আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইমাম মাহদির বিরুদ্ধে যুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে হাদিস ও দাজ্জালি এডভান্স ফোর্সের বর্তমান কার্যক্রম

আল্লাহর হুকুম মানা আর নবী (স:) এর তরিকা্য় চলা দুনিয়াতে শান্তি আখেরাতেও শান্তি

সিরিয়ার বনু কাল্ব গোত্রের কুরায়শি শাসক (হাদিসে যাকে ‘সুফিয়ানি’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে) ইমাম মাহদির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হবার সংশ্লিষ্টতা এসেছে, তাতে বুঝা যায় যে, এগুলো শেষ জামানার অংশ হিসাবে হতে হবে। আসুন, আমরা একটু মিলিয়ে নেই, হাদিসের ধারাবাহিকতায় আমরা কোন জামানায় বসবাস করছি। অন্যথায়, সিরিয়া থেকে বনুকাল্ব গোত্রের যে কুরায়শি শাসকই বের হোক না কেন, আর যত ঘটনা ও যুদ্ধই হোক না কেন, তার গুরুত্ব অনুধাবন করা যাবে না।

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“নবুওয়াত ব্যবস্থা তোমাদের মাঝে ততদিন থাকবে, যতদিন আল্লাহ তাআলা মঞ্জুর করেন। অতঃপর যখন ইচ্ছা, তখন তিনি তা উঠিয়ে নিবেন।

তারপর (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর) তোমাদের মাঝে নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে এবং তা আল্লাহ তাআলা যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (খুলাফায়ে রাশিদিন এর যুগ)। অতঃপর তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর হানাহানির রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা আল্লাহ তাআলার যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (রাজতন্ত্র)। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তার বিলুপ্তি ঘটবে। তারপর জবর দখল তথা আধিপত্য বিস্তারের রাজত্ব কায়েম হবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় দুনিয়াতে কিছুকাল বিরাজমান থাকবে (নানা ভূখণ্ডে বর্তমান একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকগণ) ।

তারপর যখন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন, তখন এরও অবসান ঘটবে। অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত রাষ্ট্র-ব্যবস্থা কায়েম হবে। এ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন”।

(মুসনাদে আহমদঃ ৪/২৭৩)

আর তাছাড়া অপর হাদিসে, হযরত আবু উবাইদা (রাঃ) এবং মু’আজ বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“ইসলামের সূচনা হয়েছে নবুওয়াত ও রহমতের শাসনের মাধ্যমে। এরপর হবে খেলাফত ও রহমতের শাসন।

এরপর হবে অত্যাচার লুটেরা বাদশাদের শাসন। এরপর হবে অহংকারী প্রভাবশালী বাদশাদের শাসন, তখন জমিনে অন্যায়, অবিচার, ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়বে। সেকালের লোকেরা রেশম (সিল্ক), ব্যভিচার (পরকীয়ার পাশাপাশি বয়ফ্রেন্ড-গার্ল ফ্রেন্ডের নামে চলমান বহুল প্রচলিত সামাজিকভাবে স্বীকৃত উঠতি বয়সী অবিবাহিতদের জেনা) এবং মদকে হালাল করে ফেলবে। আল্লাহর সাথে সাক্ষাত পর্যন্ত এর মাধ্যমেই তাদেরকে রিজিক দেওয়া হবে এবং সাহায্য করা হবে”।

(শুয়াইবুল ঈমান আল বায়হাকি, ৫/১৬)

উপরের হাদিসদ্বয়ের প্রেক্ষিতে আমরা যে যুগের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি, তা হচ্ছে অন্যায়, অবিচার ও ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়ার যুগ।

আল্লাহ তা’আলার জমিনে সর্বোচ্চ শাসন ব্যাবস্থা (sovereignty) একমাত্র আল্লাহর হওয়া উচিৎ। যদি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর কানুন ব্যতীত মানুষের তৈরি কোন কানুন বাস্তবায়নের অপচেস্টা চালানো হয়, তবে অবশ্যই জমিনে অন্যায় অবিচার ও ফেতনা ফ্যাসাদে ভরে যাবে।

১৯২৪ সালে উসমানি খেলাফতের ভেঙ্গে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ ৫৭ টি ভূখণ্ডে বিভক্ত হয়ে বর্তমানে একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকদের দ্বারা শাসিত। ‘অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে’ - মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তিই প্রমাণ করে সারা বিশ্বে ইসলামী শাসন পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে। রাজত্বের লাগাম মুসলিমদের হস্তগত হবে।

কখনো এর ব্যতিক্রম হবে না। কারণ, বিভিন্ন বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা যথা সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। ইতিহাসে তার বহু প্রমাণ রয়েছে। এবং আমরা সেই রকমই একটি ‘ট্রাঞ্জিকশন ফেজ’ এ আছি।

আল আকামা ইবনে মাসুদ বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন,

“আমি তোমাদেরকে সাতটি মারাত্মক ফিতনার ব্যাপারে সাবধান করছি যা আমার পরে আসবে, একটি ফিতনা যা মদিনা থেকে আসবে, একটি ফিতনা যা মক্কা থেকে আসবে, একটি ফিতনা ইয়েমেন থেকে আসবে, একটি ফিতনা বৃহত্তর সিরিয়া থেকে আসবে, একটি ফিতনা যা পূর্বদিক থেকে আসবে, একটি ফিতনা যা পশ্চিম দিক থেকে আসবে এবং একটি ফিতনা যা সিরিয়ার পাহাড়ি উপত্যাকা থেকে আসবে যা হল সুফিয়ানি (সিরিয়ায় বনু কাল্ব গোত্রের কুরায়শি শাসক)”।



