আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (৯)

আমি একজন সরল, সোজা মানুষ। সত্য বলতে, জানতে, জানাতে পছন্দ করি।  ইলমে তাছাউফ যদি ফরয মেনে নেই, তবুও প্রশ্ন রয়ে যায়- পীর সাহেবের কাছে কেন বাইয়াত হতে হবে? ইলমে তাছাউফ অর্জনের সাথে পীর সাহেবের কি সম্পর্ক? - ইলমে তাছাউফ হল ক্বলবী ইলম, যা ফিক্বাহ বা তাছাউফের কিতাবাদি পড়ে কখনো হাছিল হয় না। ইলমে তাছাউফ হাছিল করতে হলে ওলী-আল্লাহ, পীর-মাশায়িখের হাতে বাইয়াত হয়ে উনার নির্দেশ মুতাবিক যিকির-ফিকির ও আমল করতে হয়। আর হাদিছ শরীফ উনার ভাষ্য অনুযায়ী ইলমে তাছাউফ ই হচ্ছে উপকারী ইলম।

কারণ এই ইলম মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফত, মুহব্বত, নৈকট্য, হাকিকত শিক্ষা দেয় যা কিনা বই পড়ে সম্ভব নয়। আর এ পথে পথ-নির্দেশনা ব্যতীত কেউ পথের সন্ধানই পায় না, পথ পেরিয়ে গন্তব্যে পৌছানো তো অসম্ভব। আর তাই ইলমে তাছাউফ অর্জন করতে হলে একজন ওলী-আল্লাহ, পীর, শায়েখ উনার হাতে বাইয়াত হয়ে ছবক-যিকির আদায় করতে হয়; তখন মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় তার অন্তরে ইলমে তাছাউফের ভান্ডার উন্মোচিত হয়। ইলমে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করত হুযূরী ক্বলব হাছিল করা তথা অন্ততপক্ষে বিলায়েতে আম হাছিল করা ফরয। এ ফরয ততোক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হবেনা, যতোক্ষণ পর্যন্ত একজন কামিল মুর্শিদ উনার নিকট বাইয়াত না হবে।

তাই বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারীতে” উল্লেখ আছে যে, যে কাজ বা আমল ব্যতীত ফরযসমূহ আদায় করা সম্ভব হয়না, উক্ত ফরযগুলোকে আদায় করার জন্য সে কাজ বা আমল করাও ফরয। (দুররুল মুখতার) সুলত্বানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই বলেন যে, যার কোনো পীর বা মুর্শিদ নেই তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান। (ক্বওলুল জামীল, নূরুন আলা নূর, তাছাউফ তত্ত্ব) কেউ যদি কোন ওলী-আল্লাহ, পীর সাহেবের কাছে বাইয়াত না হয়ে তাছাউফের কিতাব পড়ে যিকির করে, তবে তার শুধু যিকির করাই হবে, কিন্তু ইলমে তাছাউফ হাছিল হবে না। কেননা, ইলমে তাছাউফ অর্জনের সাথে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করার সম্পর্ক রয়েছে।

আর ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ শুধুমাত্র শায়েখ বা পীর সাহেবের কাছ থেকেই হাছিল হয়। এ সম্পর্কে একটি হাদিছ শরীফ পড়ুনঃ আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত হাদীছ শরীফ শুনে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি সবকিছু থেকে আপনাকে বেশি মুহব্বত করি এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আমার জীবন থেকে এখনও আপনাকে বেশি মুহব্বত করতে পারিনি। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আপনি এখনও মু’মিনে কামিল হতে পারেননি। তখন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সবকিছু ত্যাগ করেও যদি মু’মিনে কামিল না হতে পারি, তাহলে কিভাবে মু’মিনে কামিল হতে পারবো? তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, হে হযরত উমর আলাইহিস সালাম! আপনি আমার কাছে আসুন।

তিনি কাছে গেলেন। নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হাত মুবারক হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সিনা মুবারককে রাখলেন। (তাছাওউফের পরিভাষায় ফয়েজে ইত্তিহাদী দান করলেন) তখন সাথে সাথে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বলে উঠলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এখন আপনার খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ লাভ করার পর আমার এরূপ অবস্থা হয়েছে যে, আপনার জন্য আমি একজন কেন শত-সহস্র উমরও জান কুরবানী করতে প্রস্তুত। সুবহানাল্লাহ! এটাকেই বলে ফয়েজে ইত্তিহাদী যা নায়িবে নবী বা ওরাছাতুল আম্বিয়াগণ ওয়ারিছ স্বত্ব হিসেবে সিনা-ব-সিনা লাভ করেন। তাই হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “আলিমগণ নবীগণের ওয়ারিছ।

” সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেরূপ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ শিক্ষা দিয়েছেন ও ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ দান করেছেন, তাঁর অনুসরণে নায়িবে নবী ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া তথা হক্কানী ওলীআল্লাহগণও স্বীয় মুরীদদেরকে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ শিক্ষা দেন এবং ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ দান করে তাদের অন্তরকে ইছলাহ বা নূরানী করে থাকেন। যেহেতু হক্কানী-রব্বানী ওলীগণই হচ্ছেন- নূরে মুজাস্‌সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নায়িব বা ক্বায়িম মুকাম। মালিকী মাযহাবের ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি বলেন, “যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো কিন্তু ইলমে তাছাউফ অর্জন করলো না সে ফাসিক। আর যে ব্যক্তি ইলমে তাছাউফের দাবি করে অথচ ইলমে ফিক্বাহ স্বীকার করে না সে ব্যক্তি যিন্দিক, আর যিনি ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ উভয় প্রকার ইলমের অধিকারী তিনিই মুহাক্কিক অর্থাৎ হাক্বীক্বী নায়িবে নবী। ” তাই আসুন, সকলে একজন খালিছ আল্লাহ পাক উনার ওলীর হাতে বাইয়াত হয়ে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিলের মধ্য দিয়ে ইলমে তাছাউফ হাছিল করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক ও নৈকট্য হাছিল করার চেষ্টা করি।

মহান আল্লাহ পাক আমাদের কবুল করুন। আমিন পর্ব-৮ পর্ব-৭ পর্ব-৬ পর্ব-৫ পর্ব-৪ পর্ব-৩ পর্ব-২ পর্ব-১ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.