আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউক্রেন ক্রাইসিস, ক্রিমিয়ার স্বাধীনতা: বিশ্ব অর্থনীতিতেও আঘাত করছে

ইউক্রেন ক্রাইসিস, ক্রিমিয়ার স্বাধীনতা: বিশ্ব অর্থনীতিতেও আঘাত করছে

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ-লন্ডন থেকে

মার্কেট যখন ফল করে, তখন রিটেইল ব্যবসায়ীদের শুধু আর্থিক ক্ষতিই হয়না, খুচরা বা খোলা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যেও নানান উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার জন্ম দেয়, মানুষ তখন সস্তা সহজলভ্য জিনিষের দিকে ব্যাপক হারে ঝুঁকে পড়ে, যাতে আর্থিক মন্দা ও ঝুঁকির মধ্যে কোনভাবে দিনযাপন করতে পারে।

কন্টিনিউ ইউক্রেন ক্রাইসিস এর ফলে দেখা যাচ্ছে বিশ্ব বাজারে এর নেতিবাচক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া মার্কেটের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, মার্কেট ক্রমেই নিম্নগতির দিকে যাচ্ছে, মঙ্গলবারে শেয়ার ইনডেক্স ক্রমেই নিম্নদিকে ধাবিত হয়েছে, পরবর্তীতে পুরো সপ্তাহেই দেখা গেছে, শেয়ার মার্কেট সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিশ্ব বাজারে লসের দিকেই আছে। দাম উঠা নামা করার কোন লক্ষণ নেই। মার্কেট পয়েন্ট ১০১ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং বলা যায় ষ্টেবল হয়েই আছে।

রয়টার্স প্রতিনিয়ত ইউক্রেন ক্রাইসিসে বিশ্ববাজারের অধঃগতি নিয়ে সংবাদ বিশ্লেষণ ও তথ্য সরবরাহ করে চলছে। ইতিমধ্যে গণভোটে ইউক্রেন রাশিয়ান ইউনিয়নের সাথে একাত্মতা আর নিজেদের স্বাধীনতা পরবর্তীতে ঘোষণার পর থেকে বিশ্ব আর্থিক বাজারে আর নিম্নগতি বেড়েই চলছে। ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালী ষ্টেক হোল্ডারদের মনে একধরনের প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে, ক্রাইমিয়া পরিস্থিতি হয়তো বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন এক পরিবর্তন এনে দেবে। বিনিয়োগকারীরা এবং বাজারের সরবরাহ তাই আনুপাতিক হারে এবং আর্থিক লগ্নি থমকে আছে। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে বসেন, রাশিয়ার প্রভাবশালীদের ডিপোজিট ও বিনিয়োগ ফ্রিজের, জন ক্যারি আরো একধাপ এগিয়ে এসে বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার কথা বলে মার্কেটকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলেন।

রাশিয়ান টেলিভিশনে একজন সাংবাদিক রাশিয়ান এটোমিক পাওয়ার এনালাইসিস করে সংবাদ পরিবেশন মার্কেটের উপর আরো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে এতোকিছুর পরে নিউইয়র্ক ষ্টক এক্সচেঞ্জ অনেকটাও স্থিতিশীলতা ধরে রাখলেও খুব একটা উপরের দিকে নয়। বিশ্বব্যাপী রাশিয়ান ডিপোজিট ফ্রিজের কথা বলা হলেও ইউক্রেনে রাশিয়ান বিনিয়োগের কি হবে- এখনো পরিষ্কার নয়। ব্রিটেনের ইন্ডিপ্যান্ডেন্টের সাংবাদিক সায়মন রীড এই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলছেন তাহলে কি এখন থেকেই ক্যাশ ক্যারি করে চলতে হবে ?