ইবনে মাসুদ বলেন, ‘আমাদের ভিতরে অনেকে প্রথমগুলো দেখেছি আর বাকিগুলো আমাদের পরবর্তী পজন্ম দেখবে’।

(মুসতাদরাকে হাকিম, আল ফিতান)

এখন আমরা একটু সিরিয়ার শাসন ব্যবস্থার ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে নেই।

মূলত খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০০ বছর থেকে সিরিয়ার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। ইসলাম আসার সময়, সিরিয়া মূলত ‘শাম’ নামে পরিচিত ছিল এবং এর বৃহত্তর অংশের অন্তর্ভুক্ত ছিল বর্তমান জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন, প্যালেস্টাইন ও দখলদার ইসরাইল। ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে হযরত ওমর (রাঃ) এর খেলাফতের সময় সিরিয়া রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল।

এরপর হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) ও হযরত আবু ওবায়দা (রাঃ) এর নেতৃত্বে একে একে পুরো বৃহত্তর সিরিয়া (শাম) ইসলামিক খেলাফতের অধীনে আসে এবং দলে দলে সেখানকার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। খুলাফায়ে রাশেদিনদের পরে ১০৯৮ সাল পর্যন্ত জাজিরাতুল আরব ভিত্তিক উমাইয়াদ, আব্বাসিয়াসহ মিশরভিত্তিক কয়েকটি রাজতন্ত্রের অধীনে শাসিত হয়। ১০৯৮ থেকে ১১৮৯ সাল পর্যন্ত ক্রুসেড যুদ্ধের সময় বর্তমানের মূল সিরিয়াসহ বৃহত্তর সিরিয়ার বিভিন্ন অংশ জার্মান, ইংরেজ, ইতালি ও ফ্রান্সের দ্বারা শাসিত হয়। পরবর্তীতে সেলজুক, আইয়ুবি, মামলুকদের হাত ঘুরে এই ভূখণ্ড ১৫১৬ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে আসে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে অটোম্যান সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পর মূলসিরিয়াসহ বৃহত্তর সিরিয়া ব্রিটিশ ও ফ্রান্স সেনাবাহিনীর অধীনে আসে।

এবং এই দুই সাম্রাজ্যবাদী জাতি তখন একটা চুক্তির মাধ্যমে এর উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে। যদিও ১৯২০ সালে হাশেমি পরিবারের ফয়সাল নামক একজন তল্পিবাহককে আমীর করে একটি কয়েকমাসের ক্ষণস্থায়ী ‘সিয়িয়ান রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু তা পরে আবার ‘ফ্রান্স ম্যান্ডেট’ এর অধীনে চলে আসে।

এমনিভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত ফ্রান্স সেনাবাহিনী এবং সিরীয় জাতিয়তাবাদে বিশ্বাসীদের মধ্যে দফায় দফায় কয়েকটি যুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং ১৯৩৬ সালে সিরীয় জাতীয়তাবাদীদের ও ফ্রান্সের মধ্যে স্বাধীনতা চুক্তি সম্পাদিত হয়। এবং হাসিম আল তাসিকে প্রথম রাষ্ট্রপতি করা হয়।

কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে তা আবার ফ্রান্স সেনাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং ১৯৪৬ সালে এপ্রিল মাসে সেনা প্রত্যাহার করে প্রজাতন্ত্রী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।

১৯৪৬ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত শুধু আরব ইসরাইল যুদ্ধ (১৯৪৮) আর ঘন ঘন সামরিক অভ্যুত্থানের ইতিহাস। এর মাঝে সুয়েজ খাল নিয়ে ১৯৫৬ সালে দ্বিতীয় আরব ইসরাইল যুদ্ধের পরে সিরিয়া রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) এর সাথে মৈত্রী চুক্তি করে। এর ফলে সিরিয়া রাশিয়া থেকে সমর সরঞ্জাম এর সাথে সমাজতন্ত্রের চেতনাও আমদানী করতে সক্ষম হয়। ১৯৫৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সিরিয়া এবং মিশর ‘সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র’ এর ঘোষণা দেয় এবং ১৯৬১ সালে তা ভেঙ্গে যায়।

এর মাঝে সিরিয়াতে আরব জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক সমাজতান্ত্রিক মতবাদ ‘বাথিজম’ এর উত্থান ঘটে এবং একে কেন্দ্র করেই সিরিয়ায় শাসন ব্যবস্থা কায়েম হতে থাকে। ১৯৬৬ সালে সালেহ জাদিদ (হাদ্দাদিন গোত্রের), মুহাম্মদ উমরান (খাইয়্যাতিন গোত্রের) এবং হাফিজ আল আসাদ (কাল্বিয়্যা বা বনু কাল্ব গোত্রের) মিলে আরেক দফা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা হাতে নেয়। এবং আশ্চর্যজনকভাবে তিনজন অফিসারই শিয়া নুসাইরিয়া আকিদার। এরমাঝে ১৯৬৭ সালে সিরিয়া আবারও ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং গোলান মালভূমি হাতছাড়া হয়। এই বিষয়কে ভিত্তি করে যুদ্ধকালীন সামরিক প্রধান হাফিজ আল আসাদ ও অপর সামরিক শাসক সালাহ জাদিদের সাথে মতপার্থক্য প্রকট হয়।

