আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কী খোঁজ তুমি ঘাসের বনে ( ৩ )

পরের মাসের এক তারিখ সকাল ঠিক দশটায় বাবলীদের গাড়িটা এসে রামপুরায় একটা ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে থামে। একে একে সবাই নামে। বাবলী, বাবলীর মা, ছোট ভাই পাপ্পু এই প্রথম নতুন বাসায় এলো। অবশ্য রজব আলীই আনেন নি। তিনি তার পরিবারকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলেন।

তিনি বাড়িটা কিনে মিজান নামে এক ইন্টেরিয়র ডেকোরেটরকে ভেতরের ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন করে পুরো বাড়ির রং করার দায়িত্ব দেন। কিন্তু এখন এসে রজব আলী নিজেই বিস্মিত হয়ে যান। ইন্টিরিয়র বেটা এ কী রং করেছে, কটকটা বাদামী ! তিনি কোমরে হাত দিয়ে ভ্রূ কুঁচকে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাবলী ও তার মার কাছে এক দেখাতেই বাড়িটা ভাল লেগে যায়। বাড়ির রঙের কারণে না, মার ভাল লাগে বাড়ির সামনে একটা মেহেদী গাছ আছে বলে।

মাথায় দেয়ার জন্য এখন আর বাজার থেকে কেমিক্যালযুক্ত মেহেদী কিনতে হবে না। আর বাবলীর ভাল লেগেছে দোতালার টানা বারান্দাটা দেখে। পাপ্পু এখনো বুঝতে পারছে না বাড়িটা তার ভাল লাগছে না মন্দ ! সে চরম বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। এমন সময় ভেতর থেকে ইন্টেরিয়র ডেকোরেটর মিজান বেরিয়ে এসে রজব আলীকে সালাম দেয়। রজব আলী সালামের উত্তর না দিয়ে ধমকে ওঠেন,‘এইটা তুমি কী রং লাগাইছ ?’
‘বাদামী স্যার।

স্যার, বাদামী হলো বাঁশির প্রতীক, তাই এ রংটা চয়েজ করেছি। আপনার এ বাড়িতে সব সময় সুর খেলা করবে। কখনো ভালবাসার সুর, কখনো মায়া মমতার সুর আবার কখনোবা আজানের সুর। তবে কখন কোন সুর খেলা করবে তা ঠিক করবেন আপনারা, বাড়ির বাসিন্দারা। ’ মিজানের কথা শুনে সবাই আবার বাড়িটার দিকে তাকায়।

রজব আলীর কাছে এবার রংটা খারাপ লাগছে না। ভালইতো, বাঁশের বাঁশির রং।
বাবলীদের বাসার তিন গলি পরেই সাব্বিরদের বাসা। গাড়ির মেকানিকের তিন ছেলের ছোটজন সাব্বির, ক্লাস সিক্সে পড়ে। স্কুলে যাওয়ার প্রতি তার যত না আগ্রহ তার চেয়ে বেশি আগ্রহ পাড়ার এ বাসা ও বাসা ঢু মারা।


কারো বাসায় মেহমান এসেছে, ঘরে নাস্তা নেই,‘এই সাব্বির এই, কই যাস ? যা তো দশটা সিঙ্গাড়া এনে দে। ’
কারো বা জানালার কার্নিসে বোলতা বাসা বানিয়েছে,‘সাব্বির দে না বাসাটা ভেঙে। ’ সাব্বির যেন পাড়ার সব বাসারই একজন কমন সদস্য। পাড়ায় এমন কোন ঘটনা ঘটে না যা সব্বিরের অজানা। সাব্বিরের বাবা প্রথম প্রথম রাগারাগি করতেন।

এখন আর কিছু বলেন না। সাব্বিরের মা মাঝে মাঝে তেতোবিরক্ত হয়ে বাবার কাছে অনুযোগ করেন, তখন সাব্বিরের বাবা হেসে বলেন,‘সাব্বিরের মা, পোলা তুমি জন্ম দিছ ঠিকই কিন্তু ও তোমার একার না, পাড়ার সবার। বড় দুইজনতো আছে, ছোটটা না হয় বড় হইল পাড়ার সবার আদরে আর শাসনে। ’
স্কুল শেষে সাব্বির দৌড়ে বাসায় ফিরছে। ৬৬ নম্বর বাসার সামনে এসে সে থমকে দাঁড়ায়।

