আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাজীর সংখ্যা বাড়লে তোর বাপের কি??

লড়াই করে জিততে চাই

এবার ১ লক্ষ ১ হাজার হজযাত্রী পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। ভাবছেন, আমি কেন হজযাত্রী পাঠানো নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি?? জি না! আমি মোটেও এব্যাপারে চিন্তিত নই! সৌদিতে হজযাত্রী পাঠানোয় আমার কোন এলার্জিও নেই। কারণ আমি মোটেও প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাচ্ছি না যে, দেশে হাজীর সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে দুর্নীতিবাজের সংখ্যা বৃদ্ধির হার কেন অনেক বেশি দ্রুত? আমি মোটেও বলতে চাচ্ছি না যে, কত পার্সেন্ট হাজী বেআইনীভাবে স্বর্ণ নিয়ে দেশে ফেরেন বা কত পার্সেন্ট হজযাত্রীর টার্গেটই থাকে হাজী হওয়ার পর সৌদির কামলা হবেন, অবৈধভাবে সৌদিতে থাকবেন? আমি কখনই বলবো না যে, হজযাত্রীদের একটি বড় অংশই সুদ-ঘুষ-দুর্নীতিতে ডুবে থাকা আমলা, শ্রমিকের রক্তচোষা শিল্পপতি, লুটপাটকারী ব্যবসায়ী আর দুর্নীতিবাজ-চাঁপাবাজ-সন্ত্রাসবাজ রাজনীতিবীদ। আমি কখনই বলবো না যে, হজে যাওয়ার প্লেনের টিকিট টাকতে যে ভন্ড ফাইল আটকিয়ে বাড়তী টাকা নেয় বা মসজিদ-মাদ্রাসা তৈরীর টাকার বড় অংশ নিজের ভূড়ি তৈরীর কাজে লাগায়, তারা হাজী হলে দেশের বারোটা বাজবে! আমি মোটেও বলতে চাচ্ছি না যে, আদমব্যাপারী নামক হজ এজেন্টরা যেমন হজের নামে ঠকবাজী, ধাপ্পাবাজী করাকেই ব্যবসা বলে, তেমনি সৌদি সরকারও হজ অনুষ্ঠানকেই তাদের দেশের অন্যতম বড় ব্যবসা হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিবেচনা করে থাকে। আমি কোন অবস্থাতেই তাদের কথা বলবো না, যারা মক্কা-মদীনায় গিয়ে পুরনো পাপ ধুয়ে হাজী টাইটেল নিয়ে দেশে ফিরে দ্বিগুণ উদ্যোমে ঘুষ-দুর্নীতি-সুদ-সন্ত্রাসী-লুটতরাজে যুক্ত হয়ে পড়েন। আমি তাদের কথা একটুও বলতে চাচ্ছি না যারা ধোকাবাজী বা ধান্দাবাজীর উদ্বোধন করতে সৌদি গিয়ে ওমরা করে পবিত্র হয়ে আসেন। আমি সেকথা কখনই বলবো না যে, আখেরাতে হিসাব সহজের কোরাণীক তরিকাকে মিথ্যা পরিণত করে হাজীদের এবং পাঁজিদের সম্পদের পরিমাণ কিভাবে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়। আমি তাদের কথা একদম মুখে আনতে চাচ্ছি না, যারা সুদের ব্যবসা, মদের ব্যবসা, নারীর ব্যবসা, চাঁদাবাজীর ব্যবসা, বেহেস্ত-দোযখের ব্যবসা এবং হজ ব্যবসাকে সমানভাবে ভালবাসেন! আমি কখনোই বলবো না যে, হজ ফ্লাইট পরিচালনার নামে যেমন কোটি কোটি টাকা লুটতরাজ করা হয় তেমনি রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাকে ধাপে ধাপে পঙ্গুও করে ফেলা হয়! এগুলোর কোন বিষয় নিয়েই আমি একটি কথাও বলবো না, বলার আদিখ্যেতা দেখানোই বাতুলতা!
