আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুষের জয়!

খাদ্য অধিদপ্তরে লোক নিয়োগে মেধার পরিবর্তে ঘুষেরই জয় হতে যাচ্ছে। যাঁদের কাছে ঘুষ নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের চাকরি হবেই।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়ার জন্য নিয়োগ-প্রক্রিয়ার একপর্যায়ে মৌখিক পরীক্ষার পূর্বনির্ধারিত নম্বর ২০ পরিবর্তন করে ৩০ করা হয়। মৌখিক পরীক্ষা শুরু হলে প্রতিদিন খাদ্য মন্ত্রণালয় ঘুষ দেওয়া প্রার্থীদের তালিকা খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষার পাঁচটি বোর্ডের প্রধানের কাছে পাঠাতে থাকে।
বোর্ডের প্রধানদের প্রতি নির্দেশনা ছিল—মৌখিক পরীক্ষায় তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের কমপক্ষে ২৫ নম্বর দিতে হবে।

আর যাঁরা তালিকাভুক্ত নন, তাঁদের দেওয়া যাবে সর্বোচ্চ ১০ নম্বর। এভাবে লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীদেরও ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় তখন খাদ্য উপপরিদর্শক পদে মৌখিক পরীক্ষা চলছিল।
এর প্রতিকার চেয়ে বিচারপতি ফারাহ্ মাহবুব ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চে গত ৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্নার পক্ষে রিট আবেদন করেন আইনজীবী শাহদীন মালিক।


এরপর গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া আদেশে বলা হয়, খাদ্য পরিদর্শক, উপপরিদর্শক ও সহকারী পরিদর্শক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা ও ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে এবং আদেশ পাওয়ার এক মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য এখন আর নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হবে না। মৌখিক পরীক্ষায় যে প্রার্থীকে ৩০-এর মধ্যে ২৭ দেওয়া হয়েছিল, এখন তাঁকে সমানুপাতিক হিসাব করে ২০-এর মধ্যে ১৮ দেওয়া হবে। একইভাবে যে প্রার্থীকে ৩০-এর মধ্যে ১২ দেওয়া হয়েছিল, এখন তাঁকে ২০-এর মধ্যে ৮ দেওয়া হবে।
এতে কার্যত তাঁরাই চাকরি পাবেন, যাঁদের ঘুষের বিনিময়ে বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল।

কারণ, ৩০-এর মধ্যে পরীক্ষায় যাঁকে যত নম্বর দেওয়া হয়েছিল, এখন সেই নম্বরই ২০-এর মধ্যে সমানুপাতিক হিসাব করে বণ্টন করা হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নিয়োগ কমিটির প্রধান, খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ইলাহী দাদ খান বলেন, হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য তাঁরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চেয়েছিলেন। এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সমানুপাতিক হারে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর বণ্টন করা হবে।
খাদ্য অধিদপ্তরের এই পদগুলোসহ ১০টি শ্রেণীর (ক্যাটাগরি) এক হাজার ৫৫৩টি পদে নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। সর্বশেষ দুটি পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ২৫ মে।

লিখিত পরীক্ষার ফল অল্পদিনের মধ্যে চূড়ান্ত করা হলেও মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এর মধ্যে খাদ্য পরিদর্শকের পদ ৩২৮টি। এই পদে চাকরির জন্য ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০ লাখ টাকা। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটাভুক্ত প্রার্থীর ক্ষেত্রে তা ছিল আট লাখ।
খাদ্য উপপরিদর্শকের পদ রয়েছে ১৭৫টি।

এই পদে ঘুষের অঙ্ক নির্ধারণ করা হয় আট লাখ। মুক্তিযোদ্ধা কোটাভুক্ত হলে ছয় লাখ।
সহকারী উপপরিদর্শকের পদ ৪০৫টি। এই পদের জন্য ঘুষ নির্ধারিত হয়েছিল ছয় লাখ টাকা। মুক্তিযোদ্ধা কোটাভুক্ত হলে দিতে হয়েছে পাঁচ লাখ।


সরকারি সূত্রগুলো জানায়, চাকরি দেওয়া কিংবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তদবির, ঘুষ প্রভৃতি আগেও ছিল। মোট পদের সর্বোচ্চ ২০-২৫ শতাংশ এভাবে চাকরি পেত। কিন্তু বর্তমানে বিশেষ করে খাদ্য অধিদপ্তরের এই নিয়োগের ক্ষেত্রে খুব কম পদেই ঘুষ ছাড়া চাকরি হচ্ছে।
চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে ১০টি শ্রেণীর পদে লোক নিয়োগ করা হচ্ছে তার মধ্যে উপরিউক্ত তিনটি ছাড়াও তত্ত্বাবধায়ক পদে ১৩ জন; হিসাবরক্ষক ১৫; ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পাঁচ; উচ্চমান সহকারী ৫১; নিম্নমান সহকারী ৫০৩; নিরীক্ষক ১৬ ও সহকারী অপারেটর পদে ৪১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

 



সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.