যার ফলস্বরূপ, এক রক্তপাতহীন সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৭০ সালে হাফিজ আল আল আসাদ ক্ষমতায় আসীন হয় এবং ২০০০ সালে তার মৃত্যুর পর ৩০ বছরের শাসন শেষে তার ছেলে বাশার আল আসাদ ক্ষমতায় আসে। উল্লেখ্য, এ নুসাইরিয়া সম্প্রদায় সিরিয়ার মাত্র ১৩% শিয়ার একটি অংশ।

মূলত ১৯৭০ সালে হাফিজ আল আসাদের ক্ষমতায় আসার মাধ্যমে সিরিয়া নামক গোটা ভূখণ্ডে ইসলাম আসার পরের ইতিহাসে প্রথম কোন ব্যক্তি সিরিয়ার শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হল যে কিনা আরবদের গোত্র পরিচয়ের দিক থেকে বনু কাল্ব গোত্রের এবং আকিদাগত দিক থেকে শিয়া নুয়াইরিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এবং জন্মগতভাবে পাহাড়ি উপত্যাকার একটি গ্রাম কারদাহা থেকে ।

২রা ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ সালে হামা শহরে বনু কাল্ব গোত্রীয় প্রেসিডেন্ট আসাদ ও তার সহোদর কর্নেল রিফাত আসাদের নেতৃত্বে সিরিয়ান সেনাবাহিনী আহলে-সুন্নাহ, বিশেষ করে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের উপর যে আক্রমণ ও গণহত্যা পরিচালনা করে নিকট অতীতে তার কোন নজির নেই। সে গণহত্যায় গুম, গ্রেফতার ও দেশত্যাগীদের ছাড়া শুধু হত্যার শিকার-ই প্রায় ৪০-হাজার সাধারণ লোক।



বিভিন্ন দেশের সংবাদ পত্রে প্রকাশ, সিরিয়ার আসাদ সরকার বিদ্রোহ ও আন্দোলন দমনের জন্য সেনাবাহিনীকে যাবতীয় সহযোগিতা প্রদান করে। পৈশাচিক এ দমন অভিযানের বিরুদ্ধে জাতিগত প্রতিবাদ ও বহির্বিশ্বের চাপ ঠেকানোর জন্য আন্তঃ ও বহিঃ যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়াসহ সংবাদ পত্রের উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। হামা শহরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী সব রাস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। শহর থেকে কাউকে বের হতে দেয়া হয় নি। বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ কেটে দেয়া হয়, ফলে হামলার প্রথম দিন মঙ্গলবার রাতেই পুরো শহর বিভীষিকাময় অন্ধকারে পতিত হয়।

বহু মসজিদ ও গির্জা ধ্বংস করা হয়, অলিতে-গলিতে হত্যাযজ্ঞ চলে, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, বহু কবরস্থান গুড়িয়ে দেয়া হয়। অবশেষে স্বৈরশাসক ও তার বাহিনীর হাতে [২-২৮ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ই.] লাগাতার ২৭-দিন অব্যাহত গণহত্যা ও বাড়ি-ঘর ধ্বংসের পর হামা শহরের এক তৃতীয়াংশ নিঃশেষ হলে এ ধ্বংস যজ্ঞের সমাপ্তি ঘটে।

গণহত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের বর্ণনা:
o পরিকল্পনাকারী: প্রেসিডেন্ট হাফেজ আসাদ নুসাইরি, আলাবি।
o বাস্তবায়নকারী: কমান্ডার রিফাত আসাদ, সিরিয়ান সেনাবাহিনী, সিরিয়ান এরাবিক এয়ার ফোর্স, সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ বাহিনী, সাধারণ গোয়েন্দা বিভাগ, বুদ্ধিজীবী, সরকার দলীয় সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী, বিশেষ বাহিনী এবং সিরিয়ান সেনাবাহিনীর সবক’টি ইউনিটসহ পুরো সরকার যন্ত্র হামাবাসীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
o হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র: সাজোয়াযান, ট্যাংক, কামান, রাইফেল, বিমান ও বুলডোজার।


o ভিকটিম: সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী, তথা ইখওয়ানুল মুসলিমিন।


বিভিন্ন পরিসংখ্যান মতে মৃত ও ধ্বংসের পরিমাণ:

o ব্রিটিশ সাংবাদিক ‘রবার্ট ফিসক’ বলেন, যিনি হামার গণহত্যার কয়েকদিন পরে সেখানে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন: মৃতদের সংখ্যা প্রায় ১০-হাজার।
o দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার সংবাদ অনুযায়ী: মৃতদের সংখ্যা প্রায় ২০-হাজার।
o কমান্ডার রিফাত আসাদ গর্ব করে বলেছে: আমরা সেখানে ৩৮-হাজার লোক হত্যা করেছি।
o ‘সিরিয়ার মানবাধিকার সংস্থা’ বলেছে: মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩০-থেকে ৪০-হাজার।

তাদের সবাই শহরবাসী। তাদের অধিকাংশকে যৌথভাবে ব্রাশ ফায়ার করে গণকবর দেয়া হয়।
o কতক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সেখানের মৃতের সংখ্যা নির্ণয় করা খুব কঠিন, কারণ ঘটনা শুরু থেকে ১০-১৫ হাজার শহরবাসী গুম ও গ্রেফতারের শিকার হয়, এখনো পর্যন্ত যাদের সম্পর্কে জানা যায়নি, তারা সেনাবাহিনীর কারাগারে জীবিত, না মৃত।

