আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্লিন শেভ এবং আধুনিক পোশাকে জঙ্গিরা

ক্লিন শেভড এবং প্যান্ট-শার্ট পরে আধুনিক পোশাকে অন্য সব সাধারণ মানুষের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি অন্য জঙ্গি সদস্যদের চাকরি দিতে অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও খুলে বসেছে তারা। অর্থের জোগান দিচ্ছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাতে। কেবল তাই নয়, চাকরি কিংবা ব্যবসার আড়ালে কঠোর গোপনীয়তার মাধ্যমে সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিস্ফোরক তৈরিতে অভিজ্ঞ হয়ে উঠছে তারা। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে ধরা পড়লেও জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য ফাঁস না করা এবং নির্যাতন সহ্য করার নানা কৌশল রপ্তের প্রশিক্ষণও জঙ্গিদের দেওয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা।

অন্যদিকে, ২২ দিনেও ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে কমান্ডো স্টাইলে ছিনিয়ে নেওয়া ভয়ঙ্কর তিন জঙ্গির মধ্যে সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি এবং জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানের হদিস না মেলায় তা গোয়েন্দাদের জন্য আবারও রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, অনেকটা সামরিক কায়দায়ই সংগঠিত হচ্ছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। সামরিক বাহিনীর আদলে নিচ্ছে প্রশিক্ষণ। যথাযথ প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ মডিউল, সিলেবাস। পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য তৈরি করা হচ্ছে 'ট্রেনিং ইনস্টিটিউট'।

অতীতে কয়েক দফা প্রশিক্ষণ মডিউল উদ্ধারের পর গত শনিবার রাজধানী থেকে আবারও জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সদস্য ব্যবসায়ী গোলাম সারোয়ার রাহাতের গাড়ি থেকে এ ধরনের আরও কিছু প্রশিক্ষণ মডিউল উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। প্রশিক্ষণ মডিউলে ইন্টারোগেশনের কৌশল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, 'গ্রেফতার হলে তুমি সরাসরি না বলবা না। এতে জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তা রাগান্বিত হবেন। এ জন্য বানিয়ে কিছু বলে দাও। ' জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তার আচার-আচরণ বুঝে উত্তর দেওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সংগঠন এবং কাজের প্রয়োজনে মিথ্যা বলাও কোনো অন্যায় নয়। রাহাতের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া বাকি চার জঙ্গি সদস্যরাও ক্লিন শেভড এবং আধুনিক পোশাক পরিহিত ছিলেন। গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, অপারেশনের পর পরই তাদের টার্গেট ছিল সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পাড়ি জমানো। পরবর্তীতে সময় সুযোগ মতো দেশে এসে বড় ধরনের অপারেশন বাস্তবায়ন করা। তবে অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপের কারণে তারা সীমান্ত পার হতে পারেননি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, পলাতক এবং গা-ঢাকা দেওয়া জঙ্গিরা বিভিন্ন ছদ্মবেশে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের আধ্যাত্দিক নেতা মুফতি জসীম উদ্দীন রাহমানীকে গ্রেফতারের পর একজন ব্যবসায়ীর নাম আমরা পেয়েছিলাম। এবারও কিছু নাম আমরা পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এর বেশি বলা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, এসব ব্যক্তিরা ছদ্মবেশে ব্যবসা বাণিজ্য করে সংগঠনের অর্থের জোগান দিচ্ছে।

তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করার কাজ চলছে। একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের মধ্যে এ পর্যন্ত তিন শতাধিক জঙ্গি জামিনে মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে জেএমবির সদস্য ১৯২ এবং হুজির ৭২ জন রয়েছে। এদের মধ্যে ৯১ জনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছেন না গোয়েন্দারা। গা-ঢাকা দেওয়া জঙ্গিদের মধ্যে ২০ জনেরও বেশি দুর্ধর্ষ প্রকৃতির।

তাদের মধ্যে ফারুক, শফিক, মিলন, সবুজ, সাজেদুর, মানিক, মাজিদ, কফিল উদ্দিন ওরফে রব মুন্সী, আজিবুল ইসলাম ওরফে আজিজুল, শাহান শাহ, হামিদুর রহমান, বজলুর রহমান, বাবর, শরিফ, খাইরুল ইসলাম, নাদিম, ময়েজ উদ্দিন, মহব্বত ওরফে তিতুমীর ওরফে নাহিদ এবং ওয়ালিউল্লাহ ওরফে হামিদ অন্যতম। তবে সম্প্রতি ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গির মধ্যে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর বোমা মিজান। বোমা মিজান জেএমবির সামরিক বিভাগের কমান্ডার ছিলেন। তার তৈরি করা বেশির ভাগ বোমা দিয়েই ২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। শায়খ আবদুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের অন্যতম বোমা মিজান তেজগাঁও পলিটেকনিকের ছাত্র থাকাবস্থায়ই ২০০০ সালে জেএমবিতে যোগ দেয়।

দেশ-বিদেশে সে বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে বোমা মিজান নামেই খ্যাতি পায় জেএমবিসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলোতে। কেবল বোমা ও গ্রেনেড নয় ল্যান্ড মাইন তৈরিতেও বোমা মিজান দক্ষ বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। অস্ত্র ও বোমা তৈরি ও মেরামতের পাশাপাশি যানবাহনের যে কোনো ত্রুটি সারতেও সে সিদ্ধহস্ত। ২০০৯ সালের ১৪ মে আগারগাঁও তালতলা মার্কেট এলাকা থেকে বোমা মিজান ও পরদিন উত্তর পীরেরবাগের ৬১/৩ নম্বর বাসা থেকে স্ত্রী শারমীন আক্তার লতাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তবে গ্রেফতারের আগে লতা র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে একটি গ্রেনেড ছুড়ে মারার চেষ্টা করলে গ্রেনেডটি তার হাতেই বিস্ফোরিত হয়।

এতে তার ডান হাতের কব্জি থেকে উড়ে যায়। পরে মিজানের দেওয়া তথ্যমতে, মনিপুরের ৬৭৬/২ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি পিস্তল, ১১টি তৈরি বোমা, প্রচুর রাসায়নিক দ্রব্য, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ৫-৬০০ ডেটোনেটর, মাইন তৈরির সরঞ্জাম এবং বোমা তৈরিসংক্রান্ত পুস্তক উদ্ধার করে। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, ছদ্মবেশে জঙ্গিরা আত্মগোপন করে আছে এমন তথ্য র‌্যাবের কাছে রয়েছে। তবে পালিয়ে থাকা এবং সম্প্রতি ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের গ্রেফতার করতে র‌্যাব সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.