আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Invictus (2009) ইনভিকটাস – সাদা আর কালোর ঐক্যের কাহিনী

আমি একদিন মারা যাবো, এই সত্য মেনে নিতে আমার কোন আক্ষেপ নেই!আক্ষেপ শুধু একটি বিষয়তেই, আমি মারা যাওয়ার পর অনেক অসাধারণ চলচ্চিত্র,বই,গান এর সৃষ্টি হবে- যার স্বাদ আমি নিতে পারব না...



গত বছরের ৫ ডিসেম্বর বিশ্বের তাবৎ ভক্ত অনুরাগীদের কাঁদিয়ে চিরদিনের মত না ফেরার দেশে চলে গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। শুধু নিজ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় নয়, সারা পৃথিবীতে তার খ্যাতি ও সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল তার অসাধারণ মহানুভবতার জন্য। তিনি মহানুভবতার যেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, পৃথিবীতে তার নিদর্শন খুবই বিরল, এজন্যই তিনি সম্মান ও ভালোবাসাও পেয়েছেন অকাতরে। তবে এই সম্মান ও ভালোবাসা একদিনে আসেনি, এসেছি অনেক বছরের ত্যাগ, নির্যাতন, কষ্ট সহ্য করার এবং এত কিছু সহ্য করার পর শত্রুকে ক্ষমা করে দেয়ার বিনিময়ে।

নেলসন ম্যান্ডেলার সংগ্রামী জীবন নিয়ে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ডকুমেন্টরি ও হাতেগোনা কয়েকটি ছবি তৈরি হলেও তার জীবনের নির্দিষ্ট একটি ঘটনা নিয়ে উল্লেখযোগ্য একটি সিনেমা হল ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, “ডলারস ট্রিলজি” ও “মিলিয়ন ডলার বেবি” খ্যাত ওয়েস্টার্ন হিরো ক্লিন্ট ইস্টউড এর পরিচালনায় ও মরগান ফ্রিমেন ও ম্যাট ডেমন এর অভিনীত “ইনভিকটাস”।



সময়টা তখন ১৯৯৪ সাল। দীর্ঘ ২৭ বছর কারাবাসের পর অবশেষে নেলসন ম্যান্ডেলা মুক্তি পেয়েছেন। কালোদের কাছে তিনি তখন দেবতাতুল্য, আর অনেক সাদাদের কাছে “সন্ত্রাসী”, জেল থেকে এসেই তিনি আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দায়িত্ব পালন শুরু করেন। সময়টা তখন মোটেই ভালো ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। “সাদা চামড়া” আর “কালো চামড়া” নিয়ে জাতি আগে থেকেই দুইভাগে বিভক্ত, চামড়ার রংই তাদের জীবনের মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে! এই সমস্যা অবশ্য নতুন নয়, ঔপনিবেশিক আফ্রিকা সৃষ্টির পর থেকেই এই সমস্যা বিদ্যমান।

এই সমস্যা একটি সফল জাতি গঠনে শুধু মাত্র একটি বাধা-ই নয়, বরং একটি বিরাট হুমকিও বলা চলে। সন্তাসবাদকে কারণ হিসেবে দেখানো হলেও মূলত কালো আর সাদাদের বিরোধের কারণেই যেই নেলসন ম্যান্ডেলাকে ২৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছিল- এটা বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেলসন ম্যান্ডেলা এই জিনিসটি বেশ ভালভাবে বুঝতে পেরেছিলেন । তাই জেল থেকে বেড়িয়ে তিনি নতুন জাতি গঠনের যেই প্রক্রিয়া শুরু করেন তার নাম দেন রিকনসিলিয়েশন বা পুনর্মিলন আর যেই জাতি গঠনের তিনি স্বপ্ন আজীবন দেখে এসেছেন তার নাম দেন “রেইনবো নেশন”, সিনেমাতে আমরা দেখতে পাই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি নিজের দেহরক্ষী হিসেবে কালোদের পাশাপাশি সাদা চামড়ার মানুষদের নিয়োগ দেন যা একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা, অন্তত তার “কালো” নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে তো বটেই! কিন্তু তিনি কারো কথায় ভ্রূক্ষেপ না করে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, নিজের স্বপ্নের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ছিল বলেই হয়ত।

