আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক্টিভিস্ট নৃবিজ্ঞানীদের গবেষণায় তাজরিন গার্মেন্টসে অগ্নিকান্ডের ঘটনার নতুন মোড় , অবশ্য পাঠ্য পড়ে সবাইকে জানান, ভক্তভুগি পরিবার গুলোর পাশেতো দাঁড়াতে পারিনি, অন্তত সমবেদনা তো জানাতেই পারি, আমরা সচেতন হলে হয়ত এমন একটা ঘটনা আবার ঘটবে না

আমি ঘুরিয়া ঘুরিয়া সন্ধানো করিয়া স্বপ্নেরও পাখি ধরতে চাই আমি স্বপ্নেরও কথা বলতে চাই আমার অন্তরের কথা বলতে চাই... নিশ্চিন্তপুরের বুড়িপাড়ার মনোয়ারা বেগম ও তাঁর স্বামী সাত বছর ধরে কাজ করেন বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। তিলে-তিলে সংসার গড়ে তুলে তাঁরা নতুন সদস্যের আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন। মনোয়ারা বেগম আট মাসের অন্তসত্ত্বা। ২৪শে নভেম্বর তাজরিন ফ্যাশন্স-এ আগুন লাগার পর, তাঁর স্বামী সন্ধ্যা ৬.৩৮ মিনিটে ফোন করে বলেন, “ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগেছে, দোয়া করো। ” আবার ফোন করেন ৭.০২ মিনিটে, “আমি তিন তলায় আটকা পড়েছি, মনে হয় বের হতে পারব না।

” রাত ৭.৩৩ মিনিটে শেষবারের মতো ফোন করেন, ক্ষীণ কণ্ঠ, “আমি মরে যাচ্ছি, ক্ষমা করে দিও। ” মনোয়ারা বেগমের স্বামীর লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, আমার জীবনটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেল, আমার বাচ্চাটা জন্মের আগেই বাবা হারালো। আমরা ঢাকায় আসছি বেঁচে থাকার তাগিদে, কত অবহেলা, তাই বলে কি একবারে মেরে ফেলতে হবে? মনোয়ারা বেগম অন্য গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। “আমাদের ফ্যাক্টরিতে এ্যালার্ম বাজলে আমরা ২ মিনিটের মধ্যে নিচে চলে আসি।

অথচ আমার স্বামী ২ঘন্টা ধরে ফ্যাক্টরিতে আটকা থাকল। কেন সে বের হতে পারল না?” মনোয়ারা বেগমের প্রশ্নটি আমাদেরও প্রশ্ন। তাজরিন ফ্যাশন্স-এ আগুন নেভাতে ১২ ঘন্টার বেশি সময় লাগল কেন? কেন মানুষ-মেশিন-কাপড়ের ভস্মীভূত হয়ে যেতে হবে, আগুনের লেলিহান শিখায় দেহ থেকে মাংস ঝলসে যেতে হবে, আত্মীয়স্বজনদের প্রিয় মানুষের লাশের পরিবর্তে মুখোমুখি হতে হবে পোড়া হাঁড়গোড় আর কঙ্কালের যা আপন মানুষ কি-না সনাক্ত করা যায় না? আগুন লাগা ও সরকারি হিসাব’মতে মৃত শ্রমিক-সংখ্যার অর্ধেক শ্রমিকদের সনাক্ত করতে না পারা, এখনও নিখোঁজ, এমন বহু শ্রমিক থাকা --এসবের জন্য দায়ী ফ্যাক্টরি মালিক ও বিজিএমই। সর্বপোরি, বাংলাদেশ সরকার । ২৪শে নভেম্বর যেদিন আগুন লেগেছিল, ফায়ার এ্যালার্ম বাজার পরে ছয়তলার একজন শ্রমিক সিঁড়ির কাছে আসলে, প্রোডাকশন ম্যানেজারকে বিড়ি ফুঁকতে দেখেন।

