আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্ব মানবতার পথ ধরে পণ্ডিত রবিশঙ্করের মহাপ্রয়াণ

নিজেকে জানার চেষ্টা চলছে । কখনো জানতে পারলে বলবো । ‘একজন শিল্পী বেঁচে থাকেন তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে’ এই সৃষ্টি যে শুধুমাত্র শৈল্পিক অঙ্গনে সীমাবদ্ধ নয়, এর ব্যাপ্তি যে আরও বিশাল যা কিনা অনায়াসে ছুঁয়ে যেতে পারে বিশ্ব মানবতার মমতাময় আঁচল, তার প্রত্যক্ষ উদাহরণ হলেন সুরসম্রাট ও সেতারের জাদুকর পণ্ডিত রবিশঙ্কর। চলে গেলেন তিনি, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু পণ্ডিত রবিশঙ্কর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের দুর্দশাপীড়িত জনগণের জন্য বাজিয়েছিলেন মানবতার সুর, ২০১২ সালের বিজয়ের মাসেই তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

গত মঙ্গলবার ১১ই ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে চারটায় যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়াগো শহরের স্ক্রিপস মেমোরিয়াল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহান সুর সাধক। তিনি কিছুদিন ধরেই সেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বিডি নিউজ ২৪ ডটকম এর খবরে বলা হয়, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার কারণে গত বৃহস্পতিবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া আরো কিছু জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি বেশ কিছুদিন ধরে। গত ৭ ডিসেম্বর তার দেহে অস্ত্রোপচারও করা হয়।

কিন্তু তাতে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করে উঠতে পারেননি তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এই সেতারশিল্পী। বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার প্রতিবাদে জনমত গড়ে তুলতে এবং বাংলাদেশী শরণার্থীদের সার্বিক সহায়তার জন্য জনপ্রিয় ব্যান্ড বিটলস এর শিল্পী জর্জ হ্যারিসনকে সঙ্গে নিয়ে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে তিনি আয়োজন করেন এক ঐতিহাসিক ও সাড়া জাগানো অনুষ্ঠান ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। তাঁর এই উদ্যোগ বিশ্ব মানবতার বিবেককে নাড়া দেয় প্রচণ্ড ভাবে।

যার ফলে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের নির্যাতিত ও মুক্তিকামী মানুষের সপক্ষে তৈরি হয় ব্যাপক জনমত। পণ্ডিত রবিশঙ্কর জন্মগ্রহণ করেন ১৯২০ সালের ৭ এপ্রিল ভারতের বারানসিতে। তবে তার আদি পৈত্রিক নিবাস ছিল নড়াইলের কালিয়ায়। রবীন্দ্র শঙ্কর চৌধুরী, যিনি পরবর্তীতে পরিচিত হয়েছিলেন ‘রবিশঙ্কর’ নামে, ১৯৩৮ সালে সেতার শেখা শুরু করেন বরেণ্য সংগীতজ্ঞ আলাউদ্দিন খাঁর কাছে। সেতারের সেই ঝংকার জড়িয়ে ছিল তাঁর পুরো জীবন জুড়ে।

১৯৪৪ সালে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তাঁর। অনেকটা সময় কাজ করেছেন অল ইন্ডিয়া রেডিওর সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে। সত্যজিত রায় পরিচালিত ‘পথের পাঁচালী’ (১৯৫৫), ‘অপরাজিত’ (১৯৫৬) এবং ‘অপুর সংসার’ (১৯৫৯) ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করে ব্যাপক প্রশংসিত হন তিনি। ১৯৫৬ সালে শুরু হয় তাঁর ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র সফর। তাঁর সেই সফরে পশ্চিমা বিশ্বে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত জনপ্রিয় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

তখনই তাঁর পরিচয় হয় জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা জর্জ হ্যারিসনের সাথে। পরবর্তীতে রবিশঙ্করের উদ্যোগে আয়োজিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ এই জর্জ হ্যারিসনই গেয়ে শোনান একটি অবিস্মরণীয় গান, ‘বাংলাদেশ’, যা কিনা আজও অমর আমাদের গৌরবান্বিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে। ১৯৯৯ সালে ভারতে তিনি ‘ভারতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হন। সঙ্গীতে অভূতপূর্ব অবদান রাখার জন্য তিনি তিনটি গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন তিনি। আজ রবিশঙ্কর পৃথিবীতে নেই, কিন্তু তাঁর সেতারের ধ্বনি মিশে আছে প্রতিটি মুক্তিকামী মুক্তিযোদ্ধার রক্তে, প্রতিটি স্বাধীন বাংলাদেশীর হৃদয়ে।

তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রার্থনায় যেন মুখরিত হয় বাংলাদেশের প্রতিটি স্বাধীন প্রাণ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.