মৃত ও ক্ষতির ব্যাপ্তি:
o মৃতের সংখ্যা ১০-৪০ হাজার, যাদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছে।
o অধিকন্তু ১৫-হাজার গুম ও গ্রেফতারের শিকার হয়েছে, যাদের সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।


o শহরের এক তৃতীয়াংশ ধ্বংস হওয়ার কারণে প্রায় ১-লাখ লোক শহর ত্যাগ করে অন্যত্র যেতে বাধ্য হয়।

o হামার কয়েকটি এলাকা ধ্বংসের বেশী সম্মুখীন হয়েছে, বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী এ শহরের মধ্যাঞ্চল।
o সেনাবাহিনীর দমন পীড়নে ৮৮-টি মসজিদ, ৩-টি গির্জা এবং স্মৃতিবিজড়িত ও ঐতিহাসিক অনেক এলাকা ধ্বংস হয়।

“হামা”র গণহত্যা তার অধিবাসীদের এখনো কম্পিত করে, দীর্ঘ ৩০-বছর পরও তারা সে বিভীষিকা ভুলতে পারে নি। সেই থেকে তারা সর্বদা সরকারের ভয়ে ভীত ও শঙ্কিত জীবন পার করছে।

সেখানে এমন কোনো পরিবার নেই, যার কোনো সদস্য হত্যা অথবা গুম অথবা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয় নি।

এ গণহত্যার পরও সিরিয়ার সরকার সে এলাকাকে পরিত্যক্ত ও অবহেলিত রেখে দিয়েছে, সেখানে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের কোনো কর্মকাণ্ড নেই। এ ঘটনার বিভীষিকা এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, হামার অধিবাসীরা যখন কোনো ঘটনা বর্ণনা করে, তখন বলে এটা গণহত্যার পরের ঘটনা বা তার কিছু পূর্বের ঘটনা, জন্ম অথবা মৃত্যু; বিয়ে অথবা কোনো ঘটনায় তারা গণহত্যার কথা স্মরণ করে। সেই থেকে ২০১১ই. পর্যন্ত সিরিয়ায় সরকারের সমালোচনা করে কোন প্রতিবাদ সভা হতে দেখা যায় নি।
মক্কাতে ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের সাথে সাথে সর্বপ্রথম যেই আরব শাসকটি মাহদির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে সে হবে সিরিয়া নামক ভূখণ্ডের একজন অত্যাচারী শাসক যে কিনা হবে বনুকাল্ব গোত্রের কুরায়শি ব্যক্তিত্ব।

এতে এও বুঝা যায় যে, ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের আগেই সে সিরিয়াতে শাসকরূপে আসীন থাকবে যার কারণে, ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের সাথে সাথেই সে ইমাম মাহদির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে যাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘কাল্বের যুদ্ধ’ নামে আখ্যায়িত করেছেন।

কোন কোন হাদিসে এই শাসককে ‘সুফিয়ানি’ হিসাবে অবিহিত করা হয়েছে। এর কারণ, হিসাবে হযরত আলী (রাঃ) বলেন,

“সুফিয়ানি – যে লোক শেষ যুগে সিরিয়াতে দখল প্রতিষ্ঠা করবে সে বংশগতভাবে খালিদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের বংসদ্ভুত হবে। তার সহচরদের মধ্যেও "কালব্যিয়া" বা "কাল্ব” গোত্রের লোক বেশি হবে। দামেস্কের দিক থেকে তার আত্মপ্রকাশ ঘটবে।

তার মাথা বড় হবে এবং মুখে শ্বেত রোগের দাগ থাকবে। এক চোখে একটি সাদা দাগ থাকবে। মানুষের রক্ত ঝরানো তাদের বিশেষ অভ্যাসে পরিণত হবে। যে লোকই বিরোধিতা করবে, তাকেই হত্যা করা হবে। এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে।

যখন হারাম শরীফে ইমাম মেহেদী (আঃ) এর আগমনের খবর প্রকাশ পাবে তখন এই শাসক ইমাম মেহেদী (আঃ) এর বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ করবে”।

(মাজাহিরে হক জাদিদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৩)

২০০০ সালে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত বনু কাল্ব গোত্রের অপর শাসক বাশার আল আসাদের জন্ম দামেস্কে। ২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে নুসাইরিয়াদের অবস্থান আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আ এর বিরুদ্ধে এতই নিষ্ঠুর যে, “এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে” – হাদিসের এই লাইনটিকে পর্যন্ত তারা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত করছে। আর মহান আল্লাহ আজ প্রযুক্তির মাধ্যমে তা সারা বিশ্বে জানিয়ে দিয়েছে।

ব্রিটিশ ডাঃ ডেভিড নট, যিনি কিনা সিরিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঁচ সপ্তাহ ধরে সেচ্ছায় চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন, তার বরাত দিয়ে গত অক্টোবর ২০১৩ সালে সিএনএন, ডেইলি মেইল, ডেইলি টেলিগ্রাফসহ বহু আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে এই খবর প্রচারিত হয় যে, আসাদের স্নাইপাররা গর্ভবতী মহিলাদের পেটকে লক্ষ্য করে গুলি করে গর্ভস্থিত সন্তানদের হত্যা করছে।

