আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সীমান্ত ও কারাগারে রেড অ্যালার্ট তদন্ত কম

ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশকে গুলি করে প্রিজনভ্যান থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত জেএমবির তিন সদস্যকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দেশের ৬৮টি কারাগার এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ জঙ্গিরা যাতে দেশ ছেড়ে না যেতে পারে তাৎক্ষণিকভাবেই দেশের সবকটি স্থলবন্দর, বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দরে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান, সালাউদ্দীন সালেহিন, রাকিব হাসান ওরফে রাসেল ওরফে হাফেজ মাহমুদের ছবিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনার ছয় ঘণ্টার মধ্যেই টাঙ্গাইলের সখীপুর থেকে পুনরায় গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সঙ্গে ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি সদস্যদের ধরিয়ে দিতে সরকারের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ইফতেখারুল ইসলাম খান। এ ছাড়া পুলিশ সদর দফতর থেকে সিআইডির ডিআইজি (চলতি) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রিজনভ্যান থেকে পুলিশকে গুলি করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ সরকারের ঊধর্্বতন মহলে।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিরা যাতে পালাতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। তাদের ধরতে আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি। আশা করি শীঘ্রই সবাইকে আটক করা সম্ভব হবে। এ ধরনের আসামিদের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে আগামীতে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। এক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ভয়ঙ্কর কোনো অপরাধী জামিনে বের হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করার অলিখিত বিধান থাকলেও এক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ মাঝে-মধ্যেই এ আদেশ পালন করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে কারাগারের ওপর বিশেষ নজরদারি এবং একই সঙ্গে পুলিশ বাহিনীকে আরও তৎপর না হলে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আরও ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা। তারা আরও বলেন, তিনজন শীর্ষ জঙ্গিকে কারাগার থেকে আদালতে নেওয়ার জন্য নিরাপত্তার অংশ হিসেবে মাত্র তিনজন পুলিশ দেওয়ার বিষয়টিও বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। এর পেছনে আর কারা জড়িত রয়েছেন তাও বের করা দরকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের ঊধর্্বতন এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শীর্ষ জঙ্গি কিংবা শীর্ষ সন্ত্রাসীকে কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর কিংবা আদালতে নেওয়ার আগে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অবহিত করার কথা থাকলেও কারা কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে কোনো ধার ধারেন না। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, কারাগার থেকেই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন ভয়ঙ্কর অপরাধীরা। বাইরের থেকে অপেক্ষাকৃত কারাগারকেই নিরাপদ মনে করেন তারা। কারাগার থেকেই বিভিন্ন সময় নির্দেশনা দিয়ে জঙ্গিরা তাদের অনুসারীদের উজ্জীবিত করে রাখছেন। তবে মাঝে মাঝে আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় দেখা করছেন তাদের অনুসারীদের সঙ্গে। র্যাব সূত্র জানায়, সর্বশেষ হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজিবি) সামরিক শাখার প্রধান মুফতি আবদুর রউফের কথপোকথন ট্র্যাকিং করেই গত বছরের ৭ অক্টোবর রাজধানীর আশুলিয়া ও আবদুল্লাহপুর এলাকা থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ৩২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ১১৩৫ রাউন্ড এসএমজির গুলি, ২টি ৫০০ গ্রাম ওজনের উচ্চ বিস্ফোরক (চড়বিৎ বেষ ঊীঢ়ষ), ১১০ ফিট কর্ডেঙ্, ৫টি ডেটোনেটর, ১টি কাস্টিং মেশিন ও ৮টি ককটেল উদ্ধারসহ হুজির চার সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, কারাগারের দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যদের ম্যানেজ করে অপরাধীরা মুঠোফোন ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। গণমাধ্যমগুলোতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর কারাগারে নামমাত্র বিশেষ অভিযান চালানো হলেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্দ্যের কারণে অধিকাংশ সময়ই কোনো মুঠোফোন উদ্ধার হয়নি। ২০১১ সালের ৮ আগস্ট আদালতে হাজিরা শেষে কাশিমপুর-২ কেন্দ্রীয় কারাগারে যাওয়ার পথে প্রিজনভ্যান থেকেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হুজির শীর্ষ জঙ্গি মুফতি আবদুল হান্নান কথা বলেন তার অনুসারীদের সঙ্গে। পরদিন যেভাবে 'মুফতি হান্নানকে কারাগার থেকে আদালতে নেওয়া হয়!' শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গঠন হয় তদন্ত কমিটি। তবে কিছু দিন পর পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে যায় কারাগার থেকে আসামি আনা-নেওয়ার প্রক্রিয়া। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত এক দশকের বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫ শতাধিক জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এর মধ্যে ১০৯২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তবে গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের অধিকাংশই বিভিন্ন সময় জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে গেছে। জামিনে বের হওয়া জঙ্গিদের অনেকেই ছদ্মবেশে বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি তৎপরতায় সক্রিয় রয়েছেন। তবে এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ। তবে পলাতক জেএমবির (জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) বর্তমান আমির সোহেল মাহফুজ কিছু দিন পরপরই রাজশাহীর সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে তার পরিবারের সদস্য এবং জঙ্গিদের দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তথ্য রয়েছে। ২০১০ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নয় মিটার লম্বা ছয়টি মোবাইল জ্যামার বসানো হলেও দিনের বেশির ভাগ সময়ই এগুলো অকার্যকর করে রাখা হয়। একেকটি জ্যামারের ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় মুঠোফোনের ফ্রিকোয়েন্সিতে বাধা সৃষ্টি করার ক্ষমতা রয়েছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, কাশিমপুর কারাগারে একাধিক দুর্ধর্ষ অপরাধী আটক থাকার পরও ওই কারাগারে একটিও মোবাইল জ্যামারও লাগানো হয়নি। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, আল-কায়েদার হুমকির পর জঙ্গিদের এমন ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পলাতক জঙ্গিদের খুব শীঘ্রই গ্রেফতারের জন্য সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহাফুজুল হক নুরুজ্জামান জানান, ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি রাকিবকে গ্রেফতারের আগে গ্রেফতার করা হয় অভিযানে অংশ নেওয়া মাইক্রোবাসের চালক জাকারিয়া ওরফে মিলনকে। সে চার বছর আগে জেল থেকে জামিনে ছাড়া পায়। তার বিরুদ্ধে জেএমবি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ছিনতাই হওয়া জেএমবি সদস্যদের ধরিয়ে দিতে পারলে প্রত্যেকের জন্য ২ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ত্রিশালের ঘটনার পর ময়মনসিংহ ও আশপাশের সব জেলায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। এদিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন জানান, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে জেএমবির সাজাপ্রাপ্ত শতাধিক নেতা-কর্মী রয়েছেন। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারাগারের অভ্যন্তর ও আশপাশের এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

তদন্ত ও অনুসন্ধান কমিটি : আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পরপরই চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন_ ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম মাহাফুজুল হক নুরুজ্জামান, ডিআইজি প্রিজন (সদর দফতর) টিপু সুলতান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব খায়রুল কবির মেনন। এদিকে প্রিজনভ্যান থেকে পুলিশকে গুলি করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ সরকারের ঊধর্্বতন মহলে। এ ছাড়া পুলিশ সদর দফতর থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিআইডির ডিআইজি (চলতি) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন_ ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, সহকারী মহাপরিদর্শক (অপরাধ, পূর্ব) আবদুল আলীম মাহমুদ। আগামী তিন দিনের মধ্যে এই কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.