসে এক ভদ্রলোক মোবাইলে কথা বলছেন। তার বাচ্চার সাথে। নতুন বাবা।

সম্ভবত বাচ্চাটি এখনও ভালভাবে কথা বলতে শিখেনাই।

প্রায় তিন মিনিট ধরে বাপ-বাচ্চার কথা চলতেছে, বাপ এদিক থেকে বাবাআআ.. বলে, ওদিক থেকে বাচ্চাও বাপকে নকল করে। বাপের কাছে কি মজা জানি লাগতেছে, একবার বাবা...একবার আব্বু, একবার বাবায়া... চলতেই আছে। সম্ভবত উনি এমূহূর্তে পৃথীবির সবচে সুখী মানুষ।

পুরুষ মানুষকে জীবনের প্রথম ধাপে ঘরের মায়াজালে বন্দী করে রাখে তার বাবা-মা, যৌবনে স্ত্রী, মধ্যবয়সে বাচ্চা-কাচ্চার টান।

নয়তো কবেই পৃথীবী ধ্বংস করে দিতাম আমরা!!! মাঝে-মাঝে জীবনটা আসলেই সুন্দর হয়ে ধরা দেয়।

ওনার এতো সুখ দেখে হঠাৎ কেনো জানি বাবা হয়ে উঠতে মনটা কেঁদে উঠলো। আপনাদের আশে পাশে মা হতে রাজি আছে এমন কোন শিক্ষিত, মার্জিত, সুদর্শনা কইন্যা থাকলে খবর দিয়েন তো!

#২
লেট এ ট্রেন এ আসায় বিকালের নাস্তা হয়নি। ট্রেণে ডিমওয়ালা কে পেয়ে ভালোই হলো। ১০টাকায় একটা ডিম।

খেলাম, কিন্তু পানি নাই! যাই হোক রাতের সাড়ে ৮টায় গন্তব্যে নেমে ষ্টেশনের প্ল্যাটফর্মের পাশের এক দোকানে ডাব খেতে নিলাম। এমন সময় দুটো বাচ্চা এসে বলে
-কাকা, আরারে এক প্লেট চটপটি কিনি দন, খাইতাম।
:কেয়া? ভাত ন হ? ....কেনো ভাত খাও নাই?
-না! ঘরত ভাত নাই
:তুয়ার ল ইবে হন? ....তোমার সাথে এটা কে?
-আঁর ছোড ভাই।
লই দন না, পেটড ভুক লাইগ্গে ...কিনে দেন না, পেটে ক্ষিধা লাগছে।

একটু মায়াই হলো।

দোকানদারকে বললাম একপ্লেট চটপটি দিতে। কিন্তু বেচারাদের ভাগ্যটাই খারাপ। সন্ধ্যার পরেই চটপটি শেষ। তো কি আর করা, ওদের কে বললাম চটপটি শেষ, চিপস খাও। একবার রাজি হলো বটে! আবার বলল না, অন্যকিছু দেন।

শেষে একটা ১৫টাকা দামের একটা ঝাল পেটিস নিয়ে দিলাম।

এরপর দুইজন চলে গেলো। আমি ডাব খাওয়ায় মন দিলাম।

হঠাৎ দেখি কান্নার শব্দ। একভাই অন্যভাইকে পিটানি দিছে! ঝগড়ার মূল কারণ ঐ ঝাল পেটিস!! একজনের ভাগে বেশী পড়ে যাওয়ায় কমভাগপাওয়া জন ক্ষেপে অন্যজনকে বেদম মাইর দিলো।

খাওয়া তো দূরে থাক লেগে গেলো দুইভায়ে মল্লযুদ্ধ।

আমি আমার মতো করে ডাব খাওয়া শেষ করে বিল দিয়ে চলে এলাম। যখন আসছিলাম তখনও পেছন থেকে ভেসে আসছে দুই বাচ্চার অশ্লীল গালিগালাজ!! এরাই হয়তো একদিন পিচ্চি হান্নান অথবা এরশাদ শিকদার হবে। যে লোকটা এদের জন্ম দিয়েছে, তার বাবা হওয়া মোটেই উচিত হয়নি। বরং পৃথীবির জন্যে ক্ষতিকর হয়েছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।