আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবশেষে রেহমান এলেন, গাইলেন

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গানপাগল দর্শকদের ভিড়। অনুষ্ঠান শুরু হতে তখনও ঢের বাকি। স্টেডিয়ামের সবগুলো গেইটে ভিড় বাড়তেই লাগল। শিশু থেকে বৃদ্ধ- সব বয়সী মানুষ আছেন এ দলে।

সময়মতোই বেলা ৩টায় খোলা হল সবগুলো গেইট।

ঢুকতেই কঠোর নিরাপত্তা। নানা রকম তল্লাসির পর ঢোকার অনুমতি মিলল দর্শকের। আসর শুরু হতে তখনও অনেক বাকি। দর্শকের অপেক্ষার প্রহর আরও লম্বা হল।

আসর শুরু হল বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে।

বাসন্তী শাড়িতে মঞ্চে এলেন এ সময়ের অন্যতম ব্যস্ত সঞ্চালক নুসরাত ফারিয়া। তিনি আমন্ত্রণ জানালেন ব্যান্ডদল ‘অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’-কে। ‘তোরা জানিস নে কি ভাই’ গানে ক্রিকেটপাগল বাঙালির কথা তুলে ধরলেন অর্ণব। মঞ্চের অর্ণবের সঙ্গে সুর মেলাল মধ্য গ্যালারি। সুরে সুরে ছড়িয়ে পড়ল সুরের আসরের খবর।

যাদের ভাগ্যে টিকেট জোটেনি, তাদের কজন স্টেডিয়াম সংলগ্ন অট্টালিকা থেকে দেখতে লাগলেন আসরটি। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ থেকে পল্টন মোড়ে তখনও অপেক্ষমান দর্শকের লম্বা লাইন। সময় পেরিয়ে যেতেই তারা এসে ‘সে যে বসে আছে’র সঙ্গে সুর মেলাল। দক্ষিণের গ্যালারি তখন কানায় কানায় পূর্ণ। ভাটিয়ালি ‘নাও ছাড়িয়া দে’র সঙ্গে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিল তারা।

এরপর প্রেম ও বিরহের গান শোনাল ‘সোলস’। তাদের পরিবেশনা তিনটি। এগুলো ছিল ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, ‘বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি’,‘কেন এই নিঃসঙ্গতা’।

ক্ষণিকের বিরতি। মঞ্চ থেকে ভেসে এল এলআরবির হুঙ্কার ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’।

এরপর ‘উড়াল দিব আকাশে’ আর ‘তুমি কেন বোঝো না’র সঙ্গে ‘অভিমানী’ আইয়ুব বাচ্চুর সুর কণ্ঠে তুলে নিল দর্শকরাও। মাকে নিয়েও একটি গান গেয়েছে এলআরবি। এরপর ‘হকার’ শিরোনামে একটি বিয়োগাত্মক গেয়ে শোনায় এলআরবি। ‘মাথার উপর চাঁদ’ গানের সঙ্গে ঢাকার আকাশে দেখা দিল চাঁদ। উত্তরের খালি গ্যালারি তখন ভরে উঠছে।

ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

এলআরবির পর পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, ব্যান্ডদল মাইলসের মঞ্চে ওঠার কথা থাকলেও, তাদেরকে ছাড়াই অনুষ্ঠানের প্রথম অংশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন উপস্থাপক। মাগরিবের আজানের পর শুরু হয় কনসার্টের মূল অংশ।

ঘড়ির কাঁটায় ৬টা ৪০মিনিট। স্টেডিয়ামে এসেছেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রীদের নিয়ে আসন গ্রহণের পর ছায়ানট পরিবেশন করল জাতীয় সংগীত।

এরপর মঞ্চে ‘এক টুকরো বাংলাদেশ’ ফুটিয়ে তুলল ধৃতি নর্তনালয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের স্বাগত সংগীত ‘উড়ছে শান্তির পায়রা’ –র সঙ্গে নাচের মুদ্রায় তারা ফুটিয়ে তুলল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা। নাচের কোরিওগ্রাফিতে ছিলেন ওয়ার্দা রিহাব। গানের সংগীতায়োজন করেছেন ফুয়াদ আল মু্ক্তাদির। কোনাল এবং ফুয়াদের কণ্ঠে এই গানের মাধ্যমেই টিটোয়েন্টির বিশ্ব আসরে স্বাগত জানানো হল দর্শকদের।

তবে, কনসার্টে আগত দর্শকদের অনেকিই অপেক্ষায় ছিলেন এ আর রেহমানের। তাদের সেই অপেক্ষা বাড়িয়ে দিল অতিথিদের বক্তব্য । প্রধানমন্ত্রী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রতিটি ভেন্যু এলাকার যুবকদের ‘বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল’ করার আহ্বান জানালেন। ৭টা ১৮ মিনিটে আকাশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া আতশবাজীর মধ্য দিয়ে তিনি উদ্বোধন ঘোষণা করলেন টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের।

ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

অবমেশে ‘ফানাহ’- গানটির মাধমে দর্শকের অপেক্ষার অবসান ঘটালেন রেহমান।

বিশ্বকাপ উপলক্ষে আলোকসজ্জায় সেজে ওঠা ঢাকার মতোই রেহমানের পরনে ছিল ঝলমলে এলইডি লাইটের পোশাক। গানের শেষে উপস্থিত দর্শকদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “শেষপর্যন্ত আসতে পারলাম ঢাকায়। অনেক আগে থেকেই আসার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু পরিস্থিতির কারণেই তা হয়ে ওঠেনি। তবে এবার এই আয়োজনে আপনাদের সামনে আসতে পেরে আমি দারুন আনন্দিত। ”

