আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন মেট্টোরেল অবশেষে অনুমোদন

অবেেশষে অনুমোদন পেল বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেল প্রকল্প। এর মধ্য দিয়ে ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গেল। অর্থ সংস্থানের জটিলতা কেটে যাওয়ায় একনেকে অনুমোদন পেল এ প্রকল্প। সম্প্রতি জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেয়ায় অর্থ সংস্থান নিয়ে দীর্ঘদিনের জটিলতার প্রাথমিক অবসান হয়। এ প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হলো।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে মোট আটটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এ সব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে ৬ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন সহায়তা হিসাবে ১৯ হাজার ৪০২ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

বৈঠক শেষে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আবদুল মান্নান হাওলাদার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর যানজট নিরসনে প্রায় ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসাবে জাইকা ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা দেবে সরকার। এর বাইরে প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী মেট্রোরেলের ডিপো স্থাপন করার কথা ছিল উত্তরায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জমিতে।

রাজউক জমি দিতে রাজি না হওয়ায় ডিপোটি উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে একটু দূরে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য ২২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় চার হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা বা ৫৯ কোটি ডলার। পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থা অপ্রতুল। ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বমানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে যানজট কমে যাবে।

একই সঙ্গে নিরাপদ, দ্রুত, ব্যয় সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি সমৃদ্ধ গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলবে বিধায় প্রকল্পটির অনুমোদন বিবেচনা করা হোক। পরিকল্পনা কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, মেট্রোরেল প্রকল্পটি ২০২৪ সালে শেষ হবে। এ জন্য আগামী ১২ বছর অর্থ বিভাজন করা হয়েছে। চলতি বছরে খরচ ধরা হয়েছে ৩৫১ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক হাজার ৬৫ কোটি টাকা, এর পরের বছরে ৯৫৩ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭৪৮ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯০ কোটি টাকা। এর পরের অর্থবছরে তিন হাজার ২১১ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তিন হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে তিন হাজার ৯২৩ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে তিন হাজার ৯২২ কোটি টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে তিন হাজার ২১৩ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ কোটি টাকা।

এছাড়া প্রকল্পটি নির্মাণের শেষ অর্থবছরে ব্যয় হবে ১৪ কোটি টাকা। পরিবর্তিত রুট অনুযায়ী, মেট্রোরেল উত্তরা থেকে পল্লবী, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল পর্যন্ত যাবে। পথে স্টেশন থাকবে মোট ১৬টি। মেট্রোরেল ঘণ্টায় গড়ে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। তিনটি পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

প্রথম ধাপে ২০১৯ সালের মধ্যে পল্লবী থেকে সোনারগাঁও পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার চালু করা হবে। এর পরের বছরে হোটেল সোনারগাঁও হতে মতিঝিল এবং ২০২১ সাল নাগাদ উত্তরা হতে পল্লবী অংশে ট্রেন চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে অর্থ সংস্থানের বিষয়ে বলা হয়েছে, মধ্য মেয়াদী বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) আওতায় সড়ক বিভাগে প্রকল্পের বিপরীতে প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থায়ন করতে বলা হয়েছে। যাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা সৃষ্টি না হয়। এর বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।

সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত মেট্রোরেল রেল প্রকল্পে অর্থায়নের গত ৩ ডিসেম্বর জাইকার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আছে। ওই দিন ঢাকা সফররত জাইকার ভাইস-প্রেসিডেন্ট তোশিয়ুকি কোরিওনাগি এই ঘোষণা দেন। আর প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা (ডিটেইল ডিজাইন) প্রণয়ন ও আনুষঙ্গিক পরামর্শ সেবাকাজে অর্থ যোগানোর জন্য প্রাথমিকভাবে ১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। এই অর্থ চলতি বছরই ছাড় করা হবে। এ সময় তোশিয়ুকি কোরিওনাগি বলেন, জাপান সরকার মেট্রোরেল প্রকল্পে মোট ২১০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিবে।

বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে জাপানী জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। প্রকল্পটি শুরু করার জন্য প্রাথমিকভাবে আমরা ১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার দেব। এর পর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বাকি অর্থ আমরা দেব। তিনি বলেন, ঢাকার মতো বড় শহরে মেট্রোরেলের খুব প্রয়োজন। গাজীপুর থেকে ঢাকা আসতে তাঁর সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় ব্যয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেট্রোরেল হলে একই দূরত্বে আসতে আধা ঘণ্টা লাগবে।

ডিটেইলড ডিজাইন করার পর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। তারপরই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। তবে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানা গেছে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.