আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিষ্ময়ে আর জাগেনা প্রান, মাঝে মাঝে 'তব্দা' খাই

আমার কিন্তু স্বপ্ন দেখতে আজও ভাল লাগে । শীতের সকালে আয়েশ করে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছি । আজকে বাসায় কেমন যেন শান্তি শান্তি বিরাজ করছে । হুমম, বাচ্চাদের আজ স্কুল নেই মনে হয় । নইলে কাকভোর হতেই বাসায় শুরু হয়ে যায় চিৎকার চেঁচামেচি ।

টেনে হিচড়ে বাচ্চা দুটোকে ঘুম থেকে তোলা হয়, ওরাও যেন পণ করে থাকে একটা লংকা কান্ড না ঘটা অবধি চোখ খুলবেনা । তারপর পিচ্চি দুটোকে ফ্রেশ করিয়ে, খাইয়ে, স্কুল ড্রেস পড়িয়ে, স্কুল ব্যাগ গুছিয়ে শেষে আমার ডাক পড়ে । ওদের স্কুলে পৌছে দিয়ে আসার দায়িত্ব আমার । ঐ পুরো প্রক্রিয়ায় আমার মিসেসের প্রায় দুই ঘন্টা সময় লাগে । আর অবধারিত ভাবেই এই দুই ঘন্টা তার মুখ দিয়ে আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত লাভা বের হতে থাকে ।

এই সময়টাতে ঘুমানোর প্রশ্নই উঠেনা, তবুও ঘুমের ভান করে পড়ে থাকি । ভয়ে আতংকে বুক ডিবডিব করে, কখন জানি ঐ আগুনে গোলা বাচ্চাদের রেখে আমার দিকে ছুটে আসে । বালিশে মাথা রেখে আরেকটা বালিশকে জড়িয়ে ধরে কাঁথা মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে শুয়ে ভাবছি, বাচ্চাদের স্কুল না থাকলে নিশ্চিত আমার উপর বাজারে যাওয়ার ফরমান আসছে । খট খট আওয়াজ পেলাম, আমার মিসেস শুবার ঘরে এসেছে । মনে মনে ঈশ্বর নাম জপ করছি, শীতের সকালে কাঁচাবাজারে যেতে একদম ইচ্ছে হচ্ছেনা ।

এমন সময় তিনি কথা বলে উঠলেন, অবাক ব্যাপার তার সেই পরিচিত ঝাঁঝ নেই, স্বর অবিশ্বাস্য মোলায়েম । "এ্যাই উঠো, এখনো শুয়ে আছো কেন ?" বড় কোন ঝড়ের আশংকায় আমি প্রমদ গুনছি, মোলায়েম আওয়াজে বড়ই আজিব লাগছে । তিনি আবার বলে উঠলেন, "উঠো, তোমার জন্য চা করেছি । বিছানায়ই দিবো ?" আমি এক লাফে শুয়া থেকে উঠে বসে বড় বড় চোখ করে অবাক হয়ে মিসেসের দিকে তাকিয়ে থাকলাম । তিনি হেসে দিয়ে বললেন, "ভিরমি খেলে নাকি !!" ভিরমি খাব না ? এই সাত সকালে আমার বউ চায়ের এন্তেজাম করেছে, তাও আবার বিছানায় শুয়ে-বসেই চা-পানের অনুমতি দিয়েছে !! লাস্ট কবে জানি সকালে চা চেয়েছিলাম, মুখের উপর ঝামা ঘষে দিয়ে বলেছিলো, "বেড-টি খেতে চাইলে আরেকটা বিয়ে কর ।

বাচ্চাগুলোকে রেডি করতেই আমার জান শেষ, আরেকটা বউ থাকলে পেয়ার-মহব্বতের সহিত বেড-টি খাওয়াতে পারবে । " এরপর থেকে বেড-টি নামক বস্তুটাকে আর স্বপ্নেও কল্পনা করার সাহস আমার হয়নি । তাই আমার বউয়ের বেড-টি অফারে আমি পুরাই 'তব্দা' হয়ে গেলাম । আমার তব্দা খাওয়া সকাল দ্রুতই ফুরিয়ে অফিস যাওয়ার সময় হয়ে এলো । পাংচোয়াল হিসাবে অফিসে আমার একটা সুনাম আছে ।

