আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মার্কিন সিনেটের নির্বাচনী তাগিদ নিয়ে মিশú

বাংলাদেশে দ্রুত নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে মার্কিন সিনেটের শুনানিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সরকারের মেয়াদ আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে মত দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. ওসমান ফারুক বলেছেন, মার্কিন সিনেটের শুনানিকে সরকারের যথাযথ মূল্যায়ন করা উচিত। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ কী প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হবে এটা তাদের একান্তই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির শুনানিতে বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে পুনর্নির্বাচনের জোরালো তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশে ভয়াবহ সংকটকাল বিরাজ করছে মন্তব্য করা হয়েছে। 'বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক বিরোধ নিষ্পত্তি ও শ্রমিক অধিকার সম্ভাবনা' শীর্ষক শুনানিতে প্রথম প্যানেলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল অংশ নেন।

এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়ায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন তো সংবিধান অনুসারে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সব দল নির্বাচন করেনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সংবিধান অনুসারে হওয়ায় এই সরকারের মেয়াদ ৫ বছর। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি বলে যে অবাধ হয়নি, তা সঠিক নয়। আর সমঝোতার পথ তো আমি দেখছি না। যে কারণে এবার বিএনপি নির্বাচন করেনি, সেই কারণে যদি আগামীতে আওয়ামী লীগ নির্বাচন না করে, তাহলে কি সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে? তাই এটা বাস্তবসম্মত কথা নয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী বর্তমানে কোনো সংকট দেখছেন না উল্লেখ করে বলেন, কোথায় সংকট। আমি তো কোনো সংকট দেখছি না। ব্যবসায়ীরা তো ঠিক মতো ব্যবসা করছেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক। যে ভয়ানক অবস্থার কথা বলা হচ্ছে তাও সঠিক নয়। আর জামায়াত-বিএনপি যে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, তা প্রধানমন্ত্রী স্বাভাবিক করেছেন। তিনি আরও বলেন, জিএসপি বন্ধের কারণ দেখিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ১৬টি শর্ত দিয়েছে, তার ১২টি ইতোমধ্যে পূরণ করেছি। বাকি ৪টি আগামী মার্চের মধ্যে পূরণ করব। এর পরেও যদি জিএসপি ফেরত দেওয়া না হয়, তাহলে বিষয়টি রাজনৈতিক। এর আগে গতকাল দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা ফিরে পাওয়া সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সব শর্ত পূরণের পরেও রাজনৈতিক ইস্যু টেনে আনা হলে আমরা শর্ত পূরণ করতে পারব না। জিএসপি সুবিধা বন্ধের আগে আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিদেশি পত্রিকায় নিবন্ধ লেখা হয়েছিল। তবে জিএসপির সব শর্ত আমরা পূরণ করতে পারব। মঙ্গলবার রাতে মার্কিন সিনেট অধিবেশনে জিএসপি এবং বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিষয়ে আমেরিকার একটি দৃষ্টিভঙ্গি আছে। সেটাই তারা বলেছে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও আমরা জানাব। তাদের বেঁধে দেওয়া সব শর্ত আমরা পূরণ করব। তিনি বলেন, জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে প্রায় সব শর্তই পূরণ করা হয়েছে। অপূর্ণ চারটি শর্তের মধ্যে ছিল গার্মেন্ট শিল্প পরিদর্শনে দুইশ ইন্সপেক্টর বা পরিদর্শক নিয়োগের বিষয়টি। ৩০ মার্চের মধ্যে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। দ্বিতীয় শর্তের কথা উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৯টি পোশাক কারখানায় শ্রমিক নির্যাতনের যে বিষয়টি বলা হয়েছে এটার তদন্তে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এ বিষয়ে ১৯টি পোশাক কারখানার মালিকদের আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি ডাকা হয়েছে। একই সঙ্গে এর পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তৃতীয় শর্তটি হচ্ছে ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন করার বিষয়। শ্রম আইন অনুযায়ী, ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আগে এটা আইনে ছিল না। সে কারণে আইনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইপিজেড আইন এবং শ্রম আইনের মধ্যে সামঞ্জস্য আনা হবে ৩০ মার্চের মধ্যে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। নির্বাচন নিয়ে তাদের আলাদা দৃষ্টিভঙ্গী থাকতে পারে। সংবিধান রক্ষায় আমরা নির্বাচন করতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু অজুহাত দেখিয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। এদিকে মার্কিন সিনেটে নতুন নির্বাচনের তাগিদ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. এম ওসমান ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শুনানিতে কঠোর ভাষায় বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। ওই নির্বাচনকে তারা অগণতান্ত্রিক বলে আখ্যা দিয়েছে। এটা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য নয় বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষসহ সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক মানুষেরও একই বক্তব্য। গোঁয়ারতুমি না করে সরকারের উচিত, অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়া। মার্কিন সিনেটের শুনানিকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা। বাংলাদেশের চলমান সংকটকে ভয়াবহ বলার যথার্থ কারণ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিরোধী দল মতের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার, নির্যাতন, পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যাকাণ্ডসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটছে। এ কারণেই শুনানিতে বর্তমান পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বলা হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমমান প্রশ্নে মার্কিন সিনেটের বক্তব্য প্রসঙ্গে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই সরকারের শুরু থেকেই বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও তাদের শ্রমমান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে শ্রমিকদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ, রানা প্লাজাসহ বেশ কয়েকটি গার্মেন্টে ভয়াবহ আগুনে হাজার হাজার শ্রমিকের মৃত্যু, শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এর তীব্র সমালোচনা করেছে। দুঃখ হলো, দেশের সব মানুষ এ বিষয়টি স্বীকার করলেও সরকার স্বীকার করছে না। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ কী প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হবে এটা তাদের একান্তই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। মার্কিন সিনেটের শুনানিতে বাংলাদেশে নতুন নির্বাচনের তাগিদ দেওয়া, বাংলাদেশে ভয়াবহ সংকটকাল চলছে বলে সিনেটে মন্তব্য করা ও বাংলাদেশের শ্রমমান উন্নয়নে তাগিদ দেওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আমরা আমাদের শিল্প, সংস্কৃতি, ভাষা সমুন্নত রেখে আমাদের স্বীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। আমার কামনা থাকবে যে, দেশের ভিতরে সহজ-স্বাভাবিক পদ্ধতিতে দেশ পরিচালিত হবে। বাইরের কোনো রাষ্ট্র বা শক্তির অসন্তুষ্টি বা উৎকণ্ঠায় আমাদের কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হবে না। মূল আদর্শকে সমুন্নত রেখে বাস্তব বিবেচনায় একটা স্বাধীন দেশ যখন তার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত করে তখন অন্য দেশের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে নির্লিপ্ত বা নির্বিকার থাকা সম্ভব হয় না। 'সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়' বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির এই মূল আদর্শ নিয়ে আমরা চলেছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে আজকের বিশ্বায়নের পরিবেশে কিছু কিছু মূল ধারা যথা_ সুশাসন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এগুলোর ওপর। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বিঘ্নে এবং সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। বাংলাদেশ জাতিসংঘের উন্নয়ন ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ প্রশংসিত হয়েছে। সেই প্রশংসা আমরা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, যদি আমাদের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ডে কোনো দেশ থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে সেটা গ্রহণ করার ভিতরে কোনো হীনম্মন্যতা থাকা উচিত নয়। তিনি বলেন, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সুগভীর বন্ধুত্ব রয়েছে। তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা বাঞ্ছনীয় বলে আমি মনে করি। সাবেক এই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সঠিকভাবে প্রতি বছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকের ব্যাপারে চুক্তি করেছেন। এই ক্ষেত্রে সরকারকে একদিকে যেমন দেশের বৃহৎ সংখ্যক জনগণের মনোভাব বুঝতে হবে, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট অথবা অন্যান্য কোনো দেশের মন্তব্যের ব্যাপারেও ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যদি কোনো দেশ মনে করে গণতন্ত্রের আবশ্যিকতার জন্য সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হওয়া উচিত তাহলে এই ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। তিনি বলেন, সবচেয়ে উত্তম হতো যদি মার্কিন সিনেটে শুনানির সময় বাংলাদেশের দুই বৃহৎ দলসহ অন্যান্য দলের প্রতিনিধিদের পাঠানো যেত। তিনি বলেন, আমার প্রত্যাশা থাকবে যে, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যতই দ্বিমত থাকুক না কেন আমরা অতীতে যেমন অসম্ভবকে সম্ভব করেছি তেমনি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সংকট অতিক্রম করতে পারব।

তিনি আরও বলেন, আজকের ইন্টারকানেক্টিভিটির পৃথিবীতে কোনো দেশের সংবাদ অন্যদেশে অজানা থাকে না। তাছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনা একটা অত্যন্ত জটিল এবং বহুমাত্রিক ব্যাপার। অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের যেমন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিরাজমান, তেমনি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারও। আমি আশা করব এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না যা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.