শ্রমিকটির প্রশ্ন, “ফ্যাক্টরির ভিতরে সিগারেট খাওয়া নিষেধ। শ্রমিকরা চাকরি হারানোর ভয়ে কখনোই ফ্যাক্টরির ভিতরে সিগোরেট খায় না। কিন্তু পি.এম স্যার তখন সিগেরেট খাচ্ছিলেন। এই সিগারেট থেকেই যে আগুন লাগে নাই কিভাবে জানি?” এলাকার সাধারণ মানুষ অগ্নিকা- মালিক পক্ষের কোনো চক্রান্ত কি-না, এবিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। ভুক্তভোগীদের অনেকেরই প্রশ্ন, ম্যানেজার লেভেলের যারা বিল্ডিংয়ের ভেতরে ছিলেন, তাদের কেউ মারা যাননি।

তারা বিল্ডিং থেকে বের হলো কিভাবে? নিশ্চিন্তপুরে কী ঘটেছিল সেদিন? মিডিয়ার কল্যাণে আমরা অনেক কিছু জানতে পেরেছি কিন্তু যে বিষয়গুলো সম্বন্ধে ধারণা এখনও অস্বচ্ছ, কিংবা কিছুই জানা নেই তা হলো: আগুন লাগার পরে গেট কেন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল? অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় কাজের যে তালিকা ফ্যাক্টরির দেয়ালে টাঙানো আছে, তার প্রতিটির লঙ্ঘণ আমরা নিজ চোখে দেখে এসেছি। এই গার্মেন্টসটির কোনো ফায়ার একজিট নাই। এখানে জোর দিয়ে বলতে চাই, বিল্ডিংয়ের ভিতরে একাধিক সিঁড়ি থাকার মানে কিন্তু ফায়ার এক্সিট না। নিয়মানুযায়ী ফায়ার এক্সিট বিল্ডিংয়ের বাইরে হবে। সিঁড়ি ও চলাচলের মুখ প্রতিবন্ধকতা- মুক্ত থাকা বাঞ্চনীয় হওয়া সত্ত্বেও তাজরিন ফ্যাশনে প্রায় প্রতি তলাতেই, মেয়েদের সিঁড়ির কাছে কার্টন, সুতা, কাটা কাপড়ের পাহাড় ছিল।

প্রথম তলার সিঁড়ির কাছে আছে দুটো হাই ভোল্টেজ ইলেক্ট্রিক ট্রান্সফর্মার। দ্বিতীয়তলায় মেয়েদের সিঁড়ির কাছে কাপড় ইস্ত্রি করার জন্য বয়লার মেশিন ছিল। এতগুলো লঙ্ঘণ সত্ত্বেও কিভাবে এই ফ্যাক্টরিটি কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট পেল? কত টাকার ঘুঁষের বিনিময়ে? ফ্যাক্টরি এবং ফায়ার সার্ভিসের কারা কারা জড়িত? দায়িত্বে কে? আমরা তাদের নামধাম জানতে চাই। আলোকচিত্রি ড. শহিদুল আলম আগুনে পোড়া ধবংসস্তুপে বিজিএমইর ইস্যুকৃত একটি এ্যাচিভমেন্ট সার্টিফিকেট খুঁজে পান, তাজরিন ফ্যাশনের অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবেলার জন্য ফ্যাক্টির কর্তৃপক্ষের দক্ষতার প্রশংসা করা হয়েছে। যেই ফ্যাক্টরিতে ফায়ার এক্সিট নেই এমন একটি কারখানাকে বিজিএমইএ যখন সাফল্যের সার্টিফিকেট দেয়, তখন বিজিএমইএ এই হত্যাকা-ে তার অংশীদারিত্ব অস্বীকার করতে পারে না।

এতবড় অগ্নিকা- ঘটার পর, এতগুলো মানুষ পুড়ে মারা যাওয়ার পরও, শ্রমিকের জীবনের প্রতি মালিকপক্ষ, বিজিএমইএ ও সরকারের অবহেলার মাত্রা বিন্দুমাত্র কমেনি। মালিকপক্ষের কেউ যেহেতু শ্রমিকদের সাথে দেখা করতে আসেনি, তাঁদের একজন বলেন, “মালিকের যদি দোষ না থাকে, তাহলে সে টিভির সামনে লোকদেখানো কান্না কাঁদবে কেন? কেন আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে না?” এই পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কোনো মিডিয়ার ভূমিকার ব্যাপারে আমরা প্রশ্ন তোলা জরুরি মনে করি। অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় কাজের যে তালিকা ফ্যাক্টরির দেয়ালে টাঙানো আছে, তার প্রতিটির লঙ্ঘণ আমরা নিজ চোখে দেখে এসেছি। এই গার্মেন্টসটির কোনো ফায়ার একজিট নাই। এখানে জোর দিয়ে বলতে চাই, বিল্ডিংয়ের ভিতরে একাধিক সিঁড়ি থাকার মানে কিন্তু ফায়ার এক্সিট না।

