আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রম্যগল্প : নিমপ্যাথি

ফেসবুকে আমি https://www.facebook.com/LINCON04

মারামারি, চুরিচামারি,হল্লাপানা করার ফাঁকে যতটুকু সময় পাওয়া যায় তাহা পড়ালেখার খাতে ব্যয় করিবার জন্য বরাদ্ধ থাকে কানাইদের!
আর দশটা গ্রাম্য ছাত্রের মতন কানাই ইস্কুল ফাঁকি দিতে পছন্দ করে।
ইচ্ছা করিয়া যে ফাঁকি দে তাহা নয়, যেইদিন পন্ডিত মশাই কঠিন পাঠ মুখস্থ করিতে দেন সেইদিন এই ব্যামোটা তীব্র হইয়া দেখা দেয়!
বলা যাইতে পারে,ইস্কুল ফাঁকি দেওয়াটা অভ্যাসবশত ইচ্ছায় পরিনত হইয়াছে!

আজ এইরূপ একটা ব্যামো দিবস!

রঘু, কানাইয়ের পিতা, বিগত দিনগুলো ফলো করিয়া আসিতেছিল,তাহাছাড়া এইরূপ দিবস একদা রঘুরা ও কাটাইয়া ছিল!

কানাইয়ের ব্যামোর সুত্রপাত আজিকে প্যাটে ব্যথা দিয়া শুরু হইল!
ভোর হইতে মটকা মারিয়া প্যাটের ব্যথায় কোকাইতে লাগিল কানাই!
পন্ডিত মশাইয়ের কঠিন পাঠ হইতে রক্ষা পাইতে ইহা ছাড়া আর গতি ছিলনা,তাহা ছাড়াও উত্তর পাড়ার রমাদের সহিত বিকালে ফুটবল ম্যাচে অংশগ্রহন করতঃ গ্রামের মান রক্ষার আশু দ্বায়িত্ব কাঁধে নেয়ার প্রয়োজন!

সূর্যটা দশ ঘটিকা পর্যন্ত উদিত হইতেই রঘু ধীরে ধীরে কানাইয়ের বিছানার পাশে গিয়া বসিল, আশু বিপদ আর ভয়ের কথা চিন্তা করিয়া কানাইয়ের কোকানি দ্বিগুন হইতে তিনগুন হইয়া উত্তরোত্তর বাড়িতে লাগিল!
রঘু জিজ্ঞেস করিলঃ এখন কিরূপ বোধ করিতেছ বাপধন?

কানাই কোকানি মিশ্রিত স্বরে যাহা বলিল, তাহার মর্মোদ্ধার করিলে যাহা হয় তাহা হইল আজ কানাইয়ের শেষ দিবস উপস্থিত হইয়াছে!
রঘু মনে মনে কি ভাবিতেছিল তাহা ঠাহর করা গ্যালোনা।
তারপর বলিয়া উঠিলঃ চল বাপধন! বিমার কঠিন হইবার পূর্বেই তাহার সমূলে বিনাশ করিতে হয়! হারু ডাক্তার বহু পুরাতন রোগী ও জটিল রোগ সারাইয়া দিয়াছেন, চল হারু ডাক্তারের কাছে চল!

কানাই মনে মনে কহিলঃ খাইছে আমারে! হারু ডাক্তারের মটো যেঃ হয় রোগী নয় রোগ, এই দুইটার যেকোন একটাকে এই তল্লাট ভাগিতে হইবে!

কানাইয়ের প্যাটে ব্যথা ক্রমশ ঘামের সহিত কাপুনিতে রূপান্তরিত হইল!
আর কহিলঃ বাবা, বোধহয় আমার ব্যথা সারিয়া যাইতেছে!

রঘু কহিলঃ আজ সারিয়া যাইলেও আগামীকল্য যে আসিবে না তাহা কে বলিতে পারে!
আজিকে একবার দেখাইয়া আসি!

তারপর কানাইকে লইয়া হারুর চেম্বারে রওনা দিল!