নেলসন ম্যান্ডেলা এর ক্ষমতা গ্রহনের আগে সবকিছুতে ক্ষমতার শীর্ষে ছিল সাদারা।

কিন্তু নেলসন ভোটে জয়লাভ করার পর থেকেই পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে থাকে এবং কালোরা তাঁদের ন্যায্য অধিকার অর্জন করতে শুরু করে। কালোরা ভিতরে ভিতরে এতদিনের অত্যাচারের কারণে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। কিন্তু নেলসন এর বিপক্ষে ছিলেন। একটি রাগবি টুর্নামেন্টকে নিয়ে এই বিভক্তি স্পষ্ট ও উগ্র হয়ে উঠতে থাকে। তিনি “Springboks”-কেআফ্রিকার জাতীয় রাগবি দল হিসেবে সমর্থন দিলেন এবং দলটিকে পুনর্গঠন করে কিভাবে আসন্ন রাগবি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন বানানো যায় তার প্রতি জোর দিলেন।

Springboks মূলত ছিল সাদাদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি দল যেটি কালোদের পক্ষ থেকে বাতিলের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু নেলসন ম্যান্ডেলা তা করেননি। তিনি বরং এই রাগবি দলকে কিভাবে বিশ্বকাপ জিতানো যায় তার জন্য দলের ক্যাপ্টেন Francois Pienaar (ম্যাট ড্যামন) সহ সকল খেলোয়ারদের পুরোদমে অনুপ্রেরনা যুগিয়ে যান। দলের ক্যাপ্টেনের কাছে তিনি নিজে জেলে থাকার সময় কীভাবে অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন সেটি বলেন। রাগবি দলের প্রত্যেক সদস্যের নাম মুখস্ত করে ও মনে রেখে তাঁদের সবাইকে এক এক করে অনুপ্রেরণা দেয়া একজন প্রেসিডেন্ট এর পক্ষে অবিশ্বাস্য কাজ! অথচ এই কাজটিকে অতি সহজে করেছেন নেলসন ম্যান্ডেলা।

কিন্তু টুর্নামেন্টে সাউথ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে আছে আছে মহাপরাক্রমশালি “ব্ল্যাক ক্যাপস” , যেটি নিউজিল্যান্ড এর একটি রাগবির দল। শক্তির বিচারে সাউথ আফ্রিকা কি পারবে বড় দলের সাথে পাল্লা দিতে ও তাদের হারাতে? একটি খেলার মাধ্যমে শুধুমাত্র “চামড়ার রঙের” কারণে বিভক্ত হয়ে যাওয়া একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট মানুষকে একবিন্দুতে একত্র করে একটি শক্তিশালী জাতি গঠনের যেই স্বপ্ন ম্যান্ডেলা দেখে এসেছেন, তা কি পূরণ হবে শেষ পর্যন্ত?



ক্লিন্ট ইস্টউড এর দুর্দান্ত পরিচালনায় সিনেমাতে ম্যান্ডেলার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন মরগান ফ্রিমেন। ম্যান্ডেলা যখন এই ছবির কাহিনী শুনেন, তখন তিনি বলেন- আমার চরিত্রটি শুধু একজনের সাথেই যায়, তিনি হলেন ফ্রিমেন। ফ্রিমেনও তার কথার অমর্যাদা করেননি। ম্যান্ডেলার হাঁটা চলা, কথাবার্তা, হাসিকে তিনি এমনভাবে অনুকরণ করেন, ম্যান্ডেলার পার্সোনাল সেক্রেটারি পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে ফ্রিমেনকে ম্যান্ডেলার মত হাঁটতে তার সামনে নিষেধ করেন, কারণ তিনি দুইজনের মাঝে কোন রকমের পার্থক্য করতে পারছিলেন না! শুধু তাই নয়, বাম হাতি ফ্রিমেন শুধু এই চরিত্রটি করতে গিয়ে ডানহাতে সব কিছু করতে অভ্যস্ত করেন নিজেকে কারণ ম্যান্ডেলা নিজে ডানহাতি ছিলেন।

