আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিলেটে শমসের ইলিয়াসের সমর্থকরা মুখোমুখি

সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নতুন করে দেখা দিয়েছে বিএনপির পুরনো বিরোধ। এ উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী অনুসারীরা ফের বিপরীতমুখী অবস্থানে। নানা নাটকীয়তার পর সোমবার রাতে কেন্দ্র থেকে শমসের মবিন চৌধুরীর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত আবুল কাহের শামীমকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি দলের অপর তিন প্রার্থী। আবুল কাহের শামীমকে বহিরাগত উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন সদর উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা এই তিন প্রার্থী।

এদের মধ্যে সদর বিএনপির সভাপতি শাহজামাল নূরুল হুদা নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইলিয়াস-অনুসারীদের সমর্থন নিয়ে। অপর দুই প্রার্থী জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক ও সদর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি শহীদ আহমদও সমর্থন দিয়েছেন শাহজামালকে। ফলে সদর উপজেলা নির্বাচন পরিণত হয়েছে শমসের ও ইলিয়াস অনুসারীদের জনপ্রিয়তা প্রমাণের লড়াইয়ে।

জানা যায়, সদর উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন চেয়ে লবিং চালান চার নেতা। স্থানীয় নেতারা একক প্রার্থী নির্ধারণ করতে না পারায় চারজনকেই ঢাকায় তলব করা হয়।

কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব শাহজাহান খান, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন চারজনকে নিয়ে বৈঠক করেও কোনো সিদ্ধান্তে পেঁৗছতে পারেননি। এরপর কেন্দ্রীয় মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দুই দফা বৈঠক করেন তাদের সঙ্গে। সব বৈঠকেই আবুল কাহের শামীমের বিরুদ্ধে মতামত ব্যক্ত করেন অপর তিন প্রার্থী। সদর উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা তিন প্রার্থীর মধ্যে যে কোনো একজনকে সমর্থন দেওয়ার দাবি জানান তারা। কিন্তু তাদের মতামত উপেক্ষা করে সোমবার গভীর রাতে আবুল কাহের শামীমকে দেওয়া হয় দলীয় সমর্থন।

এতে ক্ষুব্ধ হন সমর্থনপ্রত্যাশী অপর তিন প্রার্থী। হতাশা নেমে আসে সদর উপজেলার নেতা-কর্মীদের মধ্যে। সমর্থনবঞ্চিত তিন প্রার্থীই অভিযোগ করেন, ভোটের মাঠে জনপ্রিয়তা যাচাই না করেই শমসের মবিন কেন্দ্রকে ভুল বুঝিয়ে তার আস্থাভাজন বিয়ানীবাজার উপজেলার বাসিন্দা আবুল কাহের শামীমের নাম ঘোষণা করিয়েছেন। এদিকে আবুল কাহের শামীমকে দলীয় সমর্থন দেওয়ার পর সোমবার রাতে ও গতকাল ঢাকায় সমর্থনবঞ্চিত তিন নেতা বৈঠক করেন। তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও ইলিয়াস আলীর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত শাহজামাল নূরুল হুদাকে প্রার্থী রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

তাদের এ সিদ্ধান্তে সিলেটে ইলিয়াস-বলয়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও দেখা দেয় প্রাণচাঞ্চল্য। সিলেটজুড়ে কাল ছিল বিএনপির প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। তবে বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই মনে করছেন, সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবুল কাহের শামীমকে দলীয় সমর্থন দেওয়া সঠিক হয়নি। জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা না করে শমসের মবিন শুধু নিজ বলয় ধরে রাখতে শামীমকে দলীয় সমর্থন পাইয়ে দিয়েছেন। সিলেটের নেতা-কর্মীদের দাবি, এর আগেও সিলেটে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন শমসের মবিন।

নিজ উপজেলা গোলাপগঞ্জে তিনি আস্থাভাজন ব্যক্তিকে দলীয় সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে তার সমর্থনপুষ্ট প্রার্থী জিলাল উদ্দিন চতুর্থ হন। অন্যদিকে ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী আসন বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির প্রার্থীর বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ে উজ্জীবিত ইলিয়াস-বলয়ের নেতা-কর্মীরা। এর আগের নির্বাচনে এ দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হলেও এবার তা ছিনিয়ে এনেছে ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদী লুনা সমর্থিত প্রার্থীরা। তাই সিলেট সদর উপজেলা নির্বাচনেও নিজ বলয়ের প্রার্থী হিসেবে শাহজামাল নূরুল হুদাকে বিজয়ী করতে বদ্ধপরিকর ইলিয়াস-অনুসারীরা।

এ ব্যাপারে সিলেট সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও ইলিয়াস-বলয়ের প্রার্থী শাহজামাল নূরুল হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'আবুল কাহের শামীমকে প্রার্থী দিয়ে শমসের মবিন সদর উপজেলাবাসীর সঙ্গে অবিচার করেছেন। স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের চাপে ও সদর উপজেলাবাসীর প্রত্যাশা পূরণে আমি প্রার্থী থাকব। বাকি দুই প্রার্থীও আমাকে নির্বাচনে থাকার অনুরোধ জানিয়ে সমর্থন দিয়েছেন। নির্বাচনের ফলাফলই প্রমাণ করবে আমার প্রার্থী হওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত ছিল। ' বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও দলীয় সমর্থন পাওয়া আবুল কাহের শামীম বলেন, 'গ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনে করায় দল আমাকে সমর্থন দিয়েছে।

বাকি তিন প্রার্থীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। আশা করছি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন। ' জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গফ্ফার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয় প্রার্থী দিলে ভালো হয়। বাইরের প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে ভালো ফল করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। কেন্দ্র থেকে স্থানীয় তিন প্রার্থীর মধ্যে একজনকে সমর্থন দিলে ভালো হতো।

এর পরও দল যে সিদ্ধান্ত দেবে তা আমাদের মেনে নিতে হবে। '

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।