দশটা বাজার প্রায় দশ মিনিট আগেই অফিসে পৌছে গেলাম । এইসময় অফিস মোটামোটি ফাঁকাই থাকে । নিচের তলার লন পেরিয়ে দোতলায় আমার রুমে যাওয়ার জন্য সিঁড়ির দিকে যাচ্ছি । এমন সময় পারচেজ ডিপার্টমেন্টের রমজান সাহেব আমাকে সালাম দিলেন, 'আসসালামুআলাইকুম স্যার, গুড মর্নিং । ' সালাম দিয়ে রমজান সাহেব তার বত্রিশ খানা পান খেয়ে কালো হয়ে যাওয়া দাঁত বের করে হে হে করে হাসতে থাকলেন ।

আমি সালামের উত্তর দিয়ে সালাম সাহেবের সামনে দাঁড়ালাম । এটা কি করে সম্ভব !! রোজ আধ ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা দেরি করে অফিসে আসা রমজান সাহেবের পার্মানেন্ট রুটিন । শত পানিশমেন্ট আর বকাবকি করেও তার এই বদ অভ্যাসের পরিবর্তন আনা যায়নি । আমার বস শেষমেষ আমাকে ঈশারায় বলেছেন, 'বাদ দাও । বিশ বছর ধরে এভাবেই সে চাকরি করছে ।

কোম্পানীর কোন ডিরেক্টর জানি তার আত্মীয়, তাই খামোকা তার পিছনে বৃথা শ্রম ব্যয় না করাই ভালো । ' আমি তাই অবাক হয়ে বললাম, কি ব্যাপার রমজান সাহেব আজ এত ভোরবেলায় অফিসে ? রমজান সাহেব হেহে করে আবার তার বত্রিশ খানা দাঁত বের করে জবাব দিলেন, "স্যার কথায় আছে না, আরলি রাইজ এন্ড আরলি স্লিপ ইজ গুড ফর হেল্থ । একটু স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার চেষ্টা করছি আর কি, হেহেহে । " আমি রমজান সাহেবের গনেশের মত বিশাল স্বাস্থ্যবান ভূড়ির দিকে তাকিয়ে আবার তব্দা খেলাম । অফিসে একটানা কাজ করে যাচ্ছি ।

দুইটা প্রজেক্ট ফাইল এই সপ্তাহের মধ্যেই রেডি করতে হবে । আমার বস পাঁইপাঁই করে বলে দিয়েছেন কোন ভূল-ত্রুটি করা চলবেনা । আমি যেন এক্সিকিউটিভদের উপর নির্ভর না করে নিজেই কাজগুলো করি । অফিসের দ্বিতীয় কর্তা অর্থাৎ ম্যানেজার অপারেশন্স হিসাবে এমনিতেই সব কাজের দেখভাল আমাকে করতে হয় । আমার বস খুব ব্যস্ত মানুষ, মানে কর্পোরেট অফিসের সাথে লিঁয়াজো আর ডিরেক্টর-এমডি-জিএমদের সাথে মিটিং-সিটিং এইসব আর কি ।

অফিসে তিন জন এক্সিকিউটিভ আছেন, বছর খানেক হলো তারা জয়েন করেছেন । তিনজনই ইয়াং স্মার্ট ব্যাচেলর, ফ্যাশন সচেতন আর কথা বলা বা এক্সপ্রেশন প্রকাশের ভংগি পোস্ট মডার্নড । এদের মাঝে মেল এক্সিকিউটিভ দুজন চটপটে, কাজ বুঝিয়ে দিলে ভালই করে । কিন্তু ফিমেল এক্সিকিউটিভ পুরাই পাঙখা, একে্তো সুন্দরী তার উপর বাকী দুই জন তার ব্যাপারে খুবই কনসার্ন । মানে উনাকে যদিওবা কিছু কাজ দেয়া হয়, বাকী দুজন এটাকে তাদের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য মনে করে সব দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে ।

আর এই সুযোগে ম্যাডাম সারা অফিসময় পাঙখা হয়ে ঘুরে বেড়ান । উনার আবার আমার বসের সাথেও বেজায় খাতির । সবার সামনেই বসের টাইয়ের ম্যাচিংয়ের প্রশংসা কিংবা ভাবীর রুচিবোধের প্রশংসা করে বসের কালো কপোল সলাজ-লাল করে দেন । এক্সিকিউটিভ রুমানা আমাকে খুব একটা পাত্তা দেয় বলে হয়না, যদিও আমি উনার রিপোর্টিং অথরিটি । আমিও উনাকে খুব একটা সহ্য করতে পারিনা ।

ম্যানেজার অপারেশন্স হিসাবে ছুটিছাটার দায়িত্ব আমার । কিন্তু রুমানা আমাকে ডিঙিয়ে দিব্যি বসের কাছ থেকে সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলে । রুমানার উপর আমার রাগের আরও কারন, বাকী দুই এক্সিকিউটিভের সাথে সারাক্ষন আড্ডা দিয়ে অফিসটাকে টিএসসি'র লন বানিয়ে ফেলা । টানা কাজ করে সাড়ে তিনটার দিকে রুম থেকে বের হলাম, লান্চ করারও সময় পাইনি । অফিসের ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে গেছে, বাইরে কোথাও গিয়ে খেয়ে আসতে হবে ।

ক্ষিধে ভালোমতোই চেগে উঠেছে । নিচে যাওয়ার জন্য সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যেতেই দেখি সামনে রুমানা দাঁড়িয়ে আছে । আমাকে দেখেই একটা কৃত্রিম হাসি দিয়ে কাছে এসে বললো, "স্যার আজকে লান্চ করা হয়নি, তাইনা ?" আমি বললাম, 'ওয়ার্ডার প্রসেসটা শেষ না করে বেরুতে পারছিলাম না । এখন যাচ্ছি লান্চ করতে । ' বলেই রুমানাকে কাটিয়ে সিঁড়ির দিকে হাটা দিলাম ।

পেছন থেকে রুমানা হঠাৎ করে বলে উঠলো, স্যার আমি আপনার সাথে আসি ? রুমানার কথা শুনে আমি রীতিমত থতমত খেয়ে গেলাম । বিড়বিড় করে বললাম, 'না না থাক, আমি একাই যাচ্ছি । ' রুমানা মুচকি হেসে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো, "স্যার, আমরা কি একদিন একসাথে লান্চও করতে পারিনা ? আচ্ছা ঠিক আছে, আজকের লান্চটা না হয় আমিই করাবো । এখন বলেন কোথায় লান্চ করতে চান ?" আমি বিষ্ময়ে রুমানার হাসি হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । হঠাৎ করে মনে হলো, আজকে কত তারিখ যেন ।

মোবাইলটা হাতেই ছিলো, ডিসপ্লেতে দেখি ১২-১২-১২ !!! আজকে শুধু আমার 'তব্দা' খাওয়ারই দিন...। 'তব্দা' খাওয়াময় এই বিশেষ দিনে ঐ বুড়ো ডাক্তার সাহেবের কথা খুব মনে পড়ছে । তাহলে গল্পটা বলেই দেই । মানসিক হাসপাতালে একজন নতুন রোগী ভর্তি হলো । তো যেটা হয়, অন্যান্য মানসিক রোগীর মত তিনিও নিজেকে সম্পূর্ন সুস্থ বলে দাবী করলেন ।