ম্যাট ডেমন ও তার চরিত্রের জন্য কম খাটাখাটনি করেননি। দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য ঐ বছরের অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে মর্গান ফ্রিম্যান বেস্ট অ্যাকটর এবং ম্যাট ডেমন বেস্ট সাপোর্টিং অ্যাকটরের মনোনয়ন পান। এছাড়া সেরা বিদেশী ছবি হিসেবে ফ্রান্সের জাতীয় চলচিত্র পুরষ্কার জিতে নেয় ইনভিকটাস। গোল্ডেন গ্লোবেও তিনটি ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার মেলে।


ইনভিকটাস – সাদা আর কালোর ঐক্যের কাহিনী
Jan 31, 2014 Syed Nazmus Sakib সিনেমা 0

ইনভিকটাস – সাদা আর কালোর ঐক্যের কাহিনী
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর বিশ্বের তাবৎ ভক্ত অনুরাগীদের কাঁদিয়ে চিরদিনের মত না ফেরার দেশে চলে গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা।

শুধু নিজ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় নয়, সারা পৃথিবীতে তার খ্যাতি ও সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল তার অসাধারণ মহানুভবতার জন্য। তিনি মহানুভবতার যেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, পৃথিবীতে তার নিদর্শন খুবই বিরল, এজন্যই তিনি সম্মান ও ভালোবাসাও পেয়েছেন অকাতরে। তবে এই সম্মান ও ভালোবাসা একদিনে আসেনি, এসেছি অনেক বছরের ত্যাগ, নির্যাতন, কষ্ট সহ্য করার এবং এত কিছু সহ্য করার পর শত্রুকে ক্ষমা করে দেয়ার বিনিময়ে।

নেলসন ম্যান্ডেলার সংগ্রামী জীবন নিয়ে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ডকুমেন্টরি ও হাতেগোনা কয়েকটি ছবি তৈরি হলেও তার জীবনের নির্দিষ্ট একটি ঘটনা নিয়ে উল্লেখযোগ্য একটি সিনেমা হল ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, “ডলারস ট্রিলজি” ও “মিলিয়ন ডলার বেবি” খ্যাত ওয়েস্টার্ন হিরো ক্লিন্ট ইস্টউড এর পরিচালনায় ও মরগান ফ্রিমেন ও ম্যাট ডেমন এর অভিনীত “ইনভিকটাস”।


সময়টা তখন ১৯৯৪ সাল।

দীর্ঘ ২৭ বছর কারাবাসের পর অবশেষে নেলসন ম্যান্ডেলা মুক্তি পেয়েছেন। কালোদের কাছে তিনি তখন দেবতাতুল্য, আর অনেক সাদাদের কাছে “সন্ত্রাসী”, জেল থেকে এসেই তিনি আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দায়িত্ব পালন শুরু করেন। সময়টা তখন মোটেই ভালো ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। “সাদা চামড়া” আর “কালো চামড়া” নিয়ে জাতি আগে থেকেই দুইভাগে বিভক্ত, চামড়ার রংই তাদের জীবনের মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে! এই সমস্যা অবশ্য নতুন নয়, ঔপনিবেশিক আফ্রিকা সৃষ্টির পর থেকেই এই সমস্যা বিদ্যমান। এই সমস্যা একটি সফল জাতি গঠনে শুধু মাত্র একটি বাধা-ই নয়, বরং একটি বিরাট হুমকিও বলা চলে।

