আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জিয়াউর রহমানই প্রথম

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, একাত্তরে যখন কেউ কিছু বলছিল না, তখন জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক বলেই আওয়ামী লীগ তাকে এত ভয় পায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে এ পর্যন্ত সব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে হুঁশিয়ারি দিয়ে বেগম জিয়া বলেন, বর্তমানে গুম, খুন ও প্রতিটি মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সরকারকে একদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

এর আগে মঙ্গলবার লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। কেননা, তিনিই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

৪৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া বক্তব্য দিচ্ছিলেন। 'মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ অহঙ্কার স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান বীরউত্তম' শীর্ষক এ আলোচনা সভায় খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্য দেন। এতে প্রায় সহস াধিক মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন।

সভায় বেগম জিয়াকে 'মুক্তিযোদ্ধা'র খেতাব দিয়ে তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। এ সময় সবাই করতালির মাধ্যমে বেগম জিয়াকে অভিনন্দন জানান।

আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি নয় দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। অবশ্য তাদের কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। শহীদ জিয়াসহ বিএনপির মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে মেনে নিতে পারে না আওয়ামী লীগ। তার নাম শুনলেই আওয়ামী লীগে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। কিন্তু সারা পৃথিবী, বাংলাদেশের মানুষ মেনে নিয়েছে। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন বলেই যুদ্ধ হয়েছে। ইতিহাস থেকে এটি মুছে ফেলা যাবে না।

জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতার ঘোষকই নন, তিনি প্রথম রাষ্ট্রপতি মুক্তিযোদ্ধা।

খালেদা জিয়া বলেন, 'আমি রাষ্ট্রপতির স্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গর্বিত নই, আমি গর্বিত স্বাধীনতার ঘোষক একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে। সেদিন মুক্তিযুদ্ধে দেশের ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক সব শ্রেণীর মানুষ ?অংশ নিয়েছে। তারা অংশগ্রহণ না করলে দেশ স্বাধীন হতো না। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিজেদের দেশকে ছোট করে অন্য দেশের মানুষকে সম্মাননা দিচ্ছে।

এটা ঠিক নয়। '

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আপনারা দেশ স্বাধীন করেছেন। পাকিস্তানের শৃঙ্খল থেকে আরেক দেশের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য কি দেশ স্বাধীন করেছেন? আপনাদের আবার জেগে উঠতে হবে। সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

স্বাধীনতায় অবদান রাখায় বিদেশিদের সম্মাননার সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, বিদেশিদের এমনভাবে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে তাতে মনে হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধই করেনি।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বিদেশিদের প্রতি অতিভক্তি ঠিক নয়। তাদের স্বীকৃতির প্রয়োজন নেই। আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে এ দেশের মানুষ। স্বীকৃতি দিতে হলে দেশের মানুষকেই দিতে হবে।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে শীঘ্রই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বেগম জিয়া বলেন, এখনো সময় আছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।

গুলি করে, হত্যা করে আমাদের থামাতে পারবেন না। জনগণ ফুঁসে উঠছে। জনগণের ক্ষোভ তীব্র হওয়ার আগেই আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। কারণ আপনাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। ৫ জানুয়ারি ও উপজেলা নির্বাচনই তার প্রমাণ।

দুর্নীতিবাজ ও জালিম সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে মুক্তিযোদ্ধাসহ তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আমার পরিবারের ওপর অনেক জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়েছে। কিন্তু কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করিনি। যত দিন বেঁচে আছি দেশ ও জনগণের পাশে থাকব।

বেগম জিয়া বলেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না।

দেশে কোনো বিরোধী দল নেই। এখন রওশন এরশাদও বলছেন তিনিও নির্বাচনে যেতে চাননি। ভেতরে আর কত রহস্য রয়েছে কে জানে? এ সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে দেশের জনগণ ততই ক্ষুব্ধ হবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আলোচনায় বসে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানান বেগম জিয়া।

ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তির প্রতি ইঙ্গিত করে বেগম জিয়া বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কোনো চুক্তিরই বৈধতা দেওয়া হবে না।

কারণ, কোনো চুক্তিই সংসদে পাস করা হয়নি।

সরকারের উদ্দেশে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। আমাদের মুখ খোলাবেন না, যদি খোলান তাহলে আমরাও কথা বলতে বাধ্য হব। '

'৭১ সালের ৭ মার্চ শেখ মুজিব অসাধারণ ভাষণ দিয়েছেন উল্লেখ করে খোকা বলেন, 'দক্ষিণ এশিয়ার তিনজন ব্যক্তি শেরেবাংলা, ভাসানী ও শেখ মুজিবের ভাষণ ছিল ঐতিহাসিক। আমি বলতে চাই_ ৭ মার্চে অসাধারণ ভাষণ দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

তিনি ভাষণের সমাপ্তি টানেন জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান বলে। আজকে শেখ মুজিবের ভাষণের শেষ অংশে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ' তিনি বলেন, 'শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নয়, সমগ্র পাকিস্তানের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়াটাই মুখ্য ছিল। '

বেগম জিয়ার বক্তৃতার আগে বাংলাদেশ পলিসি ফোরাম ক্যামব্রিজ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে শহীদ জিয়ার মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী কর্মময় জীবনের ওপর একটি আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়। বেগম জিয়া তার বক্তৃতাকালে মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ জিয়ার পাশে থেকে কীভাবে সহযোগিতা করেছেন এবং দুই দফায় তার বন্দিজীবনের ইতিহাস তুলে ধরেন।

এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠানে আগতদের অনেকের চোখেই অশ্রু দেখা যায়। বেগম জিয়ার প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বক্তৃতার বড় অংশ জুড়েই ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি ?আহমদ বীর বিক্রম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম, শমসের মবিন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, মেজর জেনারেল (অব.) আইনুদ্দিন বীর প্রতীক, ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, শামা ওবায়েদ, সাদেক খান, এস এম শফিউজ্জামান খোকন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে একাত্তরের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচজনকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

বেগম খালেদা জিয়া তাদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন বিবিসি খ্যাত সাংবাদিক সিরাজুর রহমান, অনারারি লেফটেন্যান্ট (অব.) আবদুল হাই বীর প্রতীক, আবুল হাশেম বীর বিক্রম, বেগম আলম তারা ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। এদের মধ্যে বেগম আলম তারা ও নুরুল ইসলামকে এক লাখ টাকা করে প্রদান করা হয়। এ ছাড়া জিয়াউর রহমানকে মরণোত্তর ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। বেগম জিয়া সেই ক্রেস্ট গ্রহণ করেন।

দর্শকসারিতে বসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, ড. আবদুল মঈন খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য শোনেন।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.