আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চৈতন্য নিবন্ধ : জীবন নদী বহে নিরবধি, পর্ব: সিগারেট

রহস্যময় গ্যালাক্সি ঘুরে, অসীম আকাশে উড়ে আর সাগরের অতল গভীরে ডুবে আমৃত্যু পান করতে চাই ভালোবাসার অমৃত সুধা... হাত ঘড়িটা আরও একবার দেখে নেয় তমাল। বাম হাতে পরে থাকা এই ঘড়িটা যেন তার অভিভাবকের মতো, প্রতি মুহূর্তেই যেন একটা ছায়া হয়ে পথ চলতে সহায়তা করে। অত্যাধুনিক এই ডিজিটাল যুগেও তার এই ঘড়িটাই যেন সময়াবর্তের মধ্যদিয়ে কত কিছুরই না সাক্ষী হয়ে শোভা পাচ্ছে হাতে। অফিসে ঠিক সময়ে যেতেই হবে কোন ব্যত্যয় ঘটেনি কোনদিনও। ফুটপাত ধরে তাই যথাযথ গতি বাড়িয়ে পদব্রজে ছুটে চলা।

নচিকেতার একটি গানের কথা মনে পড়ে গেল- তুমি দেখেছ কি অগুনতি মানুষের ভীড়ে হেঁটে যাওয়া কোন এক মেয়ে? তমাল মেয়ে না ছেলে তা মূখ্য নয়। তবে সে পরিশ্রমী ও প্রত্যয়ী একজন মানুষ, যার স্বপ্ন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়া শত বাধা বিপত্তিকে পেছনে ঠেলে। প্রতি মুহূর্তেই যে নিজেকে একটি নৈতিক আদর্শের ধারক হবার চেষ্টায় সচেষ্ট। ফুটপাতে হেঁটে চলা মানুষগুলোর কত রকমের যে গতি তা নিয়েও যেন তমালের ভাবনার অন্ত নেই। হাঁটতে হাঁটতে যেন ছায়াছবির চিত্রনাট্য তৈরী হতে থাকে তার মনে।

কত সংলাপ সেখানে। কিছু মেলে কিছু আবার পরাবাস্তব ও অতিবাস্তবতার মিশ্রণে মিশেল। হেঁটে যাওয়া এই পথের সহযাত্রীদের গতিতেও ভিন্ন রকম। সামনের একব্যক্তি এমন ভঙ্গিতে হেঁটে যাচ্ছেন যেন কত সুখে আছেন উনি। এই ধরনের লোকেদের অবশ্য এমনই হতে দেখেছে তমাল।

এই অভিজ্ঞতা পুরোনো। বাম হাতে তার কোন ঘড়ি পরা নেই। কোন তাড়াও লক্ষ্য করা গেল না। অথচ প্রায় অনেকেই ঢাকা শহরের সকালের এই পিক আওয়ারে তাড়াহুড়ো করেই সকালের বাজার, নাশতা, অফিস সব কিছু সারেন। লোকটির ডান হাতে সিগারেট।

ফুঁকছে। গতির কারনে ধোঁয়া যথানিয়মে পেছন দিক হয়ে আরও পেছনে চলে যাচ্ছে। তমালের মুখে চোখে এসে সিল্কি ওড়নার মতো স্পর্শিত হয়। মুহূর্তেই যেন এ্যাকচ্যুয়্যাল পিক্সেলের ইমেজে ফটোশপের ব্রাশের মেঘ। বিরক্তিতে মুখভঙ্গির ভূগোল পরিবর্তিত হলো তমালের।

ডানে বামে আরও লোকজন তারাও বিভিন্ন গতিতে হাঁটছে গন্তব্যে পৌঁছানোর তাগিদে। সিগারেটের ধোঁয়া অন্যদের মুখেও স্পর্শ করেছে কিন্তু নিরুত্তাপ সবাই। তমালও নিরুত্তাপ। কিন্তু ভেতরের উত্তাপ যেন ফুঁসে উঠছে সুনামির বেগে। ইচ্ছে করছিল এখনই লোকটাকে দাঁড় শাসিয়ে দিতে।

