আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

''ঘুরে এলাম ব্লগ ডে'' র প্রোগ্রাম থেকে এসে (নতুনদের অবশ্যই পাঠ্য, কিভাবে ব্লগ ডে নিয়ে পোস্ট দিতে হয়? )

টিভি দেখাটা কমাতে হবে। বিদ্যুত সাশ্রয় হবে। ব্লগে লিখছি প্রায়৩ বছর ধরে। এর আগে কখনো ব্লগ ডেতে যাওয়া হয় নাই। তাই এইবার উঠেপড়ে লেগে গেলাম ব্লগডে তে যাওয়ার জন্য।

অফিসে কোনো ভাবে ছুটি ম্যানেজ করতে পারলেই বেরিয়ে পড়বো, এমন চিন্তা করছিলাম সপ্তাহখানেক ধরে। বুধবারে অফিসে কিছু রুটিনকাজ থাকে, কলিগ জাফর ভাইকে বললাম, আজকে একটু আগে বেরিয়ে পড়বো, আপনি কি কোনো মতে একটু সামলে নিবেন? জাফর ভাই জানতে চাইলো, কি এমন দরকারী কাজ? ব্লগ ডের মতো একটা প্রোগ্রামে যাবো, শুনলে জাফর ভাই কোনো মতেই বের হতে দিবে না,তাই কিছু না বলে একটু মুচকী মুচকী হাসি দিলাম। তিনি মনে করলেন,'' আমি ডেটিং এ যাচ্ছি। '' শেষে বললেন, আর কত এইভাবে চলবে? শুভ কাজটা সেরে ফেলেন। অফিস থেকে ছাড়া পেলাম সাড়ে চারটা বাজে, অফিস সাড়ে ৬টা পর্যন্ত, আমি ২ঘন্টা আগে বের হলাম।

কিন্তু বাইরে মারাত্মক ঠান্ডা, একেবারে জমে যাচ্ছি মনে হলো। রাস্তায় বের হয়ে আক্কেলগুড়ুম, কোনো খালি গাড়ি পাচ্ছি না। না সিএনজি, না ক্যাব, কিছুই নাই। প্রায় আধাঘন্টা রাস্তায় দাড়িয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত এক সিএনজিওয়ালাকে রাজী করালাম গুলশান ১ নাম্বার থেকে শাহবাগ পর্যন্ত, ভাড়া একদাম ৩৫০টাকা। ঐ সিএনজিওয়ালাও আরেক কাঠি সরেন, সে ঢাবির ক্যাম্পাসে যাবে না, বারডেমের সামনে আমাকে নেমে যেতে হবে।

কারণ এক ছাত্রনেতার সাথে সে তাফালিং করেছিলো সপ্তাহখানেক আগে, এখন ক্যাম্পাসে যেতে ভয় পাচ্ছে। তারপর শুরু হলো জ্যামের পালা। মনে মনে ভাবছি, প্রোগ্রাম তো শেষ হয়ে গেল। আমি তো এখনো জ্যামে। জ্যামে বসে থাকতে থাকতে মোবাইলে ব্লগের আপডেট পাচ্ছিলাম রিফু আর পাইলট থেকে।

মনে মনে ঠিক করলাম, আড্ডাতে গিয়েই আগে তাদের ধন্যবাদ দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত যখন শাহবাগে পৌঁছালাম, তখন সন্ধ্যা ৭টা। হেটে হেটে ঢাবির দিকে যাচ্ছি, হঠাৎ পুলিশ থামালো আমাকে। কালকে হরতাল, তাই রুটিন চেকআপ। এই ঠান্ডার মাঝে পুলিশ আমার সোয়েটার খুলতে বললো।

জিজ্ঞাসা করলো, কই যাচ্ছি, বললাম, ব্লগডেতে, আরসি মজুমদার মিলনায়তনে। কিন্তু পুলিশগুলা বেরসিক, তারা ব্লগ কি জানে না। বললো, দেখে তো ভদ্রলোক মনে হচ্ছে,কালকের হরতালের সাথে আপনার কোনো যোগাযোগ আছে? আমি বললাম, না। তারপর কপাল গুনে আমি ছাড়া পেয়ে গেলাম। আড্ডা স্হলে গিয়ে দেখলাম, অনুষ্ঠান চলছে।

মঞ্চে বিশিষ্ঠ ব্যক্তিরা বসে আছেন। কি কি নিয়ে কথা হচ্ছিলো, বুঝার চেষ্টা করলাম। আমি বসলাম একদম পেছনের দিকে, কেউ যদি চিনে ফেলে এই লজ্জা লাগছিলো। এদিক ওদিক খালি তাকাচ্ছিলাম, পরিচিত কেউ আবার আমাকে দেখে ফেললো কিনা?আমার পাশের ২টা চেয়ার ফাঁকাই ছিলো। একটু পর শাল গায়ে দিয়ে এক লোক এসে বসলো।