কিছুদিন পর দেখা গেলো তার মাঝে আসলেই তেমন কোন অস্বাভাবিকতা নেই । তিনি নিজেই অন্য রোগীদের সেবা-শশ্রুষা করেন, সব কাজে স্টাফদের হেল্প করেন । তাই কর্তৃপক্ষ তাকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল । নিয়ম অনুসারে উনাকে একটা মেডিকেল বোর্ডে ইন্টারভিউ দিতে হবে । ওখানে পাশ করলেই চুড়ান্ত ছাড়পত্র মিলবে ।

মেডিকেল বোর্ডে বেশ কয়েকজন ডাক্তার বসেছেন । সবচেয়ে ইয়াং ডাক্তার উনাকে বললেন, "আমরা আপনার আচরনে খুশি, তাই আপনাকে ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করছি । " ভদ্রলোক ডাক্তার সাহেবকে অনেক ধন্যবাদ দিলেন । আর এটাও বললেন তার নিজের স্ত্রী ষড়যন্ত্র করে তাকে মানসিক রোগী সাজিয়ে এখানে পাঠিয়েছে । এবার আরেকজন ডাক্তার প্রশন করলেন, "এখান থেকে বের হয়ে আপনি কোথায় যাবেন ?" লোকটি বললো এখান থেকে বের হয়ে বাড়ি যাবার আগে সে একদিন একটা ভালো হোটেলে রাত কাটিয়ে যাবে ।

ডাক্তার সাহেব ভাবলেন, এটা স্বাভাবিক । বাড়ির মানুষেরা তার সাথে ভালো আচরন করেনি, তাই হয়ত হোটেলে দুই-একদিন থেকে রিফ্রেশ হতে চাইছে । এবার আরেকজন ডাক্তার প্রশ্ন করলেন, হোটেলে আপনি কি করবেন ?" লোকটি বললো, "দামী একটা ওয়াইন আর সুন্দরী একটা কলগার্লের অর্ডার দিবো । " ডাক্তার সাহেব এটাকেও স্বাভাবিক ভাবলেন, ওয়াইন আর সুন্দরী কলগার্ল চাওয়া স্বাভাবিক আচরনের ভিতরেই পড়ে । এবার আরেক জন প্রশ্ন করলেন, "তারপর আপনি কি করবেন ?" ভদ্রলোক বললেন, প্রথমে ওয়াইন খাব তারপর মেয়েটার জামা-কাপড় একটা একটা করে খুলে ফেলব ।

" উনার এই উত্তরে ডাক্তার সাহেবদের গাল লাল হয়ে গেলো । কেউ কোন কথা বলছেন না, 'তারপর কি করবেন' জাতীয় কোন উজবুকি প্রশ্ন করার সাহস আর কারো হলোনা । ওদিকে সবচেয়ে বুড়ো ডাক্তার সাহেব অনেকক্ষন ধরে এই রোগীর ফাইল নেড়েচেড়ে দেখছিলেন । তিনি এবার চশমার ফাঁক দিয়ে ভদ্রলোককে ভালো করে দেখে নিলেন এবং বললেন, "আচ্ছা, এরপর আপনি কি করবেন ???" ভদ্রলোক এবার সপ্রতিভ হয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে হাতের দুই আঙুলে 'ভি' চিহ্ন বানিয়ে বললেন, "মেয়েটার প্যান্টি থেকে রাবার খুলে গুলতি বানিয়ে ওর উপর শ্যুটিং প্র‌্যাকটিস করব, শিঁউঁউঁউঁউঁ........। " রোগীর কথা শুনে ঐ বুড়ো ডাক্তার সাহেব আমার চেয়েও বেশি 'তব্দা' খেয়েছিলেন কিনা, জানিনা ।

তবে ঐ রোগীকে তার বউয়ের উপর অবিরাম শ্যুটিং প্র‌্যাকটিসের কারনেই মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো । *************************************************** আমার 'তব্দা' খাওয়া লেখাটি ব্লগার 'নোমান নমি' কে উৎসর্গ করলাম । গতকাল উনার 'অজগর' গল্পটির ট্যুইস্টে পুরাই 'তব্দা' খেয়েছিলাম । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।