সন্তাসবাদকে কারণ হিসেবে দেখানো হলেও মূলত কালো আর সাদাদের বিরোধের কারণেই যেই নেলসন ম্যান্ডেলাকে ২৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছিল- এটা বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেলসন ম্যান্ডেলা এই জিনিসটি বেশ ভালভাবে বুঝতে পেরেছিলেন । তাই জেল থেকে বেড়িয়ে তিনি নতুন জাতি গঠনের যেই প্রক্রিয়া শুরু করেন তার নাম দেন রিকনসিলিয়েশন বা পুনর্মিলন আর যেই জাতি গঠনের তিনি স্বপ্ন আজীবন দেখে এসেছেন তার নাম দেন “রেইনবো নেশন”, সিনেমাতে আমরা দেখতে পাই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি নিজের দেহরক্ষী হিসেবে কালোদের পাশাপাশি সাদা চামড়ার মানুষদের নিয়োগ দেন যা একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা, অন্তত তার “কালো” নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে তো বটেই! কিন্তু তিনি কারো কথায় ভ্রূক্ষেপ না করে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, নিজের স্বপ্নের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ছিল বলেই হয়ত।

ম্যান্ডেলা মর্গান ফ্রিম্যাননেলসন ম্যান্ডেলা এর ক্ষমতা গ্রহনের আগে সবকিছুতে ক্ষমতার শীর্ষে ছিল সাদারা। কিন্তু নেলসন ভোটে জয়লাভ করার পর থেকেই পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে থাকে এবং কালোরা তাঁদের ন্যায্য অধিকার অর্জন করতে শুরু করে।

কালোরা ভিতরে ভিতরে এতদিনের অত্যাচারের কারণে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। কিন্তু নেলসন এর বিপক্ষে ছিলেন। একটি রাগবি টুর্নামেন্টকে নিয়ে এই বিভক্তি স্পষ্ট ও উগ্র হয়ে উঠতে থাকে। তিনি “Springboks”-কেআফ্রিকার জাতীয় রাগবি দল হিসেবে সমর্থন দিলেন এবং দলটিকে পুনর্গঠন করে কিভাবে আসন্ন রাগবি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন বানানো যায় তার প্রতি জোর দিলেন। Springboks মূলত ছিল সাদাদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি দল যেটি কালোদের পক্ষ থেকে বাতিলের প্রস্তাব করা হয়।

কিন্তু নেলসন ম্যান্ডেলা তা করেননি। তিনি বরং এই রাগবি দলকে কিভাবে বিশ্বকাপ জিতানো যায় তার জন্য দলের ক্যাপ্টেন Francois Pienaar (ম্যাট ড্যামন) সহ সকল খেলোয়ারদের পুরোদমে অনুপ্রেরনা যুগিয়ে যান। দলের ক্যাপ্টেনের কাছে তিনি নিজে জেলে থাকার সময় কীভাবে অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন সেটি বলেন। রাগবি দলের প্রত্যেক সদস্যের নাম মুখস্ত করে ও মনে রেখে তাঁদের সবাইকে এক এক করে অনুপ্রেরণা দেয়া একজন প্রেসিডেন্ট এর পক্ষে অবিশ্বাস্য কাজ! অথচ এই কাজটিকে অতি সহজে করেছেন নেলসন ম্যান্ডেলা। কিন্তু টুর্নামেন্টে সাউথ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে আছে আছে মহাপরাক্রমশালি “ব্ল্যাক ক্যাপস” , যেটি নিউজিল্যান্ড এর একটি রাগবির দল।

শক্তির বিচারে সাউথ আফ্রিকা কি পারবে বড় দলের সাথে পাল্লা দিতে ও তাদের হারাতে? একটি খেলার মাধ্যমে শুধুমাত্র “চামড়ার রঙের” কারণে বিভক্ত হয়ে যাওয়া একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট মানুষকে একবিন্দুতে একত্র করে একটি শক্তিশালী জাতি গঠনের যেই স্বপ্ন ম্যান্ডেলা দেখে এসেছেন, তা কি পূরণ হবে শেষ পর্যন্ত?