নিয়মানুযায়ী ফায়ার এক্সিট বিল্ডিংয়ের বাইরে হবে। সিঁড়ি ও চলাচলের মুখ প্রতিবন্ধকতা- মুক্ত থাকা বাঞ্চনীয় হওয়া সত্ত্বেও তাজরিন ফ্যাশনে প্রায় প্রতি তলাতেই, মেয়েদের সিঁড়ির কাছে কার্টন, সুতা, কাটা কাপড়ের পাহাড় ছিল। প্রথম তলার সিঁড়ির কাছে আছে দুটো হাই ভোল্টেজ ইলেক্ট্রিক ট্রান্সফর্মার। দ্বিতীয়তলায় মেয়েদের সিঁড়ির কাছে কাপড় ইস্ত্রি করার জন্য বয়লার মেশিন ছিল। এতগুলো লঙ্ঘণ সত্ত্বেও কিভাবে এই ফ্যাক্টরিটি কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট পেল? কত টাকার ঘুঁষের বিনিময়ে? ফ্যাক্টরি এবং ফায়ার সার্ভিসের কারা কারা জড়িত? দায়িত্বে কে? আমরা তাদের নামধাম জানতে চাই।

আলোকচিত্রি ড. শহিদুল আলম আগুনে পোড়া ধবংসস্তুপে বিজিএমইর ইস্যুকৃত একটি এ্যাচিভমেন্ট সার্টিফিকেট খুঁজে পান, তাজরিন ফ্যাশনের অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবেলার জন্য ফ্যাক্টির কর্তৃপক্ষের দক্ষতার প্রশংসা করা হয়েছে। যেই ফ্যাক্টরিতে ফায়ার এক্সিট নেই এমন একটি কারখানাকে বিজিএমইএ যখন সাফল্যের সার্টিফিকেট দেয়, তখন বিজিএমইএ এই হত্যাকা-ে তার অংশীদারিত্ব অস্বীকার করতে পারে না। এতবড় অগ্নিকা- ঘটার পর, এতগুলো মানুষ পুড়ে মারা যাওয়ার পরও, শ্রমিকের জীবনের প্রতি মালিকপক্ষ, বিজিএমইএ ও সরকারের অবহেলার মাত্রা বিন্দুমাত্র কমেনি। মালিকপক্ষের কেউ যেহেতু শ্রমিকদের সাথে দেখা করতে আসেনি, তাঁদের একজন বলেন, “মালিকের যদি দোষ না থাকে, তাহলে সে টিভির সামনে লোকদেখানো কান্না কাঁদবে কেন? কেন আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে না?” এই পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কোনো মিডিয়ার ভূমিকার ব্যাপারে আমরা প্রশ্ন তোলা জরুরি মনে করি। অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় কাজের যে তালিকা ফ্যাক্টরির দেয়ালে টাঙানো আছে, তার প্রতিটির লঙ্ঘণ আমরা নিজ চোখে দেখে এসেছি।

এই গার্মেন্টসটির কোনো ফায়ার একজিট নাই। এখানে জোর দিয়ে বলতে চাই, বিল্ডিংয়ের ভিতরে একাধিক সিঁড়ি থাকার মানে কিন্তু ফায়ার এক্সিট না। নিয়মানুযায়ী ফায়ার এক্সিট বিল্ডিংয়ের বাইরে হবে। সিঁড়ি ও চলাচলের মুখ প্রতিবন্ধকতা- মুক্ত থাকা বাঞ্চনীয় হওয়া সত্ত্বেও তাজরিন ফ্যাশনে প্রায় প্রতি তলাতেই, মেয়েদের সিঁড়ির কাছে কার্টন, সুতা, কাটা কাপড়ের পাহাড় ছিল। প্রথম তলার সিঁড়ির কাছে আছে দুটো হাই ভোল্টেজ ইলেক্ট্রিক ট্রান্সফর্মার।

