আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্র্যান্ডের সাতকাহন

উচ্চবিত্ত : বিদেশি নামকরা সব দামি ব্র্যান্ড। বিদেশ থেকেই মার্কেটিং সারতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন

মধ্যবিত্ত : দেশে প্রাপ্ত বিদেশি ব্র্যান্ড এবং দেশি মানসম্পন্ন ব্র্যান্ড

নিম্নবিত্ত : দেশি সাশ্রয়ী ব্র্যান্ড

প্রত্যেকেই নিজেকে সুন্দর দেখতে চায়। যদিও সুন্দর লাগা অত সহজ ব্যাপার নয়। সেলিব্রেটিদের দেখে অনেকেই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, ধরে নেন এ সৌন্দর্য ঈশ্বরপ্রদত্ত। কিন্তু তারা এটা ভাবেন না যে সেলিব্রেটিদের ওই মনোমুঙ্কর সৌন্দর্য বা ফ্যাশনে কতটা সময় আর অর্থ ব্যয় করা হয়।

এ কথা সত্য যে, সুন্দর দেখানোর বিষয়টি আসলেই ব্যয়বহুল। কেউ কেউ প্রিয় সেলিব্রেটির জিন্স প্যান্ট কিনতে গিয়ে এর দাম দেখে পিছিয়ে আসেন আর দামের বিষয়টি ভেবে নিজেকে সান্ত্ব্বনা দেন। কিন্তু এমনটা যদি হয় নিজের সাধ্যের মধ্যেই মোটামুটি ভালো ফ্যাশনেবল কিছু ম্যানেজ করা যায়, তাহলে ফ্যাশন জগতে টিকে থাকাটা সহজ হয়।

অল্প দিনের ব্যবধানেই আমূল পাল্টে গেছে মানুষের পোশাকের পছন্দ। আর পছন্দের মূল তফাৎটা ছিল রং নির্বাচনে।

হালকা রঙের বিশেষ একটা কদর তখন ছিল। কেউ খুব গাঢ় রঙের পোশাক পরেছে, এমনটা দেখা যেত না বললেই চলে। জুতা বেল্টের একটা মাত্র রং ছিল- কালো। লাল, হলুদ কিংবা লাল-হলুদের কাছাকাছি রংগুলো নির্দিষ্ট ছিল শুধু মেয়েদের জন্য। ফলে দেখা যেত মার্কেট এবং শপিংমলগুলোতে সীমিত রং ও ফ্যাশনের ড্রেস আমদানি হয়েছে।

মার্কেটে গিয়ে অনেক রঙের মধ্য থেকে বেছে পছন্দের পোশাকটি কেনার প্রবণতা তখন এ সময়ের মতো ছিল না, অন্তত তরুণদের মধ্যে। অথচ অল্প কয়েক বছরের ব্যবধানেই এখন বদলে গেছে তরুণদের মনমানসিকতা, বদলে গেছে শপিংমলের চিত্র।

 

নাটক-সিনেমায় দেখা যেত জোকাররা নানারকম হাস্যকর পোশাক পরেছে। আর এ হাস্যকর পোশাকের অন্যতম একটি অংশ ছিল লাল বা হলুদ প্যান্ট। বাস্তবে কোনো তরুণ লাল, হলুদ কিংবা সবুজ রঙের প্যান্ট পরবে, এটা যেন কারও কল্পনায়ও ছিল না।

এখন সব বাধা পেরিয়ে তরুণরা তো বটেই, সব বয়সী মানুষজনই সত্যিকারের তারুণ্যের ফ্যাশনে সজ্জিত করেছে নিজেদের। ফ্যাশন সম্পর্কে পুরনো ধ্যান ধারণা পাল্টে দেওয়ার এই প্রবণতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ব্র্যান্ডের পছন্দও। তবে ব্র্যান্ডের ব্যাপারটি মূলত নির্ভর করে বাজেটের ওপর। বাংলাদেশের প্রতি উন্নয়নশীল দেশের মানুষ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড অহরহ ব্যবহার করবে, এমনটা ভাবা বোধ হয় ঠিক হবে না। আবার একেবারেই ব্যবহার করবে না, সেটিও বলা যায় না।