বাবলীরা সবাই বাসার সামনে দাঁড়িয়ে মিজানের কথা শুনছে। সাব্বির অবাক হয়ে বাবলীকে দেখে। বাবলী ডান হাত তোলে কপালের চুল সরায়, তার ডান হাতের অনামিকায় সাগরের দেয়া আংটির হীরায় রোদ ঝিলিক দেয়।
‘আপনে কণা বুবু না ?’ সাব্বিরের প্রশ্নে সবাই ফিরে তাকায়।
‘কণা বুবু !’ বাবলী অবাক।


‘আপনে বাউল ভাইয়ের কণা বুবু না ?’
‘সে এসব কী বলছে ?’ বাবলীর মাও অবাক। রজব আলী বুঝতে পারছেন না বিষয়টা কী ? এমন সময় সাব্বির হঠাৎ তার স্কুল ব্যাগ বাবলীর হাতে দিয়ে স্কুলের দিকে দৌড় দেয়, পরক্ষণে ফিরে এসে,‘সরি, ভুল হইছে,’ বলে বাবলীর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বাসার দিকে দৌড় দেয়, দৌড়াতে দৌড়াতে চিৎকার করতে থাকে,‘৬৬ নম্বরে কণাবুবু আইছে, কণা বুবু। ’ বাবলীরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ‘কণা বুবু আইছে, বাউল ভাইয়ের কণা বুবু। ’
এ ঘটনার ত্রিশ মিনিটের মাথায় ১০২ নম্বর বাড়ির কাজের মেয়ে ছাদে কাপড় ছড়াতে গিয়ে পাশের বাসার ভাবিকে ডেকে বলে,‘ভাবি, ভাবি শুনছেন, মেন্দী গাছওলা বাড়িতে বাউল ভাইয়ের চাঁদেরকণারা আইছে।


কি বলিস সত্যি নাকি ! দেখতে কেমনরে, ছবিটার মত ?’
‘হ, কী সুন্দরগো গায়ের রং, এক্কেবারে দুধআলতা। ’
চল্লিশ মিনিটের মাথায় ১৭ নম্বর বাড়ির চার তলার দাদী বাজার নিয়ে আস্তে আস্তে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠছে। তখন দু’তলার তানিয়া দ্রুত নামতে নামতে বলে,‘দাদী শুনেছেন, বাউল ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড চলে এসেছে। ’
‘কেডা আইছে ?’
‘বাউল ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড, গার্ল...,’ তানিয়া দ্রুত নেমে যায়। আর এভাবে দুপুর গড়াতে গড়াতে পাড়ার প্রায় সকলেই জেনে যায় এ মহল্লায় চাঁদেরকণার আগমন সংবাদ।

সন্ধ্যায় মাগরীবের নামাজের পর বাউলের মা দ্বিতীয় বারের মত তজবী জপা থেকে উঠে এসে ফোন ধরেন,‘হ্যালো। ’
অন্য পাশ থেকে একটা মেয়ের গলা শোনা যায়,‘খালাম্মা ঘটনা সত্য নাকি ? বাউল ভাই নাকি চাঁদেরকণাকে নিয়ে বাসায় এসেছে ?’
মা অবাক কণ্ঠে বলেন,‘তোমরা এসব কথা কোথায় পেলে ? আশ্চর্য দু’জন বাসায় এসে পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে গেল!’
‘আসেনি ?’
‘না আসেনি। হ্যাঁ রাখো, আল্লাহ হাফেজ। ’ মা ফোন রেখে উঠে যেতে যেতে বলেন,‘ফোনের জ্বালায় আর বাঁচি না, আর বাউলটাও যে এই সময় কোথায় গিয়ে বসে আছে ?’ অমনি আবার রিং বাজে। মা এবার বিরক্ত হয়ে ফিরে এসে ফোন ধরেন, ‘হ্যালো ! হ্যাঁ এসেছে, রান্নাঘরে চেপা শুঁটকির ভর্তা দিয়ে ভাঁপা পিঠা বানাচ্ছে,’ মা রেগে রিসিভার রেখে দেন।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।