গুলিবিদ্ধ গর্ভস্থিত শিশুর এক্স রে রিপোর্টসহ এই খবর দেখতে ইন্টারনেটে “Is this the most sickening image of the war in Syria so far? Snipers 'target unborn children in chilling competition to win cigarettes” লিখে সার্চ দিলে http://www.dailymail.co.uk এর একটি নিউজ পাওয়া যেতে পারে।

এমনকি সিরিয়ার এই বনু কালব গোত্রীয় শাসক বাশার আল আসাদ গত ২১ শে আগস্ট ২০১৩ সালে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে দামেস্কের আলগুতা শহরে। এই ‘আলগুতা’ হাদিসের বর্ণনা হিসাবে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ, সিরিয়ার দামেস্কের “আল গুতা" নামক স্থানটি রাসূল (সাঃ) এর বর্ণিত "মালহামা" (মহাযুদ্ধে) একটি বড় ভূমিকা রাখবে, যেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন ইমাম মেহেদী।
হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের তাঁবু (ফিল্ড হেডকোয়ার্টার) হবে সিরিয়ার সর্বোন্নত নগরী দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে”।



(সুনানে আবি দাউদ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১১; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৩২; আল মুগনী, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৬৯)

আলগুতা সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্ক থেকে পূর্ব দিকে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি অঞ্চল। মহাযুদ্ধের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে ইমাম মাহদী এর হাতে থাকবে।

সমস্ত দাজ্জালি মিডিয়া এই রাসায়নিক অস্ত্রের বিষয়টিকে এমনই বিতর্কিত করে তুলেছে যে, আল্গুতা তো দূরের কথা, রাসায়নিক অস্ত্র আদৌ বাশার আল আসাদ এর বাহিনী মেরেছে কিনা সেটাই এখন ধোঁয়াশা হয়ে গেছে। আর এই বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদকে তো ইতিমধ্যেই পশ্চিমা দাজ্জালি মিডিয়া এবং বিভিন্ন ভূখণ্ডের দালাল মিডিয়া একে “যৌন জিহাদ” বলে অপপ্রচার করে অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের পথ ভ্রষ্ট করার চেষ্টা চালিয়েছে।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“সুফিয়ানির আবির্ভাব হবে হবে দামেস্কের দিক থেকে।

তার সহচরদের মধ্যেও "কালব্যিয়া" বা "কাল্ব” গোত্রের লোক বেশি হবে। সে মানুষদেরকে এমনভাবে হত্যা করবে যে এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে। ফলে বনু কায়েস গোত্রের লোক তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবে এবং সে তাদের সবাইকে হত্যা করে ফেলবে। আমার ঘরের (আহলে বাইতের) এক ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) মক্কাতে আসবে এবং এ খবর তার কাছে পৌঁছবে। তখন সে (সুফিয়ানি) একটি সৈন্য বাহিনী পাঠাবে এবং পরাজিত হবে।

এরপর সে আরেকটি বাহিনী পাঠাবে এবং মরুভূমিতে ভূমিধ্বসে ধ্বংস হয়ে যাবে। শুধুমাত্র একজন লোক বেঁচে থাকবে যে কিনা (ভূমিধ্বসের) এই সংবাদ পৌঁছে দিবে”।

(ইবনে হিব্বান, তিরমিজি, আবু ইয়েলী, তাবরানী, আল ফিতান, মুসতাদরাকে হাকিম)

দামেস্কে জন্মগ্রহণকারী এই বাশার আল আসাদদের অনুগত ও অনুসারী প্রশাসনিক ও সামরিক বাহিনীর বেশির ভাগই “নুসাইরিয়া”/ “আলাভি” তথা “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের। আজ তারা “আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআ”দের সাথে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত। উল্লেখ্য, হাফিজ আল আসাদের মুখে শ্বেত দাগ ছিল।



২০১১ তে যুদ্ধ শুরু হবার পর বনু কাল্ব গোত্রের বিরুদ্ধে বনু কায়েসের অবস্থান বের করতে না পারলেও পিছনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, উমাইয়াদ খেলাফতের সময় বনু কাল্ব গোত্র ২য় মারওয়ানের বিরোধিতা করলে বনু কায়েস গোত্রই সর্বপ্রথম বনু কাল্ব গোত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন খুযায়ী (রাঃ) দাঁড়িয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘আমরা এই সুফিয়ানিকে কিভাবে চিনব?’

উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন,

“তার গাঁয়ে দুটি কাতওয়ানির চাদর থাকবে। তার চেহারার রং ঝলমলে তারকার মতো হবে। ডান গালে তিলক থাকবে। আর বয়স চল্লিশের কম হবে”।



(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১১০)

ঝলমলে চেহারার অধিকারী বাশার আল আসাদ ৩৫ বছর বয়সে সিরিয়ার শাসনভার গ্রহণ করে। দুটি কাতওয়আনির চাদর বলতে যদি দুটি জাতিকে সাহায্যকারী হিসাবে বোঝানো হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা বর্তমানে ইরান (পারস্য) ও রাশিয়া (পেছনের দিকের শত্রু)-কে দেখছি। আর হাদিসেও ইমাম মাহদির আগমনের পরে যুদ্ধের সিরিয়ালে কাল্ব যুদ্ধের পরে এই দুই জাতির সাথে যুদ্ধের ইঙ্গিত এসেছে। এই দুই জাতির সাথে যুদ্ধের পরেই মহাযুদ্ধের বর্ণনা এসেছে।

