আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এগিয়ে যাও বাংলাদেশ! আমরা আছি তোমাদের সাথে

অনেক কিছুই আছে, কিন্তু লিখবনা কিছুই! (লিখতে ইচ্ছে করছে অনেক কিছুই, কিন্তু নেই যে কিছুই!)

বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের খেলায় যখন বহুল আলোচিত কয়েকজন তরুণীর কান্নার ঘটনাটি ঘটে, তখন সম্ভবত অরুন লাল ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন। মেয়েগুলোর চোখের জল আর তাদের চিৎকার করে কেঁদে ওঠার সেই প্রকাশ দেখে তিনি বলেছিলেন- oh! young ladies, it's only cricket.
আমি নিশ্চিত, তিনি বহুদিন এই ঘটনাটা মনে রাখবেন। কারণ, এমন যে শুধু ক্রিকেটেই দেখা যায় আর সেটা শুধুই বাংলাদেশে। আর তিনি হয়তো এটা জানেন না যে, এই কান্না শুধু ওই মেয়েগুলোই কাঁদেনি; বরং সারা বাংলাদেশ কেঁদেছে। এর একটাই কারণ, আমরা অনেক আবেগী জাতি।

আমাদের যে একটু সুখ দেয়, তাকে মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি।
আমাদের দেশে রাজনৈতিক হানাহানি সবসময় থাকে, আছে অভাব, আছে সন্ত্রাস। কিন্তু আমাদের এত খারাপের মাঝেও আছে সারাদেশে আনন্দ বইয়ে দেয়ার জন্য নিয়োজিত একটা দল। যার নাম বাংলাদেশ। না, দেশের নাম বলিনি, বলেছি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কথা।


মনে আছে ২০০০ সালের কথা, যখন আমরা প্রথম টেস্ট খেলি, মনে আছে যখন আমরা মুলতান টেস্টে জিততে জিততে হেরে যাই, মনে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে সেই খেলা- যেখানে পাইলট, রফিক সেঞ্চুরী করলো। মনে আছে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো- গিলেস্পিকে মারা আফতাবের সেই ছয় আবার মনে আছে জিম্বাবুয়ের সাথে মাশরাফির করা সেই ওভার, যেখানে ১৮ রান দরকার ছিলো, আর আমরা ম্যাচ হেরে যাই। আবার কয়েদিন পরেই কেনিয়ার সাথে আমাদের ৮ উইকেট পরে যায় তখনো ৪২ রান দরকার, আর মাশরাফি ম্যাচ জেতায়। কিছুই ভুলিনি। আশরাফুলের শ্রীলংকার সাথে করা প্রথম সেঞ্চুরী, কিংবা জাভেদ ওমর বা সুমনের প্রথম সেঞ্চুরী।

আবার অলকের ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে করা ৮৯ কিংবা ভারতের সাথে প্রথম বিজয়। বগুড়ার মাঠে শ্রীলঙ্কাকে হারানো। কত কী!
জয় পরাজয়ের সব কিছুই মনে আছে, কিছুই ভুলিনি। ভুলতে পারবো না।
মনে আছে, একটা সময় দল খেলতে নামলেই দোয়া করতাম আজকে যেন অন্তত ১০০-১৫০ করতে পারে।

তখন দলের কেউ ৫০ করলেই সারাদিন খুশি হয়ে থাকতাম। কারো ৫ উইকেট দেখলে তো আনন্দে বাক বাকুম করতাম। প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের কয়টা ফিফটি, কার সাথে আর সেঞ্চুরী হলে তো কথাই নেই- সব থাকতো মুখস্ত। সারারাত বসে থাকতাম মধ্যরাতে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে শুরু হওয়া ম্যাচ দেখার জন্য। কত অপেক্ষার সেই দিনগুলি!
ভাবতাম, একটা দিন আসবে, যেদিন আমরা সব দলকে হারাতে পারবো।

২০০৩ বিশ্বকাপে কানাডার কাছে হেরেছিলাম। তখনো স্বপ্ন দেখেছি। একটানা সর্বাধিক ম্যাচ হারের লজ্জা পেয়েও স্বপ্ন দেখেছি। ২০০০ সালে পাকিস্তানের কাছে একদিনের খেলায় ২৩৩ রানে হেরেও স্বপ্ন দেখেছি।
আবার জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে, কেনিয়াকে কিংবা হল্যান্ডকে হারিয়ে সেই স্বপ্নের স্তম্ভ একটু করে বড় করে দিয়েছিলো এই বাংলাদেশ দল।

