আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা বাংলা ভাষার মর্যাদা দেই !!!



আমি ছোটবেলায় স্কুলে যতগুলো পত্র লেখা শিখেছি,তার মধ্যে সরকারী,বেরকারী সব রকমই ছিল। সেগুলো বাংলায় ছিল । কোনো বিশেষ সুবিধা পাওয়ার জন্যে স্কুল থেকে যেসকল পত্র বিভিন্ন স্থানে লেখা হত ,তা বাংলাতেই হত। ইংরেজীতে পত্র লেখা আমরা শিখেছি কিন্তু ওটা ছিল স্কুলের পরিক্ষার খাতায় লেখার জন্যে। বাস্তব ক্ষেত্রে বাংলাই ছিল মাধ্যম।

এটি বেশী দিনকার কথা নয়।

বাংলা ভাষার চর্চা এখনও আছে। এখনও আপনি সরকারী,বা বেসরকারীভাবে কোনো ক্ষেত্রে বাংলায় পত্র লিখতে পারেন। কিন্তু আপনি বোধহয় নিজেই বুঝে ফেলেছেন যে, কোথাও বাংলায় পত্র লিখলে আপনার কপালে কি নিয়তি অপেক্ষা করে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ইংরেজীতে পত্র না লিখে বাংলায় লিখলে অপনার চাকুরী তাৎক্ষনিকভাবে চলে যাবে এটা আপনার জানা।

কিন্তু সরকারী ক্ষেত্রেও যে াাপনি হেনস্থার শিকার হতে পারেন,তা কি জানা আছে ?

আপনি কোনো স্থানে এমনটা করে দেখুন। তাদের মুখের আকৃতি এবং চাহনী থেকে অনুমান করতে পারবেন যে,তারা আপনার শিক্ষা দীক্ষা নিয়ে সন্ধিহান।

আপনি কোথাও গিয়ে ইংরেজীতে কথা বলুন,দেখবেন,তারা আপনাকে বেশী শিক্ষিত ভাবছে। বাংলায় বলুন এবং দেখুন।

আপনি কোনো অনুষ্ঠানে বাংলা গান বাজান,দেখবেন মানুষ আপনাকে কিভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল করে।

ইংরেজী বাজান,দেখবেন আপনাকে আপার ক্লাশ ভাবছে।

আপনি বিশুদ্ধ বাংলায় কথা বলুন এবং দেখুন মানুষ কি বলে। দেখবেন তারা হয় আপনাকে খ্যাত বলছে,নয়ত গোপাল ভাড় বা প্রফেসর সাহেব বলে তাচ্ছিল্ল করছে।

আপনি চাকুরীর নিয়োগকর্তা হলে বাংলায় বিজ্ঞাপন দিন, দেখবেন প্রার্থীদের কি অবস্থা হয়। তারা ভাববে এই পোস্টের বেতন বেশী না।

ফলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আপনি কাঙ্খিত প্রার্থী পাবেন না। এবং তারা আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খারাপ বা নীচের ধারনা পোষণ করবে। ইংরেজীতে বিজ্ঞাপন দিন, দেখবেন ভাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত স্থান থেকে আবেদন আসছে।

ভাবছেন,তাহলে শুধু একদিনই বাংলায় কথা বলব,সেটা ২১শে ফেব্রুয়ারী। না , তা হবে না।

তাহলে একদিনেই মানুষ আপনার সম্পর্কে তথ্য জেনে যাবে। এটা আপনি হতে দিবেন কেন ? তাই ২১শের দিনটি হল একটি উপলক্ষ্য মাত্র। এটি একটি সরকারী ছুটির দিনও বটে,তাই উপভোগ করা আর কি। দেখবেন,যারাফুল নিয়ে প্রভাতফেরীতে যায়,তারাও রিমিক্স কথা কয় এবং তাদের আলোচনায় আপনি ২১শের ছিটেফোটাও পাবেন না। তারা আনন্দিত এই কারনে যে,ফুল নিয়ে লাইনের সামনে দাড়িয়েছে এবং এই উৎসবে যোগদান করে তারা ধন্য।