কত স্বাধীন আপনি! ব্যস্ত শহরের ফুটপাতে সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন বীরের মতো। একবারও ভাবনায় আসলো না বামে ডানে পেছনেও মানুষ আছে। তাদেরও পছন্দ অপছন্দ আছে। প্রকাশ্যে জনসমক্ষে বা যেখানে জনসমাগম হয় এমন স্থানে সিগারেট তথা ধূমপান করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ এটা একবারও স্মরণে আসলো না? যে ধূমপানে অভ্যস্ত নয় তার জন্য ধূমপানের ফলে নিসৃত ধোঁয়া কতটা বিরক্তিকর আর বিব্রতকর! অনেক কিছু বলার ছিল কিন্তু তমাল কিছুই বলতে পারলো না। দুইহাত দিয়ে জলে সাঁতার কাটার ভঙ্গিতে ধোঁয়া সরিয়ে এগিয়ে যেতে উদ্যত হওয়া মাত্রই লোকটি সিগারেটের ছাই ঝেড়ে ফেলল।

পেছনে কোথায় সিগারেটের ছাই পড়ল তা নিয়ে কোন মাথাব্যথাই ছিল না লোকটির। তমালের ইস্্ির করা শার্টের বামপাশটায় ছাই এসে লাগল। শ্বেতশুভ্র রঙ। আজই একটা মিটিং আছে অফিসে। ভিনদেশী ডেলিগেটরগণ থাকবেন।

প্রেজেন্টেশন আছে। মাত্র পাঁচ মিনিটে আকর্ষণীয় আলোচনা উপস্থাপনের ব্যাপার। ওইটুকু সময়েই চব্বিশ বছর বয়েসী প্রতিষ্ঠানের আদ্যোপান্ত সারসংক্ষেপ করে তুলে ধরতে হবে। বিষয়টা অনেক রিস্কি এবং চ্যালেঞ্জিংও বটে। এই সমস্ত বাস্তবতা সিগারেট ফোঁকা ওই ভদ্রলোক(?) বোঝেন কি না? মেজাজটা চরমভাবে বিগড়ে যাওয়ার মতো হলো তমালের।

কিন্তু কিছুই বলা বা করা হলো তার। কারন, তাকে লেকচার শোনানোর সময় তো তার কাছে নেই। তাছাড়া এই ধরনের অসঙ্গতিগুলোর সমাধানের জন্য তো সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন ব্যবস্থা আছে। অনেক ভাবনার মাঝে সম্বিৎ ফিরে পেয়ে তমাল নিজেকে আবিষ্কার করে তার অফিসে। কাকা আপনি যদি এটা করেন আমরা কোথায় যাবো? এমন কথা শুনে হঠাৎ মুখ তুলে তাকায় তমাল।

দৈনিক পত্রিকার একটা শিরোনামে চোখ আটকে ছিল তার। সিগারেটের ছুঁড়ে ফেলে দেয়া পেছন ভাগের অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত। পুড়ে গেছে ঘর, আহত গৃহপালিত পশু, মানুষ। মুখ তুলতেই প্রসঙ্গ সিগারেট! বাস ভর্তি ঠাসা মানুষ। ঢাকার পাবলিক বাস।

মাঝখানের খানের হাঁটার অংশটি লোকে লোকারন্য। ভাবখানা এমন যেন গুদামে আলুর বস্তা রাখার মতো করে যাত্রী তোলা গেলে তাও যেন করতো বাসের কন্ডাক্টর হেলপার ড্রাইভাররা। এমন একটা অবস্থায় এক মুরুব্বী কাকা বাসের ডানপাশে জানালার কাছে বসে থাকাটা একদম পানসে মনে করছিলেন আর তাই সিগারেট বের করে আয়েশ করে তা ফুঁকতে শুরু করলেন সবার সামনেই। বোধ শক্তি সব যেন লোপ পেল আসক্তির কাছে। তমালের এক বন্ধু রাজন একবার ক্যাম্পাসের কোন এক আড্ডায় নির্মমভাবে সত্য উক্তিটিই এমন ভাবে বলেছিলেন যারা সিগারেট পান করে তাদের উদ্দেশ্যে- তুই ব্যাটা সিগারেট খা, বিড়ি খা, ভাঙ খা, গাঁজা খা আর মদই খা যা-ই খাস না কেন আড়ালে খা না, খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যা, মরে যা, নরকের গহীনে গিয়ে বিভৎস চিৎকারের গর্জন নিজে শোন্ কোনো আপত্তি নেই কিন্তু জনসমক্ষে বা অন্যদেরকে এর সাথে পরিচিত করবার বা সম্পৃক্ত করবার কোন অধিকার তোকে দেয়া হয়নি! কথাগুলো খুব কর্কশ শোনালেও যথার্থ অনুভূতিই ব্যক্ত করার চেষ্টা করেছেন তমালের এই বন্ধু রাজন।

