আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিনথিয়া ও শামস এর কাছে আসার গল্প



১সিনথিয়া

আমার চলা যায়না বলা
আলোর পানে প্রানের চলা।
আকাশ বুঝে আনন্দ তার
বুঝে নি সে নীরব থাকা।

ওগো নদী আপন বেগে পাগল পাড়া
আমি স্তব্দ চাপার তরু গন্ধ ভরে
তন্দ্রা হারা ওগো

গান গাইতে গাইতে একপর্যায়ে শকিং এর মত হয়ে একটা কলি মিস হয়ে গেল। সামনের সারিতে কে বসে আছে । শামস এতদিনপরে এখানে?
ও কি অন্য কার ও জন্য এসেছে নাকি আমার গান শুনতে এসেছে।

সিনথিয়া অন্যমনস্ক হয়ে যায় তার গানের মধ্যে। স্টেজের ব্যাকসাইডে দাড়িয়ে আছে তার গানের ওস্তাদ। সে চোখ মুখ পাকিয়ে ইশারা করে যাচ্ছে ব্যাপার কি?

স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে সে গানের তাল হারিয়ে ফেলেছে। সে এসেছে আজ বিশ্বভারতী রবীন্দ্রসংগীতের গানের প্রতিযোগিতায়। এই দিনটিকে নিয়ে সে কত জল্পনা কল্পনা য় ডুবেছিল।

আজ সেই দিন । সে ঠিকমত গান গাইতে পারছেনা।

অনেকদিন পরে শামসকে দেখল। সেই একই পাওয়ারফুল চশমায় ঢাকা চোখ । তার আড়ালে কৌতুক চাহনি।

দেখতে হুবহু একই আছে। অথচ পাচবছর তো কমসময় নয়। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার দিক থেকে ব্যাপারটা শুধু বন্ধুত্বের ছিলনা। বলা যায়।

শামস তার জীবনে প্রথম বা একমাত্র প্রেম তাও ব্যাপারটা একতরফা সিনথিয়ার দিক থেকে। শামস নিশ্চয় জানেনা সিনথিয়া কত আবেগ পোষন করত মনে মনে তার জন্য। করত কেন বলি এখন ও আমি একইভাবে ওকে পছন্দ করি । আজকে ওকে না দেখলে সেটা হয়তবা বুঝতে পারতামনা।

গান শেষ করে ড্রেসিং রুমে এসে বসে রইল খানিক উন্মনা হয়ে।

হারিয়ে গেল কয়েক বছর পিছনে চলে যাওয়া অতীতে।

শামস পড়ত কম্পিউটার সায়েন্সে আর সে ছিল পাবলিক অ্যডমিনিষ্ট্রশানে। প্রচন্ড তুখোড় মেধাবী ছাত্র। স্পোর্টস ডিবেটস সবজায়গায় ছিল তার একচ্ছত্র আধিপত্য। তার জন্ম যেন হয়েছে জেতার জন্য।

খুবই জনপ্রিয় একটা ছেলে ক্লাসের ভিতরে বাহিরে। ছেলে মেয়ে সবাই তার সঙ্গের জন্য উম্মুখ হয়ে থাকত। প্রচন্ড এক্সট্রোভার্ট। প্রানখোলা হইচই আনন্দে সবাইকে নিয়ে মেতে থাকত। গাড়ী চালিয়ে আসত ক্লাসে।

বাবার প্রচুর টাকা। খরচ করত দুইহাতে।

২ শামস

অনেকটা আচমকাই বিশ্বভারতীর প্রোগ্রামে বন্ধুদের সঙ্গে চলে আসা দেখতে। প্রথম গায়িকাকে দেখে সে নড়েচড়ে বসল।
আরে এ যে সিনথিয়া।

আমি তো জানতাম ও শুধু ড্রামা করে আশ্চর্য হয়ে সে ভাবে । এ দেখি চমৎকার গান ও গায়। মুগ্ধ হয়ে যায় গান শুনতে শুনতে।
মেয়েটা আশ্চর্য তো এতবড় প্রোগ্রাম। অথচ সাদামাটাভাবে আসছে।

কোন সাজগোজ নেই। অবশ্য এইজন্য শামসের অনেক পছন্দ তাকে। বেশ ভাবুক ভারিক্কী মেয়ে। সম্ভবত অনেক লাজুক। ছেলেদের সঙ্গে একেবারে মিশেনা।

তার গাড়ীতে পাশে বসে যে চেহারা করেছিল এটা মনে করে শামস মনে মনে হেসে ফেলল এতদিন পরে আবার।

সবসময় সাদা কটনের ড্রেস পরত। চুলে টাইট বিনুনী। মাথা নীচু করে হাটত। সবসময় দেখা যেত একা একা ক্যান্টিন এ বসে থাকত ।