যখন মুলতানে হেরে যাই, তখন স্বপ্নটা আরও বড় হয়। ভারত, শ্রীলংকাকে হারিয়ে আরও বড় থেকে আরও বড় হয়। মনে আছে, বাংলাদেশকে একদিনে টেস্ট হারানোর কথা বলা অস্ট্রেলিয়ানরা যখন দেখল আমরা ৪ দিন খেলে ফেলেছি, জানিনা ওরা কি ভেবেছিলো, কিন্তু আমরা তখন স্বপ্নের একটু একটু মূর্তি ধারণ দেখেছিলাম। জানতাম, দিন আমাদের আসবেই।
আজ দিন এসেছে... আজ আমরা এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হইনা বলে কাঁদি।

আজ আমরা বিশ্বকাপে অংশ নিতে নয়, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশায় বুক বাধি। মিস্টার ফিফটি খ্যাত সুমন ভাইয়ের বদলে আজ আমাদের আছে বিশ্বকাঁপানো সাকিব, আছে মমিনুল আছে মুশফিক কিংবা মাশরাফি। তামিম আছে, আছে আনামুল। আজ আমাদের অনেক শক্তি, অনেক...
মনে আছে, একবার এক বড় ভাই মজা করে আমাকে বলেছিলেন বাংলাদেশের স্কোর নাকি ৫ উইকেটে ২২৯, খুশিতে টগবগ করতে করতে গিয়ে দেখি, আসলে ৪ উইকেটে ২১! আর এখন আমরা ৩ উইকেটে ৩২৬ করি! ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬১ কিংবা জিম্বাবুয়েকে ৪৪ রানে অলআউট করি। ৩০৭ রান টপকে নিউজিল্যান্ডকে হারাই।

আজকে বাধ্য হয়ে আফ্রিদিকে বলতে হয়, এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। এবার হয়নি, তাতে কী? অবশ্যই হবে।
নিয়মিত একদিনের খেলায় ১০০-১৫০ রানে কিংবা ৮-৯ উইকেটের কিংবা টেস্টে ২৫০-৩০০ রান কিংবা ইনিংস ব্যবধান বা ১০ উইকেটের হার তো আমাদের-ই হতো। মাত্র ১০ বছরের মাথায় আজকে আমরা প্রত্যেক ম্যাচে জয়ের জন্য নামি। আমরা এখন হোয়াইটওয়াশ ফিরিয়ে দিচ্ছি।

আমরা শক্তি অর্জন করেছি, আরও করবো।
তুলনা করতে চাই না, তবুও বলতে হয়, একসময় কেনিয়া আমাদের থেকে শক্তিশালী ছিল, আর আজকে আমরা ভারতের থেকে দুর্বল নই। ১০ বছর আগের ভারতের থেকে বর্তমানের ভারত কোন অংশে দুর্বল নয়; বরং সামঞ্জস্যপূর্ণ, আর আমরা এখন তাদের ভয় পাই না, অর্থাৎ, তাদের তুলনায় আমাদের অগ্রগতি ক্রমবর্ধমান।
পিছনের সেই ভয়াবহ খারাপ সময়ে যখন দলের সাথে ছিলাম, এখন না থাকলে কীভাবে হয়? তখন তো ছিলাম এই দিন দেখার অপেক্ষায়। সেই দিন আজ এলো।

আমাদের, বাংলাদেশের আবেগী ক্রিকেট পাগল মানুষের, দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সমর্থকদের।

এই বিশ্বকাপে কী হবে জানি না, তবুও পাশে আছি, সাথে আছে সমর্থন, খেলার মাঠে প্রতিপক্ষকে তোমরা চেপে ধরবে আর গ্যালারীতে থাকবে আমাদের ভয়াবহ গর্জন। আর আছে তোমাদের উপর অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসা। তোমরা অতীতে যেহেতু শুধু সামনেই এগিয়েছ, আগামীতেও পারবে। আর হ্যাঁ, আমরা জানি, কখনো তোমাদের খারাপ সময় যেতেই পারে, কিন্তু আমরা তোমাদের ফেলে যাবো না।

সবশেষে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে আফগানিস্তানের সাথে খেলার সময়ে ধারাভাষ্য বক্সে বসে করা ওয়াসিম আকরামের মন্তব্য...
Now, Bangladesh is a very strong team, they can beat any team of the world. they are very very professional!
""খেলে যাও বাংলাদেশ, কথা দিচ্ছি- হাসবো না, জিতলেও কাঁদবো, হারলেও কাঁদবো। আনন্দ আর কষ্ট দুটোই প্রকাশে কান্নার চেয়ে আবেগী আর কোন উপায় কি আছে বলো?""

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.