রাজনৈতিক এক্সপার্টরা কি ভাবছেন তা নিয়ে ? রাশিয়ান ইউক্রেন ক্রাইসিসে আর্থিক রাজনৈতিক সংঘাত কি ফিরে আসবে ? এডভান্স এমার্জিং ক্যাপিটালের চীফ অফিসার স্লিম ফেরানি এ ব্যাপারে বলেন, অবশ্যই ইউক্রেন সমস্যা আজকে বিশ্ব রাজনীতিতে একটা মারাত্মক এক হুমকি এবং রাজনীতির সেন্টার পয়েন্টে নিয়ে এসেছে আমাদের বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিকে। তবে ফেরানি বলেন, রাশিয়ার ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে তার মতে, রয়েছে ভিন্ন এক চিত্র।

রাশিয়ার রয়েছে শক্তিশালী কারেন্ট একাউন্ট এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি। তার চেয়েও আরো বড় কথা হলো রাশিয়ার সাথে রয়েছে বিশ্বের সবচাইতে উর্বর উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ইন্দোনেশিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল আর তুরস্কের মতো দেশগুলোর সাথে আর্থিক বিনিয়োগ টাই-আপ, যা রাশিয়াকে ক্রাইসিস সময়ের ভিতরেও লং-টার্ম ভাল একটা এন্ট্রি পয়েন্টে রিটার্ন এনে দিবে।

ব্যারিং এমার্জিং ইউরোপের ম্যানেজার মাথিয়াস সিলার বলেন, ইউক্রেনের অর্থনীতি অত্যন্ত দুর্বল, তার উপর রয়েছে আগামী ২৫ মে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইলেকশন। এই অবস্থার মধ্যেই ক্রিমিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। বিশ্বব্যাপী সেংশনের প্রেক্ষিতে রাশিয়া তার বিনিয়োগ ইউক্রেন থেকে গুটানো শুরু করলে বা বাধাগ্রস্ত হলে ক্ষতি কার হবে-সেটাই বিবেচ্য।

২৫শে নির্বাচনের আগে ইউক্রেনও কোন বৃহৎ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিলেও কার্যকরী করার সুযোগ খুব একটা নেই। এই অবস্থায় আর্থিক ক্ষেত্রে প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক, যার লক্ষণ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।

ডাচ এসেট এন্ড ওয়েলথ ম্যানেজম্যান্টের কো-চীফ ইনভেষ্টম্যান্ট অফিসার অশোকা ওয়োরম্যান বলেন, পুরো সিনারিও আসলেই অত্যন্ত ভয়াবহ, স্পেশালি রাশিয়ান এসেটস নিয়ে। তার উপর রয়েছে পুরো ইস্টার্ন ইউরোপ রিজিওনের বিশেষ করে এই অঞ্চলের শতকরা ১২ ভাগ টাই-আপ তুরস্কের সাথে ক্রিমিয়ার আর্থিক সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে, যেখানে অধিকাংশ ক্রাইমেরিয়ান রাশিয়াকে পছন্দ করেনা। অথচ রেফান্ডামে ক্রাইমেরিয়া রাশিয়ান ইউনিয়নের সাথে থাকার মতামত এসেছে।

এখানেই মূলত ভবিষ্যতের রাজনীতি সুপ্তভাবে লুকায়িত আছে।

এটা এখন সহজেই অনুমেয় যে, রাশিয়া এবং ইউক্রেনিয়ান এসেটস আন্ডার সেলিং অবস্থায় রয়েছে। ডঃ ফেরানি এক্ষেত্রে বলেন, ইনভেষ্টম্যান্ট এবং রিটার্ন নির্ভর করে স্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতি আর দীর্ঘমেয়াদী ও সহনশীল বিনিয়োগের পরিবেশ বান্ধব বাজার। এখনকার পরিস্থিতিতো ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে। বাজার, বিনিয়োগ ক্রমেই স্থবির ও ঝুঁকির মধ্যে চলে যাবে, যা বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী, জনগণ আর খোলাবাজার সর্বত্রই নেগেটিভ অবস্থা চলে আসবে ধীরে ধীরে।

রাশিয়া, আমেরিকা, ব্রিটেন সকলকেই এর সম্ভাব্য নেতিবাচক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এখনি ভাবতে হবে বৈ কি!

সূত্র: ব্লুমবার্গ, নিউইয়র্ক ষ্টক এক্সচেঞ্জ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট

salim932@googlemail.com
19th march 2014,London।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.