অনেকরে সাথে এই অছিলায় দেখা হবে,এটাই আসল। আর ইচ্ছা করলেও সকলে এখন আর বাংলায় কথা বলতে পারবে না। ইংরেজী বাংলার মধ্যে এমনভাবে ঢুকেছে,আপনি বুঝতেও পারবেন না,শব্দটা ইংরেজী নাকি বাংলা। তবে মানুষ বুঝতে পারছে,এটাই আসল ভেবে কাজ চালিয়ে যাবেন। এভাবে ভাষাকে ধর্ষন করা হচ্ছে কিনা ভেবে দেখবেন।



সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালু করতে হবে বলে যারা আওয়াজ তোলে,তারাও আসলে এভাবে চালাচ্ছে। এটা হল একটা শ্লোগান। এতে কিছু পরিচিতি বাড়ে,তাই এই আওয়াজ। অনেকটা গাছের ডালে বাংলা বর্ণ ঝুলিয়ে নীচে ৩১ডিসেম্বর স্টাইলে নাচানাচি করার মত। অবশ্য এটাও নতুন নয়,পূর্বে ঘটেছে।



এতক্ষন যা বললাম,তা চেতনাধারী ও অচেতন সকলেই করে থাকে। আমাদেরই কেউ কেউ ভাষা নিয়ে বেশী বলে,আর কেউ কম,কিন্তু ঘটনা মোটামুটি একইভাবে ঘটছে। ব্যক্তিগতভাবে যেসব বাংলাপ্রেমীদের সাথে কথা বলেছি,তারাও আসলে ইংরেজীর দাস। হেথা সেথা দুএকজন প্রকৃত প্রেমিক আছে কিন্তু তাদের অনেকে যখন দেখেছে,শুধু বাংলায় ভাত নেই,তখন আবার ইংরেজীমুখী হয়েছে।

শেষ কথা হল, এইটা হচ্ছে সাষ্কৃতির ব্যাপার।

মানে সাংষ্কৃতিক আগ্রাসন। এই আগ্রাসন রুখতে নিজস্ব সাংষ্কৃতি বলিষ্ঠ করতে হয় এবং তা নিজ জনতার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত রাখতে হয়। কিন্তু আমাদেরকে যেসব সাংষ্কৃতি শেখান হয়,তা আমাদের বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। পরিবার থেকে কিছু শিখে সমাজে,বা প্রতিষ্ঠানে গেলে সে বুঝতে পারে,এরা তার পরিবারের শিক্ষার বিপক্ষে। তখন সে বেকায়দায় পড়ে সেটা গ্রহন করতে থাকে।

তার মন সেটা মেনে নেয়না,আবার উপায় ও থাকেনা। এতে সে আসলে সর্বদিক দিয়ে বঞ্চিত হয়। এভাবে আমরা জীবন অতিবাহিত করি। এতে করে বাহির থেকে যখন কোনো সাংষ্কৃতি চলে আসে,নিজ সাংষ্কৃতি সম্পর্কে ধারনা বা জ্ঞান অতি সীমিত হওয়ার কারনে আমরা সেখানে গা ভাষায়। এবং মস্তিষ্ক লুটপাট হওয়াতেও আনন্দিত হই।

আমরা যদি আমাদের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারতাম এবং সেটা বুঝে কাজ করতাম,তাহলে ভাষার বিষয়,মর্যাদা বুঝতে পারতাম। এবং বাংলার গাথুনী এতটা ঢিলা হতনা। আমরা বিদেশী ভাষা শিখতাম কিন্তু বাংলাকেও ভালভাবে চর্চা করতাম। কিন্তু আমাদের সাংষ্কৃতিক দ্বন্দ আমাদেরকে মানুষিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে শেখায়। এখান থেকে ভাল কিছু আশা করা যাচ্ছে না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.