আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা প্রবাদের আড়ালে রূপকথা ।পর্ব ৭

যত মত, তত পথ


আজকের প্রবাদ বাক্যটি হল ‘শবরীর প্রতীক্ষা’ । এই প্রবাদ বাক্যটির ব্যবহার আমরা করে থাকি সাধারণত কারো অপেক্ষায় কয়েক ঘণ্টা কাটানোর সময়ে । মূলত রামায়ণের কাহিনী থেকেই লোকমুখে প্রচলিত হয়েছে এই প্রবাদ বাক্যটি । রামায়ণের শবরী দীর্ঘকাল অপেক্ষা করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্রকে দর্শন করবার জন্য ।

শবরী ছিলেন মূলত একজন ব্যাধ কন্যা ।

বনের মধ্যে বিচরণ করতেন তিনি বাল্যকাল থেকেই , সেই বনে বাস করতেন মতঙ্গ মুনি । মতঙ্গ মুনির আশ্রমের পবিত্র আশ্রমিক জীবনের প্রতি শবরীর ছিল বিশেষ আকর্ষণ । ব্যাধের কন্যা হয়েও তিনি মনে মনে ভাবতেন যদি ঐ আশ্রমে থেকে মুনি ঋষিদের সেবা করে তাঁদের থেকে জ্ঞান লাভ করে দিন কাটাতে পারতাম, তাহলে কি ভালই না হত । কিন্তু তিনি যে ব্যাধের কন্যা , অস্পৃশ্য , কে তাঁকে আশ্রমে ঢুকতে দেবে ! ? যে পথে মুনি যেতেন শবরী সেই পথ পরিস্কার করে রাখতেন , স্নানের ঘাটের নোংরা পরিস্কার করে রাখতেন যাতে মুনির কোন কাজে ব্যাঘাত না হয় । এইরুপ নীরব সেবা বিফল গেল না ,তাঁর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে মতঙ্গ মুনি তাঁকে তাঁর আশ্রমে ঠাই দিলেন।



ধীরে ধীরে ব্যাধ কন্যা শবরী আশ্রমিক হয়ে উঠলেন এবং মতঙ্গ মুনির বিশেষ স্নেহভাজন হয়ে উঠলেন । এই ভাবে কেটে গেল কয়েক কাল , অবশেষে মতঙ্গ মুনির দেহত্যাগ করার সময় উপস্তিত হলে , পিতৃতুল্য মুনির অবর্তমানে কি উপায় হবে বলে শবরী আকুল হল । তিনি মতঙ্গ মুনির পায়ে লুটিয়ে পড়ে জিজ্ঞাসা করলেন , ‘আপনি স্বর্গে গেলে , আমি কি ভাবে মুক্তি পাব’ ? মুনি বললেন , তুমি এই আশ্রমে থাক, ভগবান শ্রীরামচন্দ্র একদিন আসবেন এই আশ্রমে , তাঁর দর্শন পেলে তোমার মুক্তি হবে। এই কথা বলে তিনি দেহত্যাগ করলেন ।

তখন থেকে শুরু হল শবরীর প্রতীক্ষা ।

দিন যায় ,মাস যায় , বছর যায় । যুবতি শবরী ক্রমে পৌড়া থেকে বৃদ্ধা হয়ে পড়লেন। কিন্তু কোথায় রাম রঘুপতি ? কবে তাঁর দর্শন পেয়ে শবরী মুক্তি পাবে? এমনি করে বছরের পর বছর কেটে গেল । ধীরে ধীরে শবরীর দেহ চলে যেতে লাগল জরার ভারে । চোখে ভাল দেখতে পান না , ভাল করে চলার ক্ষমতা চলে যেতে লাগল , কোন ক্রমে তিনি দিনযাপন করতে থাকলেন।

তাঁর ছিল এক চিন্তা রামচন্দ্র দেখা দিলে , তিনি কি ভাবে তাঁর সেবা করবেন। এই ভাবে হাজার বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল । কিন্তু তাঁর মনে দৃঢ় বিশ্বাস তিনি আসবেনই ।

সেই সময় একদিন লঙ্কার রাজা রাবণ সিতাকে হরণ করে নিয়ে গেল লঙ্কায় । শ্রীরামচন্দ্র তাই লক্ষণ কে সঙ্গে নিয়ে “হা সীতা’, হা সীতা’ বলে সিতাকে খুঁজতে খুঁজতে কত বন , পর্বত অতিক্রম করে হাজির হলেন পম্পা নদীর তীরে ।

পম্পায় দুই ভাই স্নান করে এলেন মতঙ্গ মুনির আশ্রমে । রামচন্দ্র কে দর্শন করে , শবরী তাঁর পূর্বের সমস্ত ইতিহাস তাঁকে শ্রবণ করালেন এবং যথাপূর্ব আপ্যায়ন দ্বারা তাঁকে সেবা করে , নিজের হাতে অগ্নিকুণ্ড জ্বেলে হাসতে হাসতে তাতে প্রাণ আহুতি দিলেন। এই ভাবে শেষ হল শবরীর প্রতীক্ষা। ।




এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।