আমাদের দেশের উচ্চবিত্তের লোকজন, সেলিব্রেটি ও ব্যবসায়ীরা নিয়মিতই আন্তর্জাতিক মানের দামি দামি পোশাকে নিজেকে সজ্জিত করতে পছন্দ করেন। আর বাজারের ক্ষেত্রেও তারা দেশি নয়, বিদেশের মার্কেটকেই বেছে নেন। অনেকটা রুটিন করেই শপিংয়ের জন্য দেশের বাইরে উড়ে যান তারা। পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রও তারা বিদেশ থেকেই আনিয়ে নেন। তবে উচ্চবিত্তের এ সংখ্যাটি খুব বেশি নয়।

ফলে এ সৌভাগ্য সবার ক্ষেত্রে হয় না। মধ্যবিত্তের ক্ষেত্রে দেশের বাজারে বিদ্যমান বিদেশি ব্র্যান্ড কিংবা দেশীয় মানসম্পন্ন ব্র্যান্ডই ভরসা। আর তারা বাজার করার ক্ষেত্রেও দেশীয় শপিংমলগুলোই তাদের ভরসা। আবার কেউ কেউ সুযোগ বুঝে ভারত কিংবা কাছে কোনো দেশে বেড়াতে গেলে শপিংয়ের কাজটি সেরে আসেন। তবে তাদের পছন্দের ব্র্যান্ডের সঙ্গে উচ্চবিত্তের ব্র্যান্ডের কোনো তুলনা চলে না।

উচ্চবিত্তের পছন্দে ব্র্যান্ডের দাম কোনো বিষয় নয়। কিন্তু মধ্যবিত্তের মানুষের পছন্দের সঙ্গে দামের বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আর নিম্নবিত্তের ক্ষেত্রে আসলে ব্র্যান্ডের কোনো বালাই নেই। ঢাকাকেন্দ্রিক মানুষের জন্য বঙ্গবাজার, গুলিস্তান কিংবা নিউমার্কেটের কমদামি পোশাকই ভরসা।

পোশাকে ব্র্যান্ড নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেশীয় উদ্যোক্তাদের বক্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে।

তাদের দাবি বাংলাদেশের নিজস্ব পোশাকই বিশ্বমানের। আর সবচেয়ে বড় কথা, আন্তর্জাতিক হাজার হাজার ব্র্যান্ডের পোশাক বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে। তাই পোশাকের ক্ষেত্রে বিদেশি ব্র্যান্ডের ওপর নির্ভর করার চেয়ে দেশীয় ব্র্যান্ডকে প্রাধান্য দেওয়া যেতেই পারে।

আন্তর্জাতিক বাজারে একেকটি ব্র্যান্ড প্রতি বছর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করছে। বিশ্বব্যাপী নিজেদের প্রভাপ-প্রতিপত্তি বিস্তার করছে।

চলুন দেখে নেওয়া যাক ২০১৩ সালের সবচেয়ে দামি পাঁচটি ব্র্যান্ডের হালহকিকত।

ফেন্ডি : ১৯২৫ সালে ইতালির রোমে প্রতিষ্ঠিত ফেন্ডি ফ্যাশন হাউসটি সারাবিশ্বে সমাদৃত। বিখ্যাত এই ব্র্যান্ড বেশি পরিচিত পায় এর রোমান স্টাইল এবং উচ্চাভিলাষী সার্ভিসের জন্য। এখানে বেশি বিক্রি হয় নারী, পুরুষ এবং শিশুদের তৈরি পোশাক এবং বিলাসবহুল পণ্য, হ্যান্ডব্যাগ, টাইমপিস, জুতা, অলঙ্কার, চশমা, পারফিউম, বিচওয়ার, হোম ডিজাইন এবং আরও অনেক কিছু।