দ্বিতীয়তলায় মেয়েদের সিঁড়ির কাছে কাপড় ইস্ত্রি করার জন্য বয়লার মেশিন ছিল। এতগুলো লঙ্ঘণ সত্ত্বেও কিভাবে এই ফ্যাক্টরিটি কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট পেল? কত টাকার ঘুঁষের বিনিময়ে? ফ্যাক্টরি এবং ফায়ার সার্ভিসের কারা কারা জড়িত? দায়িত্বে কে? আমরা তাদের নামধাম জানতে চাই। আলোকচিত্রি ড. শহিদুল আলম আগুনে পোড়া ধবংসস্তুপে বিজিএমইর ইস্যুকৃত একটি এ্যাচিভমেন্ট সার্টিফিকেট খুঁজে পান, তাজরিন ফ্যাশনের অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবেলার জন্য ফ্যাক্টির কর্তৃপক্ষের দক্ষতার প্রশংসা করা হয়েছে। যেই ফ্যাক্টরিতে ফায়ার এক্সিট নেই এমন একটি কারখানাকে বিজিএমইএ যখন সাফল্যের সার্টিফিকেট দেয়, তখন বিজিএমইএ এই হত্যাকা-ে তার অংশীদারিত্ব অস্বীকার করতে পারে না। এতবড় অগ্নিকা- ঘটার পর, এতগুলো মানুষ পুড়ে মারা যাওয়ার পরও, শ্রমিকের জীবনের প্রতি মালিকপক্ষ, বিজিএমইএ ও সরকারের অবহেলার মাত্রা বিন্দুমাত্র কমেনি।

মালিকপক্ষের কেউ যেহেতু শ্রমিকদের সাথে দেখা করতে আসেনি, তাঁদের একজন বলেন, “মালিকের যদি দোষ না থাকে, তাহলে সে টিভির সামনে লোকদেখানো কান্না কাঁদবে কেন? কেন আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে না?” এই পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কোনো মিডিয়ার ভূমিকার ব্যাপারে আমরা প্রশ্ন তোলা জরুরি মনে তাজরিন গার্মেন্টসের অগ্নিকান্ডে কতজন নিখোঁজ? (১) আমাদের অনুসন্ধান চলমান, এই মুহূর্তে, আমাদের হিসাব’মতে, নিখোঁজ শ্রমিকের সংখ্যা ৫৯ জন। এলাকার মানুষের হিসেবে মতে, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। নিখোঁজ শ্রমিকদের বেশিরভাগই নারী। যে সকল সাংবাদিক, উদ্ধারকর্মী ২৪শে নভেম্বর রাতে ঘটনাস্থলে ছিলেন তারা মনে করেন নিখোঁজ ও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে টালবাহানা চলছে। তাজরিন গার্মেন্টসের একজন পুরুষ শ্রমিক, তিনি সেদিন বিকেলে ওভারটাইম করতে যাননি, আগুন লাগার পর ফ্যাক্টরির সামনে চলে আসেন এবং উদ্ধার কাজে হাত লাগান।

তখনও দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি। তখন চার ও পাঁচ তলা থেকে যে সকল শ্রমিক জান বাঁচাবার জন্য লাফ দিচ্ছিল, তিনি তাদেরকে টেনে বের করছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ বেঁচেছে, কেউ মরেছে। তিনি ৪০টি দেহ টেনে বের করার কথা বলেন। এর পর, রক্ত ও আর্ত চিৎকার সহ্য না করতে পেরে তিনি বাসায় চলে যান।

