আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাকিব আল হাসান এবং বাংলাদেশ সমাচার।



বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা খেলোয়ার সাকিব আল হাসান। সে আমাদের জাতীয় সম্পদ, বাংলা ব্রান্ড। শুধু বাংলাদেশ বলি কেন, সারা বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারও তিনি। কি টেস্ট, কি ওয়ানডে, কি টি২০...সবখানেই তার সমান দাপট। তিনি আমাদের নতুন প্রজন্মের সকল ক্রিকেটারদের জন্য এমন এক মানদন্ড ঠিক করে দিয়েছেন, যেটি স্পর্শ করা হবে বড়ই কঠিন কাজ।

যাইহোক, আজ অবশ্য তার কীর্তির কথা লিখব না।

সম্প্রতি তিনি বেশ কঠিন এক শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন। অশোভন আচরণের দায়ে তাকে তিন ওয়ানডে ম্যাচ বরখাস্ত ও তিন লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এর আগে বার কয়েক অশোভন আচরণ করলেও এই প্রথমবার শাস্তি পেলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। আইনের কাউকে উর্ধে কেউ নয়।



খবরে প্রকাশ, শ্রীলঙ্কার চলমান বাংলাদেশ সফরে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে ২৪ রানে ক্যাচ আউট হয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরে মেজাজ হারান সাকিব। একাধিকবার তার বিশেষ অঙ্গে হাত রেখে অশোভন ভঙ্গি করেন, যা টিভির কল্যাণে ক্রিকেট বিশ্বে প্রচার হয়ে যায়। কোন সন্দেহ নেই এটা খুবই আশোভন কাজ। এটা করা কোনক্রমেই তার উচিত হয়নি। তিনি সুপারস্টার; তার আচরণও তেমনই হওয়া উচিত।

আশার কথা তিনি তার এহেন আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। মানুষ মাত্রই ভুল করে। তাই আমরা তাকে ক্ষমা করতেই পারি।

এবার চলুন একটু ভিন্ন আঙ্গিকে এই ব্যাপারটি দেখি। সাকিব একটা অশোভন কাজ করেছে।

এতে পুরো দেশের মানুষ তাকে কথার বাণ দিয়ে ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে। এখানে আমরা একটু কল্পনার আশ্রয় নিতে পারি। ধরে নেই সাকিব আগামী দশ বছর পরে বিসিবি-র একজন পরিচালক নিযুক্ত হলেন। এইসময় কোন এক শক্তিশালী মোড়ল আইসিসিতে একটা প্রস্তাব আনলো, “বাংলাদেশকে টেস্ট খেলা থেকে অব্যহতি দেয়া হবে”। বিসিবি-র ওইসময়কার প্রেসিডেন্ট তাকে একান্তে ডেকে নিয়ে বলল, “দেখ, ভোট কিন্তু পক্ষে দিতে হবে, নইলে তোমার ডাইরেক্টরশীপ নেই”।

সাকিব তখন রাজীও হয়ে যাবে। যেমন কয়েকদিন আগে তিনজন সাবেক ক্রিকেটার এমন প্রস্তাবে রাজী হয়েছিলেন। তখন এটা অবিশ্যি ততটা অশোভন মনে হবে না। আপনারা কি বলেন??

গত নির্বাচনের আগে ইসি প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করল। এতে দেখা গেল, কেউ কেউ তার আগের সম্পদের চেয়ে কয়েকশত গুণ; কেউবা হাজারগুণ অবধি সম্পদ বাড়িয়েছেন।

পরের দিন থেকে সকল পত্রিকায় একদম কুরুক্ষেত্র লেগে গেল। দুনিয়ার সব খবর বাদ দিয়ে পত্রিকাওয়ালারা পরে রইলেন এই নিয়ে। ইসি পড়ল মহাফাপরে। সরকারের এক ধমকে হলফনামা গায়েব হয়ে গেল। এরপরে খুব দ্রুতই আলোচনা শেষ হয়ে এলো।

কারণ, কার ধরে কয়টা মাথা!! যাইহোক, ওই সময় কোন ভীনদেশী যার কিনা সোনার বাংলা সম্মন্ধে জ্ঞান গরিমা তখন অবধি নিতান্তই শূন্য; সে পুলকিত হয়ে বলে উঠত, ‘আহ! গড! তুমি বড় ভাল দেশে আমাকে নিয়ে এসেছ’’। তবে কিছুদিন পরেই সে জেনে যাবে, ‘ইহা বড়ই খারাপ দেশ আছে’ । সে আরো জেনে যাবে এই দেশটা দুর্নীতির চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন । সত্যি, যে দেশে একহালি ডিম কিনতে দুর্নীতি হয় সেই দেশে দুর্নীতি নিয়ে এমন কোলাহলের কোন মানে আছে!!

আর যারা দয়া করে নানান চটকদার খবর পরিবেশন করে আমাদের ধন্য করছে সেইসব প্রিন্টেড বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলোর মালিকদের সম্মন্ধে কে না জানেন। তারা একেকজন সব সাধুসন্ত।

কেউ (চোরা)কারবারী, কেউ ভূমি(দস্যু), কেউ বিল(খেলাপী), কেউ মানুষ(খেকো) ইত্যাদি। তারা যখন তাদের প্রচারযন্ত্র দিয়ে সততা ফেরি করে তখন বড়ই হাসি পায়। ইহা খুবই আশোভন।

এখন এসএসসি পরীক্ষা চলছে। কচি কচি বাচ্চারা অনেক ভয়-ভীতি ও প্রচন্ড স্বপ্ন নিয়ে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসেছে।