বর্তমানে সিরিয়ার বনু কাল্ব গোত্রের এই শাসকের সাথে রাশিয়া ও ইরানের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে।

এই দুই ভূখণ্ড সরাসরি কূটনৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি এই বাহিনীর কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে। এমনকি এই দুই ভূখণ্ডের সৈন্যরা সরাসরি তার পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। কুয়েতের আরবী সংবাদপত্র আস-সিয়্যাসসার বরাত দিয়ে অনলাইন নিউজ পেপার http://www.kavkazcenter.com গত ২২ শে নভেম্বর ২০১৩ তারিখে Russians participate in battle for Syrian district নামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আর রয়টার্সের অন লাইন সংস্করণ http://www.reuters.com এ গত ৪ ঠা নভেম্বর ২০১৩ তারিখের Iran Revolutionary Guards commander killed in Syria নামক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

অপর বর্ণনায়,

“শুরুর দিকে তারা ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে, পরে যখন শক্তি ও ক্ষমতা পাকাপোক্ত হয়ে যাবে, তারা অত্যাচার-অবিচার ও অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়বে”।



(ফয়জুল কদির, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১২৮)

অর্থাৎ প্রথমে তাদেরকে মুসলমানদের মাঝে মহান নেতা বা হিরো হিসাবে উপস্থাপন করা হবে, কিন্তু পরে তাদের আসল রূপ প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। ইসরাইল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠের কারণে বেশির ভাগ মুসলিমরা এই পরিবারকে হিরো মনে করে। আজ ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে তাদের আসল রূপ প্রকাশ পেয়েছে।

আসুন এবার আমরা একটু বনু কাল্ব গোত্রের ইতিহাসের দিকে তাকাই।

রাসুল (সাঃ) এর সময়ে বনু কাল্ব আরবদের একটি গোত্র ছিল এবং নিজেদেরকে ইয়েমেনি বংশদ্ভুত বলে দাবী করত।

হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) কে তৎকালীন সময়ে দামাতুল জান্দালে পাঠানো হয়েছিল এই গোত্রকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য। তখন এর গোত্র প্রধান ছিল আসবাগ বিন আমর কাল্বি। সে খ্রিস্টিয়ান ধর্মালম্বী ছিল। সে ইসলামকে দ্বীন হিসাবে কবুল করে এবং পরবর্তীতে গোত্রের অধিকাংশ লোক ইসলাম গ্রহণ করে।

ইসলামের প্রথম যুগে এই গোত্রের বেশ কিছু সন্মানিত ব্যক্তিত্বের ইতিহাস এখনও বিদ্যমান।


হযরত জায়েদ বিন হারিসা (রাঃ) ছিলেন বনু কাল্ব গোত্রের।
হযরত জিব্রাইল (আঃ) প্রায়ই সুদর্শন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী সাহাবী হযরত দিহইয়্যা আল কাল্বি (রাঃ) এর রূপ নিয়ে রাসুল (সাঃ) এর কাছে ওহী নিয়ে আসতেন।
হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর মৃত্যুর পর হযরত আলী (রাঃ) যেই মহিলাকে বিয়ে করেন, উনিও ছিলেন বনু কাল্ব গোত্রের। উনার নাম ফাতিমা কাল্বিয়্যা। “উম্মুল বানিন” নামে তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন।



কালের বিবর্তনে এই গোত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং বর্তমানে বনু কাল্ব গোত্রের অধিকাংশ লোক উত্তর পশ্চিম সিরিয়াতে বিশেষ করে হোমস এবং লাটাকিয়ার পাহাড়ি উপত্যকার গ্রাম কারদাহাতে বসবাস করে এবং শিয়াদের নুসাইরিয়্যা আকিদার অনুসারী। আর নুসাইরিয়া আকিদার উদ্ভব হয় শিয়াদের ১১ তম ইমামের দাবীদার হাসান আসকারী (মৃত্যু ৮৭৪) এর ছাত্র ইবনে নুসাইর (আল খাসিবি নামে পরিচিত, মৃত্যু ৯৬৯) এর থেকে। ১০৩২ সালে আল খাসিবির নাতী (ছেলের ছেলে) এবং তার ছাত্র আল তাবারানি লাটাকিয়া এসে তার লিখনীর মাধ্যমে সিরিয়ার উপকূলবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলের পাদদেশে অবস্থিত জনগোষ্ঠীর মাঝে এই আকিদার বিস্তার ঘটায়। (মূলত এই সময় থেকেই তাদের সহিহ ইসলামী আকিদা থেকে পদস্খলন শুরু হয়)। পরে এই পাহাড়ি অঞ্চলটিও “নুসাইরিয়া পার্বত্য অঞ্চল” নামে পরিচিত হতে শুরু করে।

হযরত আলী (রাঃ) এর অনুসারে নিজেদেরকে তারা “আলাভি” হিসাবে পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করে।

সিরিয়াতে নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ৪ টি গোত্র। যথাঃ মাতাউইয়া, হাদ্দাদিন, খাইয়্যাতিন ও কাল্বিয়্যা (অর্থাৎ বনু কাল্ব গোত্রের যারা এই সম্প্রদায়ের আকিদাকে গ্রহণ করেছে)।

