আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বারাক ওবামা: শৈশবেই যার লক্ষ্য ছিল প্রেসিডেন্ট হওয়া

আমাদের যদি প্রশ্ন করা হয় বড় হয়ে আমরা একেকজন কি হতে চাই? তাহলে স্বভাবতই কেউ বলব ডাক্তার, কেউ বলব ইঞ্জিনিয়ার কেউবা বলব প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। এরকমটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ যদি বলে ‘আমি বড় হয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চাই’ তাহলে সবাই ভ্রু কুচকাবেন। আসলে ভ্রু কুচকানোর কিছু নেই। কেউ যদি ছোটবেলা থেকে নিজের লক্ষ্য ঠিক করে এবং সেই মোতাবেক এগিয়ে যায় তাহলে সেই লক্ষ্যের দেখা সে একদিন পাবেই পাবেই।

বিশ্বাস না হলে বারাক ওবামার জীবনদর্শন দেখতে পারেন।

ওবামা তখন ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে পড়তেন। ক্লাসে একদিন তাদের শিক্ষক ‘ইস ডারমাওয়ান’ শিক্ষার্থীদের নিজের জীবনের লক্ষ্য উল্লেখ করে একটি রচনা লিখতে বললেন। রচনা লেখা শেষে ‘ইস ডারমাওয়ান’ এক এক করে সবার খাতা দেখতে শুরু করলেন। খাতা দেখতে দেখতে একসময় এসে তিনি চমকে উঠলেন।

কারণ ‘ব্যারি’ নামের একটি ছেলে লিখেছে সে বড় হয়ে প্রেসিডেন্ট হতে চায়। বারাক ওবামার ডাক নাম ‘ব্যারি’। অনেকে ভাবতে পারেন ছোট্ট বয়সে হয়তোবা মনের খেয়ালেই এরকমটি লিখেছিলেন ওবামা। কিন্তু এর ঠিক তিন বছর পর ওবামা যখন একটি সরকারি স্কুলে ভর্তি হন তখনও তাকে এরকম একটি রচনা লিখতে হয়। সেই রচনাতেও লিখেন তিনি বড় হয়ে প্রেসিডেন্ট হতে চান।

সেদিনের শিক্ষিকা ‘ক্যাটরিনা সিনাগা’র আজও মনে আছে সেই দিনের কথা।

ওবামার বাবা-মায়ের পরিচয়:
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ যেটি প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এটি আমেরিকার একটি অঙ্গরাজ্য এবং এর রাজধানী হনলুলু। ওবামার বাবার বসবাস ছিল কেনিয়ার একটি অজপাড়া গ্রামে। সেখান থেকে সিনিয়র বারাক হুসেন ওবামা পড়ালেখা করতে আসেন ‘হনলুলু বিশ্ববিদ্যালয়ে’।

অপরদিকে আমেরিকার কানসাস থেকে জীবিকার সন্ধানে শ্বেতাঙ্গ ‘ড্যানহাম’ পরিবার আসে হনলুলুতে। এই পরিবারেই ‘স্ট্যান অ্যান ড্যানহাম’ নামে একটি মেয়ে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটনাচক্রে সিনিয়র ওবামার সাথে পরিচয় হয় স্ট্যান অ্যান ড্যানহাম এর। এই পরিচয় একসময় প্রেমে রূপান্তরিত হয়। তারা দুজন সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার।

কিন্তু সেসময় হনলুলু রাজ্যে কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গ বিয়ে অবৈধ ছিল। আমেরিকার আরও অনেক রাজ্যে এরকমটি ছিল। কিন্তু রাজ্যের নিষেধ তাদের ভালোবাসায় বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে নি। সকল বাঁধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে তারা দুজন বিয়ে করেন।

অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ
৪ আগস্ট, ১৯৬১ সাল।

সিনিয়র বারাক ওবামা ও স্ট্যান অ্যান ড্যানহাম এর ঘর আলোকিত করে পৃথিবীতে জুনিয়র বারাক ওবামা। জন্মের সময় বাবা-মা শখ করে ছেলের নাম রাখেন বারাক হুসেন ওবামা। বারাক শব্দের অর্থ ‘আশীর্বাদপ্রাপ্ত’। আর ডাক নাম ছিল ‘ব্যারি’।

শৈশবের ছন্দপতন
বাবা-মায়ের আদরে ভালোভাবেই কাটছিল ব্যারির শৈশবের দিনগুলো।

কিন্তু পৃথিবীর হালচাল বুঝে ওঠার আগেই ছন্দপতন ঘটে তার জীবনের। ব্যারির বয়স যখন দুই বছর তখন তার বাবা-মায়ের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। এর আগে অবশ্য তারা অনেকদিন আলাদাভাবেই থাকতেন। বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর মায়ের কাছেই থেকে যান ব্যারি।

নতুন পরিচয়

ডিভোর্সের কিছুদিন পর ব্যারির মা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দোনেশিয়ান এক ছাত্রকে বিয়ে করেন।

তার নাম ছিল ‘লোলো সোয়েটরো’। ১৯৬৭ সালে ব্যারি তাদের সাথে জাকার্তায় চলে আসেন। সে সময় ব্যারির বয়স ছিল ৬ বছর। এ সময় ব্যারির নামের পরিধিটা একটু বেড়ে যায়। নতুন বাবার নামের সাথে মিল রেখে নাম রাখা হয় ‘ব্যারি সোয়েটরো’।





ব্যারিদের বসবাস ছিল জাকার্তার শহরতলীতে। এই স্থানটিতে নিম্ন মধ্যবিত্তদেরই বসবাস ছিল। রাস্তাঘাট ছিল মাটির, চারপাশটা ছিল গাছগাছালিতে ঘেরা এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল জলাশয়। এইরকম এক পরিবেশেই বড় হতে থাকেন ব্যারি। এখানকারই একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় ব্যারিকে।

ব্যারির মা পড়াশোনার বিষয়ে খুবই সিরিয়াস ছিলেন। তবে মা ছেলের মধ্যে এমনিতে খুব সখ্য ছিল। এমন অনেক রাত গেছে যে রাতে মা-ছেলে চাঁদের আলো দেখতে দেখতে রাত পাড় করে দিয়েছেন।

মেধা তার ছোটবেলা থেকেই ছিল
আমেরিকা থেকে সোজা জাকার্তা। নতুন এক দেশ, নতুন ভাষা, নতুন সংস্কৃতি সবই ব্যারির কাছে নতুন।

নতুন এই পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে খুব বেশি সময় নেননি ছোট্ট ব্যারি। মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার ভাষা, সংস্কৃতি সবকিছুই শিখে ফেলেছিলেন।


* বারাক ওবামা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।