তাদের ঘাড় মটকাতে কেউ যাচ্ছেন হেলিকপ্টার নিয়ে কেউবা পাজেরো জীপ নিয়ে। কেন্দ্রে গিয়েই তারা “একেবারে খাইয়ালামু” বলে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মনে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আশা একটাই ‘কোন তাফালিং মানে নকলবাজি চলবে না”। এটা খুব ভালই।

তবে আফসোস হয়, এই কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ বড় হয়ে আর ততটা কোমল থাকবে না।

তাদেরকে ‘রাফ’ বানানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। কিছুদিন পরে যখন ওরাই পিস্তল, রামদা, বটি দা দিয়ে আরেকজনকে পরপারে পাঠিয়ে দিবে, শিক্ষকদের দাবরানি দিবে তখন কিন্তু এটা অশোভন মনে হবে না। বরং রাতের আধারে কিছু নেতা তাদের পিঠ চাপরে বলবে, “বেটা বাঘের বাচ্চা”। পরে হাতে কিছু পয়সা গুঁজে দিয়ে বলবে, “একটু মৌজ-ফুর্তি করো”। ইহা বড়ই অশোভন।



কিছুদিন আগে একজন মন্ত্রি প্রকাশ্য জনসভায় সিগারেট হাতে ধরা পরে গেলেন সাংবাদিকের ক্যামেরায়। আর যায় কোথায়...। ১৬ কোটি মানুষ একেবারে হুমরি খেয়ে পড়ল তার উপর। সবার ভাবখানা এমন যে, সিগারেট আমাদের দেশের কেউ খায় না। আরে বেচারার কি দোষ।

তার ত মাঝে মাঝে বুদ্ধির গোড়ায় ধোয়া দেয়ার দরকার পরে। ওহ হো! প্রকাশ্যে কেন খাইল?? ইহা খুব আশোভন। আরে ব্যাটা তুই মদ-গাজা-ভাং-হেরোইন-হাসিস-তারি যাই খাস আড়ালে খা।

এবারে দৃশ্যপটে হাজির হুইপ ভাই। তিনি ঠাট্রাচ্ছলে নাহয় বলেই ফেলেছেন, ক্যাশ চাই, ক্যাশ দেন” তাই বলে তাকে নিয়ে এমন লঙ্কাকান্ড বাঁধাতে হবে? সাবাস বাঙ্গালী!! আরে তারা ক্যাশ যদি নাই নেয় তাহলে তিনহাজার বিঘা জমির মালিক হয় ক্যাম্নে??? কি বললেন? সিস্টেমে করতে হবে? গুল্লি মারি সিস্টেমের...।



আমাদের দেশের কিছু কিছু সরকারী সম্রাট-সম্রাজ্ঞীগণ (খবরদার কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলবেন না) যখন ১৫-৩০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে ৫ কোটি টাকার রাজপ্রাসাদে বসবাস করেন তাদের এহেন কাজকে কিন্তু অশোভন বলে মনে করা হয়না। তারা সমাজের সকল ক্ষেত্রে সম্মানজনক আসন পান; সবাই তাদের মান্যি করে; সালাম-কদমবুসি পায়। তারা বড় বড় বোতলপার্টি-র আয়জন করেন; তারচেয়েও বড়বড় দুর্নীতিবাজদের পদধূলি নিয়ে নতুন উদ্যমে চুরির দীক্ষা নেন। এসব কিন্তু সত্যি আশোভন মনে হয়না।

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, সব কিছু সিস্টেমে করতে হবে, আড়ালে-আবডালে, নিয়মের বেড়াজালে কার্যসিদ্ধি করতে হবে।

তাহলে কেউ কিছু বলবে না। কিছু বললেও কুছ পরোয়া নেহি। কাজেই সাকিব ভাই, দন্ড সামলে রাখেন। ওটা যার দেখার অধিকার আছে একমাত্র তার জন্যই ওটা রেখে দেন। নাহলে এমন দন্ড খেতে হবে।

দণ্ড রেখে হাতের ব্যাটের কারুকাজ দেখান।

আসলে সকল দোষ আমাদের মাটির। এই দেশটাকে সোনার বাংলা বলা হয়। আমাদের মাটি হলো সোনার মত দামী। এখানে ফসল ফলাতে তেমন বেগ পেতে হয়না।

কোন রকমভাবে জমি প্রস্তুত করে বীজ ছিটিয়ে দিলেই কেল্লা ফতে। দু’দিন পরে গিয়ে দেখা যাবে নতুন প্রাণের অস্তিত্ব। মূল ফসলের সাথে অনেক আগাছাও জন্মায়। কৃষক অভিজ্ঞ হাতে ওই সকল আগাছা উপরে ফেলে। জমিতে সোনা ফলে।



মাটির মত আমাদের মাথাও অনেক উর্বর। সবকিছু এখানে খুব তারাতারি গজিয়ে ডালপালা মেলে। এখানেও আগাছা বড্ড বেশী। কিন্তু আফসোস একটাই, “নিড়ানি দেওয়ার কেউ নেই”। ফলে এক পর্যায়ে আগাছারা বাহুল্যে আসল ফসল ঘরে তোলা হয় না।



আমার লেখার মাথামুন্ড হয়ত অনেকের বিরক্তির উদ্রেক করতে পারে। তাদের জন্য বলছি, যে দেশের মানুষ দুর্নীতি, অনিয়ম, অনাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে এমন সোচ্চার, যে দেশের মানুষ এত শোভন, এত সুন্দর মনমানসিকতার অধিকারী; সেই দেশ কিভাবে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়, সেই দেশ কিভাবে বসবাসের এত অযোগ্য হয়, সেই দেশ কিভাবে এত অরাজকতার দেশ হয়, সেই দেশের মানুষ কিভাবে এত দেশপ্রেমহীন হয়?????????????????

উত্তরগুলো আমার খুব দরকার।

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.