ইনভিকটাস নেলসন ম্যান্ডেলা মর্গান ফ্রিম্যান সম্পূর্ণ রঙিণ
একই ফ্রেমে ম্যান্ডেলা ও ফ্রিম্যান

ক্লিন্ট ইস্টউড এর দুর্দান্ত পরিচালনায় সিনেমাতে ম্যান্ডেলার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন মরগান ফ্রিমেন। ম্যান্ডেলা যখন এই ছবির কাহিনী শুনেন, তখন তিনি বলেন- আমার চরিত্রটি শুধু একজনের সাথেই যায়, তিনি হলেন ফ্রিমেন। ফ্রিমেনও তার কথার অমর্যাদা করেননি। ম্যান্ডেলার হাঁটা চলা, কথাবার্তা, হাসিকে তিনি এমনভাবে অনুকরণ করেন, ম্যান্ডেলার পার্সোনাল সেক্রেটারি পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে ফ্রিমেনকে ম্যান্ডেলার মত হাঁটতে তার সামনে নিষেধ করেন, কারণ তিনি দুইজনের মাঝে কোন রকমের পার্থক্য করতে পারছিলেন না! শুধু তাই নয়, বাম হাতি ফ্রিমেন শুধু এই চরিত্রটি করতে গিয়ে ডানহাতে সব কিছু করতে অভ্যস্ত করেন নিজেকে কারণ ম্যান্ডেলা নিজে ডানহাতি ছিলেন। ম্যাট ডেমন ও তার চরিত্রের জন্য কম খাটাখাটনি করেননি।

দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য ঐ বছরের অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে মর্গান ফ্রিম্যান বেস্ট অ্যাকটর এবং ম্যাট ডেমন বেস্ট সাপোর্টিং অ্যাকটরের মনোনয়ন পান। এছাড়া সেরা বিদেশী ছবি হিসেবে ফ্রান্সের জাতীয় চলচিত্র পুরষ্কার জিতে নেয় ইনভিকটাস। গোল্ডেন গ্লোবেও তিনটি ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার মেলে।


রোবেন দ্বীপের ছোট্ট একটা ঘরে ( সিনেমাতে আসল ঘরটাকেই দেখানো হয় যেখানে ম্যান্ডেলা ছিলেন) দীর্ঘ ২৭ বছর কাটানোর পরেও একজন মানুষ কীভাবে সেই সকল মানুষকে ক্ষমা করে দিতে পারেন যারা তার এই কারাভোগের কারণই শুধু ছিল না, বরং নিজের মায়ের মৃত্যুর পর যারা তার মায়ের শেষ দর্শনও করতে দেয় নি- এজন্যই হয়ত তিনি ম্যান্ডেলা , এজন্যই হয়ত তিনি ইনভিকটাস( Invictus), ল্যাটিন যেই শব্দের বাংলা অর্থ “অপরাজেয়”।

Invictus কবি উইলিয়াম আরনেস্ট হেনলির লেখা একটি কবিতা, কারাভোগের সময় এই কবিতা পড়েই নাকি ম্যান্ডেলা অনুপ্রেরণা লাভ করতেন।

কবিতাটি নিচে দেয়া হল-

Out of the night that covers me,

Black as the pit from pole to pole,

I thank whatever gods may be

For my unconquerable soul.



In the fell clutch of circumstance

I have not winced nor cried aloud.

Under the bludgeonings of chance

My head is bloody, but unbowed.



Beyond this place of wrath and tears

Looms but the Horror of the shade,

And yet the menace of the years

Finds and shall find me unafraid.



It matters not how strait the gate,

How charged with punishment the scroll,

I am the master of my fate:

I am the captain of my soul.
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।