আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্যান্সারের ১৫ টি পূর্বলক্ষণ, যা মহিলারা উপেক্ষা করেন।

Electronic Medical Index of Bangladesh

ইএমআই-বিডি ডেস্ক

ক্যান্সার একটি মারাত্নক রোগ এবং এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। তবে আশার কথা হলো, প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা গেলে এ রোগে অকাল মৃত্যুর হার অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্ত করার ক্ষেত্রে জন সচেতনতা এবং এই রোগের পূর্বলক্ষণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

আজকে আমরা মহিলাদের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের কিছু পূর্বলক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করব। মজার বিষয় হলো মহিলারা এইসব পূর্বলক্ষণসমুহকে অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষা করেন যা প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্তকরনে একটি বড় অন্তরায় এবং এই রোগে মৃত্যুর বড় কারন।



আসুন জেনে নিই মহিলাদের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের ১৫ টি পূর্বলক্ষণ-

১) বিনা কারনে ওজন কমে যাওয়া
ফিগার সচেতন মহিলারা নিজের ওজন কমানোর জন্য অনেক শ্রম দেন, কিন্তু আপনার ওজন যদি অজানা কারনে আপনা থেকেই কমতে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই আপনার খুশি হবার কথা। কিন্তু মনে রাখবেন এটি কোন শুভ লক্ষণ নয়। কোন প্রকার চেষ্টা যেমন ব্যায়াম বা ডায়েট-কন্ট্রোল ছাড়াই যদি মাসে আপনি ৪.৫ কেজি বা তার অধিক ওজন হারান তাহলে সময় নষ্ট না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওন।

তবে ভয় পাবেন না, অকারনে ওজন কমা মানেই ক্যান্সার নয়, থাইরয়েড এর মাত্রাতিরিক্ত ক্রিয়ার ফলেও এটি হতে পারে। তবে নিশ্চিত হবার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী।



২) পেট ফাঁপা
পাকস্থলি ও অন্ত্রে অতিরিক্ত গ্যাস জমার কারনে পেট এবং তলপেট ফুলে থাকা কিংবা পেট-ভরা অনুভব করলে তাকে আমরা পেট ফাঁপা বলি। এটি এতটাই পরিচিত সমস্যা যে অনেক মহিলা এটিকে একেবারেই গুরুত্ব দেন না এবং দিনের পর দিন এই সমস্যা নিয়েই বসবাস করেন। কিন্তু এটি ডিম্বাশয় বা ওভারি ক্যান্সারের একটি লক্ষণ। এই ক্যান্সারের আরও লক্ষণের মাঝে রয়েছে তলপেটে ও তার আশেপাশে ব্যথা, অল্প খাবার গ্রহনেই পেট ভরে যাওয়া, প্রস্রাবে সমস্যা যেমন খুব বেশিক্ষণ প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা।

আপনি যদি নিয়মিত পেটফাঁপা জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন এবং তা যদি এক সপ্তাহের অধিক সময়েও ভাল না হয় তবে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওন।



৩) স্তনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন
স্তনে কোন ধরনের চাকা, স্তনের চামড়ায় কোন স্থানে অস্বাভাবিক স্থূলতা কিংবা লালচে ভাব ইত্তাদি স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ। স্তনে কোন ধরনের ফুসকুড়ি বা রেষ (rash) যদি ১ সপ্তাহের অধিক সময়ে সেরে না ওঠে তবে তা পরীক্ষা করে নেয়া প্রয়োজন।

স্তন বৃন্ত বা নিপল থেকে মাতৃ-দুগ্ধ ব্যাতিত অন্য কোন তরল পদার্থ নিঃসরণ, স্তন বৃন্ত দেবে যাওয়া বা এর চারপাশের রঙ এর পরিবর্তন ইত্তাদি উপসর্গ দেখা দিলে কোন প্রকার বিলম্ব না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওন।

৪) ঋতুস্রাব পূর্ব বা পরবর্তী সময়ে রক্তক্ষরণ এবং যেকোনো অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ
গর্ভধারণক্ষম মহিলারা ঋতুস্রাব বহির্ভূত রক্তক্ষরণকে গুরুত্ব দেন না, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পায়ুপথে রক্তক্ষরণকেও তারা ঋতুস্রাব হিসেবে ভাবেন। ঋতুস্রাব পূর্ব বা পরবর্তী সময়ে রক্তক্ষরণ যদি নিয়মিত হয় তবে এটি জরায়ু-অভ্যন্তরের ক্যান্সার বা এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার এর লক্ষণ, এবং পায়ুপথে রক্তক্ষরণ ক্ষুদ্রান্ত্র বা বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের লক্ষণ।