বিলাসবহুল ফেন্ডির পণ্য সর্বাধিক বিক্রি হয় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াতে।

আর ফেন্ডির বার্ষিক আয় এক বিলিয়ন ডলার।

 

গেস : গেস মূলত তার জিনস প্যান্টের জন্যই অধিক পরিচিত। তারাই প্রথম ডিজাইন করা জিন্সের প্রচলন করে এবং সাদা-কালো বিজ্ঞাপনচিত্রে সুপার মডেলদের ব্যবহার করেছে। জিন্সের মাধ্যমেই মূলত এই কোম্পানিটির পরিচিতি। এর বাইরে ঘড়ি, গহনা, পারফিউম এবং অন্যান্য পোশাকও বিক্রি করে তারা।

১৯৮১ সালে পল মারচিয়ানো নামের এক ব্যক্তি এ কোম্পানির সূচনা করেন। বর্তমানে কোম্পানিটির বার্ষিক আয় এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

 

ভ্যালেন্তিনো : ১৯৫৯ সালে ইতালির রোমে যাত্রা শুরু হয় ভ্যালেন্তিনোর। প্রবাদপ্রতিম ইতালিয়ান ডিজাইনার ভ্যালেন্তিনো গ্যারাভানি এটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই ফ্যাশন হাউসটি পোশাক, সেন্ডেল, চশমা, পারফিউম ইত্যাদি তৈরি করছে।

আর আয় করছে কয়েকশ মিলিয়ন ডলার।

 

আরমানি : জর্জিও আরমানি ১৯৭৫ সালে ইতালির মিলান শহরে 'আরমানি'র প্রতিষ্ঠা করেন। ফ্যাশন দুনিয়ায় জর্জিও আরমানিকে জীবন্ত কিংবদন্তি বলা হয়ে থাকে। পুরুষের জন্য করা তার প্রথম কালেকশন বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। এক বছর পর আরমানি মেয়েদের জন্যও পোশাক তৈরি শুরু করেন, যা দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।

পোশাক ছাড়াও ব্র্যান্ড আরমানির আছে কসমেটিকস, ফ্রাগরেন্স, হোম ইন্টেরিয়র, জুয়েলারি, লেদার ওয়ালেট বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তাদের বার্ষিক আয় আড়াই বিলিয়ন ডলার।

 

দিয়োর : দিয়োরের বিজ্ঞাপন সর্বত্রই দেখা যায়। বিশেষত হলিউডের অভিনেত্রীদের দিয়েই 'দিয়োর' বেশির ভাগ বিজ্ঞাপন করে। ১৯৪৬ সালে ক্রিশ্চিয়ান দিয়োর এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।

একসময় তিনি অন্য ফ্যাশন হাউসগুলোর জন্য পোশাক ডিজাইন করতেন। পরবর্তীতে নিজের ফ্যাশন হাউস খোলেন। সেই সময় পেরিয়ে এখন 'দিয়োর' শুধু পোশাকের ভেতরেই আটকে নেই, তাদের রয়েছে পারফিউম, প্রসাধন এবং ঘর সাজানোর বিলাসবহুল পণ্যসামগ্রীর সম্ভার। কোম্পানিটির বার্ষিক আয় ৩৪ বিলিয়ন ডলার।

 

ভারসেক : ১৯৭৮ সালে ইতালির অধিবাসী জিয়ানি্ন 'ভারসেক' এটা প্রতিষ্ঠা করেন।

ভারসেক পোশাকের যাবতীয় বিষয়, প্রসাধন, পারফিউম, ঘর সাজানোর পণ্যসহ হোটেলে ব্যবহৃত বুটিক সরবরাহের জন্য 'ভারসেক' বিখ্যাত। কোম্পানিটি প্রতি বছর প্রায় ৪৭০ মিলিয়ন ডলার আয় করে। ভারসেক মূলত বিভিন্ন সেলিব্রেটি, রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং উচ্চ পদমর্যাদাসম্পন্ন লোকের পোশাক তৈরি করে।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.