আমার কথা সম্পূর্ণ ভিন্ন! আমি বলতে চাচ্ছি যে, হাজী পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা যেমন সফলতার মুখ দেখে, বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা তেমনি ব্যর্থতায় ঠেসে থাকে কেন?? আমি প্রশ্ন রাখতে চাচ্ছি যে, ১৬ কোটি মানুষের যারা আহার যোগায় সেই কৃষক বা কৃষির উন্নয়নে কোন লক্ষ্যমাত্রা নেই কেন? কৃষক-শ্রমিকের সমস্যা নিয়ে যথেচ্ছা গলাবাজী করলেও, দশকের পর দশক কেন পরিকল্পনা কাগজের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকে? হাজী বাড়ার হারের চেয়ে কেন দ্রুতগতিতে ভূমিহীন এবং কর্মহীনের সংখ্যা বাড়তে থাকে? দেশের আমজনতার কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোন লক্ষ্যমাত্রা কেন নির্ধারণ হয় না? ফাইল আটকানো আর পাবলিক আটকানোর বাণিজ্যের লাগাম টানতে কেন কোন লক্ষ্যমাত্রা নেই? দেশের পবিত্র সংবিধানে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া আছে, ধনি-গরীবের মধ্যে পার্থক্য কমানোর সেই চেষ্টা, উদ্যোগ বা ইচ্ছা কারো নেই কেন? মসজিদ-মাদ্রাসা-মাহফিল-ওরস-ইস্তেমার দ্রুত বৃদ্ধির সাথে হজযাত্রী বৃদ্ধির সম্পর্ক তো আছেই। কিন্তু সরকারের বাৎসরিক বাজেট বৃদ্ধি, গার্মেন্সের অর্ডার বৃদ্ধি, রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধি, বিদেশীদের হাতে গ্যাসব্লক বরাদ্দ বৃদ্ধি, র‌্যাব-পুলিশের ক্রসফায়ার বৃদ্ধি, সরকারের মেয়াদ বৃদ্ধি, এমপি-মন্ত্রীদের কমিশন বৃদ্ধি, রাজনীতিকদের গলাবাজী বৃদ্ধি, আমলাদের ভূড়ি বৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, বিদেশী ঋণের সুদ ও পরিমাণ বৃদ্ধি, সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, ছাগু ও জঙ্গী ফেসবুকার-ব্লগার বৃদ্ধি, নারী নির্যাতন বৃদ্ধি, হামলা-মামলা বৃদ্ধি, ধর্মগাধাদের সংখ্যা বৃদ্ধি, নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি--- আরো কতো বৃদ্ধি যে আছে? চারিদিকে এত বৃদ্ধি! কিন্তু কৃষক-শ্রমিকের জীবনমান কেন বাড়ে না?? ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, গবেষক, সমাজবেসীদের সংখ্যা কেন প্রয়োজনমতো বাড়ে না?? স্কুল, হাসপাতাল, খেলার মাঠ, রাস্তা-ঘাট কেন প্রয়োজনীয় হারে বাড়ে না?? দামী ব্রান্ডের প্রাইভেট কার বাড়ে এত দ্রুত কিন্তু পাবলিক ট্রান্সপোর্টের পরিমাণ কেন তেমন বাড়ে না??
আমার কথা সোজা! দেশের বেশিরভাগ মানুষ যখন দরিদ্র্যসীমার নীচেয়, বেশিরভাগ কৃষক যেখানে ভূমিহীন, বেশিরভাগ যুবক যেখানে কর্মহীন, বেশিরভাগ নারী যেখানে নির্যাতিত, সেখানে সরকারী লক্ষ্যমাত্রা তো তাদের নিয়েই নির্ধারণ করার কথা! সেখানে লক্ষ্যমাত্রা নেই কেন? কেন? কদাচিৎ থাকলেও সেই লক্ষ্যমাত্রা কেন কখনই ধর্মীয় কাজের লক্ষ্যমাত্রার মতো কার্যকরী হয়না?
আপনি বলতে পারেন, কিন্তু আমি বলতে পারবো না! আপনি বলতে পারেন, ‘হাজী মানে ভন্ড ছাগু, হাজী মানে আকামের ধাড়ি, দাঁড়ি-টুপি মানেই জঙ্গী-বোমাবাজ’! কিন্তু আমার মুখে এ ধরণের কথা কখনোই আসবে না! কক্ষনোই একটি কথাও বলবো না পবিত্র হজ আর মহাপবিত্র বাংলাদেশী হাজীদেরকে নিয়ে। যারা আপনার মতো ঠোঁটকাটা নিশ্চয়ই তাদের একদিন সুমতি হবে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।