সেই সিনথিয়া তো আজকে কান্ড করে ফেলল। এতসুন্দর গান গেয়ে ফেলল সব বড় বড় বাঘা বাঘা শিল্পীদের সামনে।

একবৃষ্টির দিনে মনোরম বিকালে অনেকটা সিনেমা উপন্যাসের পটভূমির মত দুইজনের প্রথম দেখা হল । সিনথিয়া দাড়িয়ে আছে রিকশার জন্য। তুমুল বৃষ্টি কোন রিকশা পাচ্ছিলনা।

ক্লাস শেষে সে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে।

আচমকা তার গাড়ী এসে পাশে ব্রেক কষে দাড়াল।

জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বলল ইশ আপনি তো একেবারে ভিজে গিয়েছেন। গাড়ীর ভিতরে এসে বসুন না হয় কিছুক্ষন।

সিনথিয়া বিব্রত হয়ে পড়ল অপ্রত্যাশিত আহবানে।

যদিও সে তার মেয়েলী অনুভূতিতে বুঝল ছেলেটি ফালতু বা বাজে উদ্দেশ্যে এখানে দাড়ায়নি। সে এক বিপদগ্রস্ত মেয়েকে সাহায্য করতে দাড়িয়েছে।

সিনথিয়ার বিব্রত অবস্থা বুঝে সে নিজে গাড়ীর দরজা খুলে আহবান করল।

উঠুন উঠুন চিন্তা করার কিছু নাই। আমরা দুইজন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি।



অবশেষে জড়তা কাটিয়ে সে গাড়ীতে উঠে বসল। প্রথমে সে পিছনের সিটে বসতে গেলে শামস হেসে ফেলল। তারপর চশমা খুলে পূর্নদৃষ্টিতে দেখল সিনথিয়াকে। এমন এক দৃষ্টি সিনথিয়া নিজের অজান্তে কেপে উঠল। তারজন্য খুবই বোকা বোকা হাস্যকর ব্যাপার হয়ে গেল।

সে ওইমুহূর্তে তেমন কিছু ছেলেটার সম্পর্কে না জেনে বলাবাহুল্য প্রেমে পড়ে গেল।

সবাই আমাকে ট্যাক্সি ড্রাইভার মনে করবে তো যদি আপনি পিছনে বসেন। বলল হেসে।

তারপর ও বলল আমি আপনাকে চিনি আপনার শ্যামা নাটকটা দেখেছি। অপূর্ব অভিনয়।

বলতে পারেন আমি আপনার ফ্যান হয়ে গেছি। তাই চাইনা আপনার কোন ক্ষতি হোক। নিরাপদে আপনাকে বাসায় পৌছে দিতে চাই।

সিনথিয়া অবাক হয়ে তাকাল। তার এই ছোট্র ড্রামা সে দেখেছে মনে রেখেছে এতে সে অত্যন্ত কৃতজ্ঞবোধ করল।



গাড়ীতে আসতে আসতে দুইজনের ফ্যামিলী নিয়ে কথা হল।

তাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চলে গেল সে। সিনথিয়া চা খাওয়ার জন্য বললে বসতে রাজী হয়নি। অবশ্য রাজী হলে সিনথিয়া বেশ প্রবলেমে পড়ত। তার বাসার পরিবেশ তেমন উদার না।

কোন ছেলে নিয়ে বাসায় ঢুকলে বাবা মা নেগেটিভ চোখে দেখবে। মনে মনে সে শ্বস্তির নিশ্বাস ফেলল শামস থাকতে না চাওয়াতে।

ঘর এসে আয়নায় চোখ পড়তে মন খারাপ হয়ে গেল। সে দেখতে একেবারে সাদামাটা চেহারার। গায়ের রং কালোই বলা যায়।

তারপরে কোন কোন কালমেয়েকে চোখমুখ সুন্দরের কারনে অনেক কিউট লাগে। তার চোখমুখ অনেক সাধারন।

ইশ আমি যদি একটু সুন্দর হতাম মন খারাপ করে সে ভাবে। ব্যাক্তিত্বের দিক থেকে সে একটু জবুথবু ষ্টাইলের। স্মা্ট না।

কিছুটা নিভৃতচারিনী ধরনের। একা একা থাকতে ভালবাসে। ভীড় হই হুল্লোড় তার একেবারে পছন্দ না।

সারাটা রাত এপাশ ওপাশ করে নির্ঘুম রাত পার করল। পরের দিন ড্রয়ার খুলে তার সবচেয়ে ভাল ড্রেসটা বের করল।

আকাশ নীলের উপর সিলভার কালার সুতার কাজ করা যেই ড্রেসটায় সবাই তাকে বলে মানায়। ক্লাসে আসার পর তার চোখ গোপনে খুজতে লাগল শামসকে । কোথাও তাকে পাওয়া গেলনা না ক্যান্টিনে না করিডোরে। সিনথিয়ার বেশ মন খারাপ হয়ে গেল।