সর্বোপরি যারা জেগে ঘুমায় তাদের ঘুম ভাঙ্গানো নিশ্চয়ই কঠিন। তমাল সাধারন, খুবই সাধারন একজন নাগরিক এই দেশের। কিন্তু ভাবনা গুলো বিশাল, গভীর অর্থবহ। ছোট্ট একটা সংসার তার। বাসাটা দখিনা হওয়ায় বাতায়নে প্রকৃতির মিষ্টি হাওয়া যেন প্রাণের পরশ ছুঁইয়ে দেয়।

সুললিত আজানের মধুর ধ্বনি যেমন ভেসে আসে পাঁচটি প্রহরে তেমনি নাগরিক কোলাহলও স্মরণ করিয়ে দেয় বাস্তবের জটিল সময়গুলোকে। এই বাতায়ন গলিয়ে দেখা রাতের আকাশটাকেও স্বচ্ছ লাগে খুব। চাঁদনী রাত হলে তো কথাই নেই। রুনালায়লার গানের মতো করে বলতে ইচ্ছে করে- জান্লা খুলে দেখ না/শঙ্খ সাদা জোসনা/রেখো না আড়াল করে/ আমাকে অন্ধকারে...। কিন্তু গানের এই লাইনগুলোর শেষ অংশ ‘অন্ধকার’ শব্দটির মতোই সত্য আর সুন্দরের মাঝে ভয়ানক অপ্রত্যাশিত শব্দগুলোই যেন প্রতি ক্ষণে আমাদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়।

শয়তানের মতো বর্ধিত নখর প্রকাশিত করে উপহাস করে আমাদের। তমালদের। বলে- অতো সাবলিল নয় এ পার্থিব পথ। জানালার পাশের এক বাড়ির ভাড়াটে, বারান্দা থেকে তমালের বাতায়ন দৃশ্যমান। তিন বছর ধরে হার্টের রোগে ভুগছেন বয়স্ক ভদ্রলোক।

প্রায়ই উনি উনার বারান্দাটা উপভোগ করেন সিগারেটের সাথে সঙ্গী করে। এমন বয়সে কি আর বা করবেন উনি যদি প্রচন্ড প্রত্যয় তার মধ্যে গ্রথিত না থাকে। আত্মবিশ্বাসী লোকেরা কি সিগারেট পান করে? কোন নির্ভরতা খোঁজে? কোন বিব্রত অনৈতিক জড়ের সাথে সঙ্গ করে? এলোমেলো প্রশ্নগুলো গুছিয়ে গুছিয়ে তমালের মস্তিস্কে ফরম্যাট হয়। নাকে আসে হাসনা হেনা, রজনীগন্ধার সুরভী নয়, সিগারেটের দুর্গন্ধ! অফিসের ছেলেটিকে তমালের মন্দ লাগে না। কিন্তু কিসে যেন পানসে মনে হয়।

তার অবয়বে যেন অস্থিরতা প্রকাশিত হয়। ছেলেটিকে সামনে বসতে বলে। না ছেলেটি বসে না। বসতে পারে না। কেন? অভয় দেয় তমাল।

কোন হ্যাসিটেইট করো না, আমি বলছি বসো। কথা আছে। না বসে না ছেলেটি। সামনে না বসলেও তমাল ঠিকই বুঝতে পারে সহজেই, ছেলেটি সিগারেটে আসক্ত। একটা বিষয় লক্ষ্য করেছে তমাল, রানা কখনোই তার মুখোমুখি কথা বলতেও চায় না।

আশ্চর্য ব্যাপার! কেন? কোন অসুস্থতা তার? নাকি তমালকে খুব বেশি শ্রদ্ধা করে? নাকি ভয় পায়? না কোন উত্তরের সাথে মেলাতে পারে না তমাল। তবে কিছু ছোট ছোট ঘটনার সাথে তা মিলে যায় যেমন- অফিসের কিছু সহকর্মী আছেন যারা সকাল ১১টায়, দুপুর ১২টায়, লাঞ্চের পর পর, দুপুর ৩টায়, ৪টায়, ৫টায় এবং অফিস শেষ হবার আধাঘন্টা আগে অফিস থেকে বের হয়ে অফিসের বাইরে যায়। যদি জানতে চায় তমাল তখন উনারা বলেন- এই তো বাইরে থেকে আসছি...। এই বাইরে যাওয়ার অর্থ সহজেই হয়তো বোঝা যায় কিন্তু তা কখনোই তারা নিজে থেকে বলতে পারে না। যা বলতে এতো দ্বিধা তা কেন করা? আর এটাকে নির্ভর করে অফিসের কাজের সময়টাকে নষ্ট করার অন্যায় উপায়টিকে তো আর উপেক্ষা করা যায় না! তমালের জীবনে মেয়ে বন্ধু ছিল না তা না।