৫) চামড়ায় পরিবর্তন
আমাদের শরীরে তিল বা আঁচিলে কোন ধরনের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হলে, চামড়া থেকে রক্তক্ষরণ হলে কিংবা চামড়ায় অতিরিক্ত খুস্কি দেখা দিলে তা পরীক্ষা করে নেয়া ভাল। যদিও বাংলাদেশে চামড়ার ক্যান্সারের প্রকোপ কম তবুও চামড়ার যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন কয়েক সপ্তাহের অধিক স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্ষ নিন।

৬) খাবার গিলতে অসুবিধা বোধ করা
খাদ্যনালীর অসুবিধার জন্য খাবার গিলতে সাময়িক অসুবিধা হতে পারে, তবে এ সমস্যা সহজে সেরে না উঠলে চিকিৎসকের পরামর্ষ নিন, কেননা এটি পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সারের লক্ষণ।

৭) রক্তক্ষরণ
প্রস্রাব, পায়খানা কিংবা কফের সাথে রক্ত গেলে তা পরীক্ষা করে নেয়া প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদী এ ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওন।



৮) তলপেটে ব্যথা ও বিষন্নতা
যদি কোন মহিলা তলপেটে ব্যথা অনুভব করেন এবং সেই সাথে বিষণ্ণতায় ভোগেন তাহলে ডাক্তারের পরামর্ষ মতো শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ।

৯) হজমে গণ্ডগোল
প্রতিনিয়ত হজমে গণ্ডগোল আপনার গলা, পাকস্থলী কিংবা অন্ত্রের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

১০) মুখের ভেতর বা জিহ্বায় পরিবর্তন
ধূমপায়ী কিংবা তামাক সেবীরা এ বিষয়টি খেয়াল রাখবেন, আপনার মুখের ভেতর কোন স্থানে বা জিহ্বায় সাদা দাগ দেখা গেলে সেটি মুখ গহ্বরে ক্যান্সারের লক্ষণ। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্ষ মতো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নিন।

১১) ব্যথা
এমন ব্যথা যা আপনি আগে কখনো অনুভব করেননি এবং তা যদি সহজে সেরে না ওঠে তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওন।



১২) লিম্ফ নোড’এ পরিবর্তন
একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে এটি সনাক্ত করা আপনার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে, তবে আপনার বগল এবং এর আশেপাশে কিংবা ঘারে যদি কোন ধরনের গোটার অস্তিত্ব অনুভব করেন তবে এটি হতে পারে ক্যান্সারের একটি সাংঘাতিক লক্ষণ, তাই দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওন।

১৩) জ্বর
ঠাণ্ডা, সর্দি কিংবা শরীরে কোথাও কোন প্রদাহ ছাড়াই অজানা কারনে যদি দীর্ঘমেয়াদী জ্বর অনুভব করেন তবে এটি ক্যান্সারের লক্ষণ। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে এটি ক্যান্সারের অগ্রবর্তী পর্যায়ের লক্ষণ, কিংবা হতে পারে ব্লাড ক্যান্সার বা লিম্ফোমার প্রাথমিক লক্ষণ।

১৪) ক্ষুধামন্দা
শরীরে ক্যান্সার বাসা বাঁধলে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। তাই আপনার দীর্ঘমেয়াদী ক্ষুধামন্দা থাকলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওন।



১৫) দীর্ঘমেয়াদী কাশি
৩-৪ সপ্তাহের অধিক সময় একটানা কাশি থাকলে তা ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবে সনাক্ত করা হয়, তবে নিশ্চিত হবার জন্য ডাক্তারি পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি।

মনে রাখবেন, প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা গেলে এ রোগে অকাল মৃত্যুর হার অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই আসুন সবাই সচেতন হই এবং ক্যান্সার জনিত মৃত্যুর হার কমিয়ে আনি।


তথ্যসুত্র- অ্যামেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি

স্বাস্থ্য বিষয়ক আরও লেখা পড়তে ভিজিট করুনঃ http://emibd.com/health-tips

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.