‘আল আসাদ’ পারিবারিক নামের শুরু ১৯২৭ সালে যখন হাফিজ আল আসাদের বাবা আলী সুলায়মান তার নামের সাথে ‘আল আসাদ’ (অর্থ সিংহ) ব্যবহার শুরু করে। আলী সুলায়মানের বাবা (হাফিজ আল আসাদের দাদা) সুলায়মান আল ওয়াহিশ (জন্ম ১৮৭৫) সিরিয়ার উত্তর পশ্চিমে লাটাকিয়ার পূর্বপাশে নুসাইরিয়া পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি উপত্যকার গ্রাম কারদাহাতে বাস করত।

হাফিজ আল আসাদও এই একই গ্রামে ১৯৩০ সালে জন্ম গ্রহণ করে। আর বাশার আল আসাদ দামেস্কে জন্মগ্রহণ করে।

কিন্তু আরবদের বিভিন্ন পশ্চিমা দালাল মিডিয়াতে নিজের "কালব্যিয়া" বা "কাল্ব" গোত্রের পরিচয়কে গোপন করে কুরাইশ বংশের পরিচয়কে বাশার আল আসাদ বার বার সামনে আনছে (হাদিসে এসেছে কালব গোত্রের কুরায়েশী ব্যক্তি) এবং রাসুল (সাঃ) এর কুরাইশ বংশের ধোঁয়া তুলে বর্তমান মুসলিম জাহানের অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের সহজেই পথ ভ্রষ্ট করছে।

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘হে আল্লাহর রাসুল, সুফিয়ানির বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করা কিভাবে জায়েজ হবে, তারা তো তাওহীদে বিশ্বাসী হবে?’

উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

“শোন হুজায়ফা, সে সময় সে মুরতাদ অবস্থায় থাকবে। সে বিশ্বাস করবে, মদ হালাল।

সে নামাজ পড়বে না”।

(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১১০)

হাফিজ আল-আসাদ এর সময় ১৯৮১ ও ১৯৮২ সালে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আ এর মুসলিমরা বিদ্রোহ করলে এই নুসাইরিয়া সম্প্রদায় হামা শহরে তাদের সেনাবাহিনী নিয়ে যে শ্লোগান নিয়ে হামা শহরের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে বলছিল, তা কখনও হামার অধিবাসীরা ভুলতে পারবে না, তারা বলছিল, “নাও অস্ত্র, ধর অস্ত্র, মুহাম্মাদের দ্বীন পশ্চাতে ও তিরোহিত”(আল-ইসলাম ফী মুওয়াজিহাতিল বাতিনিয়্যাহ, পৃ. ১১০)

আসুন, আমরা সিরিয়ার বর্তমান বনুকাল্ব গোত্রের কুরায়শি শাসক বাশার আল আসাদ শিয়া আকিদার যে নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, তাদের আকিদাগত দিকে একটু দৃষ্টি দেই এবং বুঝতে চেষ্টা করি তারা কি আদৌ ইসলামের গণ্ডির ভিতরে আছে কিনা।

তাদের সম্পর্কে জানার জন্য “আল-হাফতুশ শরিফ” কিতাবখানা পড়ুন, যা তাদের বর্তমান যুগের আলেমদের ব্যাপক সম্পাদনা, পর্যালোচনা ও নিরীক্ষার পর মুদ্রিত। তাদের পবিত্র কিতাব “আল-হাফতুশ শরিফ” থেকে কয়েকটি উদাহরণ পেশ করছি, যা থেকে তাদের পথভ্রষ্টতার ধারণা হবে:

১। “হুসাইন যখন ইরাকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল, তখন আল্লাহ তার শরীরে অন্তরীণ(লক্ষ্য করুন হুসাইনের শরীরে অন্তরীণ আল্লাহ জিবরীলকে ভাই বলে সম্বোধন করছে!) হলেন।

তিনি যেখানে অবতরণ করেছেন, জিবরীল সেখানে তার নিকট এসেছে ও কথা বলেছে। যখন যুদ্ধের দিন উপস্থিত হল, বিরোধী সৈন্য তাকে ঘিরে ধরল, ঘোড়াগুলো সারিবদ্ধ দাঁড়াল ও যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল, তখন আমাদের মাওলা হুসাইন জিবরীলকে ডেকে বলেন: হে ভাই! আমি কে? তিনি বললেন: আপনি আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরজাগ্রত, জীবন-মৃত্যুর মালিক। আপনি আসমানকে নির্দেশ করেন, ফলে সে আপনার আনুগত্য করে। আপনার নির্দেশে জমিন স্থির দাঁড়ায়, পাহাড় আপনার ডাকে সাড়া দেয়, সমুদ্রসমূহ আপনার আনুগত্যে দ্রুত ছুটে আসে। আপনি সে সত্তা, যার নিকট ষড়যন্ত্রকারীর ষড়যন্ত্র ও অনিষ্টকারীর অনিষ্ট পৌঁছুতে পারে না”।



২। আল-হাফতুশ শরিফের” গ্রন্থকার অন্যত্র বলেন: জিবরীল উমাইয়্যাদের সেনাপ্রধান সাদ ইবনে ওমরকে লক্ষ্য করে বলেন: “তুমি ধ্বংস হও, তুমি দু’জাহানের রব, পূর্বাপর সকল মাখলুকের রব, আসমান-জমিন ও তার মধ্যবর্তী সবকিছুর স্রষ্টাকে হত্যা করছ? ওমর ইবনে সাদ এ ঘোষণা শোনে ভয়ে কম্পিত হয়”।