কানাই মনে মনে প্যাট ব্যথার সাপান্ত করিতে লাগিল!
আর নিজের পূর্ব কর্মফলের দোষারোপ করিতে লাগিল!
চেম্বারে গমন করিবার কিছুদুর পূর্ব হইতে একখান রোগীর মরনপন চিত্‍কার শুনা যাইতেছিল; হারু ডাক্তার রোগীকে ইঞ্জেকশন ফুটাইতেছিল!

কোবতে,হারু ডাক্তার, ইঞ্জেকশন এই তিনটা সমার্থক শব্দ; যত ব্যথা তত আরোগ্য,ইহা হারুর দর্শন!

চিত্‍কার শুনিয়া কানাইয়ের প্রান গলা দিয়া আসিয়া পড়িতে চাহিল, কানাই ঢোক গিলিয়া তাহা নিন্মস্থ করিল! কোন কুক্ষনে যে আজিকে প্যাট ব্যামোর প্ল্যান মাথাই আসিয়াছিল!
রঘু কানাই সমেত চেম্বার প্রবেশ করতঃ হাতল ভাঙা টুল খানায় বসিয়া পরিল।

হারু আজ কোবতের মুডে যে নাই তাহা বিলক্ষন মালুম করা যাইতেছে, কারন প্রতিবারের মতন কোবতে পাঠ খাতার বদলে হাতে শোভা পাইতেছে এলুপ্যাথিক চিকিত্‍সা টুকিটাকি বইখানি!
নিশ্চয় কোন পুরাতন রোগী জটিল রোগে ধরাশায়ী হইয়া আসিয়াছেন!

হারু রঘুকে সমস্যার কথা জিজ্ঞাসা করিল প্রতিবারের নিয়ম ভঙ্গ করিয়া।
রঘু কহিলঃ ইস্কুল গমন পূর্বে প্যাটে ব্যামো,মাথা ব্যথা ইত্যাদি নানা প্রকারের ব্যামো কানাইয়ের শরীলে ভর করে।

আর ছুটি হইবার পর মুহুর্তে তাহা ছাড়িয়া যায়!

হারু ডাক্তার মাথা নাড়িল, এই রোগ তাহার হাড়ে হাড়ে চেনা!
হারু ডাক্তার কানাইয়ের চোখের সামনে একটা সিরিঞ্জ রাখিল,আর একটা নির্দোষ ভাইটামিনের এম্পুল ভাঙিয়া তাহা সিরিঞ্জে ভরাইয়া লইল!

সকল চিকিত্‍সার বড় চিকিত্‍সা ইঞ্জেকশন, বলিতে বলিতে উহা কানাইয়ের বাম পাশের পাছার উপর খোচাইয়া প্রবেশ করাইয়া দিল!

কানাই মাগো করিয়া একটা চিত্‍কার দিয়াই পরক্ষনে দাঁতে দাঁত চাপিয়া সহ্য করিয়া রইল!

হারু ডাক্তার অল্প্ক্ষন পরে সিরিঞ্জখানা পাছা হইতে বাহির করিল।
কানাইয়ের মনে হইতে লাগিল তাহার পাছার উপর নরক ভাঙিয়া পড়িয়াছে,একশ বোলতা পাছায় চড়িয়া বেড়াইতেছে!

অতঃপর রঘু হারুকে জিজ্ঞেস করিল কোন পথ্য দেয়া হইবে কিনা।
হারু কহিলঃ এলুপেথি,হোমিপথি এইরোগ সমুলে বিনাশ করিতে পারিবে না। এরিজন্য প্রয়োজন নিমপ্যাথি!
কানাইকে তিনবেলা নিমপাতা সেদ্ধ করিয়া পথ্য রূপে প্রতিদিন খাওয়াইতে হইবে যতদিন এইরোগের প্রাদূর্ভাব ঘটে!
চিকিত্‍সা চলাকালীন সময়ে আহার নিষিদ্ধ,শুধু নিমপাতা খাইয়া প্যাট ভড়াইতে হইবে!

অতঃপর তাহারা হারুর চেম্বার হইতে বাড়িতে ফিরিয়া গ্যালো। ।



পুনশ্চঃ সেইবারের পর হইতে পরবর্তীতে কানাই আর এরূপ ব্যামোতে আক্রান্ত হয়নাই!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.