তাজরিন গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বলেন, নিখোঁজদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য জ্ঞানী-গুণী লোকের প্রয়োজন পড়ে না। দরকার স্রেফ সদিচ্ছার। এই ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা, নিশ্চিন্তপুরের পাশের প্রাইমারি স্কুলের আশেপাশের এলাকা এবং নরসিংহপুরের বুড়ীপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। এই এলাকার প্রতিটা ঘরে গিয়ে, বাড়ির মালিকদের সাথে কথা বললেই জানতে পারবেন কতজন নিখোঁজ। (২) শ্রমিক পরিবারকে তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বিজিএমইএ ও সরকারের কান্ডজ্ঞানহীন আচরণ: (ক) লাফিয়ে পড়া শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ: ৩রা ডিসেম্বর রাতে টিভিতে প্রচার করা হয় তাজরিন গার্মেন্টসে নিহতদের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ সাহায্য দেয়া হবে।

এই খবর শুনে অনেক নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবার বিভ্রান্তিতে পড়েন। বিজিএমইএ ও আইনের চোখে, নিখোঁজ ও মৃত শ্রমিকের মধ্যকার যে ফারাক তা আত্মীয় পরিজনদের জন্য একই ভাবে বাস্তব নয়। যে সকল শ্রমিক আগুন আতঙ্কে সাথে সাথেই লাফ দিয়ে পড়ে মারা যান, তাঁদের লাশ নিয়ে পরিবার পরিজন সে রাতেই দেশে চলে যায়। তাদেরই পরিবারের একজনের কাছ থেকে আমরা জেনেছি যে তিনি ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। ‘আর্মির হাত থেকে বুঝে নেয়া লাশ,’ ’তৎক্ষণাৎ বুঝে নেয়া লাশ’-এত সব লাশের ক্যাটেগরি, আমলাতান্ত্রিক মারপ্যাঁচ শ্রমিকদের নাজেহাল করার, শ্রমিকের রক্তপানি করা জীবনকে অস্বীকার করে।

(খ) নিখোঁজ শ্রমিকের পাওনা বেতনের সঙ্গে ডি.এন.এ টেস্টকে শর্তযুক্ত করা: ৫ই ডিসেম্বর একজন নিখোঁজ শ্রমিকের ভাই নরসিংদি থেকে বেতন নিতে এসে ফিরে যান। তাঁকে বলা হয়েছে, যারা নিখোঁজ তাদের ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি ফ্যাক্টরি কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছিলেন, আমার বোন নভেম্বর মাসের যে ২৪ দিন কাজ করেছে, সেই ২৪দিনের টাকাটা আমাকে দিয়ে দেন। তাঁকে বলা হয়েছে, ডি.এন.এ টেস্টের রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমরা নিশ্চিন্তপুরে এমন বাড়িতে গিয়েছি যেখানে পরিবারের চার জনের লাশের কোনোটাই এখনও সনাক্ত করা যায়নি।

আমরা এমন বাড়ির সন্ধান পেয়েছি যেখানে মরদেহ সনাক্ত করতে না পেরে আত্মীয়স্বজনরা দেশের বাড়ি ফিরে গেছেন। আমাদের প্রশ্ন: যে সকল বাড়ির প্রধান উপার্জনকারী সদস্য নিখোঁজ তাঁরা কতদিন ডি.এন.এ-র রেজাল্টের আশায় বসে থাকবেন? (গ) ডি.এন.এ টেস্টের মারপ্যাঁচ: আমরা যে সকল নিখোঁজ পরিরবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছি, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ পরিবারই প্রথম চেষ্টায় ডি.এন.এ টেস্টের কেন্দ্রটি খুঁজে পাননি। অনেকেই নিজের পকেটের পয়সা খরচ (১৫০০-৩০০০ টাকা) করে নানা জায়গায় ঘুরে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাদের কাউকে কাউকে বলা হয়েছে সদরঘাট থানা থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে, কাউকে বলা হয়েছে ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট কমিশনারের কাছে গিয়ে দরখাস্ত করতে। অনেক শ্রমিক পরিবার মনে করেন, এই হয়রানি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