ক্লাস শেষ করে রিকশায় উঠতে যাবে বাসার উদ্দেশ্যে তখন দেখা গেল শামসকে আর কিছু ছেলেমেয়ের সাথে হুল্লোড় করতে করতে তার পাশ কাটিয়ে চলে গেল।

তাকে দেখল বলে ও মনে হলনা।

ভগ্ন মন নিয়ে সিনথিয়া রিকশায় উঠে বসল।

৩ ড্রেসিং রুমের দরজায় মনে হচ্ছে কেও নক করছে। উঠে দরজা খুলতে দেখল সিনথিয়া

আশেপাশে সারা প্রকৃতি যেন হাসির আলোয় ঝলমল করছে। শামস দাড়িয়ে হাসছে।



উফ কতদিন পরে তোমাকে দেখলাম। কথা বলছে বেশ আন্তরিকভাবে। তার মনে নাই সে সিনথিয়াকে কখনও ই তুমি করে বলতনা। আপনি করে বলত। আসলে তারা মাত্র হাতে গোনা তিনচারদিন কথা বলেছে।



সিনথিয়ার ভিতরটা আবেগে ভেসে যাচ্ছে যদিও আচমকা এভাবে দেখা হওয়ায়। সে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। বুঝতে পারছেনা কিভাবে শামসের সাথে কথা বলা যায়।

বাসার দিকে যেতে যেতে দুজনের আরও কিছু কথা হল। জানা হল শামসের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে একজায়গায়।



মেয়ে দেখতে কেমন ?সিনথিয়া জিজ্ঞাসা করল মৃদু গলায়।

জানিনা মেয়ে দেখিনি তো। একেবারে বিয়ের রাতে দেখব জানব বলল হেসে।

অবাক হয়ে সিনথিয়া তাকিয়ে থাকে।

শামস এর সবকিছু অদ্ভুত।

কিন্তু এত অদ্ভুত সেটা ভাবেনি।

এখন মনে হচ্ছে তোমাকে বিয়ে করতে পারলে ভাল হত। এই তোমার আজকের গান শুনে সিন্সিয়ারলী তোমার প্রেমে পড়ে গেছি। বলল সে মজার ভঙ্গিতে।

সিনথিয়ার ও বিয়ে ঠিক হয়ে আছে বাবার পরিচিত একজনের বন্ধুর ছেলের সাথে।

সেটা সে আর বলেনি শামসকে। সে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে অনেকটা ভাই এর বাসা সে ছেড়ে দিতে চায়। প্রতিমুহূর্তে ভাই ভাবীর কড়া নজরদারীতে থাকতে থাকতে বেশ হাপিয়ে উঠেছে। বিয়ের ব্যাপারে তার কোন পছন্দ নাই আবেগ নাই রোমাঞ্চ নাই। ছেলের কিছু ই না জেনে সে বিয়েতে রাজী হয়েছে।



যথাক্রমে সিনথিয়ার বিয়ের দিন চলে আসল। সে চিন্তা করল শামসকে আমি মৌখিক দাওয়াত দিয়ে দেই।

দাওয়াত দেওয়ামাত্র বলল স্বভাবসূলভ মজার ভঙ্গিতে আমি তো আসতে পারবনা আমার বিয়ে।

সিনথিয়া আর জোর করলনা। বিয়ের পর না হয় একদিন বাসায় আনিয়ে খাইয়ে দিবে ভাবছে।



আজকের সিনথিয়ার বাসর রাত অজানা একছেলের সাথে। দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করছে সে তার স্বামীর।

শামস মাথার পাগড়ী খুলে ঢুকল রুমে তার বাসর ঘরে। খাটে এসে বসল নুতুন বউয়ের।

দুইজনে একসঙ্গে লাফ দিয়ে উঠল চমকে।

আনন্দে দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। আশ্চর্য হয়ে ভাবে আমরা তো নিজেদের ইচ্ছা পছন্দের কথা তো কাওকে বলিনি।

কিভাবে সবাই টের পেল বলতো আমি মনে মনে তোমকে অনেক চাচ্ছিলাম আবেগঘন গলায় বলে শামস সিনথিয়াকে। মাত্র ই তারা জানল দুজন দুজনকে বিয়ে করেছে নিজেদের পছন্দে এবং নিজেদের ই অজান্তে।

সবাই না আামাদের আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা তো জেনেছেন তোমার আমার কথা তাই না? এই প্রথমবারের মত সিনথিয়া জড়তাবিহীনভাবে তার ভালবাসার কথা স্বীকার করল শামসের কাছে।



দুজনে দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকল গভীর ভালবাসায় পরম নির্ভরতায়।

(সমাপ্ত)।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.