একটু হাসি বিনিময়। আমি বরাবরই একটু অসামাজিক, বিয়ে বাড়িতে গেলে কারো সাথে কথা বলতে পারি না। কোনো অনুষ্ঠানে গেলে চিপায় বসে থাকি। তাই এইবার ভাবলাম, লজ্জা ভেঙ্গে একটু কথাবার্তা বলা দরকার। পাশের লোকটার বয়স আন্দাজ করার চেষ্টা করলাম, হয়ত আমার থেকে একটু বয়সে বড়ই হবে, সালাম দিলাম।

এর পর কি জিজ্ঞাসা করবো, বুঝতে পারছিলাম না। আমার সালামের শব্দে সামনের সিটের ১টা লাল শাড়ি পড়া মেয়ে বিরক্ত নিয়ে পিছনে তাকালো। বড় ভাইটাকে ফিস ফিস করে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই আপনার নাম কি? উনি বললো, ''দূর্যোধন'' । আমি বললাম, ভাই এই নামে কি এখন মানুষ আছে? তখনই উনি বললো, থুক্কু, আমি তো ব্লগের আইডি বলে ফেলছি। আমার নাম দিদারুল আলম।

আমার নাম জানতে চাইলেন, আইডি। উনি বুঝতে পারলেন, আমি নতুন আসছি। জিজ্ঞাসা করলেন, আইডি সেফ আছে কিনা`? তারপর বললেন, খবরদার, আমার আইডির কথা কাউকে বললেন না। আপনারে ১০০ টাকা ফ্ল্যাক্সি করে দিবো, আপনার টিভির দোহাই, আমার পরিচয় ফাঁস করবেন না। আমি বললাম, ঠিক আছে।

বুঝতে পারলাম না তিনি আসলেই দূর্যোধন কিনা? হতে পারে, উনি আমাকে নতুন ভেবে দূর্যোধন নাম নিয়ে ফাপর দিলেন। দেখা যাক, কালকের মাঝে যদি ১০০টাকার ফ্ল্যাক্সি পাই, তাহলে বুঝতে পারবো, তিনিই দূর্যোধন টাক মাথা একলোক কি কি যেন আবোল তাবোল বলছিলো, সবাই দেখলাম, নিজেদের মাঝে ফিস ফিস করছে। পাশের দিদার ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? দিদার ভাই বললো, ইনি সামুর মডু। এই প্রথম একজন মডুর দেখা পেলাম। জানা আফাকেও দেখলাম।

সেরা ব্লগার এর ঘোষণা হচ্ছে, কিন্তু আমার ঝিমুনি পাচ্ছে, আজকে বিকালের চা নাস্তা খাওয়া হয় নাই। ক্ষিধাও লেগেছে। সেরা পর্বে আমার নাম থাকবে না, সেটা আমি নিশ্চিত, তাই এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করে পরিচিত হবার চেষ্টা করলাম। ২-৩জনকে বললাম, আমি ''টিভি পাগলা''। কিন্তু কেউ আমার দিকে ফিরেও তাকালো না।

বুঝলাম, আমি ব্লগে তেমন পরিচিত না। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। রিফু আর পাইলটের সাথে দেখা করলাম, তাদের বললাম,'' আমি তো তেমন পরিচিত না, ভাই লাইভ আপডেটের কোনো এক চিপায় আমার নামটা ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না?'' পাইলট বললো '' এখন সম্ভব নয়, আগে ভিআইপিদের নাম ঢুকিয়ে দেই, তারপর চেষ্টা করবো আপনার টা। '' বুঝলাম, আমাকে ২ পয়সাও দাম দিলো না। শেষে খানাপিনা, তারপর কয়েকজন গ্রুপ ছবি তোলার চেষ্টা করবে বুঝতে পেরে পালিয়ে আসলাম।

বাসায় ফিরলাম রাত ৯.৫৫। মোবাইলে ছবি তুলেছিলাম কয়েকটা, কিন্তু ছবি গুলো তেমন ভালো না হওয়াতে দিতে ইচ্ছে করছে না। নিজেকে খুব অভাগা লাগছে, তিন বছর ধরে ব্লগে আছি, কিন্তু কেউ আমাকে পাত্তাও দিলো না। এরই নাম কপাল। ভাবছি একটা ফেসবুক আইডি খুলবো টিভি পাগলা'র নামে।

একজনকে বলতে শুনলাম, ফেসবুকে লিয়াজো না রাখলো ব্লগে নাকি জনপ্রিয়তা পাওয়া যায় না। ঘটনাটা কতটুকু সত্যি? যাদের কথা মনে আছে,(যদি ভুল না হয়) কালপুরুষ ত্রিশনকু আরজুপনি কাল্পনিক ভালোবাসা ফারজুল আরেফিন(ব্লগে ক্যাচাল লাগছিলো, মাফ করে দিয়েন। ) ছোটমির্জা তন্ময় কালা মনের ধলা মানুষ। শিপুভাই (মনে হয়) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.