তাদেরই একজন সদস্য বলেন, এভাবে আমরা ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে ফিরে যাব, টাকাটা মালিক পাবে। আরেকজন, তিনি একজন শ্রমিকের মা, জীবনে এই প্রথম ঢাকায় এসেছেন, ডি.এন.এ টেস্ট কি তা জানেন না, কেউ তাঁকে বুঝিয়ে বলেনি। তিনি এখন পর্যন্ত কোনও হাসপাতালে খোঁজ নিতে পারেন নি। পত্র-পত্রিকায়, টিভিতে টকশোতে যখন বিজিএমইর কর্তৃপক্ষ বলেন, ডি.এন.এর মাধ্যমে প্রকৃত ওয়ারিশ নির্ধারিত হওয়া’মাত্রই নিখোঁজ শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ বুঝিয়ে দেয়া হবে, তখন মনে হয় বিষয়টি খুবই সাদা-মাটা। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ডি.এন.এ টেস্টের প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে জনগণকে কিছুই জানানো হয়নি।

ফলে, প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা শ্রমিকশ্রেণীর মানুষের জন্য প্রায় দুঃসাধ্য সাধনের মতন। (ঘ) ফলস ক্লেইমের অজুহাতে ক্ষতিপূরণের দায় এড়ানোর ন্যাক্কারজনক তৎপরতা: ডি.এন.এ টেস্ট ওয়ারিশ নির্ধারণের একমাত্র সঠিক পদ্ধতি নয়। মালিকপক্ষকে আমরা প্রতিনিয়তই বলতে শুনি, অনেক ফলস ক্লেইম করছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, ফলস ক্লেইম নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব তাদেরই। আমরা বিস্মিত, নিষ্পত্তি করার জন্য এখনও পর্যন্ত তারা কোনও সুর্নিদিষ্ট ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

ফলস ক্লেইমকেই অজুহাত হিসেবে ব্যাবহার না করে, এই দেশের জ্ঞাতিসম্পর্কের বিন্যাস, পারিবারিক সম্পর্কের ইতিহাসকে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবারের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করেই এ বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি করতে হবে। ডি.এন.এ টেস্ট কোনও ম্যাজিক বুলেট নয়। ডি.এন.এ-এর নামে নিখোঁজ শ্রমিককে অস্বীকার করার, তাদের পরিবারকে হয়রানি করার এই চলমান প্রচেষ্টার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই। বর্তমানের হাহাকার নিশ্চিন্তপুরে একটি সুন্দর শহর গড়ে উঠছিল। ছোট ছোট ঘরে গুছিয়ে উঠেছিলেন অনেক মানুষ।

নিম্ন-আয়ের মানুষ হলেও কিছু স্বচ্ছলতার ছাপ বাড়িগুলোতে রয়েছে। কিন্তু এই অগ্নিকা- তাদের জীবন মুহূর্তে তছনছ করে দিয়েছে। কেউ কেউ দেশের বাড়িতে ফিরে যাবার কথা ভাবছেন। অনেকে বলেছেন, সুইং মেশিনে বসার কথা আর ভাবতে পারছেন না। তাই বেতন হাতে পেয়ে বাড়িভাড়া মিটিয়ে গ্রামে ফিরে যাবার কথা ভাবছেন।

নিখোঁজ মানুষের বাড়িতে গিয়ে আমরা দেখতে পেয়েছি যে, বাড়ির সবকিছুই আছে কিন্তু মানুষগুলো নাই। আমরা স্বজন হারানোর কথা শুনেছি। অনেকক্ষেত্রেই জানতে পেরেছি ভয়াবহ এই অগ্নিকা- যখন ঘটে তখন অনেকেই শেষবারের মতো তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে ফোন করেন। এসমস্ত অভিজ্ঞতা আমাদের বারবার ভাবিয়েছে কতটা সময় ধরে আগুন জলেছে, কেন মানুষগুলো এই সময়ের মধ্যে বের হতে পারেনি। এতবড় একটা অগ্নিকা-ের দুই সপ্তাহের মধ্যেই আমরা খবর পাই, ৫ই ডিসেম্বর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকায় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে আগুন আতংকে একজন নারী শ্রমিক বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়ে মারা যান।

তাঁর মৃত্যুর দায়ভার কার? সরকার ও বিজেএমইএ’র নেতারা সভাসমিতিতে বারবার বলেছেন, গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জানমালের নিরাপত্তার বিধানে তারা সম্ভাব্য সকল উদ্যোগ নিয়েছেন। তাই যদি হয়, তাহলে আরও একটি মৃত্যু কিভাবে ঘটল? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.