এই মেয়ে বন্ধু থাকার ফলে তার অভিজ্ঞতার ঝুলিও ভারি হয়েছে। জীবনের আঁকা বাঁকা পথের প্রতিটি বাঁক, মোড়ের খবরাখবর জানতে, বুঝতে কতকিছুর সাথেই না পরিচিত হবার প্রয়োজন আছে। এলোচুল অথচ পরিপাটি, শান্ত, বিনয়ী, স্মার্ট, সুন্দরী, শিক্ষিতা, খান্দান বংশের এই মেয়েটির মুখ থেকেও তমালকে প্রায়ই শুনতে হতো- এ্যাই শোন, ছেলেরা একটু আধটু সিগারেটে অভ্যস্ত না হলে স্মার্ট লাগে না। কোন এক গানের অনুষ্ঠানে অনেকদিন ধরে অধূমপায়ী হিসেবে জানা বন্ধুদেরকেও ধূমপান করতে দেখেছে তমাল। অনেকদিন ধরে বয়ে বেড়ানো মূল্যবোধকেও মানুষ নিমিষেই বিলিন করে দিতে পারে? তাহলো এর চেয়েও বড় কোন নৈতিক স্খলনও নিশ্চয়ই মানুষ হঠাৎ করেই করে ফেলতে পারে! ব্যাপারগুলো ভয়ংকর ঠেকে তমালের কাছে।

ছোটবেলার কথা, তমাল তখন হাইস্কুলে পড়ে। ছত্রিশ বাই চৌষট্টি কটনের ইস্রী করা শার্ট পরনে স্কুল থেকে কান্ত হয়ে ফিরে বাবার কাছে স্কুলের পরীক্ষার রেজাল্টশীট দেখাতে যাওয়া মাত্র বাবা গম্ভীর সুরে বলে উঠলেন- কি রে ফলাফলের মান তো নিচে নেমে যাচ্ছে, আজকাল বোধ হয় নতুন নতুন বন্ধু জুটেছে তোর? তমাল আশ্চর্য হয়ে বলল- কেন বাবা? আমার বন্ধুদের আচরণ কি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে? বাবা- না, ইদানীং ছোট ছোট পোড়ার ছিদ্র দেখতে পাচ্ছি শার্টের কলারের কাছে। শার্ট খুলে ভালো করে দেখলো তমাল। হ্যাঁ তাই! -বাবা, আজ হাটবার ছিল, তাই মনে হয় বাজারের ভেতর দিয়ে আসার সময় কারো সিগারেটের বা বিড়ির আগুন আমার শার্টে লেগেছে। অথচ তুমি আমাকে আর আমার বন্ধুদের সন্দেহ করছ।

বাবার এই সন্দেহ হতেই পারে, কারন আরো ছোটবেলাকার অর্থাৎ প্রাইমারী স্কুলের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল তমালের, তখন সে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। স্কুলের কয়েকজন বন্ধুকে দেখলো পাটকাঠি দিয়ে ছোট্ট করে সিগারেটের মতো করে ভেঙ্গে সিগারেট বানাতে। তখন একটি, দু’টি বিড়ি ফ্যাক্টরীর নাম বেশ শোনা যেতো- বাদশা বিড়ি আর আজিজ বিড়ি তার মধ্যে অন্যতম। আজিজ বিড়ির ফেলে দেয়া কাগজের মোড়ক নিয়ে ওই বন্দুরা এই পাটকাঠি দিয়ে বানানো বিড়িগুলো ভরে একেকটা বিড়ির প্যাকেট বানাতো। বাবার কাছ থেকে চুরি করে শেষ হয়ে যাওয়া দেয়াশলাইয়ের বক্সে কয়েকটা দেয়াশলাই নিয়ে তা দিয়ে লুকিয়ে চুরিয়ে ধূমপান করার খেলা খেলত।