ক্রিকেটের আসরে এসেছেন, ক্রিকেটের গান গাইবেন না তা কী হয়।

রেহমান গাইলেন ‘লাগান’ সিনেমার ‘চালে চালো’। এ দুটি গানের পর বিরতিতে গেলেন। আসর কিন্তু থেমে নেই। ‘রানাঝানা’র ‘তুম তাক’ গানটি শোনালেন জাভেদ আলি। মঞ্চে এলেন উদিত নারায়ণ ও শ্বেতা পণ্ডিত।

তারা দুজনে শোনালেন ‘লাগান’ সিনেমার ‘মিতোয়া’ গানটি। শুধু গানেই না, নাচেও দর্শকদের মাতিয়ে তুললেন শ্বেতা।

দর্শকের চোখ তখনও রেহমানকে খুঁজছে। সেমি-ক্ল্যাসিক্যাল ‘তেরি বিনা বেসোয়াদি রাতিয়া’র দলীয় পরিবেশনায় আবারও মঞ্চে হাজির হলেন তিনি। সফট মেলোডি ধাঁচের এ গানে কেমন নীরবতা নেমে এল স্টেডিয়ামে।

সে নীরবতা আরও প্রগাঢ় হয় শ্বেতার ‘সাস মেরি’তে।

ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

‘জিয়া জিয়া’তে যেন নীরবতা ভাঙলেন নীতি মোহন। আবারো জেগে উঠল গ্যালারি। উদিত নারায়ণ শুনিয়ে গেলেন কৌতুকময় ‘কেয়া কারে গে না কারেঙ্গে’।

উপমহাদেশের সুফিবাদ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন রেহমান।

এ পর্বে তিনি বেশকটি সুফি গান গেয়ে শোনালেন। পরিবেশনার শুরু ‘কুন ফায়া কুন’ দিয়ে। এরপরের পরিবেশনা জাভেদ আলির ‘এ দিল হে বারবারা’ ও ‘মওলা মওলা’। গ্যালারিতে তখন অন্য এক পরিবেশ। সবশেষে রেহমান গেয়ে শোনান ‘খাজা মেরে খাজা’ শিরোনামের সুফি গান।

 

নীতি মোহনের ‘মাইয়া মাইয়া’র সঙ্গে ফের পপে ফেরে দর্শক। এরপর ‘লাগান’ সিনেমার ‘রাধা ক্যায়সে না জালে’ –র দ্বৈত পরিবেশনায় মঞ্চে আসেন উদিত নারায়ণ ও শ্বেতা। এরপরপরই ‘মাহি ভে’ গানের দলীয় পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে ফেরেন রেহমান। একে একে গান ‘তু মান শুরি’, ‘দিল সে’-এর মতো জনপ্রিয় সব গান।

ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ভারতীয় শিল্পীদের পরিবেশনা চলে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত।

এই পর্বের সমাপনি হয় রেহমানের তামিল গান ‘হাম্মা হাম্মা’ এবং তার অস্কারজয়ী হিন্দি গান ‘জয় হো’-এর দলীয় পরিবেশনা দিয়ে। বিশ্বকাপে অংশগ্রহনকারী সব দেশের পতাকা নিয়ে গানটির সঙ্গে ছিল একটি বিশেষ পরিবেশনা।

এ আর রহমানের পর মঞ্চে আসেন যু্ক্তরাষ্ট্রের অার অ্যান্ড বি তারকা একন। তার পরিবেশনা শুরু হয় ১১টা ১৫ মিনিটে। পপ আর হিপহপ ঘরানার গানে তিনি একঘণ্টা ধরে মাতিয়ে রাখেন দর্শকদের।

তাদের পরিবেশনার শেষে মঞ্চে আসেন কুমার বিশ্বজিৎ। তিনি শোনান ‘তোমরা একতারা বাজাইও না’। শিল্পী মমতাজ গেয়ে শোনান ‘মরার কোকিলা’। সাবিনা ইয়াসমীন শোনান ‘ও মাঝি নাও ছাইড়্া দে’। এরপরদর্শক মাতাতে হাজির হন রুনা লায়লা।

তার গাওয়া ‘সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী’-এর সুরে নেচে ওঠে পুরো গ্যালারি।

ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

সকল পরিবেশনা শেষে এবারের বিশ্বকাপের থিম সং ‘চার ছক্কা হৈ হৈ’ গাইতে মঞ্চে ওঠেন কনা, এলিটা, জোহান, শান্ত, পূজা, পান্থ কানাই ও তাপস। । সবেশেষে আরো একবার আতশবাজীর খেলা ছড়ালো আকাশজুড়ে; আর এভাবেই শেষ হল ‘সেলিব্রেশন কনসার্ট’-এর আসর।

পুরো অনুষ্ঠানটি স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের সঙ্গে অন্যদেরও একযোগে উপভোগের সুযোগ করে দিয়েছিল বিটিভি এবং চ্যানেল নাইন।

দশর্কদের জন্য অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে তারা।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।