৩। “আল-হাফতুশ শরিফের” লেখক ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে গাল-মন্দ করে বলেন:

“তিনি হুসাইনের যুগে পুনর্জন্ম বিধান মতে ভেড়ার আকৃতিতে ছিলেন, আল্লাহ ফিদিয়া হিসেবে হুসাইনকে তা প্রদান করেন। তিনি ওমরকে জবাই করেন, যার নাম ছিল “দালামাহ” বা “আদলামা”।

তিনি মুফাদ্দাল থেকে বর্ণনা করেন, সাদেক তাকে বলেছেন: “হে মুফাদ্দাল, যে ভেড়াটি হুসাইনকে ফিদিয়া হিসেবে দেয়া হয়েছিল, তার নাম আদলাম, কুরাইশদের আদলাম। ওমর তখন বৃদ্ধাবস্থায় ভেড়ার আকৃতিতে ছিল”। অতঃপর তিনি বলেন: তার শিং দু’টি কাবার সাথে ঝুলন্ত রয়েছে। “হে মুফাদ্দাল, বায়তুল হারামে ঝুলন্ত শিং দু’টি তুমি দেখনি? আমি বললাম: হ্যাঁ, হে আমার মনিব। তিনি বললেন: শিং দু’টি ভেড়ার, যা হুসাইনকে ফিদিয়া হিসেবে দেয়া হয়েছিল।

অতঃপর সাদেক হাসলেন যে, তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত দেখা গেল। আমি বললাম: হে আমার মাওলা, হাসলেন কেন? তিনি বললেন: হে মুফাদ্দাল, মানুষেরা যখন হজের মৌসুমে মক্কায় সমবেত হয়, তারা ভেড়ার শিং দু’টি উৎসুক হয়ে দেখে, তারা ভাবে এগুলো জান্নাত থেকে এসেছে, তাই আশ্চর্যের দৃষ্টিতে তার প্রতি তাকায়। আর আমরা সেদিকে তাকাই এ হিসেবে যে, এ শিং দু’টি “দালামার”। বস্তু একই, মানুষেরা আশ্চর্য হয় এক হিসেবে, আমরা আশ্চর্য হই অন্য হিসেবে”। --“আল-হাফতুশ শরিফ”: (৯৪)

৪।

খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদের ন্যায় এক সত্তা তিন সত্তার মধ্যে দেহধারণ করার মতবাদ নুসাইরিদের ধর্মে রয়েছে। তারা মনে করে এ তিন সত্তা মূলত এক সত্তা ও চিরস্থায়ী। নুসাইরিদের তিন সত্তার নীতি খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদের সমতুল্য। তারা তিন সত্তার জন্য তিনটি শব্দ ব্যবহার করে, যথা: (ع.م.س) তারা বলে: এ তিন সত্তার মধ্যে আল্লাহ দেহধারণ করেছেন। এক. আলি, তার জন্য তারা (المعنى) শব্দ ব্যবহার করে।

দুই. মুহাম্মদ, তার জন্য তারা (الاسم) শব্দ ব্যবহার করে। তিন. সালমান, তার জন্য তারা (الباب) শব্দ ব্যবহার করে।

(হাসান ইবরাহীম হাসান, “তারিখুল ইসলাম, আস-সিয়াসি, ওয়াদ দীনি, ওয়াস সাকাফি, ওয়াল ইজতেমায়ি”: (পৃ.৪/২৬৫, ২৬৭), দেখুন: আল-আলাবিউন: (পৃ.৫৪,৫৫))
৫। তাদের আকিদা মতে আলির মধ্যে আল্লাহ প্রবেশ করেছেন, আর আলি মুহাম্মদকে নবী হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তারা কুফরির শেষ প্রান্তে পৌঁছে বলেছে: আলি মুহাম্মদকে সৃষ্টি করেছে, মুহাম্মদ সৃষ্টি করেছে সালমান ফারসিকে, সালমান ফারসি সৃষ্টি করেছে পঞ্চ ইয়াতীমকে, যাদের হাতে আসমান-জমিনের নিয়ন্ত্রণ।

তারা হলেন:

o মিকদাদ: তিনি মানুষের রব ও সৃষ্টিকর্তা। তার দায়িত্বে রয়েছে বিদ্যুৎ চমক, মেঘের গর্জন ও ভূমিকম্প।
o আবুদ দার: (আবুযর গিফারী), তিনি নক্ষত্র ও তারকারাজির কক্ষপথসমূহ নিয়ন্ত্রণ করেন।
o আব্দুল্লাহ ইব্‌ন রাওয়াহা আল-আনসারী: তিনি বাতাসের নিয়ন্ত্রক ও মানুষের রূহ কব্জাকারী।
o উসমান ইব্‌ন মায‘উন: তিনি শরীরের জ্বর, পেট ও মানুষিক রোগ নিয়ন্ত্রণকারী।


o কুন্বর ইব্‌ন কাদান: তিনি মানুষের শরীরে রূহ সঞ্চারকারী।

৬। এসব আকিদা লালন করে তারা নিজেদের অগ্নিপূজারী প্রমাণ দেয়, তারা ইসলামের নাম ব্যতীত কিছুই গ্রহণ করে নি। এসব আকিদা কুফরির চূড়ান্ত পর্যায়ের আকিদা, এর যে কোনো একটিই আল্লাহর দীন থেকে বের করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। “তায়েফাতুন নুসাইরিয়্যাহ”: (পৃ.৪৭)

৭।

আলি মৃত্য।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.