কে জানে এইভাবেই হয়তো শুরু হয় ধূমপানের অভ্যাস। সে সময় গ্রামে এটা প্রায় সবসময়ই হয়েছে যে কাউকে দিনমজুর হিসেবে কাজে নিলে তাকে বেশী করে মরিচ দেয়া ঝাল তরকারীর সাখে দুইবেলা গরম সাদা ভাতের খাবার আর সারাদিনে দুই প্যাকেট কড়কড়ে বাদশা বা আজিজ বিড়ির প্যাকেট ধরিয়ে দিলে ভাওইয়া গান গাইতে গাইতে ক্ষেতে কাজ করতো এই মুটে মজুরেরা। তমালের কাছে মনে হতো এটাাই বোধহয় স্বাভাবিক সাধারন নিয়ম। বাবার আদেশে তাকেই মাঝে মাঝে ওই বিড়ির প্যাকেটগুলো কিনে আনতে হতো পাশের দোকান থেকে। কি মজা ছিল ওই বিড়িগুলোতে? এখনো প্রশ্ন হয়ে ফেরে তমালের কাছে।

এখনো আধুনিক ছেলেরা এটার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। কলকাতার এক জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী কবির সুমন এর বিখ্যাত গান- প্রথমত আমি তোমাকে চাই/দ্বিতীয়ত আমি তোমাকে চাই/শেষ পর্যন্ত আমি তোমাকে চাই...। এই গানটি নাকি কোন মানবীকে ইঙ্গিত করে নয় সিগারেটকে উদ্দেশ্য করে! সিগারেট এতো নিশ্চিত প্রয়োজনীয় একটি পানীয়? লেখাটির শুরুতেই নচিকেতার একটি গানের লাইন ব্যবহার করা হয়েছে, এই নচিকেতা অনেকেরই প্রাণের সঙ্গীত শিল্পী, তমালের কাছেও তাই কিন্তু এই শিল্পীই যখন সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে সমাজের দুষ্ট ক্ষতগুলো সুরে সুরে মধুর অনুরণন তুলে ব্যক্ত করেন তখন মনে হয় যেন উনি বলতে চাইছেন- আমার খাসিয়ত মেনো না, আমার নছিহত মানো। নিজে চেইন স্মোকার হয়ে সমাজের দুষ্ট ক্ষতগুলোর কথা বলা, সমাজকে পরিবর্তন করে দেবার কথা বলা সেল্যুকাসই বটে। মনে পড়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কথা।

কোন এক বালককে মিষ্টি খেতে বারন করার কথা বলতে যেয়ে উনি ওই ছেলের মায়ের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। নিজে মিষ্টি খাওয়া ছেড়ে দিয়ে তারপর হযরত ওই ছেলেটিকে মিষ্টি খাওয়ার ব্যাপারে বারন করেছিলেন। বৈধ প্রিয় বিষয়ও ত্যাগ করতে হয় কাউকে উপদেশ, আদেশ, পরামর্শ দেবার ক্ষেত্রে। অথচ অনেক অসঙ্গতি, অনৈতিকতাকে দূরে ঠেলবেন কোনো একটি বা একাধিক অনৈতিক বা অবৈধ বা দুষ্টক্ষতকে পাশাপাশি রেখে তা কিভাবে হয়? ভাবনাগুলোতে ছেদ পড়ে। হঠাৎ আড়মোড় ভাঙ্গে তমালের।

স্বপ্নে নাকি বাস্তবে কিছুটা সময় লাগছে বুঝতে। চারপাশে আলোক রশ্মি বিচ্ছুরিত হচ্ছে, চোখ ধাঁধাঁনো আলো। তাকানো যাচ্ছে না। চোখদু’টো সময় নিচ্ছে এই আলোর সাথে সমন্বতি হতে। হ্যাঁ ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে।

স্পষ্ট হচ্ছে ঝলকানি আলোর প্রত্যেকটি কনা। দৃশ্যমান হচ্ছে সকল পবিত্র বাস্তবতা। এ এক নতুন ধরাধাম যেখানে প্রবাহিত স্নিগ্ধ সুবাতাস কোমল পরশ বুলিয়ে দেয়। স্বপ্ন দেখায় ধনাত্মক গতিময় এক নৈতিক আদর্শের পৃথিবী গড়ার প্রত্যয়। গানে গানে তাই ধ্বনিত হয়- একদিন ঝড় থেমে যাবে/পৃথিবী আবার শান্ত হবে/বসতি আবার উঠবে গড়ে/আকাশ আলোয় উঠবে ভরে/জীর্ণ মতবাদ সব ইতিহাস হবে/পৃথিবী আবার শান্ত হবে।

*** ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।